অনেক দিন থেকেই বলবে বলবে করে কথাটা বলা হচ্ছে না রুদ্রর। ইলাকে গত ৭ মাস ধরে পড়াচ্ছে সে। খুব প্রেডিক্টেবল একটা ঘটনার মত সে প্রেমে পড়ে যায়। প্রেমে পড়তে পড়তে আরেকজনকে পড়ানো - ব্যাপারটা সোজা না। এই কঠিন কাজটাই গত ২ মাস ধরে করে যাচ্ছে রুদ্র।
"স্যার, এই অঙ্কটা বুঝতেছি না।
"হুম।
"স্যার?
"হুম, কি বললা?
"আপনি আজকাল এমন অন্যমনস্ক থাকেন কেন?
"না, এমনি।
"এনিথিং রং?
"নাথিং রঙ, রং দরকার, চারপাশটা সাদাকালো হয়ে যাচ্ছে।
"চা খাবেন? রং চা?
রুদ্র হা-না কিছুই বলে না। ইলা আস্তে করে চেয়ার ঠেলে উঠে যায় রান্নাঘরের দিকে। কিভাবে জানি সে বুঝতে পারে, স্যারের মাথা ব্যথা করছে । মাথা ব্যথার কারণটা যে সে নিজেই, সেটা হয়তো বুঝে না।
"চা টা খেয়ে নেন।
"হুম।
রুদ্রর মাথা কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে। তার গায়ে ভীষণ জ্বর। নাটক বা উপন্যাসের মত সে বলতে চায়, "আচ্ছা ইলা, আমার গায়ে কী জ্বর? উপন্যাসের ইলা তার কোমল হাত দিয়ে রুদ্রর কপাল স্পর্শ করে। নাটকের ইলা শক্ত করে রুদ্রর হাত চেপে ধরে আর বলে, "স্যার, আপনার তো অনেক জ্বর। মাথায় পানি দিয়ে দিই?
বাস্তবের ইলা রুদ্রকে স্পর্শ করে না। সে জানে না, রুদ্রর গায়ে জ্বর। রুদ্রও জানায় না।
এক মাস পর.....................
আজ ইলার জন্মদিন, রুদ্র কোন গিফট কিনে নি। পকেটে রিকশা ভাড়াও থাকে না আজকাল। অর্থ সংকটে দিন যাচ্ছে। কোন এক কালে কতগুলো চুড়ি কিনে রেখেছিলো সে। লাল নীল কাচের চুড়িগুলো একটা কাগজে মুড়ে রুদ্র হাজির হয় ইলার বাসার সামনে।
"একটু ছাদে আসবে?
"হঠাৎ ছাদে স্যার?
"৫ মিনিটের জন্য।
"আচ্ছা, চলেন।
"শুভ জন্মদিন ইলা।
"থ্যাঙ্কু স্যার।
"এই চুড়িগুলো তোমার জন্য।
"থ্যাঙ্কু স্যার।
"আমি কি চুড়িগুলো হাতে পরিয়ে দিতে পারি?
"সরি স্যার, না।
"ওহ আচ্ছা।
"আমি নিচে যাচ্ছি। আপনি কিন্তু খেয়ে যাবেন দুপুরে।
প্রচন্ড জ্বর নিয়ে রোদের মাঝে বসে থাকাটা খুব ইন্টারেস্টিং। রোদের আঁচ আর জ্বরের আঁচ আলাদা করা যায় না। রুদ্র এখন ঐভাবে ছাদে বসে আছে।
চুড়ির রিনিঝিনি শব্দে পিছনে তাকালো রুদ্র।
"স্যার, খাবেন না?
রুদ্র জবাব দিল না।
"স্যার, দুটো চুড়ি ভাঙ্গা ছিলো, হাত কেটে গেছে।
রুদ্র অবাক হয়ে ইলার ডান হাতটা ধরে খুঁজতে থাকে কোথায় কেটেছে।
মিনিট খানেকের মাথায় বুঝতে পারে, সে বোকা বনেছে। ইলার চোখের দিকে তাকিয়ে রুদ্র ভাবতে থাকে,
"মাঝে মাঝে বোকা বনে যাওয়াটাও অনেক বেশ আনন্দের ।।..................
আজ মাসের ১৪ তারিখ, ইলাকে পড়ানোর শেষে তার হাতে একটি খাম ধরিয়ে দেয়া হয়। রুদ্র খামটা নিয়ে নীরবে বেরিয়ে যায়।
খামে একটা চিঠি ছিলো, কিংবা মাসের আগাম বেতন ছিলো। যার মানে রুদ্রর আর আসতে হবে না এই বাসায়।
এই মুহুর্তে রুদ্রর টাকার খুব দরকার। খুব খুব দরকার।
তবুও এক অজানা আশঙ্কায় রুদ্র খামটা খুলে না। সে খামটা খুলবে না, কিছুতেই না।।
___________________________________________-স্পর্শনীল
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:০২