somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইয়ে সুইসাইড নেহি হে স্যার, মার্ডার থা!

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

থ্রি ইডিয়টস মুভির একটা ডায়লগ বার বার মনে হচ্ছে, "ইয়ে সুইসাইড নেহি হে স্যার, মার্ডার থা!"

আমার স্কুল ক্লাসমেট একজনের "লাশ" পাওয়া গেছে আজকে। লাশ! বুঝলেন মশাই, লাশ! একটা জলজ্যান্ত মানুষ যখন নিথর পড়ে থাকে তাকে লাশ বলে। বড় অদ্ভূত জিনিস জানেন, ঐ লাশটার চোখে কিছু স্বপ্ন ছিল, তাকে ঘিরে অন্তত দুজন মানুষের এক পৃথিবী ভালোবাসা ছিল, ঐ লাশটা এক সময় আমার আপনার মত হাটতো, চলতো, ফিরতো। আর এখন শুধু আমার আর ক'জনের ফ্রেন্ডলিস্টে আছে, লাশটা! আর কোথাও নেই।

ভাবুন তো, একজন মানুষ মাত্র পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো ঠাই টুকু। ঝুলে গেল। হাত গুলো কি চেষ্টা করে নি যন্ত্রণা থেকে বাঁচার? ছটফট করছিল যখন একলা ঘরে, নির্বান্ধব নির্জন হোটেল ঘরে, চোখে ফুটে উঠে নি বাঁচার ইচ্ছা? আমি আসলে স্থির থাকতে পারি না ভাবলে।

আচ্ছা, এতটাই দূর্বিষহ হয়ে গিয়েছিলো যে জীবনটাই শেষ করে দিতে হলো? ২৩/২৪ বছরের জীবনটাকে ৩/৪ বছরের মেডিকেল এতটাই বিষাক্ত করে দিলো!
আচ্ছা না হয়, হচ্ছে না... একসময় তো হতো... জানি না, আর কোন কারণ ছিল কিনা ভেতরে। কিন্তু, আপাত দৃষ্টিতে তো মেডিকেলের ব্যর্থতাকেই কারণ মনে হচ্ছে।
এত গুলো আশা, এত গুলো স্বপ্ন নিয়ে চলে যাওয়ার মানে হয়? মেডিকেলটাই কি সব হয়ে গেল! আর কয়টা দিন অপেক্ষা করা গেল না! দুঃসময় কখনো চিরস্থায়ী হয় না শুনেছি।

আমার হয়তো কিছুই যায় আসে না, কিন্তু একটা চাপা কষ্ট তো লাগছে। আমি তাকেও বা কি দোষ দিবো যদি মেডিকেল আত্মহত্যার কারণ হয়! এই কারিকুলাম সিস্টেমে এত জটিলতার প্যাচে একবার পড়ে গেলে শুধু ভাগ্য লাগে কাটিয়ে উঠতে।
এক স্যার বলেছিলেন, "সাপ্লি কলস এনাদার সাপ্লি।"
সাপ্লি হয়তো স্টুডেন্টের ব্যর্থতার ফল। কিন্তু, একজন স্টুডেন্ট কেন সাপ্লিতে পড়ছে? এত আইটেম-টার্ম দেয়ার পরও যদি সাপ্লি'তে পড়তে হয়, তার মানে কি এই হয় না যে, সে বুঝার জন্য যথেষ্ট সময় পায় নি? বা, সময় দেয়া হয় নি? জোর করে গিলানো যায়ই, কিন্তু সেটাকে কি খাওয়া বলে? বেসরকারি মেডিকেল গুলো'তে "সেন্ট-আপ" নামে আরেক প্রহসন চালু আছে। ইহা এক শর্ত-সমগ্র, প্রোফেসনাল পরীক্ষার গ্রিন কার্ড। আমার কাছে এটাকে মেডিকেলের স্বার্থ মনে হয়, কোন স্টুডেন্টের "খুব একটা" স্বার্থরক্ষা হয় বলে মনে হয় না। এই আত্মহত্যার ক্ষেত্রেও মনে হয় এই কারণ আছে।

একটা মানুষ যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোন আচরণের কারণে আত্মহত্যার মত কাজ করে, সেটা কত বড় লজ্জার জাতির শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য -সেটা সহজে অনুমেয়।

একজন মানুষ, আরেকটু স্পেসিফিকেলি বললে মেডিকেলে ৪ বছর কাটিয়ে দেয়া ছাত্র, কতটা আঘাত পেলে এই কাজ করতে পারে? সে যাওয়ার আগে নোটে লিখে গেছে একটা ডিপার্টমেন্টের নাম। যদি সত্যিই তাই হয়, ঐ "শিক্ষক"দের কিভাবে আপনি "মানুষ গড়ার কারিগর" বলবেন, যেখানে "স্রেফ নাই" হয়ে গেল মানুষটা! তারা কি ব্যর্থ না?

