somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভার্চুয়াল ভালবাসা -১

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ আকাশ মেঘলা, এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে সকালে। এখন ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। নীল আজ ঘুম ছেড়ে উঠতে চাইছিল না। এত সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিল সে!! নীরস জুনিয়রটার অসতর্ক ফোন দিল ঘুমের বারটা বাজিয়ে X(

নীলের বেড জানালার পাশে, জানালা থেকে আসা ঠাণ্ডা বাতাসে
ওর চুলগুলো উড়ছে। বাইরে তাকিয়ে দেখল এখনও টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। ভার্সিটি বন্ধ ভিসিবিরোধী আন্দোলনের জের ধরে। হলে অলস সময় কাটছে সবার।

নীল ফেসবুকে লগইন করে, মৌ নতুন কোন ম্যাসেজ দিয়েছে কিনা চেক করে অধীর আগ্রহে।মৌ ভার্সিটির জুনিয়র,সে থাকে ছাত্রী হলে। মৌ একটা হ্যাপি ইমো দিয়েছে। মন ভাল করার জন্য এসব ইমো আসলে ওষুধের মত কাজ করে :P

মৌ অনলাইনে । নীল নক করে । মৌ আজকাল নিজে নক করে না, যদিও নীল নক করলে সে খুশিই হয়। প্রথম প্রথম দুইজনই চ্যাট এ প্রায় সমান সমান কথা বলত। নিজে থেকে দুইজনই অনেক প্রশ্ন করত। একদিন তারা ঈদ এর ছুটির পর হল এ ফিরছিল। মৌ চট্টগ্রাম থেকে আর নীল খুলনা থেকে। পথে দুইজন ঘণ্টার পর ঘণ্টা চ্যাট করেছিল- সেদিন থেকেই নীল দুর্বল মৌ এর প্রতি।

এখন মৌ বুঝতে পেরেছে নীল তার প্রতি দুর্বল। মৌ এখন ছোট্ট একটা খেলা খেলছে- সে তার জায়গায় থাকবে, নীলকে এগিয়ে আসতে হবে। নীলকে তার দুর্বলতার কথা প্রকাশ করতে হবে। নীল মৌ এর খেলা কিছুটা আঁচ করতে পারে। তবে মনে সন্দেহও হয়। হয়ত সাধারণ বন্ধু হিসেবেই দেখে মৌ। নীল প্রপোজ করলে হয়ত মৌ রাগ করতে পারে, ঝাড়ি দিয়ে ব্লক মেরেও দিতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি।

নীল পড়েছে উভয়সঙ্কটে- একদিকে সে তার ক্রমবর্ধমান দুর্বলতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না আরেকদিকে হুট করে প্রপোজ করার মত দুঃসাহসও দেখাতে পারছে না। শুধু "তোমাকে ভাল লাগে" এটা বলাই তো অনেক কঠিন। বন্ধু শুভকে সব খুলে বলে। বন্ধু হাজারটা বুদ্ধি দেয়, কিন্তু কোনটাই তার মনঃপূত হয় না। একটা পথই খোলা সেটা হল চ্যাটে কথা বলে যাওয়া। নীল সেটাই করে। মৌ দিনকে দিন যেন কম কথা বলছে আরও।

নীল এর একটা জিনিস খুব বেশি সেটা হল ধৈর্য। নিজে থেকে সে মৌ এর বিষয়ে যা যা জানা দরকার প্রশ্ন করে। নিজের একটা ব্রেক আপ হয়েছিল কিছুদিন আগে সেটাও মৌকে বলে। মৌ খুব ভাল শ্রোতা। সে অনেক আগ্রহ নিয়েই এগুলো শোনে, নীল এর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে। নীল অনেক ভাল ফুটবল খেলে , ভার্সিটি টিম এ খেলছে দুইবছর ধরে। ফুটবল নিয়ে নীল এর অনেক প্যাশন, সে ফুটবলের অনেক গল্প করে মৌ এর সাথে, কিন্তু কেন যেন বেশিরভাগ মেয়েই খেলার কথা শুনে তেমন আগ্রহ বোধ করে না। নীল মনে মনে হতাশ হয়, তবে কি আর করা কমন ফ্যাক্টর বলে কথা ! মৌকে তো আর দোষ দেওয়া যায় না।

