somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্যানিক অ্যাটাক

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্যানিক বা আতঙ্ক হলো মানুষের শরীরের প্রতিরক্ষা সিস্টেমের একটি অরিহার্য অংশ। কিন্তু কখনো কখনো এটি অনেক মারাত্মক রূপ ধারণ করে অযৌক্তিক ভয় বা প্যানিক অ্যাটাকের কারণে। আমরা সবাই জীবনের কোনো না কোনো সময় ভালো কারণেও প্যানিক বা আতঙ্কে ভুগে থাকি। ট্রাফিক সবুজ বাতি জ্বলল, আমরা রাস্তা পার হতে শুরু করেছি, সেখানে একটি গাড়ি দ্রুতগতিতে না থেমেই আসতে শুরু করে-এ সময় আমরা প্যানিক বা আতঙ্কে পড়ি। এটা একেবারেই স্বাভাবিক। এ সময় আমরা যত দ্রুত সম্ভব রাস্তা দিয়ে দৌড়ে অন্য পারে যাই নিরাপদ হওয়ার জন্য। একেবারে ক্ষতিহীন এ রকম অনুভূতি প্রতিদিনই আমরা অনুভব করি। প্যানিক অ্যাটাক একটি অত্যন্ত ভয়ানক দূরাবস্থা, যাতে আক্রান্তের মনে হবে সে দাঁড়াতে পারছে না, তার হার্টবিট লাফিয়ে ১৫০/২০০ হয়ে যাবে, মনে হবে যে সে বাস্তব জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, ব্রেইনে এলোপাথারি ইলেকট্রিক সিগন্যালগুলি জানাবে যে সে মারা যাচ্ছে৷যদি অপ্রত্যাশিতভাবে এ রকম অনুভূতি হয় কোনরকম কারণ ছাড়াই এবং ব্যাক্তির ভিতরে যদি অতিরিক্ত ভয় তৈরি হয় আবার এই রকম অ্যাটাকের মুখোমুখি হবার, যার ফলে ব্যাক্তির স্বাভাবিক জীবনযাপন হুমকীর সম্মুখীন হয় তাকে প্যানিক ডিসঅর্ডার বলে৷ প্যানিক ডিসঅর্ডার একটি মানসিক রোগ৷

প্যানিক/আতঙ্ক বা ফোবিয়া/ভয় সৃষ্টি হয় কিভাবে
যে কোনো বিষয়েই ভয় পাওয়ার মতো ব্যাপার ঘটতে পারে। যেমন-দাঁতের চিকিৎসায় ভয় Odontophobia, বিমানে উড়ার সময় ভয় Pteromerhanophobia, রক্তদানে বা রক্ত দেখে ভয় Hematophobia, সামাজিক ভীতি, খোলা জায়গার ভয়, পানি দেখে ভয় Hydrophobia, উঁচু জায়গায় ভয় Hypsiphobia, অন্ধকারে ভয় Lygophobia, পরীক্ষার ভয়, মৃত্যুর ভয় Thantophobia । যারা ফোবিয়ায় আক্রান্ত তারা যদি কোনো কিছুর সম্মুখীন হয় যা তাদের মাঝে আতঙ্কের উদ্রেক করে অথবা তারা বুঝতে পারে যে এমন ভয়ানক ব্যাপার সামনে আসছে তখন তারা উদ্বিগ্নতার কিছু শারীরিক লক্ষণ-উপসর্গ অনুভব করে থাকে। অ্যাংজাইটি বা উদ্বিগ্নতার দীর্ঘ লক্ষণ-উপসর্গের তালিকা থাকে এবং বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ-উপসর্গের সম্মুখীন হয়। অনেক মানুষ তারা যেটাতে ভয় পায় তা সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলে। তাই তাদের জীবনটা পরিচালিত হয় ভয়ের নানা পরিস্থিতি ও পরিবেশকে এড়িয়ে চলার কাঠামোর মধ্যে দিয়ে। কিন্তু কোনো কোনো সময় এসব ভয়ানক ব্যাপার, পরিবেশ, পরিস্থিতি বা বস্তুকে এড়িয়ে চলা সম্ভব হয় না। যেমন- ভয়ে কেউ সারা বছর ধরে দাঁতের ডাক্তারের কাছে যায় না, শেষে ইমার্জেন্সি চিকিৎসার জন্য দাঁতের ডাক্তারের কাছে যেতে হলো। আবার কেউ হয়তো দুর্ঘটনাক্রমে শরীর কেটে যাওয়ার কারণে মেডিকেলে জরুরি ভিত্তিতে যেতে হলো। আবার কোনো দরকারি মিটিং যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় তাতে যেতে হলো, এ সময় প্যানিক বা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ-উপসর্গ
বুক ধড়ফড় করা বা প্যালপিটিশন দেখা দেয়া, শাসকষ্ট হওয়া, বুক ব্যথা করা, মুখ লাল হয়ে আসা, শরীর ঘামতে থাকা, অসুস্থ অনুভব করা, কাঁপুনি, মাথা ঝিমঝিম করা, মুখ শুকিয়ে আসা, টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়, অজ্ঞান হয়ে যাবার অনুভূতি লাগা, মাথা ঘোরায়, অস্থিরতা লাগতে থাকে, মুখ দিয়ে কথা আসতে চায় না, বমি বমি ভাব লাগে।

