somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি অলৌকিক ভাষণ

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ (১২/২/২০১৫) একটা স্বপ্ন দেখলাম। এমনিতে স্বপ্ন-টপ্ন দেখিনা খুব একটা। যাদের স্বপ্ন বারে বারে ভেঙে ভেঙে খানখান হয়ে যায় তাদের স্বপ্ন দেখা ঠিক না। আমাদের জাতীয়ভাবে স্বপ্ন দেখা এবং তা ভঙ্গ হওয়া একটা সংস্কৃতি। আমরা আশান্বিত হই, জেগে উঠি, আবার ঢলে পড়ি হতাশায়। তাই স্বপ্ন না দেখা উচিত। কিন্তু আজ দেখলাম।
এটাকে অবশ্য স্বপ্ন না বলে দুঃস্বপ্ন বলা উচিত। দেখলাম, আমি কোন এক মোড়-টোড়, না এই জাতীয় কোন জনসংযোগে দাঁড়িয়ে পড়েছি। অথবা কোন সম্মেলন-টম্মেলন কিছু একটা হবে। সে যাই হোক। সেখানে আমার কিছু কথা আছে সে রকমই ভাব মনে হলো। একটা দরজা খুললাম (মোড়ে দরজা কোথা থেকে এসেছিলো সেটা কোনদিনই খুঁজে বের করতে পারবে না কোন গবেষক, স্বপ্ন বলে কথা!)
আমি এবার কথা শুরু করি, অর্থাৎ ভাষণ। আগে কি ছাই মাথা বলেছি সেগুলো মনে নেই। কিন্তু নিচের কথাটা একেবারে স্মরণযোগ্য। স্পষ্ট মনে আছে। আমি বললাম (আমার গলায় সে কি তেজ! এতো তেজ কোথায় পেয়েছিলাম স্বপ্নে জানি না)
...... মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার বাবা আমাদের সবার বাবা, অর্থাৎ জাতির পিতা বলছেন, যাদের জন্য এ রাজনীতি, তাদের জন্য যারা দু’মুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতে পারে না, তাদের রাজনীতি থেকে সরে যাওয়া উচিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার রাজনীতি ছেড়ে দেয়া উচিত......
এরপরে আরও কিছু বলেছিলাম। কিন্তু আর মনে করতে পারিনি। স্বপ্নের কথা সব কিছু মনে থাকে না। একেবারে যা না ভোলা যায়, অর্থাৎ মনে দাগ কেটে যাবার মত কিছু হলে সেটা মনে থাকে। আমারও সে’রম হয়েছে।
তারপর দেখলাম আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমি নাকি রাষ্ট্রদ্রোহীতার মত জঘন্য অপরাধ করেছি!
যদি স্বপ্নে দেখতাম যে জাতির পিতা বেঁচে আছেন তবে স্বপ্নের মধ্যে কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি তাঁকেও রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে গ্রেফতার করতেন? কারণ এ কথা তো আমার নিজের কথা নয়। এ যে স্বয়ং জাতির পিতার উক্তি!
বিষয়টা কি জটিল হয়ে যাচ্ছে? একে স্বপ্ন, তায় আবার জাতির পিতা সে কথা বলেছিলেন কি না সেটা কিন্তু আমি জানি না। স্বপ্নে আমার মনে হতে পারে যে এটা হয়ত জাতির পিতারই কথা! তাই আমি হরমোন-এর অত্যধিক ক্ষরণ বাঁচাতে মোড়ে মওকা পেয়ে ঝেড়ে দিয়েছিলুম কথাগুলো।
