somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন জেনে নেই, এশিয়ার কয়েকটি দেশের জাতীয় পতাকার ব্যাখ্যা

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এশিয়া মহাদেশে মোট ৪৮ টি দেশ রয়েছে। সব দেশের রয়েছে, নিজস্ব জাতীয় পতাকা। প্রতিটি দেশের মানুষের জন্য জাতীয় পতাকা, অনেক গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। জাতীয় পতাকা, একই সাথে একটি দেশের মানুষের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তাই সকল জাতীয় পতাকাই ভীষন আগ্রহ উদ্দীপক।

বাংলাদেশ


প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ, মানেই যেন লাল-সবুজ। আমাদের পতাকার লাল বৃত্তটি হলো আসলে উদীয়মান সূর্য, যার গাঢ় লাল রং, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে, শহীদদের আত্নত্যাগকে স্বরণ করিয়ে দেয়। আমাদের পতাকার সবুজ রং, চির সবুজ বাংলাদেশের অনাবিল সৌন্দর্যের প্রতীক। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত 10:6

ভারত


প্রতিবেশী ভারতের জাতীয় পতাকা নিয়ে লিখতে গেলে আস্ত একটা পোষ্ট দেয়া লাগে। ভারতের জাতীয় পতাকায় মূখ্যত রয়েছে তিনটি রং। কমলা (স্যাফ্রন /কেশরী), সাদা এবং সবুজ। এর মাঝে রয়েছে, একটি অশোক চক্র যাকে ধর্মচক্রও বলা হয়। ভারতের কমলা তথা স্যাফ্রন রংটি হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন রং, বৌদ্ধ ধর্মেও এর গুরুত্ব রয়েছে।এই কমলা রং দ্বারা আবার অনেকে শিখদের কথাও বলেন, যেহেতু শিখ গুরুরা এই রং এর কাপড় পরিধান করেন।
প্রচলিত একটি ধারণা- কমলা দিয়ে হিন্দু, সবুজ দিয়ে মুসলমান এবং অশোকচক্র সহ সাদা দিয়ে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা তথা আইনের সর্বময়তাকে নির্দেশ করে।

তবে সরকারিভাবে বলা হয় ভিন্ন কথা, স্যাফ্রন রং দ্বারা শক্তি-সাহস, ধর্মচক্র সহ সাদা রং নির্দেশ করে শান্তি এবং সত্য, আর পরিশেষে সবুজ রং বোঝায় ভারতের প্রকৃতি, ভূমির উর্বরতা, সাফল্য ইত্যাদি।
ভারতের জাতীয় পতাকা সবসময় খাদি বা খদ্দের কাপড় দিয়ে বানাতে হয়, যার লঙ্ঘনে হতে পারে তিন বছরের জেল!
ভারতের জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ২:৩

পাকিস্তান


পাকিস্তানের জাতীয় পতাকায় রয়েছে, দুইটি রং। সবুজ- যা ইসলামকে নির্দেশ করে, সাদা- যা পাকিস্তানের অন্যান্য ধর্মকে নির্দেশ করে। সাদা চাঁদ, এবং তারা দিয়ে উন্নতি- প্রগতি নির্দেশিত হয়।(মনে রাখা দরকার যে, চাঁদ তারার সাথে ইসলাম ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। অর্ধচন্দ্র, তারা এসব অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতীক)
পাকিস্তানের পতাকা- ইসলামের প্রতি তার কর্তব্য- দায়িত্ব, এবং অন্যান্য ধর্মের মানুষের প্রতি তার কর্তব্যকে নির্দেশিত করে।
জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত 3:2

নেপাল


নেপালের জাতীয় পতাকা বিশ্বের একমাত্র ব্যতিক্রমধর্মী পতাকা যা মূলত দুটি ত্রিভূজ দ্বারা গঠিত পঞ্চভূজ! এই পতাকাটিকে নিয়েও রয়েছে অনেক ব্যখ্যা বিশ্লেষন।
নেপালের জাতীয় পতাকায় রয়েছে মূলত দুটি রং এবং সাদা রং এর চাঁদ-সূর্য। টকটকে লাল (যা তাদের জাতীয় ফুল থেকে এসেছে) এবং পতাকার চারিদিকে (যদিও পতাকাটি চারকোনা না!) গাঢ় নীল রং। এই লাল নির্দেশ করে সাহসী নেপালবাসীকে, যেখানে নীল রং দ্বারা বোঝায়, শান্তি । ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৬২ সালে নতুন সরকার গঠনের সময় নেপালের বর্তমান পতাকাটি গৃহীত হয়।
নেপালের পতাকার তিন কোনা অংশ গুলো হিমালয়কে চিহ্নিত করে।
সাদা চাঁদ-- রাজপরিবার কে এবং সূর্য---রানা পরিবারকে (নেপালের আদি শাসক) নির্দেশ করে।
একই সাথে নেপালবাসী চায়, নেপাল যেন চাঁদ সূর্যের মতো দীর্ঘজীবি হয়...।
এই পতাকায় চাঁদ সূর্যের আরেকটা ব্যাখ্যা আছে-
চাঁদ- হিমালয়ের উচুঁ এলাকার ঠান্ডা,
সূর্য- নিচু এলাকার গরমকে উল্ল্যেখ করে।
জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত, অমূলদ সংখ্যা!