নীল আর মৌ এর পরিচয় বেশিদিনের না কিন্তু তাদের আলাপ এর পরিমাণ ও ফ্রিকোয়েন্সি অনেক বেশি । সারাদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শুধু ঘুমানোর সময় বাদে প্রতি আধঘণ্টায় তাদের কয়েকবার মেসেজ বিনিময় হয় ফেসবুক এ। কেউ ই দেখা করা বা ফোন নম্বর নেয়ার উদ্যোগ নেয় না। দুইজনই মাইন্ড গেম খেলছে।


মৌ একদিন অটোক্যাড শিখতে চেয়েছিল নীল এর কাছে। কিন্তু নীল পড়ে ইলেক্ট্রিক্যাল এ । তাদের অটোক্যাড শেখায় না। দুর্ভাগা নীল অন্য ডিপার্টমেন্ট এর বন্ধুদের পিছনে ঘুরতে শুরু করে - কেউ যদি তাকে শেখায় অটোক্যাড !! অবশেষে এক মহৎ বন্ধু তাকে শেখায়। নীল তো আনন্দে আটখানা, এবার একটা সুযোগ পাওয়া গেছে দেখা করার। কিন্তু রুমমেট ও ব্যাচমেট কিছু বন্ধু নীল এর এই অটোক্যাড শেখার খবর জানতে পারে । সবাই মিলে নীলকে ক্ষেপায় "মেয়ে পটানোর জন্য তুমি অটোক্যাড শিখছ মামু!!! :P"। নীল লজ্জা পায় তবে নিরুৎসাহিত হয় না। বন্ধুরা যদি বুঝত তার মনের অবস্থা :| , মৌ এর জন্য তার মনে যে ঝড় উঠেছে তা কি কেউ বুঝবে?? /:)

নীল ভাবতে থাকে, অটোক্যাড তো হাতে আছেই কিন্তু ওইভাবে সে মৌ এর সান্নিধ্য পেতে চায় না। সে চায় আগে তার ভাললাগার কথা প্রকাশ করতে । মনে সাহস সঞ্চয় করে সে। মৌ কেমন ছেলে পছন্দ করে এটা জিজ্ঞাসা করে সে । মৌ বলে অনেক ভাবতে হবে এটা বলার জন্য , পরে বলবে । নীল বলে "ওকে :| "।

কথায় কথায় মৌ বলে সে নাকি সিঙ্গেল হিসেবে অনেক ভাল আছে আর তার আইনজীবীদের পছন্দ পার্টনার হিসেবে । নীল যারপরনাই হতাশ । পরদিন সে বহু চিন্তার পর অফলাইন এ একটা লম্বা মেসেজ লেখে মৌ কে --

"মৌ, আর ন্যাকামি করতে চাই না.তুমি আগেই বুঝতে পেরেছ কিনা জানি না. তোমাকে আমার অনেক ভাল লাগে ।তুমি হয়ত জিজ্ঞাসা করবে কেন-আগে থেকেই উত্তর দিয়ে দিই। দুই একটা গৌণ বিষয় বাদে তোমার সাথে আমার প্রায় সব চিন্তাভাবনা মিলে যায়। তোমার চেহারা সৌন্দর্যের কথা আর তুলতে চাই না। আমার কাছে তুমি অনেক সুন্দর। আমি হয়ত আইনজীবী হতে পারব না এবং সিঙ্গেল হিসেবে তুমি অনেক সুখীও হতে পার।তবে আমি তোমার হ্যাপিনেসকে অনেক গুরুত্ব দেব। তোমাকে সবসময় খুশি রাখার চেষ্টা করব। প্রশ্ন করতে পার তোমাকে না দেখেই কিভাবে ভাল লাগল এত,ফেসবুক এ তো অনেক ছবি দেখলাম ই , সামনাসামনি দেখেও আমার অনুভুতির কোন পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। আর দেখা করার সুযোগ তো আছেই সামনে। আর যেসব সমস্যার কথা বলতে পার তা হল- তুমি উচ্চবর্ণের আর খুলনা ও চট্টগ্রাম ফ্যাক্টর। এটা আমার হাত এ থাকলে না হয় সমাধান করতে পারতাম। সবকিছু কি সব সময় সল্ভড থাকে! শেষে বলতে পারি এসব যুক্তি ও লজিক দিয়ে আমি তোমাকে পছন্দ করি নি,আগে পছন্দ করেছি এবং এগুলো নিয়ে ভেবেছি অনেক পরে।আর আমি কোনকিছু বানিয়ে বা তোমাকে খুশি করার জন্য বলি নি। তুমি উত্তর দিও , আমি অপেক্ষা করব :|"
দ্বিতীয় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:০৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×