somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্যালা রে প্রধানমন্ত্রী, বেঁচে থাকুন চিরকাল...

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুই নেত্রীকে আলোচনার টেবিলে বসাতে দেশী বিদেশি অনেকেই দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছেন। এ দৌড়ে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন সদ্য নির্বাচিত মার্কিন পররাষ্ট্র সেক্রেটারি জনাব জন ফরবস্‌ কেরি। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল সহ আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের অনেক উঁচু মাপের নেতারা বার্তা পাঠাচ্ছেন, প্রতিনিধি পাঠিয়ে নিশ্চিত করতে চাইছেন আলোচনার মাধ্যমেই যেন মিমাংসা হয় বাংলাদেশের সমস্যা। আমরা যারা দেশীয় ম্যাঙ্গো এবং দৌড় আগরতলা হয়ে চৌকির তলা পর্যন্ত তাদের ধারণা করতে অসুবিধা হয়না দেশ নিয়ে বিদেশিদের এসব শর্ট টার্ম দৌড় কোথায় গিয়ে হোচট খাবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোন অবস্থাতেই ব্যক্তিগত পছন্দ এবং সিদ্ধান্ত হতে সরে আসবেন না। ব্যাপারটা প্রায় প্রতিদিন খোলাসা করছেন তিনি। নির্বাচন হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেত্রীত্বে এবং বহাল থাকবে বর্তমান মন্ত্রীসভা, সংসদ এবং ক্ষমতাসীন দলের গোপালগঞ্জীয় প্রশাসন। এতসব প্যাচালে না গিয়ে সোজা বাংলায় বলতে পারি, ক্ষমতা ছাড়ছেন না জনাবা শেখ হাসিনা।

’নন্দের ভাই কলেরায় মরে দেখিবে তারে কেবা!
সকলে বলিল, ‘যাও না নন্দ করো না ভায়ের সেবা’
নন্দ বলিল, ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার ভেবেদেখি চারিদিক’

দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের বিখ্যাত নন্দলাল কবিতাখানি কি পাঠকদের মনে আছে? উপরের লাইন গুলো একই কবিতা হতে নেয়া। সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে নন্দের আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বসিয়ে দিলে কোথায় যেন একটা সমান্তরাল খুঁজে পাওয়া যায়। দেশের নব্বই ভাগ মানুষ বলছে নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই। প্রায় ৯৯ ভাগ রাজনৈতিক দল বলছে তত্ত্বাবধায়ক না দিলে নির্বাচনে যাবো না। দেশের সুশিল সমাজ আশংকা করছে তত্ত্বাবধায়কের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে ভয়াবহ নৈরাজ্যে ডুবে যাবে দেশ। কে শোনে কার কথা! বোনের মেয়ের বিয়েতে বিলাত গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবিস্কার করলেন ওখানে তত্ত্বাবধায়ক নেই, তাই গো ধরলেন আমাদের কেন! গণতন্ত্রের জন্য উনার মায়াটা বোধহয় একটু বেশিই। তাই অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে অপরাগ। হয়ত এতে জড়িয়ে আছে একধরনের দায়বদ্ধতা! বাকশাল দিয়ে উনার পিতা গণতন্ত্রের যে মহান যাত্রা শুরু করেছিলেন কন্যা হিসাবে তা ধরে রাখা নিশ্চয় পবিত্র কর্তব্য। তাই গোটা দেশ কলেরায় ডুবে গেলেও মহান গণতন্ত্রের কারণে তিনি নির্বাচিত সরকার বলি দিতে রাজি নন। আসলেই কি তাই? উন্নয়নের যেসব ফিরিস্তি বিলবোর্ড এবং দলীয় মিডিয়াতে ঘুরপাক খাচ্ছে তা বিশ্বাস করলে কেবল সামনের নির্বাচন কেন, আগামী একশ বছরের সবকটা নির্বাচনে শেখ হাসিনার জয় লাভ করার কথা। তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভয়টা কোথায়? ১৭৩ দিনের হরতাল, গান পাউডার দিয়ে বাসে আগুন লাগিয়ে মানুষকে জীবন্ত কবর দেয়া, লগি-বৈঠার তান্ডবে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করে লাশের উপর ব্রাজিলিয়ান সাম্বা নাচ, বঙ্গ ভবনের পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেশের প্রেসিডেন্টকে ভাতে মারার হুমকি, এসব কি তাহলে হাজার বছর আগের আরব্য উপন্যাস হতে নেয়া? জাতি হিসাবে আমরা কি এতটাই পঙ্গু যে এত তাড়াতাড়ি এসব ভুলে যাব? নাকি কেবল শেখ হাসিনার প্রয়োজনে মনে করব, আবার শেখ হাসিনার প্রয়োজনেই তা ভুলে যাব? কোনটা? দল হিসাবে আওয়ামী লীগ যদি ব্যাপার গুলো খোলাসা করে দেয় আমার মত স্মরণশক্তি সমস্যাযুক্ত নাগরিকদের বুঝতে সুবিধা হবে।

সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণে দেখলাম সরকার নাকি তার নিয়ন্ত্রণাধীন চার ব্যাংককে বিশ্বব্যাংকের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে। এ অনেকটা এয়ার এম্বুলেন্স ভাড়া করে দেশের রাষ্ট্রপতিকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানোর মত। দুর্নীতি, ঋণ কেলেংকারি এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের গণধর্ষণের শিকার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এসব ব্যাংক এখন মুমূর্ষু রুগী। ১৭ হাজার কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি নিয়ে মৃত্যু পথযাত্রী ব্যাংক গুলোর জন্যে বিশ্বব্যাংক ইতিমধ্যে প্রেসক্রিপশন ইস্যু করেছে। প্রথম দাওয়াই, নতুন মূলধন সংগ্রহ, যা শর্টটার্ম দাওয়াই হিসাবে বিবেচিত হবে এবং দ্বিতীয় দাওয়াই, আমূল সংস্কার, যা হবে লং টার্ম চিকিৎসা। বলা হচ্ছে এসব ব্যাংক আর্থিকভাবে এতটাই দুর্বল বিশ্ব বাজারে এসব ব্যাংকের ঋণপত্র অসম্মান করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এসব ব্যাংক হতে লুটপাট এখন অনেকটা রাজনৈতিক ইস্যু। জনগণও হয়ত মেনে নিয়েছে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের টাকা নির্বাচনী ম্যান্ডেটের আওতায়। অর্থাৎ যারা ক্ষমতায় আসবে তাদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে ব্যাংকের ভোল্ট। চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ যদি সরকারের অর্থমন্ত্রীর বিচারে তেমন কোন ব্যাপার নয় তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি এ ধরণের হরিলুট সত্যায়িত হয় অতি উঁচু মহল হতে।

একই পত্রিকার অন্য এক খবরে প্রকাশ গ্রামীন ব্যাংকে অনিয়ম এবং কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে নোবেল লরিয়েট ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসকে বিচারের আওতায় আনা হবে। চার চারটি মুমূর্ষু সরকারী ব্যাংককে বাঁচানোর তাগিদে ’এয়ার এম্বুলেন্সে’ করে বিদেশ পাঠানো হচ্ছে, অথচ শতকরা ৯৯ ভাগ ঋণ আদায়ে সক্ষম এবং প্রায় একক প্রচেষ্টায় বেড়ে উঠা লাখ লাখ বিশ্বস্ত গ্রাহক সহ গ্রামীন ব্যাংককে নেয়া হচ্ছে ছাত্রলীগের আওতায়। সংগত কারণে আশা করা যায় আগামী টার্মে সফল এই ব্যাংককে বিদেশ পাঠাতে জাম্বো জেট ভাড়া করার প্রয়োজন পরবে। সরকার প্রধানের বোধহয় জনগণের মুখের ভাষা পড়তে কষ্ট হচ্ছে। তা না হলে নিশ্চয় বুঝতে পারতেন সময়টা এখন উনার নয়। অপকর্ম যা করার তা ইতিমধ্যে করা হয়ে গেছে। ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসকে শাস্তি দেয়ার অপকর্ম কেবল ভোটের সংখ্যা কমাতে সাহায্য করবে। ক্ষমতা শেষ মঞ্জিলটার দূরত্ব মাত্র ৩/৪ মাস। এ সময়টা পার হলেই বদলে যাবে দৃশ্যপট। ডক্টর মোহম্মদ ইউনূস নন, জেলখানার চৌহদ্দিতে ততদিনে ভীড় বাড়তে থাকবে নতুন আসামীর পদভারে। কে জানে সে মিছিলে হয়ত লতিফ সিদ্দীকি অথবা শেখ হাসিনার মত গণতন্ত্রের পূজারীদেরও দেখা যেতে পারে। তাই উপদেশ থাকবে শেষবেলায় সরকার যেন দেশের জেল-হাজত গুলো মেরামতের দিকে নজর দেন। কে জানে কাকে কতদিন থাকতে হয়!
http://www.amibangladeshi.org/blog/09-10-2013/1401.html
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×