যদি প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীর কোন জাতি তাদের মুখের ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে? উত্তর আসবে একটাই- বাঙালি জাতি বাংলা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে। পূর্বে কোন একটি দেশ যদি অন্য কোন দেশ দখল করত, তখন সে দেশ তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি পরাধীন দেশটির উপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দিত। এই ঘটনাটিই ঘটে যাচ্ছিল যুগ যুগ ধরে। এরই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানীরা তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি বাঙালিদের উপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাঙলিরা তা মেনে নেয়নি। এদেশের ছাত্র জনতারা বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে একটি ভাষা, বাংলা।
এই ভাষা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে, ঝরেছে অনেক রক্ত। কিন্তু আমরা কী তাদের সে রক্তের মর্যাদা দিতে পেরেছি? বাহ্যিক দৃষ্টিতে হ্যাঁ কিন্তু অন্তর্দৃষ্টিতে না! আমাদের তরুণ সমাজের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। তারা বাংলার চেয়ে ইংরেজী ও হিন্দীতে কথা বলতে খুব বেশী পছন্দ করে। এসব ভাষায় কথা বলা তাদের কাছে আধুনিক মনে হয়। তরুণ প্রজন্মের এই অবস্থা দেখে সম্প্রতি একজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি বলেছেন, "আমরাই শেষ প্রজন্ম যারা বিশুদ্ধ বাংলায় কথা বলি।" তাহলে সত্যিকার অর্থে আমরা কী ভাষা শহীদদের আত্নত্যাগের মর্যাদা দিতে পেরেছি?
অত্যন্ত দুঃখের বিষয়- এরকম একটি সমৃদ্দ- মহান ভাষা আমাদের নিত্য দিনের সঙ্গী হওয়া স্বত্তেও বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের অবহেলার শেষ নেই। যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। যেখানে অন্যান্য দেশ তাদের নিজ ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি ক্রমাগত আস্হাশীল থেকে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নতির সোপানে, সেখানে আমরা পরদেশী ভাষা- ইংরেজী ও হিন্দীকে আমাদের মাতৃভাষার চেয়েও উচ্চমূল্য দিয়ে কেবল নিজেদের অধঃপতনেরই ব্যবস্হা করছি। যা কখনই আমাদের জন্য কোন সুফল বয়ে নিয়ে আসবেনা।বরং নিজের গভীর শিকড় উপরে হালকা ঝড়ে পতনেরই ব্যবস্হা করবে তা।
তাই মাতৃভাষা বাংলাই আমাদের মন,মনন ও জীবনের একমাত্র উপজীব্য হোক।