“আপনি কি জীবনের প্রতি হতাশ? জীবনের নানা কাজে বাধাগ্রস্থ?” টিভিতে বা পথ চলতে এমন বিজ্ঞাপন নিশ্চয়ই আপনার চোখে পড়েছে। কিংবা চিন্তা করুন আপনার বিপদের সময়কার কথা। আপনি তখন খুঁজে বেড়িয়েছেন সাহায্য কিংবা নির্ভরতা। অথবা ভাবুন এমন সময় যখন আপনার নিজ বা প্রিয়জনের জন্য দোয়া চাইতে গিয়েছেন কোন হুজুরের কাছে, নাহয় কোন পীরের কাছে নাহয় লোক ডেকে এনে পড়িয়েছেন মিলাদ-মাহফিল। সরাসরি আল্লাহর কাছে চাইতে গিয়ে আপনি ভেবেছেন, আমি আলিম নই, আমার আমলও ঠিক নেই, আল্লাহ কি শুনবেন আমার কথা?
অথচ কতো কাছেই না ছিলেন আল্লাহ। কতো সহজ ছিলো তাঁর কাছে কিছু চাওয়া তা না জেনেই হয়তো অনেক মানুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলো। আসুন আমরা দেখে নেই আল্লাহ এবং তাঁর মনোনীত রাসুল কি বলেছেন।
"(হে নবী), আমার কোন বান্দা যখন তোমাকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে (তাকে তুমি বলে দিয়ো), আমি তার একান্ত কাছেই আছি। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে ডাকে, তাই তাদেরও উচিৎ আমার আহবানে সাড়া দেয়া এবং (সম্পূর্ণভাবে) আমার ওপরই ঈমান আনা। আশা করা যায় এতে করে তারা সঠিক পথের সন্ধান পাবে"। -সুরা বাকারাঃ ১৮৬
সুবহানাল্লাহ, এর চেয়ে সহজ ভাষা আর কি হতে পারে? এর চেয়ে বড় সুযোগ আর কি হতে পারে?
রাসুল সাঃ বলেছেন, "যদি তোমার কোনকিছু চাইতে হয় তুমি আল্লাহর কাছে চাও"। (সহিহ মুসলিম)।
সাহাবী জাবির বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, "ইসলাম গ্রহণের পর আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে কিছু চাইনি। সকল কিছুই আমরা আল্লাহর কাছেই চাইতাম। এমনকি আমাদের কারো জুতার ফিতাটিও যদি খুঁজে না পেতাম তাও আমরা আল্লাহকে বলতাম" (সহিহ বুখারি)।
কোন কোন সাহাবা এমনও ছিলেন যে তাঁরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে চাওয়া তো দূরে থাক, পার্থিব জীবনের ছোট-খাটো কোন বিষয়েও মানুষকে সাহায্যের জন্য বলতেন না।
সাওবান রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন-"যে ব্যক্তি আমার সাথে এই অঙ্গীকার করবে যে, সে কারো কাছ থেকে কোন কিছুই চাইবে না, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হবো।" আমি বললাম, আমি অঙ্গীকার করছি। (হাদিসটি বর্ণনাকারী রাবী বলেন) এরপর থেকে তিনি (সাওবান রাঃ) কারো কাছ থেকে কিছু চাননি। এমনকি তিনি ঘোড়ার পিঠে চড়া অবস্থায় তাঁর হাত থেকে চাবুক পড়ে গেলেও নিচে থাকা লোকটিকে তা উঠিয়ে দিতে বলতেন না, নিজেই নেমে তা উঠিয়ে নিতেন। (আবু দাউদ)।
আল্লাহু আকবার। আমাদের সামনে কি উদাহরণ তাঁরা রেখে গেছেন। অথচ আজ আমরা জ্ঞানের অভাবের জন্য কিছু লোক আল্লাহর নামকে বিক্রি করে মানুষকে ধোকা দিচ্ছে।
আমরা আমাদের চাহিদাগুলো আল্লাহর কাছে বলবো, আমরা আমাদের ভুলগুলোর জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবো, তিনি ওয়াদা করেছেন তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দেবেন, আমাদের ক্ষমা করবেন। সত্যিই এ এক বড় সুযোগ।
প্রথমেই লক্ষ্য রাখতে হবে, আল্লাহর কাছে চাওয়ার জন্য সকল সময় আমাদের জন্য উন্মুক্ত। আমরা চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে, কাজে-কর্মে সকল সময় মনে মনে আল্লাহর কাছে চাইব এবং রাসুল সাঃ তাই করেছেন এবং করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন "দোয়া হচ্ছে আত্মরক্ষার বর্ম"। আর তাই আমরা যেন শুধুমাত্র কবুল হবার সময়গুলোতেই একে সীমাবদ্ধ না করে ফেলি।
দোয়া কবুলের সময়ঃ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা দোয়া করার জন্য এমন অসংখ্য সময় ও সুযোগ আমাদের জন্য দিয়ে রেখেছেন, তা সত্যিই অবাক করার মতো বিষয়। আসুন সহীহ হাদীস থেকে আমরা দেখে নেই দোয়া কবুল হবার সময়গুলো সম্পর্কে।
১। রাতের শেষ তৃতীয়াংশঃ
এই সময় দোয়া কবুল হবার ব্যাপারে সহীহ হাদীসে অত্যন্ত জোরালো রেফেরেন্স আছে। এটা প্রতিটি রাতের জন্যই প্রযোজ্য, শুধুমাত্র শবে বরাত, শবে মিরাজ বা কদর রাতে নয়।
আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “প্রত্যেকদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব (আল্লাহ) সবচেয়ে নীচের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আমাকে ডাকছো, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো। কে আমার কাছে চাইছো, আমি তাকে তা দেবো। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো?” (সহীহ বুখারী)
