"কেউই জীবন থেকে পুরোপুরি চলে যায় না।বইয়ের ফাঁকে ঠিকই গোলাপের শুকনো পাপড়ি হয়ে রয়ে যায়। প্রিয় গানটার সুরের মাঝে চুপচাপ লুকিয়ে থাকে সে। রিকশার সিটের খালি জায়গাটুকুতে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। তাকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না শুধু তার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়।
শুধু মানুষটাই জীবন থেকে হারিয়ে যায়। মানুষটার স্মৃতি হারায় না। চ্যাট লিস্টে সবার উপরে যে নামটা থাকতো একসময়, এখন তার নামটা সার্চ বক্সে টাইপ করলেও আর আসে না। খুব করে খুঁজলে ছবিবিহীন কালো রঙের নামটুকু জানিয়ে দেয় সবকিছু।
অনেক অনেক নতুন মানুষের ভীড়ে চাপা পড়ে যায় পুরনো কেউ কেউ। সেই চাপা পড়া ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে ঐ মানুষটাই কোন কোন রাতে ফেরত চলে আসে।পূর্বাভাস ছাড়াই বুকের ভেতরটায় তখন তুমুল ঝড় বইতে থাকে। অতীত নামের দমকা হাওয়া এসে মূহুর্তেই ওলটপালট করে দেয় সবকিছু।
পুরনো কোন গল্পই আসলে মুছে যায় না। গল্প গল্পের জায়গাতেই থাকে। একটা সময় শুধু তোমাকেই গল্পের চরিত্র থেকে মুছে দেয়া হয় খুব যত্ন করে মুছে দেয়া হয়।
খুব চেনা, খুব আপন বাড়িটা কিন্তু ঠিকই রয়ে যায়। মাঝে মাঝে চোখের সামনে দেখে ভীষণ মায়া হয়। দরজায় ছুটে গিয়ে ঠকঠক করে কড়া নাড়তে ইচ্ছে হয়। মুঠো করা হাতটুকু কাঁপতে থাকে, কড়া নাড়ার অদম্য ইচ্ছেটুকুকে জন্মের সাথে সাথেই মাটিচাপা দিয়ে দিতে হয়।
তুমি, আমি আর আমাদের পুরনো বাড়িটা একদম আগের মতই আছে। শুধু দরজার সামনে চোখের জলের স্বচ্ছ কালিতে লেখা "প্রবেশ নিষেধ" নামক একটা অদৃশ্য সাইনবোর্ড নীরবে চিৎকার করে বলেঃ
"সবকিছুই আগের মতই আছে। শুধু অধিকারটুকু নেই।"