জাপান


জাপানের বর্তমান জাতীয় পতাকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গৃহীত হয়। এই পতাকাটির সাথে আমাদের পতাকার মিল বিদ্যমান।
জাপানকে বলা হয় সূর্যোদয়ের দেশ। তাদের পতাকার লাল সূর্যের ব্যাখ্যা তাই সহজেই করা যায়। এই সূর্য জাপানের সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যতের কথাও বলে।
সাদা জমিন- জাপানের মানুষের শুদ্ধতা, সততা ও ঐক্যকে নির্দেশ করে।
7:10 হলো জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত।

চীন


চীনের জাতীয় পতাকা নিয়ে কথা বেশি নেই, কিন্তু এই সামান্য কথাই অনেক গভীর।
চীনের জাতীয় পতাকায় লাল জমিনের উপরে পাঁচটি সোনালী তারা দেখা যায়। ১৯৪৯ সালের ১লা অক্টোবর এই পতাকাটি চীনবাসী গ্রহণ করে। এই রক্তাভ লাল দিয়ে বোঝায়, চীনের কম্যুনিষ্ট রেভ্যুলেশন। একই সাথে লাল, চৈনিকদের ঐতিহ্যগতভাবে জাতীয় রং। পতাকার বড় তারাটি দিয়ে চীনের কম্যুনিস্ট পার্টি , এবং ছোট চারটি তারা দিয়ে সমাজের অন্য চারটি শ্রেনিকে নির্দেশ করে।
- শ্রমিক শ্রেণি
- কৃষক শ্রেণি
- শহুরে (বুর্জোয়া) মধ্যবিত্ত
- জাতীয় (বুর্জোয়া) মধ্যবিত্ত
তাছাড়া চীনে ৫ সংখ্যাটি অনেক গুরুত্বপূর্ন।
জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ২:৩।

শ্রীলঙ্কা


শ্রীলঙ্কার জাতীয় পতাকাটি আঁকা নিশ্চয়ই অনেক কঠিন, কারন এখানে তরবারি হাতে একটা সিংহ দাড়িয়ে আছে!!
শ্রীলঙ্কার পতাকার সবুজ অংশ দিয়ে মুসলমান, কমলা অংশ দিয়ে হিন্দুদের, সোনালি অংশ দিয়ে বৌদ্ধদের এবং মেরুন বাদামী রং দিয়ে আসল শ্রীলঙ্কান তথা সিনহালেস আদিবাসীদের বোঝানো হয়।
পতাকার চার কোনায় চারটি অশ্বত্থের পাতা দেখা যায়, যা নির্দেশ করে বৌদ্ধ ধর্মের চারটি মূল নীতিকে, যথা-
- মেত্থা- জীবে দয়া
- কারুনা - করুণা
- উপেকশা - শান্ত থাকা, ধ্যান করা
- মুদিথা - শান্তি, সুখে থাকা

শ্রীলঙ্কায় ৪৮৬ খ্রি.পূর্ব থেকে সোনালী সিংহকে তাদের প্রতীক মানা হয়। শ্রীলঙ্কার প্রথম রাজা বিজায়া এই প্রতীক চালু করেন। এই সিংহ আবার বৌদ্ধ ধর্মেরও কিছু প্রতীক বহন করে, এর গায়ের প্রত্যেকটি অংশের মানে আছে, যেমন: এর নাক দিয়ে বোঝায় বুদ্ধিমত্তা! আসলে এই প্রতীক গুলোর পৌরাণিক ব্যাখ্যা থাকায় এদের আলোচনা অন্য সময় করা হবে।
সিংহের হাতে থাকা তরবারিটি সাধারণ কোন তরবারি নয়, এর নাম কাস্তানে তরবারি , যা দিয়ে শ্রীলঙ্কার সার্বভৌমত্ব এবং সাহসকে বোঝানো হয়।
এখানে একটা মজার ফ্যাক্ট হলো--এই পতাকায় সোনালী বর্ডার বোঝায়, বৌদ্ধ ধর্ম, অন্য সকল ধর্ম, গোত্রের মানুষকে রক্ষা করছে
জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১:২।

ভুটান


ভুটানের জাতীয় পতাকার কথা দিয়েই আজকের লেখা শেষ করবো। কিন্তু ভুটানের রূপকথা শেষ করতে সারা রাত পার হয়ে যাবে।
ভুটানের জাতীয় পতাকাটি বানানো হয়েছে, ভুটানে প্রচলিত মানুষের বিশ্বাস ও মিথোলজী থেকে।
আপনারা জানেন যে, ভুটানকে বলা হয়, বজ্র ড্রাগনের দেশ
ভুটানের পতাকা খাতায় আঁকাও অনেক কষ্ট, যেহেতু এই পতাকায় একটা আস্ত ড্রাগন আছে!
১৯৬৫ সালে গৃহীত এই পতাকায় দেখা যায়, অভিজাত সাদা রংএর বজ্র ড্রাগনকে, যা ভুটানের প্রতীক
পতাকার হলুদ রং বোঝায় রাজার ক্ষমতা
আর কমলা রং বোঝায় ঐতিহাসিক ড্রুকপা বৌদ্ধ ধর্মকে
2:3 হলো এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থের অনুপাত।
..................................................................................................................................


দোহাই১
দোহাই২
দোহাই৩
দোহাই৪
" style="border:0;" />দোহাই৫
দোহাই৬


ইন্টারনেট + আমার জ্ঞান = এই পোষ্ট


সময় নিয়ে পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ, হ্যাপী ব্লগিং!!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০২০ ভোর ৫:১৪
৪২টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×