কয়েক বছর আগের কথা, মোটামোটি ৫/৬ বছর আগের... তখন আমি টিউসনি করি...
ছাত্রীর নামটা মনে আসছে না। যাই হোক সেদিন, ছাত্রী আমার চেয়ারে বসে মুচড়া-মুচড়ি করছিল। বুঝলাম, আজ তার পড়ার মুড নাই। বললাম,
- কি হল? অংকটা কর!
- ভাইয়া, আজকে আর পড়তে ইচ্ছা করছেনা!
- ইচ্ছা না করলে হবে?তোমার না সামনে পরীক্ষা? অংক কর। নইলে আন্টিকে বলে দিব!
- আম্মু বাসায় নাই!
- মাইর খাবা কিন্তু! অংক কর। ছাত্রী মনমরা হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ তার চোখমুখ ২০০ ওয়াট বাল্বের মত জ্বলে উঠল!
আমাকে বলল,
- ভাইয়া!!!
- কি হল আবার?
- আপনার জন্য চা আনি?
- বুয়া দিয়ে গেছে তো!
- না মানে, আমি নিজ হাতে চা বানিয়ে খাওয়াব আর কি! কালকে খালামণির কাছ থেকে শিখেছি! হাঁ করে ছাত্রীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। যেই মেয়েকে কোনদিন চেয়ার থেকে উঠে টেবিলের উল্টোপাশে গিয়ে খাতা নেওয়ার মত পরিশ্রম পর্যন্ত করতে দেখিনি, সেই
মেয়ে নাকি আমাকে চা বানিয়ে খাওয়াবে! বিশ্বের অষ্টমাশ্চর্য বটে!
উত্তর দেওয়ার আগেই ছাত্রী আমার লাপাত্তা। বসে বসে ওর অংক বইয়ের পাতা উল্টাতে লাগলাম। হঠাৎ রান্নাঘর থেকে চাপা গলায় কথা বলার আওয়াজ ভেসে আসল।
- হ। চা বানাইতে তো পানি গরম
করন লাগবই।
- আস্তে বল। স্যার
শুনতে পাবে তো!
পুরাই মদন হয়ে গেলাম। বুঝতে পারলাম, ছাত্রীর চা বানানো শিখা এ জন্মেও সম্ভব নয়। খুব জানতে ইচ্ছা হল, পানি গরম করতে চুলায় আগুন লাগে কিনা, এই কথাটাও বুয়ার কাছ থেকে এখন শিখে নিল কিনা! কিছুক্ষণ পর ছাত্রী চা নিয়া হাজির। দাঁত বের ভেটকি সহকারে কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল,"ভাইয়া, টেষ্ট করেন।"
মুখে দিতেই চা 'টেষ্ট' থেকে 'টি২০' হয়ে গেল! সামনে বই খাতা ছিল বলে স্রেফ গিলে ফেললাম। ছাত্রী আমার চা বানানো শিখেছে নাকি শরবত বানানো শিখেছে, বুঝতে পারছি না। অবশ্য মুখে সেটা প্রকাশ করলাম না। ছাত্রী অনেক আশা নিয়ে আমার বদনখানার দিকে তাকিয়ে আছে। মাইন্ড করতে পারে।
- ভাইয়া, চা কেমন হল?
- তোমাদের বাসায় কি চিনি শেষ?
- না তো! কেন? চিনি কম হয়েছে? আরো দুই চামচ দিব?
- আরে না। আমার আবার ইদানিং ডায়াবেটিকসে প্রবলেম করে!
- আগে বলবেন না! তাহলে চিনি কমিয়ে তিন চামচ দিতাম!
- ওকে। পরের বার তোমার তিন চামচ চিনি আর চা খাব। আজকে তাহলে আসি।
- সে কি ভাইয়া! পরশু ফুপির কাছ থেকে চিকেন বানানো শিখেছিলাম। আজকে সকালে আপনি আসার আগে আমি নিজে নিজে চিকেন বানিয়েছি। দাড়ান, নিয়ে আসি।
পোড়া মুরগী গেলার মত শখ আমার নেই।
আমি বেয়ার গ্রিলস না। আমি শাওন। প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার ইচ্ছা আমার নেই। আমি স্বাভাবিক পরিবেশে বেঁচে থাকতে চাই। ছাত্রীকে চিকেন আনতে বলে বীরপুরুষের মত সামনের দরজা দিয়ে পালালাম।
পুনশ্চঃ এখন আমার সেই ছাত্রী হয়তো বড় হয়ে গেছে, সম্ভবত ইন্টারে পড়ে... ঘটনাটা মনে পড়ে গেল আজ অফিসে চা খাওয়ার সময়। চা না সেটা পুরো একটা শরবত ছিল। ছাত্রীটা ফাকিবাজ হলেও ভালো স্টুডেন্ট ছিল। সেই ঘটনার পর আমি ওর প্রতিটা কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতাম।
ছাত্রী যদি বলতো, "ভাইয়া, আজ পড়তে ইচ্ছা করছেনা!", তখনই আমি তাকে ছুটি দিয়ে চলে আসতাম।
আমি জানি, ছুটি না দিলে ছাত্রীর পরের কথাটা কি হবে, "ভাইয়া, আপনার জন্য তিন চামচ চিনি দিয়ে চা বানিয়ে আনি?" :3 :p