somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাইনাস

০৪ ঠা আগস্ট, ২০০৮ রাত ২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[এই লেখা কাউকে হেয় করার উদ্দেশ্যে নয়। বরং নিজেকে ডিফেন্ড করার উদ্দেশ্যেই লেখা। কেউ ভিন্ন কিছু ভাবলে ভাবতে পারেন। ভাবাভাবির উপর তো আর তলোয়ার চলেনা। ]

কিছুদিন আগে পত্রিকায় একটা লেখা পড়লাম। ইদানিং কালে ছাত্র ছাত্রীরা নাকি বিজ্ঞান পড়ার আগ্রহ হারিয়ে বাণিজ্যের দিকে ঝুকছে। খবরটা পড়ে একটু নস্টালজিক হয়েছিলাম। মেডিকেল, আইবিএ এবং বুয়েট এই তিনটার কোনটাতে যাবো এই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে আমার হয়ে আমার পরিচিতজনেরা ভুগেছেন। অথচ আমি আইবিএর গ্ল্যামার আর মেডিকেলের জনপ্রিয়তাকে বিনীত ভাবেই পাশ কাটিয়ে বুয়েটের অস্পৃশ্য একটা ডিপার্টমেন্টে বিনা দ্বিধায় নাম লিখালাম। এরপর থেকেই আমার আইবিএর বন্ধুরা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেছে। কখনো তা ফেরত দিতে পারিনি। তারা যখন অর্ধলক্ষাধিক টাকা এসিরুমে বসে কামায় তখন সারাদিন কায়ক্লেশে কাটিয়েও তাদের অর্ধেক টাকা কামাতে পারিনা। তাও যে চাকুরি আমার, তা অনেক কষ্টে সৃষ্টে পাওয়া। আমার পোস্টে নাকি এমবিএ করা মেধাবী (!) এক এপ্লিকেন্টের দরকার ছিল। দুর্ভাগ্যবশত এত কম টাকায় এমবিএ করা কেউ রাজী হয়নি বিধায় বাধ্য হয়ে আমাকে নিতে হয়েছে।

যদিও এখন আমার ভাগ্য বদলেছে। বিদেশে দেশের ব্রেন ড্রেন হয়ে গেল বলে যারা হই হই করেন তারা দেশের মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির উচ্চ বেতন প্রাপ্ত চাকুরিজীবী ছাড়া কারো হাতে মেয়ে/বোনকে দিতে চাননা। প্রবাসীরাই যে দেশের দুঃখ দুর্দশায় বিভিন্ন সময়ে এগিয়ে আসে, দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড হয়ে দাড়িয়ে আছে, প্রবাসী কৃতি ছাত্রছাত্রীদের গড়ে দেওয়া রেপুটেশনে দেশের সুনাম পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে এইসব অবলীলায় ভুলে গিয়ে মেধা পাচারের ব্যাপারটাই আমাদের চক্ষুশূল হয়। আমার অভিজ্ঞতায় প্রবাসীরা যথেষ্টই দেশপ্রেমিক। দেশের কাউকে পেলে তারা দুহাতে বরণ করেন যা দেশে থেকে দেশের অনেক মানুষই করেনা। তবে এর ব্যতিক্রম আছে। জনৈক কানাডা প্রবাসী এক মেয়ের সাথে একদিন চ্যাট করছিলাম। তার কথা শুনে আমি হতভম্ভ। সে -

ক) বাংলাদেশ ছেড়েছে কারণ বাংলাদেশের 'কালচার' আর 'মেনটালিটি' তার কাছে পছন্দ না।
খ) কানাডার বিশেষ এক স্থানে অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ায় ভালো বাসা পাওয়া সত্ত্বেও অন্য এক এক্সপেনসিভ স্থানে সে থাকে কারণ আগের অংশটিতে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের লোকেরা বাস করে যারা তার ভাষায় খুবই নোংরা।
গ) বাংলাদেশে খুব গরম ও নোংরা বলে আসতে চায়না।
ঘ) চ্যাট করছিল কানাডার আইডেনটিটি ঝুলিয়ে, বাংলাদেশের না।

