ঘটনার শুরু ধানমণ্ডির এক কমিউনিটি সেন্টারে; বন্ধুর বিয়ে। বন্ধুর মতে যেই পাঞ্জাবিতে আমাকে সবচেয়ে বেশী মানায় সেটাই পরলাম। সবার বেশ আগে আসায় নিশ্চু হয়ে বসে রইলাম। ইকা। দুহাতে মুখ ঢেকে বন্ধুর ভাবী স্ত্রীর কথা ভাবছিলাম। হঠাৎ একটু ফিসফাস, রিনঝিন আর টুনটুন শব্দ আমাকে মুখ তুলতে বাধ্য করল। দেখি সামনের চেয়ারে, স্টেজের পাশে দুজন মেয়ে বসে আছে। পেছন থেকে কথা-বার্তা খুব একটা বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ দেখি একজন হাতে ঝোলানো ব্যাগ থেকে কিছু চুড়ি বের করে পাশের সিটে রাখছে। গলার ন্বর চড়ল কিছুটা।
Ñচুড়িটা ভেঙে গেল। ওর দেয়া সেটগুলোর মধ্যে এটাই সবচেয়ে পছন্দ ছিল আমার।
Ñতুই এখনও এমনভাবে কথা বলিস যেনএখনও তোদের সম্পর্ক কত সুন্দর। আর ওর এই আচরণের পর তোর জায়গায় আমি থাকলে আমি নিজেই ওগুলো ভেঙে ফেলে দিতাম।
Ñআমি তো ওকে ভালবাসি। ও না বাসলে কি হবে। ভাঙা চুড়িটাই থাকবে আমার কাছে।
Ñভালোহ্।
আরও কত কথা হল সামনের সিটে। আমি পেছনে বসে সেই দুজন মেয়েকে নিয়ে ভাবতে লাগলাম। আমার স্কুল আর কলেজ জীবনের রেকর্ডÑকোনদিন কোন মেয়ের দিকে তাকিয়েও থাকিনি; কোন মেয়েও আমার কথা ভেবে রাত পার করেনি।
থাক ফালতু বকাটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। অল্প কথায় ঘটনাটা বলি। ধীরে ধীরে লোকজন ভরে গেল কমিউনিটি সেন্টারে।মেয়ে দুজনও উঠে গেল। আমি উঠলামÑবর কনেকে তো দেখতে হবে। মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেল। দু একবার চোখ পড়ল মেয়ে দুটোর দিকে। কিছুণ ঘোরাঘুরির পর আবার আগের জায়গায় এসে দেখি ভাঙা চুড়িটার সাথে ভাল দুটো চুড়ি সিটে পড়ে আছে। মনে হল তুলেনিয়ে দিয়ে আসি। কিন্তু মনে হল সেটা বেশি করা হবে। বরং বলে আসি। যাবার জন্য উঠেছি আর হার্টবিট বেড়ে গেল। ভীষণ অবাক হলামÑনিজের কাছে নিজেই লজ্জিত হলাম। তবু গেলাম। আমি টের পেয়েছিলাম দুজনের মাঝে চুড়িটা কার, তবু চুড়ির মালিকের সাথে কথা বলতে পারলাম না।কেমন একটা অস্বস্তি আর অপরিচিত অনুভুতি আঁকড়ে ধরল আমাকে।
কথা হল, পরিচয় হল। কিছুণ একসাথে হাঁটলাম আমরা; বেশি না বড়জোর পাঁচ মিনিট। একসাথে খেয়েই বিদায় নিতে হয়েছিল অমাদের।
শুধু এটুকু পরিচয়েই যে একজন মানুষকে হৃদয়ে স্থান দিতে বাধ্য হতে হয়, সেটা আগে জানতাম না। অস্থির হয়ে কল করেছিলাম ওকে। দুজন মেয়ের মাঝে কে বুঝতে পারছেন না হয়ত। যার চুড়িও ভেঙেছিল, মনও ভেঙেছিল। বলেছিলাম ওকে Ñভালবাসি তোমাকে। বলল আমাকে ওর আগের প্রেি কের সাথে সম্পর্কের কথা। সে কথাটুকু আমার মনকে এতটুকু-ও পরিবর্তন করেনি। তবু বলেছিলামÑভাঙা চুড়ি জোড়া লাগিয়ে কি হবে বল। জোড়া দেখে অতীত বেদনা হৃদয়ে আঘাত হানবে। বরঞ্চ চল নতুন চুড়িতে নতুন জীবন শুরু হোক।
রাজি হল না ও।Ñ দরকার কি বল। আমার হাত ভালবাসার চুড়ি পরবার যোগ্য নয়।
বললামÑমেই ছেলেতো নিজের মনে দশজনের স্থান দিয়েছে। তোমার মনে কি আমার জায়গা হবে না, সামান্যতমও না।
ও বললÑযেটুকু পাবার সেটুকু পেয়েছ। কিন্তু স্রষ্টা বোধহয় চান না তাঁর সৃষ্টির মাঝে এ দুটি জীবের মিলন হবে। আমি রইলাম তোমার মাঝে, তুমি আমার মাঝে। এতেই হবে। দুজনের জীবনচলা দুদিকে হলেও তাতে সমস্যা নেই। আমি বলছি তুমি ভাল থাকবে।
আর কথা হয়নি-দেখাও নয়। কোন মান-অভিমান নয়, বিচ্ছেদ নয় তবু কেন কিছু হল না? যে বন্ধুর বিয়ে হল, বিয়ের কনে ছিল তার প্রেমিকা। সেদিন বন্ধু কানের কাছে বলেছিলÑ“ভালবাসার চারা বড় তো হয়েইছে, ফসলও ঘরে উঠছে।” অথচ আমার হৃদয়ের ভালবাসার বীজ ফসল দেবে কি চারাই হতে পারল না।
আমারও নাকি বিয়ে হবে। পড়াশুনা শেষে চাকরির নিশ্চয়তাও পেয়েছি। বাবা-মা পাত্রি দেখছেন। বিয়ে যাকেই করি না কেন আমার মনে ওর স্থানে এতটুকু আঁচড়ও পড়বে না, কখোনই না।
১০.০৪.’০৭
রাত:১:৩০
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০০৮ দুপুর ১:১৪