somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছ্যার ছ্যার আলীর লী কুয়ান বধ!

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভংগারচর মোড় হতে বাঁক নিয়ে বিষনন্দী বাজারের দিকে এগুতেই নজরে আসলো ইঞ্জিনের নৌকাটা। ছইয়ার উপর কেউ একজন লাল গামছা উড়াচ্ছে। দূর হতে চেহারা না দেখা গেলেও যারা বুঝার বুঝে নিয়েছে, এ তাদের ছ্যার ছ্যার। গঞ্জের বাজার হতে দুনিয়া জয় করে বাড়ি ফিরছে সদাসদি ইউনিয়নের হবু চেয়ারম্যান। ইলেকশন সামনে রেখে অনেকদিন ধরেই মাঠে। গেল বিষ্যুতবার হাটে হাতী নামিয়ে ঘোষণা দিয়েছে পার্টির নমিনেশন এখন তার বগলের তলায়। যদিও সপ্তাহ ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ইলশা হাজীর নাম। গ্রামে গঞ্জে গুজব রটে গিয়েছিল ছ্যার ছ্যার না, এ যাত্রায় দলীয় আনুগত্যের পুরস্কার পেতে যাচ্ছে ইলিশা হাজী। গেল সপ্তাহে জেলা শহরে গিয়ে এমন একটা কাজ করেছিল যার কারণে পার্টির আরশ পর্যন্ত নাকি কেঁপে উঠেছিল। আর সে কম্পনের ঢেউ সাত-সমুদ্র তের-নদী পাড়ি দিয়ে সুদূর বর্গী দেশও কম্পন তুলেছিল। আর তাতেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল ইলশা হাজীর নমিনেশন। ইলশা ইচ্ছা করেই কাউকে বলতে চায়নি সাফল্যের এ রহস্য। কিন্তু পরদিন সাপ্তাহিক টাউটারি বার্তায় খবরটা ফলাও করে প্রচার করার কারণে কারও জানতে বাকি থাকলোমা। গঞ্জের গড়পড়তা ২০টাকা ফির বছর আলী উকিলের মাধ্যমে কোথাকার কোন মাফুজ আনামের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ইলশা হাজী। তার প্রাণপ্রিয় মা জননীকে অপমান করার প্রতিশোধ নিতেই নাকি এ মামলা। কিন্তু স্থানীয় মুরুব্বিদের ধারণা ইলশা হাজীর এ নতুন চাল দলের নমিনেশন পাওয়ার ধান্ধা বৈ অন্যকিছু নয়। এসব কাজে সে সিদ্ধহস্ত। টাউটারি বার্তার খবরটা পড়ে ছ্যার ছ্যার আলী মূষরে পরেছিল। এবং কি করে ইলশাকে ওভারটেক করা যায় এ চিন্তায় বিভোর হয়ে গেল। হঠাৎ করেই সমাধানটা তার মাথায় এলো। অবশ্য তার মাথায় এমন দুনিয়া কাঁপানো বুদ্ধি আসতে পারে তা গাজীপুরার মানুষ কস্মিনকালেও বিশ্বাস করবেনা। উপরওয়ালাদের কেউ পয়সা খেয়ে এ বুদ্ধি দিয়েছে এ ব্যাপারে কারও মনে সন্দেহ রইলোনা।