হয়তো বলা হবে, "আমরা শিক্ষক হিসেবে শাসন করতে পারি না?" অবশ্যই পারেন, আপনাদের অধিকার পর্যন্ত আছে আমাদের উপর হাত তোলার। কিন্তু, ঐ ৪৫ মিনিট কি হয়েছিল? আমি জানি না। যা হয়েছিল, তা কি "শাসন" ছিল? যদি হত, তাহলে কেন সারা মেডিকেলে একজন আত্মহত্যা করলো?

এক মাত্র ছেলেটা নাই আজকে পৃথিবীতে, একজন মানুষ নাই শুধু, কিন্তু যদি বলি ৩ টা মানুষ নাই পৃথিবীতে? একটা পরিবার না পৃথিবীতে? ভুল হবে?

এই নিশ্চিহ্নতার দায় নিয়ে কিভাবে ঘুমাবেন তাঁরা? যখন, শূণ্য দৃষ্টিতে দু'জন মানুষ আঁধারে তাকিয়ে আছে?

আমি জানি না, সত্যিই কার দোষ। আমার বন্ধু আবেগে বশীভূত নাকি শিক্ষকদের "বাড়াবাড়ি রকমের বাড়াবাড়ি"। আমি আমার বন্ধুকে যেমন ভালোবাসি, আমার শিক্ষকদেরও শ্রদ্ধা করি। সত্যিই করি। এরকম দ্বৈতমন অনেক কষ্টের।

তাহলে কি, আমাদের মেডিকেল সিস্টেমকে দোষ দিবো? দেয়া যায়।
আচ্ছা, কেন জোর করে মেডিকেলে ঠেলে দেয়া হয়? ব্যাখ্যা করছি না। এজন্য কি আমাদের বেসিক এডুকেসন সিস্টেম দায়ী না? এখনকার সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি দেখে আমি সত্যিই খুব আতংকিত। বাংলাদেশের কপালে অনেক দুর্ভোগ এখনো বাকি আছে।

মেডিকেলটা না হয় যন্ত্রণা দিচ্ছে, দিক না, কত আর দিবে। যাদের জন্য পৃথিবীর মুখ দেখা, এতটা বেড়ে উঠা, তারা কিচ্ছু না হয় গেল? এতটা ক্ষমতা মেডিকেলের নাই, আমরা এই ক্ষমতা দিয়ে দিচ্ছি। মেডিকেল লাইফ তো মেইন লাইফের একটা অংশ মাত্র। আচ্ছা, মানলাম আমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না, তারপরও এই জীবন যিনি দিলেন, তার আরাধনায় তো জীবন কাটিয়ে ফেলা যেত। জীবনটা তো অনেক বড়।

একটা শহর যদি আপনার জীবন হয়, শহরের এলাকা গুলো যদি আপনার লাইফ ইভেন্ট হয়, ঐ শহরের সবচেয়ে উঁচু দালানের ছাদে উঠে দেখুন শহরটাকে। কত বড়। একটা এলাকা কতটা ঠুনকো। তাকানোর জন্য আরও কত জায়গা পড়ে আছে।

কি সব বলছি!
কথাগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, আসলে খবরটা শোনার পর থেকেই মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। একটা চাপা আক্রোশও যন্ত্রণা দিচ্ছে।

এরকম পালিয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি তোর।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো - ছবি ব্লগ

লিখেছেন শোভন শামস, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯

"পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো", কিংবা "পোস্টকার্ড রো" বা "সেভেন সিস্টারস" নামে পরিচিত, বাড়িগুলো। এটা সান ফ্রান্সিসকোর আলামো স্কোয়ার, স্টেইনার স্ট্রিটে অবস্থিত রঙিন ভিক্টোরিয়ান বাড়ির একটি সারি। বহু... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×