স্বপ্নে আরও দেখলাম যে, আমাকে নিয়ে যাচ্ছে ওরা। ওরা বলতে আমি রাষ্ট্রের চোর ধরার কাজে নিযুক্ত পুলিশদেরকে বুঝিয়েছি। আমি তো চুরি করিনি, কিন্তু তাও আমাকে নিয়ে যাচ্ছে, এটা আমার অনুভব হতে লাগে। পরে বুঝতে পারি আমাকে ওই ভাষণের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু আমি তো মন্দ কিছু বলিনি। দেশে অনাহারক্লিষ্ট মানুষের জন্য রাজনীতিকদের কোন চিন্তা নেই। ইচ্ছেও নেই। থাকবে কেন? রাজনীতি তো এখন সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা, আখের গোটানো পেশা। সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকলে সেই পেশায় বাঁধা পড়তে পারে। ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এটা আঁচ করেছিলেন। তিনি বললেন,
বাবুরা কংগ্রেস করছেন, আস্ফালন করছেন, বক্তৃতা করছেন, ভারত উদ্ধার করছেন, কিন্তু দেশের হাজার হাজার লোক প্রতিদিন অনাহারে মরছে, সেদিকে কারও চোখ নেই।
যাদের জন্য রাজনীতি তাদের সাথে মিশে না গিয়ে দামী গাড়ি আর সাত তারকাওয়ালা লাইফ স্টাইল অবলম্বন করে মুখে বড় বড় কথা বলে যে রাজনীতি, তার নাম ধোঁকা। আমরা কি সেটা বুঝতে পারছি? জনগনের দাবীর মুখেও আমরা রাজনীতিকেরা মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকি। জনগন জিম্মি, কিন্তু আমরা বলি তারা মুক্ত। ক্ষেতমজুর আর কৃষকের ও তাদের পরিবারের নিত্যদিনের হাহাকার রাজনৈতিক সভা-সমিতি আর মিটিং-ফিটিং এর ডামাডোলে চাপা পড়ে গেছে। কিন্তু তার পরও কিছু লেজুড় বুদ্ধিজীবিরা বচন ছেড়ে যাচ্ছেন, কই দেশ তো এগিয়েছে! দেশের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে! ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার প্রশ্ন হলো, ক্ষুধায় যদি এ দেশের একটি, শুধুমাত্র একটি মানুষও কষ্ট পায়, তবে দেশের স্বাধীনতা অর্জন সম্পন্ন হয়েছে বলা যাবে না। আর এখন তো ক্ষুধার্তের পরিসংখ্যন কোটির হিসেব দেয়। তারপরও কি বাগাড়ম্বর –আমরা স্বাধীন! আমরা স্বাধীন, আমরা এগিয়ে গেছি, আমরা পেরে গেছি, আমরা হ্যান, আমরা ত্যান ইত্যাদি বাক্য দিয়ে সাধারণ জনগণকে মাথায় হাত বুলিয়ে চুপ করে রাখা রাজনীতিকেরা আসলে জর্জ বার্নার্ড শ’এর ভাষায় এক সারি ক্ষয়ে যাওয়া মোমের পুতুল, যারা আসলে সীমালংঘনকারী, এবং তারা একটি দুষ্ট ও স্বয়ংক্রিয় সরকার ব্যবস্থার মধ্যে ঝুলে আছে, যে ব্যবস্থার একমাত্র মন্ত্র হচ্ছে ফাঁকা বুলি এবং মিথ্যা গল্প।