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “আল্লাহর কাছে তাঁর একজন উপাস্য সবচেয়ে নিকটতম যে সময়টাতে আসতে পারে তা হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। সুতরাং তোমরা যদি পারো তাহলে তোমরা তাদের একজন হও যারা সে সময় আল্লাহর স্মরণ করে”। (তিরমিজি, নাসায়ী, আল হাকিম-সহীহ)
২। শেষ রাতের যে কোন একটি সময়ঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “রাতে এমন একটি সময় আছে যে সময়টাতে কোন মুসলিমের এমনটা হয়না যে সে এই পৃথিবী কিংবা পরকালের জোবনের জন্য আল্লাহর কাছে কিছু চাইলো আর তাকে তা দেয়া হলো না। আর এটা প্রতিটি রাতেই ঘটে”। (মুসলিম-৭৫৭)
৩। আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তি সময়ঃ
মক্কা কিংবা মদীনায় আযান ও নামাজের জামায়াত শুরু হবার মাঝখানে অনেক মুসলিমকে দেখা যায় নামাজে সিজদায় গিয়ে কিংবা হাত তুলে দোয়া করতে। কারণ এ সময়টা দোয়া কবুল হবার গুরুত্বপূর্ণ সময়।
আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তি সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয়না”। (আবু দাউদ-৫২১, তিরমিজি-২১২)
৪। জুম্মার দিন যে কোন একটি সময়েঃ
জুম্মার দিনে এমন অসাধারণ একটি নিয়ামাতের সময় আছে যে সময়টাতে দোয়া কবুল হবার বিশুদ্ধ বর্ণনা রাসুল সাঃ থেকে এসেছে।
আবু হুরাইরাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাঃ আমাদের একদিন শুক্রবার নিয়ে আলোচনা করলেন এবং বললেন, ‘জুম্মার দিনে একটি সময় আছে যে সময়টা কোন মুসলিম সালাত আদায়রত অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা মেটাবেন’, এবং তিনি (রাসুল সাঃ) তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়টা সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন”। (সহীহ বুখারী)।
কোন কোন স্কলার সে সময়টার ব্যপারে বলেছেন, তা হলো-ইমাম যখন মসজিদে প্রবেশ করেন সে সময় থেকে সালাত শেষ হবার সময় পর্যন্ত, কেউ বলেছেন দুই খুতবার মাঝখানে, কেউ আবার জোর দিয়ে বলেছেন তা হলো আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টা। তবে অধিকাংশ স্কলারের মতে সে সময়টা হলো আসরের পরবর্তি শেষ সময়টা।
৫। জমজমের পানি পান করার সময়ঃ
জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “জমজম পানি হলো তার জন্য, যার জন্য এটি পান করা হয়”। (ইবন মাজাহ ৩০৬২, আহমাদ ৩/৩৫৭)।
অর্থাৎ, জমজমের পানি খাবার সময় আল্লাহর কাছে যা চাওয়া হয়, তা পাবার সম্ভাবনা আছে।
৬। সিজদাহর সময়েঃ
আবু হুরাইরাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যে সমটাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটতম অবস্থায় থাকে তা হলো সিজদাহর সময়। সুতরাং তোমরা সে সময় আল্লাহর কাছে বেশী বেশী চাও”। (মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ)
৭। রাতের বেলা ঘুম থেকে জেগে উঠলেঃ
উবাদা ইবনুস সামিত রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যে কেউ রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগে আর বলে-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হা’মদু ওয়াহুয়া আ’লা কিল্লি শায়্যিন কা’দির, আলহামদুলিল্লাহি ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ এবং এরপর বলে ‘আল্লাহুম মাগফিরলি (আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন) এবং আল্লাহর কাছে চায়, তাহলে তার ডাকে সাড়া দেয়া হবে এবং সে যদি অজু করে সালাত আদায় করা, তাহলে তার সালাত কবুল করা হবে”। (সহীহ বুখারী)
৮। ফরজ সালাতের পরের সময়টাতেঃ
আবু উমামাহ রাঃ বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ কে জুজ্ঞেস করা হলো, “ইয়া রাসুলুল্লাহ, কো সময়ের ডাক শোনা হয়?” তিনি বললেন, “রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ সালাতের পরে”। (তিরমিজি)।
অনেক স্কলারগন বলেছেন, এ সময়টা হলো সালাম ফেরানোর আগের সময় (আত্তাহিয়াতুর পর)।
৯। কদরের রাতেঃ
নিঃসন্দেহে লাইলাতুল কদর হলো একটি বছরে কোন মানব সন্তানের পাওয়া শ্রেষ্ঠ রাত। আল্লাহ বলেছেন,
“আমরা এটিকে (আল-কুরআন) কদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি।
তুমি কি জানো কদরের রাত্রি কি?
