আমার নাম রিফাত। চট্টগ্রামের মেয়ে, এখন থাকি সুদূর মার্কিন মুল্লুকে। গিয়েছিলাম প্রিয় জন্মভূমিতে বেড়াতে গত অক্টোবর মাসে।(কি দূর্ভাগ্য!!! লিখতে হয় বেড়াতে গিয়েছিলাম, কবে যে লিখতে পারব এখন আমি দেশেই থাকি!!!)। ছিলাম প্রায়ই চারমাসের মত।
ডিসেম্বরের শেষের দিকে বেড়াতে গিয়েছিলাম পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবনের নীলগিরিতে। আজকে আপনাদের সাথে আমার সেই অভিজ্ঞতা ভাগ করতে এই পোস্ট।
২৪ জনের ছোটখাটো একটা দল নিয়ে যাত্রা শুরু আমাদের, রাঙ্গাদিয়ার কাফ্কো থেকে, তিনটি গাড়িতে অসমভাবে বিভক্ত হয়ে। কারন আর কিছুই না বাচ্চাপার্টিরা সবাই যেতে চায় একসাথে একই গাড়িতে, নাহলে নাকি তাদের সব মজা মাটি হয়ে যাবে। আর মাশাল্লাহ্ দলে বাচ্চা ও নেহায়েত কম নয়, সর্বসাকুল্যে ছোট বড় সব মিলিয়ে ১৩ জন।এদের মধ্যে ১১ জনই পাঁচদলীয় (কারন পাঁচ ভাই-বোনের বাচ্চা সব) ঐক্যজোট গঠন করে একই গাড়িতে উঠতে বদ্ধপরিকর। আর বাকি দুইজন নিরপেক্ষ। কারন একজন এখনো কথাই বলতে শেখেনি, আর একজন মাত্র কথা বলা শুরু করেছে, তাও পুরো বাক্য পুরোপুরিভাবে বলতে পারেনা। পাঁচদলীয় ঐক্যজোটের আবার পছন্দ তাদের সবচে্ ছোট মামা অথবা চাচার গাড়ি।
যাই হোক, এতসব ঝামেলার পর যাত্রা শুরু হলো ৯টা৩০মি’। তিনটি গাড়ির একটি ভাড়া আর দুটি নিজেদের। সেই ভাড়া গাড়ির ড্রাইভার আর আমি হলাম একেবারে বহিরাগত, আর বাকি ২২ জন সবাই এক্ই পরিবারের সদস্য। আমাকে ঠিক বহিরাগতও বলা চলেনা, বলতে পারেন অর্ধবহিরাগত। কারন আমার কিঞ্চিৎ আত্মীয়তা আছে এদের সাথে, আমার মেজ বোন এই আমিন পরিবারের মেজ বউ। “হক্কল ছালুনোর বওয়র ফাতা” মানে সব তরকারিতে ধনিয়া পাতার মতো আমিও এদের সব পারিবারিক কাজে ঢুকে পড়ি নিতান্তই নাছোরবান্দার মতো।
এখানে বলে রাখি, আমার বোন ও তার তিন নম্বর দেবরও আমার মতই পরদেশেভাসি, থুক্কু প্রবাসি। প্রায় চার বছর পর আর বাবা-মার মৃত্যুর পর এটাই তাদের প্রথম স্ব-পারিবারিক পুনর্মিলন। দেশে গিয়েই শুনলাম প্লানিং হচ্ছে বান্দরবন না সুন্দরবন কোথায় যাওয়ার। ব্যাস, আর কি সব বাধা পেছনে ফেলে গোয়ার এঁড়ে বাছুরের মতো আমিও ঢুকে পরলাম দলে। ভাবখানা এমন, তোরা নিবিনা তো কি হয়েছে!!!! আমি কিন্তু তোদের সাথে যাবোই!!!!!!
যাত্রার শুরুতেও ভাবতেই পারিনি আমি বাংলাদেশে বোসে মালয়শিয়ার গেংটিং হাইল্যান্ডের স্বাদ নিতে যাচ্ছি। বান্দরবন আমার কাছে অপরিচিত কোন জায়গা না। আগেও গেছি দুইবার, তবে মেঘ্লার একটু পর মিলন্ছড়ি রির্সট পর্যন্ত। এবার দেখি গাড়ি উঠে যাচ্ছে আরো উপ্রে। ভাব্লাম এ আর এমনকি, কতদূরেই বা হবে বড়জোর চিম্বুক পর্যন্ত যাওয়া হবে। ভালই হবে চিম্বুক ও দেখা হয়ে যাবে। কিছুক্ষন পরে দেখি আমরা চিম্বুক ছাড়িয়ে উঠে যাচ্ছি আরো উপরের দিকে।পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা কখনো যাননি, তারা কখনই বুঝতে পারবেন না রাস্তা গুলো কি পরিমান বিপদজ্জনক। একদিকে খাড়া পাহাড় আর অন্যদিকে অতল খাদ্, সেইসাথে ০-৯০ ডিগ্রী কো্নের ভয়ঙ্কর বাঁক। ড্রাইভার্কে অসম্ভব মাথা ঠান্ডা রেখে গাড়ি চালাতে হয়।
শেষ্ পর্যন্ত সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ২৪০০ ফুট উপরে গিয়ে শেষ হল আমাদের কাঙ্খিত যাত্রা।গাড়ী থেকে নেমেই ভাল লাগায় ছেয়ে গেল মনটা। যাক্, এত কষ্ট করে এতদূর আসা একটুও বিফলে যায়নি। জায়গাটার নাম নীলগিরি কে দিয়েছে জানিনা, তবে নামটা সার্থক। সিঁড়ি বেয়ে রির্সটের কটেজ গুলোতে যেতেই মন ভাল হয়ে যাবে যে কোন মানুষের। এই গভীর জংগলের ভেতর সাজানো গোছানো এত সুন্দর এক্টা জায়গা থাকবে স্বপ্নেও তা ভাবিনি। এর পুরো কৃতিত্ব কিন্তু আমদের সেনাবাহিনীর। পুরো রির্সটের দেখাশোনা করার দায়িত্বভার তাদেরই উপর।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১০ দুপুর ১:৫৪