somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থমকে থাকা সময় ও সেলিব্রিটি ক্রাশ

০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেসবুকে "বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র" একটি ভালো ও জনপ্রিয় গ্রুপ। সম্প্রতি এই গ্রুপে মডেল নোবেলের বিয়ের একটি ছবি শেয়ার করা হয়েছে, যার সময়কাল ৮ই আগস্ট ১৯৯৭। ছবির নিচে যারপরনাই বিচিত্র সব মন্তব্য, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি মজার মন্তব্য হচ্ছে- "বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী নারী।" অনেক মন্তব্য এরকম- "ঐ সময়ে আমার জন্মই হয়নি", বা "আমার জন্মের কয়েক মাস আগে।" আরো অনেক মন্তব্য হচ্ছে, নোবেলের চিরযৌবনা সৌন্দর্য্য ও রূপ প্রসঙ্গে; কিভাবে দুই প্রজন্মের নারীরা তার জন্য পাগল।
অল্পবয়সী একটি মেয়ে খুব সরলভাবেই এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করেছে- "এই লোক আমার বাবার চেয়েও ৪বছরের বড়।অথচ আমি তার উপর ক্রাশিত।" ঠিক এই মন্তব্যের নিচে নানামুখী বেশ কিছু রিপ্লাই এসেছে, সে প্রসঙ্গে আমার আজকের এই লেখা। ফেসবুক আগে এই সাইজের মন্তব্য নিতো; আজকাল নিচ্ছে না। শুধু আমার ক্ষেত্রেই, নাকি সবার ক্ষেত্রে, জানি না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই, ব্লগে লেখাটা ছাপাচ্ছি। এই লেখার লিংক, ঐ ছবির নিচে পোস্ট করে কাজ সারাবো।

নোবেল ভাই আমার দূরসম্পর্কের কাজিন হন। যদিও বয়সে আমার মায়ের কয়েক বছরের ছোট হবেন। জীবনে হাতেগোনা কয়েকবার দেখেছি। কাছে গিয়ে বেশিক্ষণ কথা বলাই হয়নি, ছবি তোলা দূরের কথা। কারণ আমি ছবি তোলার সামাজিকতায় বিশ্বাস করি না। অমুক সেলিব্রিটি আমার আত্মীয়, তমুক নেতা আমাকে চিনেন, এই ধরণের মানসিকতা ইতর প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য।

নোবেল ভাইয়ের বাবার পেশার সুবাদে ঢাকাতেই ওদের সব কিছু। শহরের সাথে সাথে বহির্বিশ্বেরও ছোয়া লেগেছে ওদের বড় হয়ে উঠায়। সম্ভবত পড়াশোনার কারণে বাইরেও সময় কাটিয়ে এসেছেন শুরুর জীবনে। সে সময় বাংলাদেশের কর্পোরেট, কমার্শিয়াল এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন/মার্কেটিং, পত্রিকার পাতা থেকে টিভির পর্দায় প্রবেশ করছিলো। নোবেল ভাই, তানিয়া, ফয়সাল, জয়া, পল্লব, ওদের একটা গ্রুপ ছিল। আগে থেকে বন্ধু ছিল কিনা জানি না, তবে এই গ্রুপটা বাংলাদেশের মডেলিং-এর বাজার মোটামুটি হাতে নিয়ে ফেলে। তখনকার নাটকের মত বিজ্ঞাপনগুলোও ছিল মনে রাখার মত, ভালো লাগার মত।

আরো অনেক কিছু বলতে পারতাম। কিন্তু, আমার লেখার মূল উদ্দেশ্য এসব না।।

নোবেল ভাইয়ের বাবা-মা দুজনেই সুন্দর, এবং ফরসা (সুন্দর ও ফরসা আলাদা ব্যাপার).। সারাজীবন বিলাসিতার মধ্যে যাপন করেছেন। পুষ্টিকর ও পরিমিত খাওয়াদাওয়া, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম, সুখকর সাংসারিক জীবন, কাজের লোকের ছড়াছড়ি, গাড়ি-বাড়ি-দামী চাকরি, এবং সর্বোপরি ব্যায়াম করার সময়-সুযোগ-অর্থ।

