বাংলাদেশি লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক, এবং জনপ্রিয় মাসুদ রানা ধারাবাহিকের স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন (১৯ জুলাই ১৯৩৬ – ১৯ জানুয়ারি ২০২২) ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জুলাই বাগমারা, রাজবাড়ী জেলা (ব্রিটিশ ভারত) জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন। ডাক নাম 'নবাব'। তার পিতা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, মাতা সাজেদা খাতুন। তারা ছিলেন ৪ ভাই, ৭ বোন। সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার হিসাবে তিনি ষাটের দশকের প্রথম দিকে কুয়াশা এবং মধ্যভাগে মাসুদ রানা নামক গুপ্তচর চরিত্রকে সৃষ্টি করেন। কাজী আনোয়ার হোসেন ছদ্মনাম হিসেবে বিদ্যুৎ মিত্র ও শামসুদ্দীন নওয়াব নাম ব্যবহার করতেন।
কাজী আনোয়ার হোসেনের পিতা কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান, সাহিত্য, সংস্কৃতির উপর অনেক বই ও প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে পি.এইচ.ডি করেন। তিনি নিজ উদ্যোগে ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যানে এম. এ. কোর্স চালু করেন এবং তিনি এই নতুন বিভাগে যোগ দেন। অসাম্প্রদায়িক ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী এবং সেই আলোকে দেশের শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সুদৃঢ় ভিত গড়ে তোলার জন্য তিনি লেখনী পরিচালনা করেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬-দফাকে কেন্দ্র করে ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের আন্দোলনেরএকজন বলিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন কাজী মোতাহার হোসেন।
শিক্ষাজীবন
কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ ও বিএ পাস করেন। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন। আনোয়ার হোসেনের ছেলেবেলা কেটেছে বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায়। উল্লেখ্য তখন পিতা ড. কাজী মোতাহার হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। পরে অবশ্য তারা বাসা বদল করে সেগুনবাগিচায় নিজেদের বাসায় চলে আসেন।
পড়াশুনা শেষ হওয়ার পর রেডিওতে তিনি নিয়মিত গান গাইতে শুরু করেন। তার তিন বোন সানজীদা খাতুন, ফাহমিদা খাতুন ও মাহমুদা খাতুন এখনও রবীন্দ্র সঙ্গীতের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকা বেতারের সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। কিন্তু রেডিও কিংবা টিভিতে গান গাওয়া এবং সিনেমার প্লে-ব্যাক কাজী আনোয়ার হোসেন ছেড়ে দেন ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে।
দুই বোন ফাহ্মিদা খাতুন (বাঁ থেকে প্রথম), সন্জীদা খাতুন ও স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনের সঙ্গে কাজী আনোয়ার হোসেন ছবি: সংগৃহীত
কর্মজীবন
এমএ পাস করার পর সবাই যখন চাকরি খুঁজছেন তিনি তখন চুপচাপ বসে রইলেন। আসলে কারও অধীনে চাকরি করা তাঁর পছন্দ ছিল না। কিন্তু সবাই যখন চাকরি আর উপার্জনের কথা বলতে শুরু করলেন,তখন তিনি ঠিক করলেন চা-বিস্কুটের দোকান দেবেন। বাড়ির বাইরের দিকে এক কোণে একটি খালি পড়ে থাকা ঘরে তিনি ‘বৈশাখী’ নামে একটি চায়ের দোকান খুলে বসলেন। দোকানটিতে তেমন বেচাকেনা হতো না। কিছু দিন পর একদিন বাবা (কাজী মোতাহার হোসেন) তাঁর দোকানে গিয়ে বললেন, ‘নবাব (কাজী আনোয়ার হোসেনের ডাকনাম), তুই যে আইএ পড়ার সময় দুটি গল্প লিখেছিলি, সেগুলো খুবই ভালো হয়েছিল। তুই সেগুলো নিয়ে ভেবে দেখতে পারিস। এখন থেকে তুই বরং রহস্য গল্পই লিখতে শুরু কর।’ বাবার অনুপ্রেরণায় তাঁর জীবন বদলে গেল। তিনি তাঁর গল্প দুটি দিয়ে নতুন একটি সিরিজ শুরু করলেন, নাম ‘কুয়াশা’। তার পরের ইতিহাস তো কমবেশি সবারই জানা। এরপর লেখককে আর পিছন দিকে থাকাতে হয়নি, শুধু এগিয়ে যাওয়া।
