somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবু বাসির (রাঃ) - মোস্ট ওয়ান্টেড, হোস্ট অব ওয়ান্টেড

০৯ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুদাইবিয়ার সন্ধির ভেতর একটা অদ্ভুত শর্ত মক্কার কুফফাররা দিয়েছিলো তা হলো, কোন মুসলিম বা মক্কার অন্য কেউ ইসলাম গ্রহণ করে মক্কা থেকে মদিনায় গেলে রাসুলুল্লাহ সাঃকে তাকে ফেরত দিতে হবে, কিন্তু মদীনা কিংবা ইসলামের ছাউনি থেকে কেউ যদি পালিয়ে মক্কায় যায় তাহলে তাকে কুরাইশরা ফেরত দেবে না। রাসুলুল্লাহ সাঃ এ শর্ত মেনে নিয়েছিলেন। চুক্তি লেখা শেষ হলো, কিন্তু স্বাক্ষর হয়নি, এ সময় শৃংখলিত অবস্থায় এসে হাজির হলেন আবু জানদাল বিন সুহাইল রাঃ। তার পিতা সুহাইল বিন আমর তখন কুরাইশের প্রতিনিধি হয়ে সন্ধি করছে। সুহাইল রাসুলুল্লাহ সাঃ কে বললো, "মুহাম্মাদ, আমাদের ভেতর চুক্তি হয়ে গেছে, আবু জানদালকে আমাদের কাছে ফেরত দাও"। আবু জানদাল রাসুল সাঃএর কাছে বললেন, "ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমি আপনি যদি আমাকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেন তাহলে তারা অমানুষিক নির্যাতন করবে। আমাকে ইসলাম ত্যাগ করতে বাধ্য করবে"। রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন, "আবু জানদাল তুমি ধৈর্য্য ধর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তুমি আর তোমার মতো যারা আছে তাদের মুক্তির জন্য পথ খুলে দেবেন"।

এই নির্যাতিত সাহাবাদের মুক্তির পথ আল্লাহ্‌ যার মাধ্যমে খুলে দিয়েছিলেন তিনি হলেন আবু বাসির রাঃ।

সন্ধির কিছুদিন পর খাইবার যুদ্ধে জয়ী হয়ে রাসুলুল্লাহ সাঃ তখন মদীনায় ফিরে এসেছেন। এমন সময় মক্কা থেকে পালিয়ে মদীনায় এলেন সেখানকার নির্যাতিত মুসলিম আবুল বাসির। এর সাথে সাথেই মদীনা পৌঁছালো মক্কার দুজন প্রতিনিধি। তারা রাসুল সাঃ এর কাছে আবু বাসিরকে ফেরত দেয়ার দাবী জানালো। সন্ধির শর্ত মেনে রাসুলুল্লাহ সাঃ তাঁকে ফেরত পাঠালেন। অসহায় আবু বাসির রাসুলুল্লাহ সাঃ কে না পাঠাতে অনুরোধ করলো। রাসুলুল্লাহ সাঃ তাকে আবারো বললেন, "ধৈর্য্য ধরো। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তোমার আর তোমার মতো অন্যদের মুক্তির পথ তৈরী করবেন"।

ফিরে চললেন আবু বাসির। পথিমধ্যে এক যায়গায় তিনজন থামলো বিশ্রামের জন্য। এর মধ্যে একজন দূরে খেজুর খেতে গেলে আবু বাসির অন্য লোকটিকে বললেন, "তোমার তলোয়ারটিতো ভারী সুন্দর। একটু দেখিতো"। তলোয়ার হাতে নিয়ে এক আঘাতে তিনি হত্যা করে দিলেন সেই কুরাইশ প্রতিনিধিকে। এবার অন্য লোকটিকেও আক্রমন করতে উদ্যত হলে সেই লোকটি দ্রুত ঘোড়া ছুটিয়ে মদীনার দিকে পালিয়ে গেলো। মদীনা গিয়ে লোকটি রাসুলুল্লাহ সাঃকে ঘটনা জানালো। শুনে রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন, "হায়, সে তো যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দিলো। হায়, নিহত লোকটির সাথে যদি অন্য কেউ থাকতো"। সেই লোকটি মক্কায় ফিরে গেলো কিন্তু আবু বাসির মদীনা ফিরে গেলেন না। তিনি জানতেন রাসুলুল্লাহ সাঃ তাকে আবারো ফিরিয়ে দেবেন। তিনি একাকী লোহিত সাগরের উপকূলে ঈ'স নামের এক গহীন বনে আশ্রয় নিলেন। একা সেই বনে তিনি গড়ে তুললেন একটি সেনা ছাউনি যার সদস্য সংখ্যা মাত্র একজন। সেনাপতিও তিনি, সিপাহীও তিনি।