নৌকা ঘাটে ভিড়তে জয়বাংলা শ্লোগানে আকাশ বাতাস হেলে উঠলো। সে কম্পনের ঢেউ বর্গীদেশে না পৌছলেও হাংগাইল্যাপাড়ার ইলশা হাজীর উঠোন পর্যন্ত পৌছবে এ ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত ছিল। গঞ্জে যাওয়ার আগে তেমন ব্যবস্থা করেই নৌকায় পা রেখেছিল ছ্যার ছ্যার। দিনের আনন্দ রাতের অন্ধকার পর্যন্ত গড়ালো উদিংগা বাজারে নিজস্ব আড়তে পান-তামুকের আসরের মধ্যদিয়ে। সেখানে ইয়ার দোস্তদের নিয়ে মৃতসঞ্জীবনী সূরা পান করে গায়ে গতরে জ্যান্তসঞ্জীবনির জোয়ার নামালো। আসর মধ্যরাত পর্যন্ত গড়ালো। এক ফাঁকে ছোটকালের দোস্ত ডেঙ্গুর আলী সাহস করে জিজ্ঞেস করে ফেললো, "দোস্ত, কি এমন যাদু দিয়া তুমি দুনিয়া জয় করলা?" আষাঢ় মাসের আসমান গর্জনের মত গর্জে উঠলো ছ্যার ছ্যার। হুংকার দিয়ে উঠলো, "বেতমিজ ইলশা মামলা করছে নেত্রীর লাইগ্যা, আর আমি করছি তার বাপের লাইগ্যা। তুমরাই কও, বাপ বড় না বেটি বড়?" ঢেঙ্গুর হতাশ হল। তার বন্ধু আকারে ইঙ্গিতে কি বলতে চাইলো কিছুই বুঝতে পারলোনা। বন্ধুর পা জড়িয়ে আকুলি বিকুলি করে উঠলো, "দোস্ত, যা কওয়ার তা সোজা বাংলায় কও। ইলশার মত ইংরেজি মারাইওনা"। দরাজ গলায় কথা বলতে ভালবাসে ছ্যার ছ্যার। এ সময়টায় নিজকে চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান লাগে। গর্বে বুক ফুলে উঠে। 'আরে তোমারা এসব বুঝবানা। মাবুদে আমারে বিশেষ মগজ দিয়ে দুনিয়ায় পাঠাইছে তোমগো সেবার লাইগ্যা। তো বলতে অসুবিধা নাই, দুরের শহর সিঙ্গাইরের আলী কোপানের বিরুদ্ধে মামলা করছি। হেয় নাকি আমার পিতারে লইয়্যা চাইর দশক আগে কটাক্ষ করছে। পিতা গেছে বিদেশে। সাথে গেছে তার প্রাইভেট উড়াজাহাজ। সাতদিন ধইরা জাতির লাইগ্যা বিদেশে দেন-দরবার করছে। আর এই নাদানের বাচ্চা নাদান আলী কোপান নাকি কইছে, এ হালায় কিমুন নেতা যে কিনা সাতদিন ধইরা একটা উড়াজাহাজ বিমানবন্দরে ফালাইয়া রাকছে! আমার বাবার অপমান মানে গোটা জাতির অপমান... স্বাধীনতার অপমান। বলতে গিয়ে রীতিমত ঘেমে উঠলো ছ্যার ছ্যার। ঢেঙ্গুর এ যাত্রায়ও কিছু বুঝতে পারলোনা। বেফাঁস কথা বলে ফেললো, 'তা তোমার বাপ আছিল গাজীপুরার নাম করা ডাকাত। লাল মিয়া চেয়ারম্যানের ডাইন হাত। হের আবার মান অপমান কি? হেয়তো মইরা গেছে গণ্ডগোলের বছর।' কষে একটা থাপ্পড় মারল ঢেঙ্গুরের গালে এবং হায় হায় করে উঠলো ছ্যার ছ্যার...'কিয়ের মধ্যে কি, পানিভাতে ঘি! আরে মাদানির পুত মাদানি, আমার বাপের অপমানে মামলা করলে কি নমিনেশন মিলবো? বাপ মানে আমাগো তাইনের বাপ। জাতির বাপ।' আসরের একমাত্র শিক্ষিত ইয়ার মাদ্রাসার শিক্ষক কেয়ামতউল্লাহ দুলদুলানি পায়ুপথে বাতাস নিষ্কাসনের সাথে আসরের বাতাসও ভারী হয়ে উঠল। সবাই বুঝে নিলো দুলদুলানি এবার মুখ খুলবে। কিছু বলার আগে এমনটাই করে সে। 'তা ছ্যার ছ্যার, আলী কোপান নামডা কেমন জানি আমার কাছে সন্দেহের মনে হয়। মনে হয় দেশি না। ইরানী ইরানী গন্ধ পাওয়া যায়। তা তুমি যাচাই বাছাই কইরা মাঠে নামছো তো?' 'ওয়াসতাগফেরুল্লাহ বিন মোহম্মদ দুলদুলানি, বেআক্কেলের মত এইডা তুমি কি কইলা, মাল কি খুব বেশি টানছো?' সিঙ্গাইর বাজারের আলী কোপানের সন্ধান আমি জেলা কমিটির সভাপতির কাছ থিকা অনেক কষ্ট কইর‍্যা আদায় করছি। পকেট হইতে মালও কিছু খইস্যা গেছে। আর তুমি কিনা এ নিয়া তামশা করলা!' রাত গড়ানোর সাথে পেটের মালও গড়াতে থাকলো। শেষরাতে রিসিপাড়ার গোরস্থানের সবকটা শেয়াল একসাথে হুক্কা হুয়া ডাক দেয়ার সাথে আসর থামাতে হল। জাংগাইলা বাজারের ঘোড়া মাওলানার নির্দেশ, ইলিকশনে পাশ করতে চাইলে শেয়ালদের ডাকেও কান দিতে হবে। না মানলে খালি ইলেকশনে ফেল না, ওলাউঠা বিবিও আওয়াদানি শুরু করতে পারে।

পরদিন টাউটারি বার্তায় ফলাও করে ছাপা হল ছ্যার ছ্যার আলীর মামলার বিবরণ। মামলার বিবাদী আধুনিক সিংগাপুরের আর্কিটেক্ট লী কুয়ান। বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৭৩ সালে কানাডায় না কোথায় শেখ মুজিব বাংলাদেশ বিমানের একটি বিমান এয়ারপোর্টে সাতদিন বসিয়ে সম্মেলন করেছিলেন। তাতে কটাক্ষ করে লী কুয়ান কি একটা মন্তব্য করেছিলেন। ছ্যার ছ্যারের উকিল লী কুয়ানকে আলী কোপান বানিয়ে মামলা করে বেশকিছু হাতিয়ে নিয়েছে নমিনেশনের লোভ দেখিয়ে। অবশ্য এ মামলা মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের অন্যান্য নেতাদের মাঝে মহামারীর মত ছড়িয়ে পরে কিনা তা দেখার জন্য আমাদের কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। জনাব নাঈমুল ইসলাম খানের টাউটারি বার্তার দিকে নিয়মিত নজর রাখার অন্য পাঠকদের অনুরোধ করবো।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ড্রেনেই পাওয়া যাচ্ছে সংসারের তাবৎ জিনিস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫০



ঢাকার ড্রেইনে বা খালে কী পাওয়া যায়? এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) একটি অভুতপূর্ব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাতে ঢাকাবাসীদের রুচিবোধ অথবা পরিচ্ছন্নতাবোধ বড় বিষয় ছিল না। বড় বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×