১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে বাবার দেয়া দশ হাজার টাকা নিয়ে সেগুনবাগিচায় প্রেসের যাত্রা শুরু করেন। আট হাজার টাকা দিয়ে কেনেন একটি ট্রেডল মেশিন আর বাকিটাকা দিয়ে টাইপপত্র। দুজন কর্মচারী নিয়ে সেগুনবাগান প্রেসের শুরু, যা পরবর্তীকালে নাম পাল্টে হয় সেবা প্রকাশনী। পরবর্তীতে তার প্রকাশনা সংস্থা বাংলাদেশে পেপারব্যাক গ্রন্থ প্রকাশ, বিশ্ব সাহিত্যের প্রখ্যাত উপন্যাসের অনুবাদ এবং কিশোর সাহিত্যের ধারাকে অগ্রসর করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে প্রকাশিত হল কুয়াশা-১, যার মাধ্যমে সেগুনবাগান প্রকাশনীর আত্মপ্রকাশ ঘটে।
সেবা প্রকাশনী
সেগুনবাগান প্রেস পরবর্তীকালে নাম পাল্টে হয় সেবা প্রকাশনী। এই সেগুন বাগান নামটির দুই অংশের প্রথম অক্ষরগুলো নিয়ে সেবার নামকরণ করা হয়। বর্তমানে এলাকাটির নাম সেগুনবাগিচা। বাংলা ভাষার অন্যতম রহস্য-ঔপন্যাসিক কাজী আনোয়ার হোসেনের প্রতিষ্ঠিত সেবা প্রকাশনী বর্তমানে বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত প্রকাশনা সংস্থা। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে। সেবা প্রকাশনীর লগো বা ট্রেডমার্ক ছিল প্রজাপতি। ঝিনুক পুস্তিকার পর পেপারব্যাক সাহিত্যের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ সৃষ্টির ব্যাপারে সেবা প্রকাশনী অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।স্বয়ং হুমায়ূন আহমেদও এই প্রকাশনীতে লিখেছেন। তাঁর রচিত উপন্যাসের মধ্যে অমানুষ অন্যতম। শুধু পাঠকই নয় সেবা প্রকাশনী বাংলাদেশে লেখক তৈরীতেও অসামান্য অবদান রেখেছে।
নিজের পরিবার
তিনি ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন। স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন (জন্ম ১৯৪১ - ৮ আগস্ট ২০১৫) একজন বাংলাদেশী সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। জনপ্রিয় খ্যাতনামা শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন হলেন তাঁর বোন। কাজী আনোয়ার হোসেনের এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। তার মেয়ে শাহরীন সোনিয়া একজন কন্ঠশিল্পী। বড় ছেলে কাজী শাহনূর হোসেন এবং ছোট ছেলে মায়মুর হোসেন লেখালেখির এবং সেবা প্রকাশনীর সাথে জড়িত। তার অধিকাংশ উপন্যাস ও গল্প বিদেশী কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে রচিত। তার লেখা মৌলিক রচনাগুলোও উন্নতমানের। বয়স হয়ে যাওয়ায় পরবর্তীতে তিনি প্রধানত সম্পাদকের কাজ করতেন, যদিও প্রকাশের ক্ষেত্রে সবগুলো বই তাঁর নামেই প্রকাশিত হয়।
কুয়াশা সিরিজ
এটি সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত প্রথম সিরিজ বা গ্রন্থমালা। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে প্রকাশনা শুরু হয়। প্রধান লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন। তবে শেখ আবদুল হাকিমও কয়েকটি বই লিখেছেন। সেবা প্রকাশনী প্রকাশিত প্রথম বই কুয়াশা-১ এবং এই সিরিজের প্রকাশিত শেষ বই কুয়াশা-৭৮। এ সিরিজে মোট ৭৮টি বই বের হয়েছে। এই সিরিজ বর্তমানে বন্ধ।
