মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মানো অনেকটা ঘাড়-গলায় চামড়ার মোটা আস্তরন নিয়ে জন্মানোর মত। তাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়েও কাজ হয় না, ঘাড় ভাঙে না আবার শ্বাসরোধেও মরে না। মোটার চামড়ার জন্য সারাজীবন হাসফাস করে জীবন কেটে যায়। সবচেয়ে বড় ভয় মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হবার তা হলো, পাছে লোকে কিছু বলে চিন্তা মাথায় নিয়ে চলা। চোখে সানগ্লাস দিলেও সমস্যা সমাজের, কিংবা কেউ একটু উচু হিল পড়লেও সমাজ গেলো বলে হাক দেয়। ওয়েস্টিন রেডিসনে কিংবা পাচ তারাকায় ডিনার হয় না টাকার জন্য, আবার পথের হোটেলে খাওয়া হয়না মান যাবে, সবাই কি বলবে তাই ভেবে। ফলাফল- না খেয়ে থাকা।
মধ্যবিত্ত পরিবারে ভাবুক হওয়াটাও অভিশাপ, চরম অভিশাপ। ভালো স্কুলে চান্স না পাওয়া মানে গাধা ছাত্র, কিছুই হবে না। ভালো চাকরি, ভালো বেতন না পাওয়া মানে কুলাঙ্গার। প্রেম করে বিয়ে করা মানে 'ভেগে' গেছে। বিয়ের পর আলাদা হওয়া মানে বউ খারাপ। বাচ্চা কাচ্চা হতে দেরী হওয়া মানে কারো 'সমস্যা' আছে। জন্ম, বিয়ে, উপার্জন ও মৃত্যুর চক্রে আটকা পড়তে হয়। এসব অস্বীকার করলে 'নষ্ট' হয়ে গেছে। লোডেশিডিং, গরম পানি নেই, জ্যাম, কীট পতঙ্গ, টাকা পয়সার টানাটানি সব কিছু মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য ফিক্সড।
ভাই বোনের সাথে ভাগ করে, আর বড় ভাইয়ের জামা কয়েক বছর পর ছোট ভাইয়ের পড়তে পড়তে তাদের নিজেদের ছেলে মেয়ের জামা কেনার সময় এসে পড়ে ধুপ করে। সবাই কে খেতে দিয়ে গৃহকর্ত্রীর শেষ কি খাওয়া হয় তাও কেউ জানে না। কর্তার বাজার, অফিস, বাড়ি ভাড়া, সংসারের খরচ চালাতে চালাতে জীবনের বড় অংশ কেটে যায়। টিফিনের পয়সা জমিয়ে কিছু কেনা থেকে রিকশা ভাড়া বাস ভাড়া বাঁচিয়ে কিছু কেনার আশা করতে করতে কিছু টাকা বাঁচিয়ে ছেলে মেয়েদের জন্য কিছু করার সময়ের মুখোমুখি হতে হয়।
না পাওয়া আর না পূরন হওয়ার পাল্লাভারী হলেও মধ্যবিত্ত পরিবার ব্লেস একটি পাওয়া দিয়ে। বন্ধন জিনিষটা খুব শক্ত হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অটুট হয়। কেউ অসুস্থ হলে আনারস কমলা, কলার বহর, রোগীর দর্শনার্থীর ভীড়ে হিমশিম সব। একজনকে বিদায় দিতে ফুল ফ্যামিলি হাজির। সবাই শিল্পপতি হতে পারে না এই বুঝ নিয়ে রাতে খেতে বসা একসাথে। লোডশেডিং হলে কর্তার বাতাস করা, আইপিএস এর টাকা জমানো শুরু করা, মাসের খরচ এদিক ওদিক করা। আলু পটল খেতে খেতে মাঝারী আকারের মাছ মাংস উৎসবের আমেজ আনা। আবেগটা অন্যরকম, অনুভূতিটা সব না পাওয়া কে ছাপিয়ে যায়।
মোটা ঘাড়-গলা নিয়ে তাই হাসফাস করতে করতেও একটু হাসা যায়। মৃত্যুটা অন্যদিন হোক, আপাতত সবার স্বপ্ন পূরনের পয়সা জমাচ্ছে গৃহকর্তা। পূরন হবে কিনা জানেনা কেউই, তবুও সবাই একসাথে হাঁসতে হাঁসতে কিছুর আশায় স্বপ্ন জমাক।।
___________________________________________-স্পর্শনীল।।
ফেসবুকে আমি_ https://www.facebook.com/sparshonil
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৫