এ ধরনের লক্ষণ-উপসর্গ খুব গভীর হতে পারে তখন একজন আতঙ্কিত ব্যক্তি মনে করতে পারে যে তার বুঝি হার্টঅ্যাটাক হতে যাচ্ছে। আর এ সময় আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়। কোনো কোনো ব্যক্তি তাদের নিয়ন্ত্রণহীন শরীরের আতঙ্কিত প্রতিক্রিয়া বা লক্ষণ দর্শকের মতো অনুভব করতে থাকে। এ সময় মনে হয় তাদের শরীর যেন ভীষণ যন্ত্রণার মধ্যে আছে, যা খুবই কষ্টকর এবং বর্ণনার অতীত। অনেক সময় মনে হয় যে যা ঘটছে তা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এটা অনেক সময় সাধারণ উদ্বিগ্নতা বা জেনারেল অ্যাংজাইটির সাথে দেখা দেয়।

ফোবিয়ায় কত মানুষ আক্রান্ত হয় ?
কিছু কিছু ফোবিয়া অন্য ফোবিয়ার চেয়ে বেশি কমন। প্রতি বছর প্রায় ১০% মানুষ বিমানে উড়তে গিয়ে, দাঁতের ডাক্তারের কাছে যেতে এবং রক্তদান করতে গিয়ে বা রক্ত দেখে ফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়। এগুলো হলো সিম্পল বা সাধারণ ফোবিয়া। সোশ্যাল ফোবিয়া বা সামাজিক ভীতিও খুবই কমন। এটি ১০০০ মানুষের মধ্যে ২৫ জনকে আক্রান্ত করে। অ্যাগারোফোবিয়া Agraphobia ১০০০ মানুষের মধ্যে প্রায় ৩০ জনের বেলায় দেখা যায় এবং এটি নারীদের মধ্যে দ্বিগুণভাবে দেখা যায়। প্যানিক অ্যাটাক প্রতিবছর ১০০০ মানুষের মধ্যে ৩০ জন মানুষকে আক্রান্ত করে এবং এটিও নারীদের বেলায় দ্বিগুণ ঘটে থাকে।

প্যানিক অ্যাটাক এর চিকিৎসা
প্যানিক ডিসঅর্ডার একটি মনোশারীরিক রোগ৷প্যানিক অ্যাটাক এর নানা রকম চিকিৎসা পাওয়া যায়। ওষুধ দ্বারাও এর চিকিৎসা করা হয়। তবে এর জন্য বিচলিত না হয়ে একজন মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আর সাইক্রিয়াট্রিকসের কাছে যাওয়া মানেই পাগল হওয়া নয়৷ মন ও মস্তিস্কের অধিকারী হলে মানসিক ডাক্তারের কাছে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক৷এর থেকে পরিত্রানের উপায়, নিয়মিত ব্যায়াম করা, নিজেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখা, সাইকোথেরাপি নেওয়া৷ আক্রান্তের সময় রিলাক্স থাকুন! বুক ভরে নিঃশ্বাস নিন, এর পর পাঁচ পর্যন্ত গুনুন৷ তারপর ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস ছাড়তে থাকুন৷ প্রতিটি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে মনে মনে বলুন আরাম...আরাম...আরাম...৷ তারপরও মস্তিষ্ক থেকে প্যানিক ওয়েভ আসতে পারে একটার পর একটা.........৷ সংগৃহীত ঃ নেটের বিভিন্ন লেখা থেকে
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×