somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিল্লির বৃষ্টি

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল থেকেই ঝুম বৃষ্টি।হোটেলের জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখছি আর বাংলাদেশের বৃষ্টির সাথে দিল্লির বৃষ্টির পার্থক্যটা বোঝার চেষ্টা করছি। অনেকের মত আমারও ধারণা ছিল বাংলাদেশের বৃষ্টি অনন্য। কিন্তু সেই ধারণা রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

ঢাকার মত দিল্লি শহরটাও দুই ভাগে বিভক্ত- পুরান দিল্লি আর নতুন দিল্লি। নতুন দিল্লি মূলত মুল দিল্লি শহরের সম্প্রসারিত অংশ। আর আমি যেখানে থাকি এটাকে ঠিক নতুন দিল্লি বলাটা উচিৎ হবে না। এটা নতুনতম দিল্লি। ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩ থেকে মাইল খানেকের পথ। টার্মিনাল-৩ এর বয়স মাত্র এক বছর। আয়তনে বিশাল, ঝকঝকে তকতকে আর আধুনিক সব উপকরনে সুসজ্জিত। বিমানবন্দর থেকে আমার হোটেল পর্যন্ত রাস্তাটার কোনদিকে কোন স্থাপনা নেই।একদম ফাঁকা। কয়েক যায়গায় অবশ্য খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। অদূর ভবিষ্যতে কিছু হবে হয়ত। পুরো নতুন দিল্লিটাই আসলে নির্মানাধীন।

দিল্লির বৃষ্টিকে বাংলার বৃষ্টি থেকে আলাদা করতে পারছি না একটি বিশেষ কারনে। গাছপালা। এই একমাস দিল্লি ঘুরে আমার মনে হয়েছে একটা সবুজ বনাঞ্চলের মাঝে একটা শহর গড়ে উঠেছে।কিন্তু গাছগুলর অবস্থান আর প্রকৃতি দেখলে বোঝা যায় ব্যপারটা তা নয়। সুপরিকল্পিতভাবে আর সযত্নে গাছগুলোকে লাগান হয়েছে সারি সারি করে। বেশির ভাগ গাছই নিম, দেবদারুর মত দীর্ঘজীবী বনজ গাছ।

আজ আকাশে সূর্যের চোখ রাঙ্গানি নেই, নেই রোদের উত্তাপও। এমনিতে দিল্লির সূর্য ভয়ানক। মনে হয় শহরটাকে ভাল মত দেখার জন্য অনেকখানি নিচে নেমে এসেছে। আর ভালবেসে হৃদয়ের উষ্ণতাও বাড়িয়ে দিয়েছে খানিকটা।কয়েকদিন টানা কাজ করে ক্লান্ত সূর্যটা আজ সকালে একটু আরাম করছিল। সেই সুযোগে ভোর বেলাতেই দলবল নিয়ে ছুটে এসেছে মেঘেরা।শুষ্ক শহরটাকে দেখে তাদের মায়া হল। তাই অনেক দূর থেকে কষ্ট করে বয়ে আনা পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে তাকে।দিল্লিতে একটা জিনিস এখন পর্যন্ত চোখে পড়ল না।জলাশয়। পুকুর-নদী- খাল- বিল- হ্রদ-সাগর কিছুই না। সমুদ্র ত ধারে কাছে নেই। শুনেছি যমুনা নাকি বয়ে গেছে দিল্লির একপাশ দিয়ে।এখনও দেখার সুযোগ হয় নি।

গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে কিন্তু আমাদের দেশে ভিজে চুপচুপ গাছগুলো যেমন জড়সড় হয়ে থাকে এখানে সেরকম নয়। মনে হচ্ছে সুইমিংপুলে ঝাপাঝাপি করে গাছগুলো আরও সতেজ হয়ে উঠছে। আরও সবুজ।হবেই বা না কেন? সূর্যের অত্যাচারে যে ওরা শুকিয়ে তেজপাতা হয়ে থাকে বছরের বেশিরভাগ সময়।