মাসুদ রানা সিরিজ
এটি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক কাজী আনোয়ার হোসেন সৃষ্ট একটি জনপ্রিয় গুপ্তচর কাহিনী সিরিজ। কাজী আনোয়ার হোসেনের রচিত। সিরিজের প্রথম প্রকাশ ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে। বর্তমানে অনেক বেনামী লেখক কাজী আনোয়ার হোসেনের নামে সিরিজের বইগুলো লিখে থাকেন।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ধ্বংস পাহাড় প্রচ্ছদনামের প্রথম গ্রন্থটি থেকে শুরু করে সেবা প্রকাশনী থেকে মাসুদ রানা সিরিজে এই চরিত্রকে নিয়ে চার শতাধিক গুপ্তচরবৃত্তীয় কাহিনীর বই প্রকাশিত হয়েছে। সিরিজের প্রথম দুইটি বই মৌলিক হলেও পরবর্তীতে ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষার বইয়ের ভাবানুবাদ বা ছায়া অবলম্বনে রচিত হওয়া বইয়ের আধিক্য দেখা যায়। মাসুদ রানার চরিত্রটিকে মূলত ইয়ান ফ্লেমিংয়ের সৃষ্ট জেমস বন্ড চরিত্রটির বাঙালি সংস্করণ হিসেবে সৃষ্টি করেছিলেন লেখক। কিন্তু বর্তমানে সিরিজটি বাংলা বই এর জগতে স্বকীয় একটি স্থান ধরে রেখে পথ চলছে। এটি প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য রচিত একটি সিরিজ। কিছু বইয়ের কিশোর সংস্করণ অঙ্গ সংস্থা প্রজাপতি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। অদ্যাবধি (২০২১) এই গ্রন্থমালা অব্যাহত।
তিন গোয়েন্দা সিরিজ
এটি সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত সবচেয়ে জনপ্রিয় সিরিজ। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রথম দিকে রকিব হাসানের রচনায় প্রকাশিত হলেও ২০০৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে এটি শামসুদ্দীন নওয়াব লিখছেন। এটি বিদেশী কাহিনী অবলম্বনে রচিত কিশোর সিরিজ। প্রথম বই "তিন গোয়েন্দা"। এই বইটি কিশোর থ্রিলার হিসেবে প্রকাশিত হয়। সেবার একটি বিরাট মাইলফলক এই সিরিজটি। প্রথম দিক বিখ্যাত ইংরেজি গোয়েন্দা সিরিজ দ্য থ্রি ইনভেস্টিগেটর অবলম্বনে রচিত হলেও পরে অন্যান্য বই থেকেও নেয়া হয়। তিন গোয়েন্দা পুরোপুরি মৌলিক কাহিনী নয়। ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন গোয়েন্দা কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে রচিত।
সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত অন্যান্য জনপ্রিয় সিরিজগুলো হল: অয়ন-জিমি সিরিজ, কিশোর হরর সিরিজ, গোয়েন্দা রাজু সিরিজ, রোমহর্ষক সিরিজ, অ্যাডভেঞ্চার সিরিজ, কিশোর ক্লাসিক সিরিজ, সেবা রোমান্টিক সিরিজ, সেবা রোমান্টিক সিরিজ, আত্মউন্নয়ন সিরিজ ই্ত্যাদি।
রহস্য পত্রিকা
রহস্যপত্রিকা বাংলাদেশের একটি অন্যতম জনপ্রিয় মাসিক পত্রিকা। ১৯৭০ সালে রহস্য পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৮৪ সালে সেবা প্রকাশনী থেকে এই পত্রিকা কাজী আনোয়ার হোসেন এর সম্পাদনায় এটি নিয়মিত প্রকাশিত হওয়া শুরু করে। এটি একটি রহস্য ও অ্যাডভেঞ্চারধর্মী মাসিক সাহিত্য পত্রিকা। শেখ আবদুল হাকিম, রকিব হাসান প্রমুখ এই পত্রিকায় নিয়মিত লিখেছেন।
১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে মাসুদ রানা'র কাহিনী নিয়ে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। বাংলাদেশের টিভি নাটকের ইতিহাসে প্রথম প্যাকেজ নাটক প্রাচীর পেরিয়ে 'র কাহিনী রচনা করা হয় কাজী আনোয়ার হোসেন রচিত মাসুদ রানা সিরিজের পিশাচ দ্বীপ নামক বই থেকে।