উনার মত লাইফস্টাইল সবার পক্ষে যাপন করা সম্ভব না। সবাই সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মায় না। উনার মত জীবনযাপন করলে, যেকোন মানুষই, জন্মগতভাবে শত অসুন্দর বা অনাকর্ষণীয় হলেও, একটা নির্দিষ্ট সময় পরে স্বাভাবিক সৌন্দর্য্য বের হয়ে আসে। শাহরুখ, ইরফান, নওয়াজুদ্দিনদের ক্যারিয়ারের শুরুর অবয়ব আর ক্যারিয়ারের পিক টাইমের পারসোনার মধ্যে এই কারণে বিস্তর তফাত দেখা যায়।

জীবনযাত্রার ধরণ এবং বাস্তবতার কষাঘাত মানুষকে সময়ের আগে বার্ধক্য নিয়ে আসে, তারুণ্য বেশিদিন ধরে রাখতে দেয় না। পরিবারের বোঝা কিংবা পারিপার্শ্বিক চাপ সামলাতে না হলে, আপনি বা আমিও পর্দার নায়ক-নায়িকাদের চেয়েও আকর্ষণীয় হতে পারতাম।

তবে, পর্দার জগতের এই তারকারা নিজেদের কারণে হোক, বা আমাদের কারণে, সবসময় একটা অতিরিক্ত চাপে ভোগেন। সুন্দর দেখানোর চাপ, আকর্ষণীয় থাকার চাপ। এই মানসিক অশান্তিই অনেকের জন্য ভয়াবহ হয়ে দাঁড়ায়। হাজার হাজার উদাহরণ আছে এসবের। এই চাপের জন্য তারা একটি নির্দিষ্ট বয়সের পরে নিজেদের গুটিয়ে ফেলেন, লুকিয়ে যান। নানারকম মেডিসিন ও ট্রিটমেন্ট নেওয়া শুরু করেন। শরীরের পেছনে অত্যাধিক সময় ব্যয় করেন। প্লাস্টিক সার্জারি করেন। এসব কারণেই মিডিয়া জগতের মানুষেরা সবসময় এমন সিদ্ধান্ত নেন, যাতে তাদের টাকাপয়সার কমতি না হয়।

ক্রাশ; ভালো লাগা; যে কাওকেই, যেকোন কারণে ভালো লাগতে পারে। তবে, মানুষের ভালোলাগার আদি ও অকৃত্রিম ভিত্তি হলো অন্যের বাহ্যিক আকার, আকৃতি, রঙ, রূপ। মানুষ সৃষ্টিগতভাবে "পশু", সেটা ভুলে গেলে চলবে না। পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, ইত্যাদি জীবজগতে একজন আরেকজনের প্রতি চেহারাসুরত দেখেই আকর্ষিত হয়, বা প্রভাবিত হয়।

এর পরে আসে, মানবিক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী, আচারব্যবহার ও পেশাগত উৎকর্ষ। শুরুতেই আমরা একজনের অন্তরে কি আছে, সেটা বুঝতেও পারি না, পাত্তাও দিই না। সেজন্যই শেখসাদীকে কমদামী পোশাক পরে দাওয়াত খেতে গিয়ে খেদিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
যতই নীতিবাক্য ঝাড়ি না কেন, দিনশেষে মানুষ একে অন্যকে মন বা মগজ দিয়ে বিবেচনা না করে, জৈবিক তাড়না দিয়ে বিবেচনা করে। হয়তোবা অজান্তেই। ব্যাক্তিত্ববোধ, মানসিক নিয়ন্ত্রণ, ধর্মীয় অনুশাসন, পারিবারিক আত্মসম্মান, ইত্যাদি যার যত বেশি, সে নিজেকে ততটা সংযত রাখতে পারে এসব ক্ষেত্রে।

