somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবকে সকল অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছেন বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে সব অভিযোগ থেকে খালাস দিলেন বিচারপতি মো : আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। আপিল আবেদনের লিখিত রায়ে বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আনীত কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আসামি পক্ষ সফলভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে তিনি রাজাকার বাহিনী এবং শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন না ও কোনো অপরাধ করেননি। আসামি পক্ষ আরো প্রমাণ করতে পেরেছে যে, ঘটনার সময় তিনি পিরোজপুর ছিলেন না, যশোর ছিলেন।

বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা রায়ে লিখেছেন ১৯৭১ সালে তিনি রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন এবং এ হিসেবে তিনি বিভিন্ন অপরাধ করেছেন মর্মে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা প্রমাণের দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রপক্ষের। কিন্তু তারা তা প্রমাণ করতে পারেনি।

রায়ে তিনি আসামি পক্ষের আপিল আবেদন গ্রহণ করে মাওলানা সাঈদীকে সব অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দিয়ে নির্দোষ ঘোষণা করেছেন। অপর দিকে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন তিনি। বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা মাওলানা সাঈদীকে খালাসের পক্ষে দীর্ঘ রায়ে সাক্ষীদের সাক্ষ্য, অন্যান্য তথ্য প্রমাণ বিশ্লেষণ করে যুক্তি তুলে ধরেছেন।

১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মাওলানা সাঈদীকে আটটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন। এর মধ্যে দুইটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মাওলানা সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। সে সময়কার প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে এ রায় দেন।

বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। ৬১৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় মূলত লিখেছেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি) এবং বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। বেঞ্চের অপর সদস্য তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি এ এইচ এম শাসসুদ্দীন চৌধুরী (বর্তমানে অবসরে) এবং বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিক বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার রায়ের সাথে একমত পোষণ করেছেন রায়ে।

অপর দিকে মাওলানা সাঈদীকে তিনটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড, একটি অভিযোগে ১২ বছর এবং আরেকটি অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ড দিয়ে বেঞ্চের চারজন বিচারপতি যে রায় দিয়েছেন তার সম্পূর্ণ বিপরীত রায় দিয়েছেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। তিনি তার ২৪৪ পৃষ্ঠার রায়ে মাওলানা সাঈদীকে সবগুলো অভিযোগ থেকে খালাস দিয়ে তাকে নির্দোষ ঘোষণা করেছেন।

বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী রায়ে ২৩৮ পৃষ্ঠার ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মালার উদাহরণের সাহায়্য্ ে

রাষ্ট্রপক্ষ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মোট ২০টি অভিযোগ আনে ট্রাইব্যুনালে। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল-১ মাওলানা সাঈদীকে ইব্রাহীম কুট্টি ও বিশাবালী হত্যাকাণ্ডের দু’টি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেন। অপর ছয়টি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও সাজা উল্লেখ করা হয়নি।

ট্রাইব্যুনালে যে আটটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয় সেগুলো হলো ৬, ৭, ৮ (ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা), ১০ (বিশাবালী হত্যা), ১১, ১৪, ১৬ ও ১৯।

রাষ্ট্রপক্ষ ছয়টি অভিযোগে সাজা উল্লেখের দাবি জানিয়ে আপিল আবেদন করে। অপর দিকে আসামিপক্ষ মাওলানা সাঈদীর বেকসুর খালাস করে আপিল আবেদন করে।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মাওলানা সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত আটটি অভিযোগের মধ্যে তিনটি পৃথক অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড অপর দু’টি অভিযোগের একটিতে ১২ বছর এবং আরেকটিতে ১০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অপর তিনটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়।

আলোচিত ইব্রাহীম কুট্টি হত্যাকাণ্ডে ১২ বছর জেল এবং বিশাবালী হত্যাকাণ্ডে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বিশাবালী হত্যার অভিযোগসহ আরো দু’টি অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে আপিলের রায়ে।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন গ্রহণ করে যে তিনটি অভিযোগে সাজা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলো ৭, ১৬ ও ১৯ নং অভিযোগ।
১৬ নম্বর হলো গৌরাঙ্গ সাহার তিন বোন মহামায়া, আনু ও কমলাকে অপহরণ করে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেয়ার অভিযোগ। এ অভিযোগে আপিল বিভাগের রায়ে মাওলানা সাঈদীকে আমৃত্য কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অপর দিকে ১৯ নম্বর অভিযোগ হলো মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১০০ থেকে ১৫০ জন হিন্দুকে জোর করে ধর্মান্তরকরণ। এ অভিযোগেও মাওলানা সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

সাত নম্বর অভিযোগ ছিল শহিদুল ইসলাম সেলিমের বাড়িতে আগুন দেয়া। এ অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

৭, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে ট্রাইবু্যুনাল মাওলানা সাঈদীকে দোষী সাব্যস্ত করলেও কোনো সাজা উল্লেখ করেননি। আপিল বিভাগের রায়ে এ তিন অভিযোগের বিপরীতে সাজা উল্লেখ করা হয়।

এ ছাড়া আরো তিনটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল মাওলানা সাঈদীকে দোষী সাব্যস্ত করলেও সে তিনটি অভিযোগে আপিলের রায়ে খালাস দেয়া হয়েছে। এ অভিযোগ তিনটি হলো (৬) পাড়েরহাটবাজারে দোকানেপাটে লুটপাটে নেতৃত্ব প্রদান এবং অংশ নেয়া, (১১) মাহবুবুল আলম হাওলাদারের বাড়িতে লুট এবং তার ভাইকে নির্যাতন এবং (১৪) ১৯৭১ সালে হোগলাবুনিয়া এলাকায় হিন্দুপাড়ায় আক্রমণ এবং শেফালী ঘরামী নামে একজন মহিলাকে রাজাকার কর্তৃক ধর্ষণে সহায়তা এবং সেখানে উপস্থিত থাকা।

বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ইব্রাহীম কুট্টি, বিশাবালী হত্যাসহ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত সবগুলো অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়েছেন।

মাওলানা সাঈদী ১৯৭১ সালে পিরোজপুরে সংঘটিত অপরাধ স্থলে ছিলেন না। তিনি ১৯৭১ সালের আগে থেকেই যশোর নিউ টাউনে ভাড়া থাকতেন। এপ্রিলে তিনি ধানঘাটা হয়ে মহিরনের সদরুদ্দীন পীর সাহেবের বাড়িতে যান। এরপর সেখান থেকে পীরের শিষ্য দোহাখোলা রওশন আলী মাওলানা সাঈদীকে তার বাড়িতে নিয়ে রাখেন সপরিবারে। আসামিপক্ষের দাবি পিরোজপুরে সংঘটিত অপরাধের সাথে পাকিস্তান আর্মি, রাজাকার এবং শান্তি কমিটির সদস্যরা জড়িত ছিল, মাওলানা সাঈদী নন। বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা তার রায়ে এ তথ্য তুলে ধরে বলেন, আসামিপক্ষ তাদের দাবি প্রমাণে সক্ষম হয়েছে।

সূত্র:নয়াদিগন্ত অনলাইন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:০২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×