আমি যথাসম্ভব ভদ্রভাবে আমার বিরক্তির কথাটা প্রকাশ করে কথোপকথনের ইতি টানলাম। তর্ক করলাম না কারণ আমাকে সে চিনে না। আমিও তাকে চিনিনা। সে কেন আমার কথা শুনবে? তাই বলে আমি যে বিরক্ত হয়েছি সেটা এক কথায় বলে কি ভুল করেছি?

এখন ধরেন ব্লগে কোন লেখা পড়ে আপনার ভালো লাগলো না। কিন্তু দেখলেন ভালো লাগেনাই এমন আরেকজনের মন্তব্য লেখক মুছে দিয়ে অতঃপর তা সবাইকে জানিয়ে প্রচ্ছন্ন ভাবে এটাই বোঝাচ্ছেন যে, ডোন্ট রাইট নেগেটিভ কমেন্টস হেয়ার, কজ দে উইল বি ডিলিটেড লাইক দিস, তখন আপনি কি করবেন? নীরবে মাইনাস দিয়ে চলে যাবেন? তার কথার যুক্তিসংগত বিরোধিতা করবেন? লক্ষ্য করুন, আপনার অপছন্দের কথাটি যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পারছেন না। কারণ পছন্দ না হলেই লেখক সেই মন্তব্য ডিলেট করে দেয়ার দৃষ্টান্ত রেখেছেন।

আবার ধরেন আপনার লেখা একটি পোস্টে এমন মন্তব্য হল যেটা আপনার পছন্দ হলনা। আপনি কি করবেন? ডিলেট করে দিবেন? ডিলেট করে অতঃপর সবাইকে তা জানাবেন যে আপনার ভালো লাগেনি তাই ডিলেট করে দিয়েছেন? তাহলে এমন লেখার মানে কি? শুধুই ধন্যবাদ পাওয়া? সেই লেখার বিপরীতে আমি যদি লিখি "বিনা দ্বিধায় মাইনাস দিলাম। নেন আমার কমেন্টটাও ডিলেট করেন।"। এই মন্তব্য পড়ে আপনি খুচিয়ে খুচিয়ে আমার প্রকাশভঙ্গির আক্রমণাত্মক অংশটুকু জোর করে উপড়ে তুলবেন, মুক্তহস্তে যে ঘৃণাটুকু দিলাম সেইদিকে চেয়েও দেখবেন না! আপনি যেখানে নিজেই যুক্তিসংগত এক মন্তব্য ভালো লাগে নাই এই অজুহাতে ডিলেট করে অতঃপর ফলাও করে প্রচার করলেন, সেখানে "মাইনাস দিবেন ভালো কথা, যুক্তিসংগত কারণ দেখিয়ে দিন।" এই ধরনের আহ্বান জানান কোন যুক্তিতে?

যাই হোক আপনি লেখক, আপনার কাছে মনে হল আমার এক লাইনের মন্তব্যটি আক্রমণাত্মক। আপনি পোস্ট লিখে দিলেন এই নিয়ে। লিখলেন এইসব মন্তব্য পড়লে ইচ্ছে করেনা লিখতে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল প্রথম যিনি প্রতিবাদ করেছিলেন, যার লেখা আপনি ডিলেট করে দিলেন পছন্দ হয় নি তাই, তা নিয়ে আপনি কোন কথাই বললেন না। সেটা ভালো লাগেনাই তাই ডিলেট এন্ড নো কমেন্টস; অথচ আপনার এমন স্বৈরাচারী মনোভাব দেখে বিরক্ত হয়ে আমি যখন লিখলাম "নেন আমার কমেন্টটাও ডিলেট করেন" তখন আপনি সেটা নিয়ে বিষাদ কাব্য রচনা করে বসলেন। কেন আমারটাও "ভালো লাগেনাই" বলে ডিলেট করলেন না? আমার এই বিরক্তিভাব কি সরাসরি বিরোধিতা করে করা ঐ মন্তব্যের চেয়েও অগ্রহণযোগ্য ছিল? নাকি আরেকজনের উপর রাগ আমার উপর ঢাললেন? জনপ্রিয় একজন ব্লগারের সাথে তর্ক করার সাহস না পেয়ে আমার মত অজনপ্রিয় এক ব্লগারের পিন্ডি চটকালেন?

