somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যু পথযাত্রী মাদকাসক্ত একজন পিতার-তার অনাগত সন্তানের কাছে শেষ প্রার্থনা ।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় সন্তান অনেক আবেগ আর ভাল বাসা নিয়ে তোমায় লিখছি আজ । জানিনা এই চিঠি , এই আকুল আকতি, তোমার জন্মদাতা পিতার এই প্রানের প্রার্থনা তোমার কাছে কোনদিন পৌছাবে কি না । তুমিতো এখনও চোখ মেলোনি এই পৃথিবীর আলোয়। তুমি তোমার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছ তোমার মমতাময়ী মায়ের মধ্যে ।তার রুগণ শরীরের ভেতর দিন দিন বেড়ে উঠছ তুমি ।আমি তোমার মায়ের পেটে হাত রেখে তোমার অস্তিত্ব অনুভব করি । তোমার নড়াচড়া , তোমার এক্কা দোক্কা সব বুঝতে পারি আমি ।

প্রিয় সন্তান, আক্তারের হিসাব অনুযায়ী আরো প্রায় দুই মাস সময় লাগবে তোমার আসতে । সবাই তোমার আগমনের অপেক্ষায় অপেক্ষমান ।তোমার দাদুমণি, তোমার কাক্কু, তোমার খালামণিরা সবাই তোমার তুলতুলে গালে আদর দিতে অপেক্ষমান । সবাই কান পেতে আছে তোমার প্রথম কান্নার পবিত্র সংগীত শুনতে । ভালবাসার নকসি কাঁথা নিয়ে সবাই প্রস্তুত তোমাকে বরন করতে । তোমার আসতে এত দেরী হচ্ছে কেন প্রিয় ।

প্রিয় সন্তান আমার, ডাক্তার বলেছেন তুমি আমাদের কন্যা সন্তান । দুই দিন ধরে কেবলই ভাবছি তোমার একটা নাম দেওয়া দরকার । একটি সুন্দর কবিতার মতো নাম । কিন্তু কিছুতেই মনে আসছে না সে রকম নাম। ভারী বিপদ হলো তো! তোমার জন্য একটি নাম খুজে পাচ্ছি না । আচ্ছা তুমিই বলো যেন তেন নাম হলে কি চলে । আমার মেয়ের নাম হতে হবে কবিতার মত সুন্দর , তাই না! আচ্ছা পারমিতা নামটা সুন্দর না? পছন্দ হয় তোমার? ঠিক আছে তোমার নাম দিলাম পারমিতা। পারমিতা মানে কি জান? পারমিতা মানে হল লক্ষি মেয়ে, যে তার আম্মুর কথা শোনে; নড়াচড়া করে না। নড়াচড়া করলে যে আম্মুর ভারি কষ্ট হয় তুমি বোঝনা কেন সোনা ।

প্রিয় পারমিতা তুমি দেখতে কেমন হবে-তোমার চোখ কেমন হবে, চুল কেমন হবে, আমি জানব না । তুমি হাসলে তোমাকে কেমন দেখাবে, অভিমানের অশ্রু ঝরলে তোমাকে কেমন লাগবে , আমি কিছুই দেখতে পাব না । প্রতিবেশী কোন দুষ্ট ছেলে তোমার কটু কথা বললে, আমি এক ধমকে তার পিলে চমকে দিতে পারব না । মৃত মানুষেরা ও সব পারে না, মা । ডাক্তারের ধারনা তোমার মাদকাসক্ত মুমৃর্ষু পিতা বড় জোর আর পনেরো দিন বাঁচবে । পনেরো দিন বড় অল্প সময় । তোমার আসতে এত দেরী হচ্ছে কেন, সোনা ।
কাল কি হয়েছে জান পারু ? মাঝ রাত্তিরে তোমার মা যখন গুমিয়ে ছিলেন, আমি সন্তর্পনে তোমার মায়ের পেটে, যেখানে তুমি আছ, অজস্র চুমু খেয়েছি । মনে হল আমি আমার সন্তানের শরীরজুড়ে মেখে দিয়েছি ভালবাসার চিহৃ। তুমি কি বুঝতে পেরেছো পারু, তোমার পরাজিত পিতার প্রথম এবং শেষ চুম্বন ? টের পেয়েছো আমার স্পর্শ ?
প্রিয় পারমিতা, হাসপাতালের বেডে শুয়ে তোমার মুমৃর্ষু পিতা একটি সহজ স্বপ্ন দেখে: তুমি মানুষ হবে অনেক বড় মানুষ। রোকেয়ার মতো নয়, জোয়ান আর্কের মতো নয়, মাদার তেরেসার মতোও নয়; তোমার মতো- তোমার নিজের মতো করে মহৎ মানুষ হবে তুমি । কখনো মাদক ছোঁবে না , প্রিয় । তোমার পিতার মতো পরিনিতি যেন কারো না হয়, যেন একটি সন্তানও বনচিত না হয় পিতৃ স্নেহের পুস্পমুনজুরি থেকে । আর এই দেশটিকে ভালবেসো । আমাদের দেশটি বড় অভাগা, বড় দুঃখী। তুমি তাকে ভাল বেসো, প্রিয় ।

তোমার জন্য রেখে যাচ্ছি কাঠগোলাপের ঘ্রান। আগাম বর্ষায়-যখন তুমি আসবে প্রতিক্ষার প্রহর শেষে-তখন গাছভর্তি ফুল থাকবে তাতে । সেই অনাগত ফুলের সমস্ত সৌন্দর্য দিলাম তোমার আগমণি উপহার ।
ভালবাসা নাও।
তোমার পরাজিত পিতা



প্রথম আলো ক্রোড়পত্র থেকে পাওয়া ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:৩১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×