ফোন রেখে হেসে উঠল রাকিব। তাচ্ছিল্যের হাসি। কেবলমাত্র আঁখি নামের মেয়েটার সাথে বেশ মিষ্টি সুরে কথা বলেছে সে।
-দেখলি তো, আমার খেল। নাইলে কি আর এতগুলারে নাকে দড়ি দিয়া ঘুরাই! হা হা। প্রশংসা পাবার আশায় অন্যদের দিকে তাকাল সে।
-হুম। তোর চেহারা দেখেই তো কতজন .........। যাক গা কী বলল তাই বল না। সাগরেদ গোছের ছেলেটা বলে উঠল।
-আরে কী আর বলবে। আমারে নীতি কথা তো শুনাইলই আবার তেজও দেখাইল। ফকিন্নির ঝি'র তেজ দেখলে বুঝতি।
-কী বলিস টাকা পয়সা একেবারে কম না। ধানমন্ডিতে ফ্যাট কিনসে শুনসি।
-তাইলে তো শালার টাকা মারন যায় কিছু। তা শোন বলে কিÑআপনারা বড়লোক বলেই যে আপনার মত ছেলেকে আমি মেনে নেব তা ভাবলেন কিভাবে । আপনি আর আপনার বন্ধুরা কিভাবে মেয়েদের ডিস্টার্ব করেন ভালভাবেই জানি.......এসব আর কি। আর আমি যখন বললাম যে আমি ভাল হতে চাইসি তোরা দিস নাই তখন চুপ মারসে। কয়দিনের মধ্যে ওর বাপের টাকা না নিসি তো আমার নাম.......
কথা চলতে লাগল। কথা চলতে লাগল বদ ছেলেদের আড্ডায়। সেই কথার সাথে পাল্লা দিয়ে সন্ধ্যা নামল। মায়াময় সন্ধ্যা।কিন্তু আঁখির কাছে সন্ধ্যাটা বিষময় হয়ে উঠল। চৌদ্দ পনেরর এই মেয়েটি সাতাশ আটাশের যুবকদের সাথে কিভাবে লড়াইয়ে নামবে ভেবে পেল না। তাছাড়া এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তির নষ্ট হয়ে যাওয়া ছেলের দৃষ্টি যদি পড়ে পরগাছা মধ্যবিত্তের মেয়ের ওপর তাহলে তো কথাই নেই।
চার চারটা দিন চলে গেছে । এর মাঝে সেই বাবা মায়ের আঁখিও চলে গেছে। শুধু তাই না তাদের বেশ কিছুটা অর্থকড়িও গেছে। অপহরণের সাড়ে তিন দিন পর মেয়েটা যখন হাসপাতালে ঠাঁই নিল তখন থেকে সন্ধ্যাগুলো আরও মায়াময় হয়ে উঠল। আর মেয়েটা যখন চলে গেল তখন সেই সন্ধ্যায় মিশে গেল একরাশ বিদায়ের করুণ সুর।
ও চলে গেল খুব সুন্দর একটা সন্ধ্যায়। ওচলে গেল বলেই কি সন্ধ্যাটা পবিত্র মনে হল! কিন্তু এমন তো হবার কথা নয়! আরও একজন বিদায় নিচ্ছিল তখন ধরণীর বুক থেকে। রাকিব। মুক্তিপণের টাকাটার পুরোটাই নিয়ে পালাতে চেয়েছিল সে। মেয়েটাকে তুলে নেয়ার সময় যে হাতে যে পিস্তল দিয়ে মেয়েটাকে ভয় দেখিয়েছিল ওর বন্ধু, ঠিক সেই হাতে সেই পিস্তলটাই ওকে থমকে দিয়েছে। উঁহু একটু ভুল হয়েছে বোধহয়। পিস্তলটা ঠিক নয় বরং ওখান থেকে বের হওয়া দুটো বুলেট থমকে দিয়েছে ওকে। মুখ থুবড়ে পড়ে গেল ও। নিজ হাতের দিকে তাকাল। ডান হাতের কব্জিটা লাল রক্তে ভেসে যাচ্ছে ওর। চারদিন আগের কথা মনে পড়ল। পেছনে ওর বন্ধু পিস্তল হাতে আর পলায়নরত আঁখি। হ্যাঁ, তখনই মট করে কাঁচের চুড়িটা ভেঙে গিয়েছিল আর আঁখির হাত থেকে রক্ত ঝরেছিল দু-এক ফোঁটা।
রক্তমাখা হাত দিয়ে মাটি আঁকড়ে ধরল রাকিব। নিজের সুন্দর মুখটায় রুক্ষ মাটির স্পর্শ অনুভব করল ও। আরও কয়েকটা জিনিস অনুভব করল- সেগুলো অবশ্য ভালো মানুষেরাও করে। সুন্দর পৃথিবীর সুন্দর সন্ধ্যা ছেড়ে চলে যাচ্ছে ও। সেই সুন্দরের মাঝে ওর চোখে একটা কচি সুন্দর চেহারা ভেসে উঠল। মনে হল, ও চলে যাচ্ছে বলেই পৃথিবীটা আজ এত সুন্দর আর ........আর মেয়েটাকে খুব ভালোবাসতে ইচ্ছা হচ্ছে ওর।
রহস্যময় সন্ধ্যার স্রষ্টা মুচকি হাসলেন বটে, তবে সেই ইচ্ছেটা পূরণ করবার সুযোগ দিলেন না।
৭ অক্টোবর ২০০৭
রাত ১.০০ টা।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০০৮ দুপুর ১:১২