আজ শুক্রবার। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। যদিও শুক্রবার এখানে সরকারি ছুটির দিন নয় কিন্তু আজ কি একটা কারণে বন্ধ।কারণটা জানার চেষ্টা করলাম আমার ইন্ডিয়ান সহপাঠিদের কাছ থেকে।অনেকেই তেমন কিছু বলতে পারল না। উত্তর প্রদেশের ছেলে রহুল স্রীভাস্তভ বলল, আজ ওনম। এটা সাউথ ইন্ডিয়ার বিশেষত কেরালার একটা উৎসব, সম্ভবত ওদের আঞ্চলিক বর্ষপঞ্জি অনুসারে কোন বিশেষ দিন।আজ সরকারি ছুটি না হলেও যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেরালার ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা আছে সেখানে ছুটি। ইন্ডিয়া এত বিশাল আর বিচিত্র সংস্কৃতির দেশ যে এক প্রান্তের উৎসবের ঢোলের আওয়াজ অন্য প্রান্তে প্রায়শঃ পৌঁছায় না।

আমি এখানে এসেছি সার্কের বিশ্ববিদ্যালয় সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে পড়তে।এটি একদম নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয়। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। গত বছর এটি যাত্রা শুরু করেছিল দু’টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স দিয়ে। এবছর আরও চারটি বিষয় যোগ হয়েছে।কোন হোস্টেল এখনও তৈরি হয়নি তাই ছাত্র-ছাত্রীদের রাখা হয়েছে আধাসরকারি একটি তিন তারকা হোটেলে। এটাই আমাদের অস্থায়ী হোস্টেল।

বৃষ্টি ধরে এসেছে। দ্রুতই মেঘেরা যে যার কাজে চলে যাবে। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসবে সূর্য। এসে দেখবে দুষ্টু মেঘেরা তার শুকনো শহরটিকে ভিজিয়ে দিয়ে গেছে। রাগে গজগজ করতে করতে সে আবার তাকে রোদে শুকাতে বসবে।

দিল্লির মানুষগুলোও এখানকার মেঘের মত।কাজ শেষে বসে থাকে না। ঝিমায় না।ব্যস্ত সমস্ত হয়ে চলে যায়।তাই ঢাকার মত এখানে রাস্তার মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকান নেই আর সেইসব দোকানে বসে আমাদের মত শিকড় গজানো আড্ডা দেবার লোকও নেই। ইউরোপ-আমেরিকা যাইনি। ওখানকার ব্যস্ত জীবন-যাপন সম্পর্কে যা জানি তা বই-পত্র আর অন্তর্জালে সীমাবদ্ধ। কিন্তু ঢাকা-দিল্লির চালচলনের পার্থক্য দেখে দিল্লি-ডান্ডির পার্থক্যটা আন্দাজ করতে পারি।


বৃষ্টি থেমে গেছে। আমি এদিক-ওদিক তাকাচ্ছি একটা ভেজা কাক দেখব বলে।পাচ্ছিনা। এমনিতে কাক খুব একটা চোখে পড়েনি এখানে। যারা আছে তারাও মনে হয় ভীষণ কেউকেটা নাগরিক পাখি।বৃষ্টিতে তারা ভেজে না।তবে আমি যা দেখলাম তা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। গাছপালার আড়ালে ইটের স্তুপের উপর
কাকভেজা হয়ে বসে আছে একটা জলজ্যান্ত ময়ূর।পেখম মেলা ময়ূর দেখেছি, মেঘের তালে তালে নৃত্যরত ময়ূর কল্পনা করেছি, কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে যাওয়া জড়সড় ময়ূর- এটা বুঝি শুধু দিল্লিতেই সম্ভব। কারন, দিল্লির পথেঘাটে, গাছপালার ফাঁকে ফাঁকে প্রায়শঃ চোখে পড়ে হেলে-দুলে অনেকটা নাচের ভঙ্গিতে হেঁটে যাওয়া দু’একটা ময়ূর।

৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×