আমি খুবই অজনপ্রিয় একজন ব্লগার। ভালো লিখিনা, তাই লেখা কেউ পড়েনা। স্বাভাবিক। আমি তাও লিখি ব্লগের পাতায় নিজের লেখা দেখতে ভালো লাগে তাই। রাজনীতি বা ধর্ম নিয়ে কোন বিতর্কিত মন্তব্য করিনি, পোস্টও দেইনি। অদ্যাবধি কারো পিছনে লাগার প্রশ্নই আসছেনা। যখন পানি দিয়ে গাড়ি চালানো বিষয়ক খবর একটা দুইটা পত্রিকায় এলো তখন কয়েকজন অতি উৎসাহী মুখ দেখে আমি বলেছিলাম এতো আশাবাদি হওয়ার কিছু নাই। এতে জনৈক ব্লগার আমাকে রীতিমত গালি গালাজ করলেন। আমি নাকি দেশের মানুষের কৃতিত্ব সহ্য করতে পারছিনা। তার নিক ইংরেজিতে এবং তিনি আমাকে 'থ্যাংকস' বলতে শেখার উপদেশ দিলেন, ধন্যবাদ নয়। অথচ মজার ব্যাপার তিনি আমাকে গালি দিলেন বাংলায়। গালির কাজেই যিনি শুধু বাংলাকে বেছে নেন তার কাছে দেশকে ভালো না বাসার অভিযোগে গালি খেলাম। তবু তার একটাও প্রতিবাদ করিনি। কারণ যিনি গালি দিলেন তার প্রোফাইলে গিয়ে দেখি তিনি বছরখানেক ধরে ব্লগিং করে কষ্টেসৃষ্টে একটিই পোস্ট লিখেছেন। এমন একজনের কথা ধরে অন্য ব্লগারদের সহানুভূতি চাওয়া অর্থহীন।

আমার মতে ব্লগে অনেকের লেখাই ওভাররেটেড। অনেকের ভিন্নমত থাকতেই পারে। হতে পারে আমার বিচার বিশ্লেষণ তীক্ষ্ণ নয়। তবু মনে হয়, একটি লেখা কেন খারাপ লাগলো সেই যুক্তির পাশাপাশি একটি লেখা কেন ভালো লাগলো সেটাও বলার সময় এসেছে। খারাপ লাগলে যুক্তি চাইবেন, ভালো লাগলে বলবেন 'ধন্যবাদ', তা হবেনা। ভালো লাগারো যুক্তি দিতে হবে।

নির্ঝঞ্ঝাট ব্লগ জীবন শুরু করেছিলাম। এখন পর্যন্ত কোন মাইনাস পাইনি। এবার মনে হয় পাবো। তাতে কি খুব বেশি খারাপ হবে? যুদ্ধ ক্ষেত্রে অঙ্গহানীর অযুত সম্ভাবনা থাকলেও যুদ্ধ করতে হয়, নয়তো শুয়ে বসে কাটালে মহামারীতে একদিন সবার ঘায়েল হওয়া দেখতে হবে। এর চেয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে মরাই কি শ্রেয় নয়? এই মরায় অন্তত শান্তি আছে। সেটা কেউ দেখুক আর নাই দেখুক।


সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০০৮ রাত ২:৫১
১৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×