দিনশেষে অবচেতনভাবে আমরা চমকদার, চটকদার জিনিসেই আস্থা বেশি রাখি। শহীদ আফ্রিদি, ডেভিড বেকহ্যাম, টম ক্রুজ, খালেদা জিয়া, শেখ তন্ময়, ফারাজ করিম, এরকম হাজার হাজার দেশী বিদেশী গুরুত্বপূর্ণ মানুষগুলোর ফ্যান-ফলোয়ারের ভিত্তি যতটা না তাদের কথা/চিন্তা/কাজ, তার চেয়েও বেশি তাদের গডলাইক পারসোনা। গ্রিক বা নর্স মিথোলজি পড়তে বা দেখতে অভ্যস্ত মানবজাতি হৃত্বিক রোশন বা হেনরি ক্যাভিলকে দেখলেই দুর্বল হয়ে যায়। সময়ের পরিক্রমায় এটাই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে।

বাই দ্যা ওয়ে, সবার শেষে একটা সাধারণ জ্ঞান দিয়ে যাই। বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক আবিষ্কার ও নিশ্চিত বিবৃতি অনুসারে- আফ্রিকার কালো মানুষেরা (কিংবা অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, চীনের আদিবাসী/উপজাতিরা) মানবজাতির অরিজিনাল ফরম্যাট। আর ইউরোপের সাদা মানুষেরা হচ্ছে মিউটেশন বা বিকৃতি। যাদের রঙরূপ দেখে আমাদের হরমোন নিঃসরণ ওলটপালট হয়ে যায়, তারা হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে অস্বাভাবিক; অভিযোজন, জলবায়ু ও ভোগৌলিক পরিবেশ তাদের কালো থেকে সাদা বানিয়েছে হাজার হাজার বছরের পথচলায়!

-----------------------------
সংযোজনীঃ
বাবার বয়সী বা মায়ের বয়সী সেলিব্রিটিদের উপর ক্রাশ থাকার প্রসঙ্গ থেকে, ঐ নির্দিষ্ট মন্তব্যের নিচে, আলোচনার মোড় ঘুরে গিয়ে, সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া টিনেজ মেয়ের রেইপ ও মার্ডার এক্সিডেন্টের আলোচনায় চলে যাওয়াটা কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক এবং দুঃখজনক। ক্রাশ খাওয়াকে "অতিরিক্ত আধুনিকতা" মনে করা, এবং অতিরিক্ত আধুনিকতা থেকে রেইপ হয়- এইরকম ধারণা পোষণ করা মানুষ বাংলাদেশে ভুরি ভুরি আছে। মানুষের যতদিন অস্তিত্ব আছে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সব এখন যেমন আছে তেমন আছে, ততদিন মানুষ কারণে-অকারণে ক্রাশ খাবে। আইন, শাসন, ধর্ম, দুর্ভিক্ষ, মৃত্যু, কোন কিছুই ক্রাশ খাওয়াকে পরিপূর্ণভাবে দমায় রাখতে পারবে না। তাই ক্রাশ খাওয়ার সাথে আধুনিকতার কোন সম্পর্ক নাই। আর, অতিরিক্ত আধুনিকতা থেকে রেইপ হয়, এটা একটা মান্ধাতার আমলের, কূপমন্ডুক ধারণা। অতিরিক্ত আধুনিকতা থেকে সেক্স রোবট নির্মাণ করা হয়েছে। যার ফলে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নিজের যৌন আকাঙ্খা ও বাসনার উদ্দাম বহিপ্রকাশ ঘটাতে পারে নির্জীব পুতুলের সাথে। মানবিক অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সুযোগ কমে যায়। আধুনিকতা এরকম নানাভাবে রেইপের মত অন্যান্য অনেক অপরাধ না ঘটানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ফলতঃ, সেই বক্তব্যও ধোপে টেকে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:২৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

বামিঙ্গিয়ান উপাখ্যান

লিখেছেন যুবায়ের আলিফ, ১০ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০




মাঝ রাতে কড়া একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভাঙলো জ্যাকের৷ ঘুমের ঘোরে দেখতে পেল কেউ চোখ ধাঁধানো পোষাক পরে ডাইনিংয়ে একটা চামচ রেখে দরজা গলিয়ে চলে যাচ্ছে৷ গা ও পোষাকের উজ্জ্বলতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×