somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনি/তুমি এবং আমাদের নিম্ন মানুষিকতা!

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অনেক দিন পর নিজ বাড়িতে আসা হয়েছে।তো বিকাল বেলা বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাওয়ার জন্যে একটি ভ্যানে উঠলাম।আগেই বলে রাখি ভ্যান চালক আমার নিজের এলাকার।ছোট থেকেই পরিচিত।অনেক দিন পর আমাকে দেখে সে খুব খুশি হল এবং ভ্যান চালাতে চালাতে আমার সাথে খোশ গল্প করা শুরু করল-আমি কেমন আছি/এখন কি করি/কই থাকি ইত্যাদি ইত্যাদি।তো তার সাথে কথা বলতে বলতেই আমার গন্তব্যস্থানে আমি চলে আসলাম।তো তাকে ভ্যান ভাড়াটা দিয়ে আমি ভ্যান থেকে নেমে চলে গেলাম।

অনেক দিন পর পুরানো বন্ধুদের সাথে দেখা হল।খুবই ভাল লাগছিল,বন্ধুরা সবাই মিলে রাস্তা দিয়ে হাটতেছিলাম আর আড্ডা দিচ্ছিলাম।তো এর ফাকে আমার একটি কথা মনে হল, যখন ভ্যান চালকের সাথে কথা বলেছি তখন তাকে "তুমি" বলে সম্মোধন করেছি।বিষয়টা মনে হওয়ার পর থেকেই নিজেকে খুব ছোট ছোট মনে হচ্ছিল!মনে হচ্ছিল কাজটা খুব অন্যায়ই করে ফেলেছি।কারণ,ভ্যান চালকটি আমার পরিচিত হলেও বয়সে ছিল আমার থেকে অনেক বড়।ছোট বেলায় আমার যখন বুঝ হয় তখন থেকে ভ্যান চালকটিকে আমি ভ্যান চালাতে দেখছি।তাহলে ভাবুন সে কতটুকু বড়!মনে একটি কথাই বারে বারে ঘুর পাক খাচ্ছে যে ভ্যান চালকটি আমাকে কি যে মনে করল!!!মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছিলাম না।

যাই হোক সেদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা শেষে যখন বাসায় ফিরতেছি তখন বুট খাওয়ার জন্য একটি দোকানে ঢুকলাম। আগেই বলে রাখি দোকানদারকে আমরা "মামা" বলেই ডাকি।দোকানে সেই মামা এবং তার ৫ম শেণীতে পড়ুয়া একটি থাকে।তো দোকানে ঢুকে মামার কাছে বুট চাইলাম আর তিনি বুট দেয়ার পর বসে বসে খাওয়া শুরু করলাম।এমন সময় বাহির থেকে আরো একজন লোক ঢুকলো।সেই লোকটির সাথে মামার মেয়ের কথোপকথন ঃ-

লোক: কিরে ১০ টাকার বুট বানা ত,আমি একটু পর এসে নিয়ে যাব।

মেয়ে:আচ্ছা। তুমি যাও আমি বানাইয়া রাখছি!

তো এই কথাটি বলে লোকটি চলে গেল।দোকানে আমি আর কয়েকজন লোক বসে বুট খাচ্ছি।তখন দোকানদার মামা তার মেয়েকে কিছু কথা বলল যা শুনে আমি পুরাই অবাক হয়ে গেলাম।

মামা তার মেয়েকে বলছে:- আম্মা তুমি ওই লোকটিকে "তুমি" করে বললা কেন (রেগে)!?মনে রাখবা ব্যবহারে বংশের পরিচয়।তুমি অন্য লোকদের সাথে যেমন আচরণ করবা তার দ্বারা লোকজন চিন্তা করবে তোমার বাবা, মা কেমন!পরিবার থেকে তোমার বাবা মা তোমাকে কেমন শিক্ষা দিয়েছে!তুমি যার সাথে কথা বললা সে তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়।তাকে তুমি "তুমি" করে ডাকতে পারো না।তাকে তোমার আপনি করে ডাকা উচিত ছিল।

মামার মেয়েকে মামার শিক্ষা দেয়ার ধরণ দেখে আমি ভিতরে ভিতরে খুবই লজ্জা বোধ করছিলাম!আসলে আমরা আমাদের জীবনটাকে সহজ ও আরাম দায়ক করার জন্যে যে সকল ব্যক্তিদের সাহায্য নিয়ে থাকি তাদেরকে অনেক সময়ই খুবই তুচ্ছ মনে করি!কিন্তু এটা মনে করা মোটেও ঠিক নয়।বিশেষ করে আমরা প্রতিদিন আমাদের গন্তব্যস্থানে যাওয়ার জন্যে যে রিক্সা চালক বা ভ্যান চালকের সাহায্য নিয়ে থাকি তাদেরকে আমরা "মামা" বলেই ডাকি।এটা একটা স্টাইলে পরিণত হয়েছে ইদানিং!তারপর আমরা কথা বলতে গেলে বেশির ভাগ সময়েই "আপিনি" না বলে "তুমি" করে বলি এটা মোটেও ঠিক বলে আমি মনে করি না।কারণ, সেই ভ্যান চালক এবং রিক্সা চালকেরা বেশির ভাগই আমাদের থেকে বয়সে বড় থাকেন।আমরা যদি একটা জিনিস চিন্তা করি তাহলেই সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে-- ধরেন আমরা আমাদের বাবার সাথে আছি।তখন দেখতেছি একটা লোক এসে আমাদের বাবাকে "তুমি" বলে ডাকছে, তখন আমাদের কেমন লাগবে?!নিশ্চই অনেক খারাপ লাগবে।ঠিক তেমনি রিক্সা চালক,ভ্যান চালকেরাও কারো বাবা!!!!!

মনে হয় সব ক্লিয়ার হয়ে গেছে।আমাদের আশেপাশে আমাদের প্রতিদিনের কাজকে সহজ করার জন্যে যে সকল লোক অক্লান্ত পরিশ্রম করেন তাদেরকে তাদের যোগ্য সম্মান দেয়া উচিত।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৫৮
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×