আজ নাহিদের মনটা একদমই ভাল নেই। গত কদিন ধরে খুব জ্বালাতন করছে সুমন। বিয়ের আগে ওর চেহারা আর এখনকার রূপ সম্পূর্ণ আলাদা। আজও শুনিয়েছে-তোমার মত কাল মেয়েকে আমি কোনদিনই বিয়ে করতাম না। হ্যাঁ আজ ও নিজেও জবাব দিয়েছে -"খুব বেশি সমস্যা হলে বলে দাও তোমার ভাত ছাড়া আমার উপায় নেই এমন নয়।"
এসব মনোমালিন্যের শুরুটা হয়েছিল একটা সাধারণ বিয়য় নিয়ে; অত্যন্ত সাধারণ। বিয়ের সময় বর পক্ষের দেয়া বিশাল মেকাপবক্সটা ওকে খুশিই করেছিল। কিন্তু দুদিন যেতে না যেতেই যখন ছোট ননদ এসে বক্সটাকে শূণ্য করে দিয়ে ভেতরের জিনিসগুলো সব নিয়ে গেল সেদিন ও ভীষণ অসস্তিতে পড়ল। এতখানি নীচতা ও প্রথম দেখল। অদ্ভূত বিষয় তার পরদিন সুমন ওর গায়ের রঙ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।
-আমরা অনেক সুন্দরভাবে গিয়েছি। অথচ তোমার বাপেরা তো কই জামাই আদর কাকে বলে তা জানেও না বোধহয়। তার উপর আবার তোমার মত কাল মেয়ে। আমার বন্ধুরা তো অবাক আমার বউ এত কাল!
-তুমি নিজেও ফর্সা নও। এত কথা বল না।
-ও আমি কাল!! তোমার মত।ফুহ...
এসব বহুদিন সহ্য করেছে ও। সুমনের আচরণ মাত্রা ছাড়িয়েছে।
নিজের মেয়েটা যখন নাহিদের কাছে আবদার করল ওকে সাজিয়ে দিতে হবে তখন ওর মনে পড়ল এসব।
"নিশ্চয়ই আম্মু, আমি তোমাকে মেকাপবক্স কিনে এনে দেব। চল।"
"এখন! তোমার হাতে টাকা আছে আম্মু?"
হুঁ-ছোট্ট করে জবাব দিল নাহিদ।
২.
টিউশনিটা পেয়েছ আম্মু?-মেয়েকে জিজ্ঞাসা করল নাহিদ।
"হ্যাঁ আম্মু। মাসে চার হাজারের মত দেবে।"
"ভাল"
আবার বাইরে যাচ্ছ নাকি?
হ্যাঁ আম্মু...তমার বার্থডে।
নাহিদ দেখল তার এই কাল রঙের মিষ্টি চেহারার মেয়েটা যত্নের সাথে সাজছে, ঐদিনের কিনে আনা মেকাপবক্স থেকে।
"আম্মু এই বক্সটা বেশি পুরোন হয়ে গেছে। আরেকটা কিনতে হবে।"
"শুক্রবারে বল। যাব...."
ছয় বছর চলে গেছে সেদিনের পর। বহুদিন সুমনকে দেখেনা ওরা।ওরা বলতে মা আর মেয়ে। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে সুমনের ঘর ছেড়ে চলে এসেছিল ও। খারাপ আচরণটা খুব বেশি করে ফেলেছিল সুমন-গায়ে হাত তুলেছিল নাহিদের।
এখন মা মেয়ে দুজনেই নিজ নিজ খরচ চালায়। নাহিদ জানত বাবা ভাই কোনদিন ওদের পাশে দাঁড়াবে না। দাঁড়ায়ওনি।
কেউ না। নিজেকে চলতে হয় নিজের পথ। সবাই একসাথে তবু যার যার জীবন তাকে নিজেই চালাতে হয়।
পথ চলতে হয়। মানুষ চলে ...থমকে যায়। আবার চলে। সফলতা-বিফলতার খেলা খেলে চলে। সে খেলা আর থামে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ২:১০