অল্পদিনের ভেতর মক্কার নির্যাতিত মুসলিমদের কাছে এ সংবাদ পৌঁছালো যে, আবু বাসির ঈ'সের জঙ্গলে ঘাঁটি গড়েছে। এরপর মক্কা থেকে পালিয়ে তার সাথে যোগ দিলেন আবু জানদাল। তারপর একে একে আরো অনেক সাহাবা। এবার তারা এক হয়ে শপথ নিলেন, আমারা কুরাইশের কাফেলাকে বিপর্যস্ত করে ছাড়বো। তাদের শামের বাণিয্য পথ রুদ্ধ করে দেব। শুরু হলো একের পর এক কাফেলা আক্রমণ। কুরাইশদের যে কাফেলাই এ পথ দিয়ে যেতো, আবু বাসিরের বাহিনী আক্রমণ করে তাদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নিতো। তাদের কেউ হতো নিহত, কেউবা আহত।

কুরাইশদের জন্য শামের ব্যবসা পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গেলো। শীঘ্রই তারা মন্দা আর খাদ্যের অনটনের ভেতর পড়লো। হুদাইবিয়ার চুক্তি অনুযায়ী এই দুর্ধষ বাহিনী রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কাছে ফিরে যাবার কোন উপায় ছিলো না। বাধ্য হয়ে কুরাইশরা রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কাছে দূত পাঠিয়ে আবেদন করলো, "হে মুহাম্মাদ, আপনি তাদেরকে মদীনায় ফিরিয়ে আনুন। তাদের অনিষ্ট থেকে আমাদের মুক্তি দিন। আমরা স্বেচ্ছায় সন্ধির এই ধারা তুলে নিচ্ছি"। রাসুলুল্লাহ সাঃ আবু বাসিরকে তার সঙ্গীদের সহ মদীনা ফিরে আসার জন্য চিঠি লিখলেন।

ইতিমধ্যেই কুরাইশ এক কাফেলা হামলা করে যথেষ্ট হতাহত করে আবুল বাসির রাঃ নিজেও মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন। তিনি তখন মৃত্যুশয্যায় এমন সময় রাসুল সাঃএর চিঠি তাঁর হাতে পৌঁছালো। প্রিয় রাসুলের চিঠিটি পড়ে তিনি তা বুকে জড়িয়ে ধরলেন। এই অবস্থাতেই তাঁর মৃত্যু হলো। তাঁর সাথীরা ফিরে এলো মদীনায়। মুক্তির সুবাস পেলো নির্যাতিত মুসলিমরা।

হুদাইবিয়ার সন্ধির শুরুর শব্দটি থেকে শুরু করে চুক্তির প্রতিটি ধারা ছিলো দৃশ্যত মুসলিমদের বিপক্ষে। তবে এই চুক্তিকেই কুরআনের আয়াত নাযিল করে অদৃশ্যের মালিক আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তায়ালা কেনো সুস্পষ্ট বিজয় বলেছিলেন, তা মানুষ টের পাচ্ছিলো ধীরে ধীরে। আবু বাসিরের দলটির মুক্তি ছিলো সে সুস্পষ্ট বিজয়ের একটি।
(সূত্রঃ আর রাহিকুল মাখতুম, তাফসিরে সুরা তাওবা-ডঃ আবদুল্লাহ আযযাম)
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×