somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাকর (Servant) বনাম চাকরিজীবি (Employee)

২৪ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একজন বেসরকারি প্রকৌশলীর পোস্ট। স্ত্রী, শিশুকন্যা, পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব, সব ফেলে রেখে, দূর-দুরান্তে, নামমাত্র বেতনে, কলুর বলদের মত খাটনি খেটে যাচ্ছে এরা।

আমাদের দেশে বেসরকারি প্রকৌশলীদের সপ্তাহের প্রায় প্রতিটা দিন; ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করতে হয়, কাজের উদ্দেশ্যে। তাদের সামাজিক জীবন নাই; বিনোদন নাই। প্রোডাক্টিভিটি আর কাজের প্রতি আন্তরিকতা নাই প্রায় অধিকাংশ ইঞ্জিনিয়ারের। এইরকম কর্মপরিবেশ বদলাতে কখন উদ্যোগী হবেন প্রতিষ্ঠানগুলির মালিকেরা, শিল্পকারখানার কর্ণধারেরা?

বিশ্বের কর্পোরেট সেক্টর, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরের আধুনিক ট্রেন্ডগুলি ফলো করছে না আমাদের কর্তাব্যক্তিরা? ছুটি কাটাতে, রোগের চিকিৎসা করতে, কিংবা মোবাইল কিনতে ঠিকই বিদেশকে প্রাধান্য দেন এই ধনী ব্যক্তিরা। কিন্তু নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চাকুরিজীবিদের বেলায় কেন মধ্যযুগীয় বর্বর রীতিরেওয়াজ?

একটা উদাহরণ দিই।
এই মাসের ১৩ তারিখ একটা ইন্টারভিউ দিয়েছি; আমি ইউরোপের একটা দেশে থাকি।
অনলাইন ইন্টারভিউ। জুনিয়র-মিড লেভেল ইঞ্জিনিয়ারিং জব। প্রধান কাজ, কাস্টোমার সার্ভিস, ট্রাবলশুটিং-রিপেয়ার, মাঝে মাঝে ইন্সটলেশন। এই কোম্পানির প্রজেক্টগুলা ইউরোপের অনেক দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আমি যে দেশে থাকি, সেটা বাংলাদেশের ৩ গুণ বড়; কিন্তু জনসংখ্যা ৫০ লাখ। এই দেশে এই কোম্পানির ৪০টার মত প্রজেক্ট লোকেশন আছে। তো আমার চাকরি হলে আমাকে সারা দেশে চষে বেড়াতে হবে; মাঝে মাঝে অন্য দেশেও যেতে হতে পারে।

এই চাকরির আনুমানিক বেতন বছরে ৬০ লক্ষ টাকা। যেরকম চাকরিতে বাংলাদেশ মাসিক বেতন হয় বড়জোর ২০ হাজার টাকা। বিদেশে এরকম চাকরিতে চাকরিরত ব্যক্তি কোথাও মুভ করলে হোটেল খরচ, যাতায়াত খরচ ও খাওয়া- সবই কোম্পানির।

তো, আমি ইন্টারভিউয়ারকে জিজ্ঞেস করলাম- আমার চাকরি কি ৯টা-৫টা? শুনে তিনি একটু আশ্চর্য হলেন। কারণ, পাশ্চাত্যে এরকম চাকরি প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এসব দেশে যেকোন চাকরি হয় শিফট-বেইজড, নতুবা এসাইনমেন্ট বেইজড। ইন্টারভিউয়ার আমাকে বললেন- আপনার চাকরির রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী আপনাকে কোন ডেস্কজব করতে হবে না। আপনি ঘরেও থাকতে পারেন চাইলে। কিন্তু যখন প্রয়োজন হবে, তখন ছুটির সময়, কিংবা রাতেও আপনাকে যেতে হতে পারে।

মূল কথা- আমার যে কাজ, সেই কাজের যখন প্রয়োজনীয়তা উদয় হবে, তখন আমাকে যেতে হবে। নতুবা অযথা সপ্তাহের ৬ দিন, সকাল ৮টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত অফিস কিংবা কারখানায় মাছি মারতে হবে না। নিজের ফ্রি টাইমে আমি যাই করি না কেন, সেটা ঘুরে ফিরে আমার চাকরিদাতা কতৃপক্ষেরই লাভ। বিশ্রাম, বিনোদন ও সুস্থ সামাজিক জীবন যেকোন মানুষের উৎপাদনশীলতা ও সৃজনশীলতা বাড়ায়। আর ইন্ডিভিজুয়াল প্রোডাক্টিভিটি বাড়লে ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটিও বাড়ে।

এইটা সাহস করে নিজের বস ও চাকরিদাতাদের সামনে বলেন। আমি বলেছিলাম; ঝাড়ি দিয়ে বলেছিলাম। আগে যেখানে কাজ করতাম; দেশে থাকাকালীন। লজ্জায় ও অপমানে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল সেই জাদরেল ম্যানেজার। সবাই এরকম সাহস একসাথে দেখাতে পারলে দেশটা বদলে যেতো।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ২:৫৭
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×