সমালোচনা
মাসুদ রানা সিরিজের বইগুলোয় একটা ট্যাগ থাকত : ‘প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য’। এটা ওই সিরিজটার প্রতি বাড়তি আকর্ষণ তৈরি করত নিশ্চয়ই। তাই কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে প্রথম সমালোচনা ছিলো তিনি মাসুদ রানা সিরিজে যৌনতার বেসাতি পেতেছেন। এই হাওয়ায় পাল এতোটাই উঠেছিলো যে, 'যারা এসব বই পড়তো তাদেরকে দেখা হতো অন্য নজরে। প্রজাপতি' মার্কাওয়ালা বই পড়াই নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো অনেক বাঙালি ঘরে। একসময় মাসুদ রানা সিরিজ হতে ‘প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য’ ট্যাগটি বাদ দেওয়া হয়, কারণ কিশোর পাঠকেরাই এই বই বেশি পড়ে। তখন থেকে সিরিজের বইগুলোয় আর যৌনাত্মক বর্ণনা দেওয়া হয় না। সম্ভবত আগের বইগুলোও কিঞ্চিৎ সেন্সর করা হয়। এছাড়া তিনি সমালোচিত হয়েছেন, প্রায় ঢালাওভাবে বিদেশী কাহিনী ধার করে মাসুদ রানাকে সচল রাখার জন্য।
জীবনের অন্তিম পর্বে এসে লেখক শেখ আবদুল হাকিমের সাথে কপিরাইট বিষয়ক এক অপ্রীতিকর মামলার মুখোমুখি হন। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই আবদুল হাকিম ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে স্বত্ব বা মালিকানা দাবি করে সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে শুনানি শেষে কপিরাইট অফিসের দেওয়া আদেশে ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে শেখ আবদুল হাকিমের পক্ষে সিদ্ধান্ত আসে।
থ্রিলার উপন্যাস হিসাবে সেবাপ্রকাশনীর বই যে সাহিত্যমর্যাদা পাচ্ছে না এ নিয়ে লেখকেরও আক্ষেপ ছিল। তিনি বলতেন, সুসাহিত্যিকরা যদি থ্রিলার লেখাকে ছোট নজরে না দেখতেন তাহলে আরো অনেক কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্ম হতো। তার আরেকটি দুঃখ ছিল বাংলাদেশে থ্রিলার সাহিত্যের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখে। শুধু থ্রিলার সাহিত্য নয়, তিনি বলেছিলেন, এ-দেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা, নাচ-গান-বাজনা-সিনেমা-ছবি-ভাস্কর্য, অর্থাৎ যা কিছু সুন্দর, সব ধরণের শিল্পসৃষ্টির ধারা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে ক্রমে। কপিরাইট মামলার ঘটনা শেষ সময়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষুণ্ণ করলেও তার সৃষ্টির মহিমা লাঘব করে না। যারা মাসুদ রানা পড়েছে, উপভোগ করেছ, পড়বে, তাদের হৃদয়ে কাজী আনোয়ার হোসেন একটি উজ্জ্বল প্রদীপের মতো আজীবন আলোকময় হয়ে থাকবেন। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতা হিসেবে তিনি বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া পেয়েছেন সিনেমা পত্রিকা ও জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার।
২০২১ সালের অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখ তাঁর প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর একবার ব্রেইন স্ট্রোক ও হার্টএটাক হয়। এরপর ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তিনি ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্য ও ছবিসূত্র:
উইকিপিডিয়া
সেবা প্রকাশনী
ছোট বোনের স্মৃতিচারণায় অজানা এক কাজী আনোয়ার হোসেন - প্রথম আলো
কাজীদার প্রয়াণ ও একটি গ্রন্থযুগের অবসান - সৈয়দ তারিক : বিডিনিউজ
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:০৬