somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইমার্জেন্সির দিন-রাত্রিঃ ২

২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৮:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফজরের সময় পার হয়ে কেবল চারিদিক ফর্সা হতে শুরু করেছে, এমন সময় হাজির হলো মেয়েটি। ধরা যাক তার নাম ফারিয়া। বয়স সতেরো। সাথে এসেছে সমবয়সী একটি ছেলে আর মধ্যবয়সী একজন মহিলা অভিভাবক। চোখে আঘাত লেগেছে। লাল হয়ে আছে চোখ। ইমার্জেন্সির সহকারী তার প্রাথমিক পরিচর্যা করে কল দিলো। প্রথমে দেখেই অপ্রস্তুত হলাম। ভীষণ দৃষ্টিকটু পোষাক তার পরনে। এই সাত সকালে ঢাকা শহরের অধিকাংশ লোকের আড়মোড়াও ভাঙা হয়নি এখনো, তারপরও রোগীকে দেখতে ইমার্জেন্সি রুমের বাইরে ছোটখাট জটলা তৈরী হয়েছে।

চোখের আঘাত পরীক্ষা করলাম। খুব গুরুতর কিছু নয়। চিকিৎসা দিয়ে ছড়ে দেয়া যায়। প্রেস্ক্রিপশন লিখতে যাবার সময় মহিলাটি বললো, “স্যার, কেইস করা হবে। সেভাবেই লিখে দিয়েন”। তাহলে তো ডিটেইলস লিখতে হবে। অভিভাবক মহিলাটিকে ডেকে নিলাম হিস্ট্রি নেয়ার জন্য। বাংলাদেশের আপামর মা-খালাদের মতো মধ্যবয়সী একজন শালীন মহিলা।
- রোগী আপনার কি হয়?
- আমার মেয়ে।
- কিভাবে আঘাত লেগেছে?
- বয়ফ্রেন্ড মারছে।
বেশ একটা ধাক্কা খেলাম। বয়ফ্রেন্ড শব্দটা এতো সাবলীল আর খানিকটা গর্বের সাথে তিনি বললেন যে, তা এমন মানুষের মুখে শুনে আঁতকে ওঠাটা অনিবার্য। যেন মনে হলো আমাদের সমাজের রক্ষনশীল কোন মা-খালাদের মুখ থেকে শব্দটি বের হচ্ছে।
- মেয়ে কি করে?
- ড্যান্সার। .........টিভিতে ড্যান্স করে।
- কি দিয়ে মেরেছে?
- থাপ্পড় দিছে। ছেলে বদমাইশ কোথাকার। দেখি কই যায়।
ইনজুরির বিস্তারিত লিখলাম। যে ইনজুরি তাতে কেস করলেও সাজা তেমন কিছু হবার কথা নয়। মহিলা নানাভাবে বিভিন্ন কথা বলে বাড়িয়ে লেখানোর চেষ্টা করলেন।
- স্যার, মাথায় খুব ব্যথা। মাথাই তুলতে পারতেছে না। চোখ দিয়া রক্ত বাইর হইছিলো। আমরা মুছে নিয়া আসছি। তাকাতেও কষ্ট হচ্ছে।
মহিলাটিকে ওয়েটিং রুমে বসতে বলে সব কিছু লিখলাম। তিনি পাশের রুমে গিয়ে মেয়েটির পাশে বসে জোরে জোরে বলছিলেন “তুই কোন চিন্তা করিস না। আমি দেইখা নিমু। প্রোগ্রাম সব তুইই করবি......”।

মাথার মধ্য ‘বয়ফ্রেন্ড’ শব্দটি ঘুরছিলো। আজ সমাজে হারাম আর হালাল উল্টে গেছে। রাসুল সাঃ আর ইসলামের স্বর্ণযুগে বিয়ে ছিল খুব স্বাভাবিক ব্যাপার আর বয়-গার্লফ্রেন্ড নামের ফিতনা ছিলো কল্পনার অতীত। সমাজে এমন কোন সাবালিকা মেয়ে পাওয়া কষ্টকর ছিলো, যে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়নি। কেউ যদি বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত হতো, তাহলেও স্বপ্লতম সময়ে তাদের আবার বিয়ে দিয়ে দেয়া হতো। ফলে সমাজে অনাচার আর মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতা ছিলো না। বিয়ের মতো চমৎকার সামাজিক বন্ধন যে কতোটা স্বচ্ছ ছিলো তা অনেক হাদিসে এসেছে। যেমন-সহীহ বুখারীতে এসেছে, জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবী আবদুর রাহমান বিন আউফের হাতে হলুদ রঙ দেখে রাসুল সাঃ জিজ্ঞেস করলেন, “কি ব্যাপার আবদুর রাহমান?” তিনি বললেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমি একটি মেয়েকে এক আঁটি সমান স্বর্ণ মোহর দিয়ে বিয়ে করেছি”। তিনি বললেন, “তুমি কি ওয়ালিমা করেছো?” আবদুর রাহমান বললেন, “না”। রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন, “একটি ছাগল দিয়ে হলেও ওয়ালিমা করো”। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো এই যে, আবদুর রাহমান বিন আউফ ছিলেন মুহাজির সাহাবী যিনি মক্কা থেকে নিস্বঃ অবস্থায় হিজরত করে মদীনায় এসেছিলেন, যেখানে রাসুলুল্লাহ সাঃ ছাড়া তার আর প্রিয়জন কেউ ছিলো না। অথচ তিনি বিয়ে করলেন রাসুলকে না জানিয়েই আর রাসুল সাঃও এই বলে অভিযোগ করলেন না যে, “তুমি বিয়ে করলে আর আমাকে জানালেও না?” অথচ আজ আমাদের সমাজে বিয়ে একটি কমপ্লেক্স বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ যদি লিভ টুগেদার করে তাতে কারো আপত্তি নেই, কিন্তু দুটি বিয়ে করলে বা বর কনের বয়সের ব্যবধান বেশী হলেই ছি ছি বলে উঠে সারা সমাজ।

জেনে বুঝে বাবা-মা’র চোখের সামনে দিয়েই বিয়ে না করেও নির্বিকার মেলামেশার মতো ভয়াবহ আচার আজ স্বাভাবিক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। অথচ দুই দশক আগেও পরিস্থিতি এমন ছিলো না। আমাদের অধিকাংশের ছোটবেলায় বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডতো দূরের কথা, বাবা-মা যদি শুনতেন ‘ছায়াছন্দ’ নামের সিনেমার গান দেখেছি, তাহলেই আর রক্ষা ছিল না। আব্বার সাথে বসে এমন কোন প্রোগ্রাম দেখেছি যেখানে কোন ছেলে কোন মেয়ের হাত ধরেছে, তা হয়নি কখনো। আমাদের বাবা-মায়েরা নিজেদের শ্রম ও মূল্যবোধের শেষটুকু পর্যন্ত দিয়ে আমাদের বড় করে তুলেছেন। এর যথাযোগ্য বিনিময় আল্লাহ দুনিয়া ও পরবর্তি অনন্ত জীবনে তাঁদের দিন। “রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি স্বগীরা-ও আমাদের রব, আমাদের বাবা-মা’র উপর রহম করুন যেমনটি তারা আমাদের ছেলেবেলায় আমাদের উপর করেছেন”।

৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×