সে যাক।

স্বপ্ন এখনও শেষ হয়নি। পথে হেঁটে যাচ্ছি, সংগে পুলিশ। রাস্তায় দেখি পঙ্গপালেরা পড়ে আছে কোটি কোটি। প্রথমে আমার মনে হলো মৃত পঙ্গপাল যেনো নয়, রাস্তায় যেনো বাসর সাজানো, যেনো ফুলের বিছানা। কিন্তু মোহ ভাংলো আমার। অযুত পঙ্গপালেরা কেমন করে ফুলের বিছানায় শোভা পায়! অগুনতি মৃত পঙ্গপালের মধ্য দিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হলো। ভাগ্যিস সে গুলো মৃত মানুষ ছিলো না। নাকি মৃত মানুষই, কিন্তু আমি দেখেছি পঙ্গপাল!
যেতে যেতে আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা। বন্ধু বলতে ছোটবেলায় এক সাথে পড়তাম। আমাকে দেখে বলে, আরে তোর এ কি অবস্থা!
আমি বলি, আরামেই তো আছো। কোনরকমে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে এহন সরকারের ছাত্র সংগঠনের চামচাগিরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার হইছো। এখন যে চীটাররা (আসলে চীট)-ই টিচার হচ্ছে সেটা আস্ত দেখতে পাচ্ছি। আচ্ছা তুই যে ওয়েটিং থেকে চান্স পেলি, না পেলে কি করতি! ভাগ্য ভালো যে তলানি থেকে হলেও উঠে এসেছিস। নইলে নিঘঘাত মন্দিরের পুরোহিত হতে হতো তোকে। তাও তো পারতি না, তোদের তো আবার কাস্ট-ফাস্ট এর ব্যাপার-স্যাপার আছে। কি যে হতো তোর! আমার মনে আছে তুই ভর্তি পরীক্ষার ফল বেরোবার পর নিজের রোল নম্বর খুঁজে পাচ্ছিলি না। আর সে কি দুঃখ তোর! আর ছালে, আর এখন মওকা পেয়ে ফুলে উঠেছিস! আর বুকও ফুলছে আত্মগর্বে! তোর নিজের মধ্যে কি কোন লজ্জাবোধ নেই!
দেখি, ও হাসে আমার কথা শুনে। বুঝতে পারি ওর কোন লজ্জা করছে না। লজ্জা না পাওয়ারই কথা। আমরা যুগবোধ হারিয়ে ফেলেছি, লজ্জাবোধের প্রশ্নই ওঠে না।
আমাকে এরপর টানতে টানতে নিয়ে আসা হলো জেলখানার সামনে। সেখানে দেখি স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে! তাঁর সাথে আমার কথা হচ্ছে –
এ সব কি কথা বলা হয়েছে?
ক্ষমা করবেন, কোন কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?
বুঝতে পারছো না, কচি খোকা সাজা হচ্ছে বুঝি?
ক্ষমা করবেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মানে মানে...
আমার বাবাকে নিয়ে...
মানে মহান জাতির পিতাকে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?
তবে আর বলছি কি!
কিন্তু ক্ষমা করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কথাগুলো ঠিক প্রধানমন্ত্রীসুলভ হচ্ছে না......

তখন আমার আবার মনে হতে থাকে আমি আর কোন এক জন -সংগমে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছি। সামনে অনেক মানুষ। তারা সবাই আমার কথা শুনছে। চারিদিকে নিরবতা। কেউ কোন কথা বলছে না। এক পাশে প্রধানমন্ত্রীও দাঁড়িয়ে আছেন। আমি বলছি -
...... জনগনের মৌলিক অধিকার নিয়ে রাজনীতির যে ইশতেহার ছিলো তার কিছু কি পালিত হয়েছে, আপনারা-ই বলুন। কেন চুপ করে আছেন? কেন চুপ করে থাকবেন? আর কতদিন চুপ করে থাকবেন। গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থেকে এ দেশের স্বার্থবাদী রাজনীতিকেরা আগেও রাষ্ট্রীয় সংকট তৈরি করেছে, আজও আমাদের মতামত, জীবন ও ইচ্ছের কোন মূল্য দিতে তারা মোটেও ইচ্ছুক নয়......
অর্থাৎ ভোটের আগে তারা (ভোটার এবং জনগণ) ছিলো। এখন ক্ষমতা পেয়েছি। এখন তারা অতীত। অনেকটা বার্কলের দর্শনের মত, আমার সামনে যা আছে, তা আছে, আমি যদি এখানে না থাকি, তবে সে জিনিষগুলোকে বলতে হবে, তারা ছিলো - ভোটের আগে জনগণ আছে। কিন্তু ভোটের পরে, তারা ছিলো । অর্থাৎ রাজনীতিকদের মনে হওয়া ছাড়া জনগণের কোনও অস্তিত্ব নেই। ফলে, মনে যদি না হয় যে জনগণ আছে, তবে কার জন্য এত এত কাজ, আর কি-ই বা হবে সে কাজ করে! অতএব নিজের আখের গোটাও।
প্রধানমন্ত্রী তখন আঙ্গুলের ইশারা করলেন পুলিশদেরকে। এর অর্থ, পুলিশ, লে যাও ইস বদমাসকো।

পুলিশ আমাকে টানতে টানতে নিয়ে যায়।

তবে কি সত্য ভাষণের জন্য আমার এই শাস্তি?
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×