কদরের রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম”।
বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত একাধিক বিশুদ্ধ হাদীসে এ রাতের সকল ইবাদত ও আল্লাহর কাছে চাহিদা পূরণের কথা বলা হয়েছে।
১০। বৃষ্টি হবার সময়ঃ
সাহল ইবন সা’দ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয়না। আযানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি পড়ার সময়কার দোয়া”। (আবু দাউদ ২৫৪০)
১১। আযানের সময়ঃ
পূর্ববর্তি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী আযানের সময় দোয়া কবুল হবার ভালো সময়।
১২। মজলুম ও নির্যাতিত ব্যক্তিঃ
মজলুমের দোয়া এবং বদ দোয়া দুটোই আল্লাহর কাছে কবুল হবার সম্ভাবনা শতভাগ। রাসুলুল্লাহ সাঃ মুয়াজকে বলেছেন, “মজলুমের দোয়া থেকে সবসময় সতর্ক থেকো, কেননা মজলুমের দোয়া ও আল্লাহর মধ্যে কোন পর্দা বা আশ্রয় থাকে না”। (সহীহ বুখারী)
১৩। মুসাফিরের দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “তিনটি দোয়া (আল্লাহর দ্বারা) ফিরিয়ে দেয়া হয়না। সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া, রোজাদার ব্যক্তির দোয়া, মুসাফিরের দোয়া”। (বায়হাকি, তিরমিজি)
১৪। সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়াঃ
পূর্ববর্র্তি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী।
১৫। পিতামাতার জন্য নেককার সন্তানের দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “আদম সন্তানের মৃত্যুর পর তার জন্য সকল ভালো কাজের দরজা বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি ছাড়া। সদাকা, নেককার সন্তান যখন তার জন্য দোয়া করে ও উপকারী ঈলম” (মুসলিম)।
১৬। রোজাদার ব্যক্তির দোয়াঃ
পূর্ববর্র্তি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী।
এছাড়া সমস্ত রমজান মাসই হলো আল্লাহর কাছে চাইবার শ্রেষ্ঠ সময়। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “রমজান মাসে করুণার দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়”। (সহীহ বুখারী ১৮৯৯)
১৭। অনুপস্থিত মুসলিম ভাই বা বোনের জন্য অন্তর থেকে উৎসরিত দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “এমন কোন বিশ্বাসী বান্দা নেই, যে তার অনুপস্থিত কোন ভাইয়ের জন্য দোয়া করে আর ফেরেশতারা বলে না ‘তোমার জন্যও তা হোক’”। (মুসলিম)
১৮। আরাফাতের দিনের দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দোয়ার ভেতর শ্রেষ্ঠ হলো আরাফাতের দিনের দোয়া”। (তিরমিজি, মুয়াত্তা মালিক)
১৯। জিহাদের মাঠে শত্রুর মুখোমুখি হলেঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দুটি দোয়া কক্ষনো ফিরিয়ে দেয়া হয়না অথবা খুবই কম ফিরিয়ে দেয়া হয়। আযানের সমকার দোয়া আর সেই ভয়ংকর সময়কার দোয়া যখন দু’টি বাহিনী পরস্পর মুখোমুখি হয়”। (আবু দাউদ ২৫৪০, ইবন মাজাহ)
২০। জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন ছাড়া আর এমন কোন দিন নেই, যে সময়ের সৎকাজ আল্লাহর কাছে তার চেয়ে বেশী প্রিয়”। (সহীহ বুখারী ৯৬৯)
২১। রোজদার ব্যক্তির ইফতারের সময়কার দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া কখনও আল্লাহর দ্বারা ফিরিয়ে দেয়া হয়না। যখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করে (অন্য বর্ণনায় এসেছে, রোজাদার ব্যক্তি যতক্ষণ ইফতার না করে), ন্যায়পরায়ণ শাসক, নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া”। (আহমাদ, তিরমিজি)
২২। অসুস্থ্য ব্যক্তিকে দেখতে যাবার পর সেই ব্যক্তির দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যখন তোমরা কোন অসুস্থ্য ব্যক্তিকে দেখতে যাও, তখন ভালো কথা বলো (ভালো কিছু চাও), কেননা তোমরা তখন যাই বলো, তার সাথে সাথে ফেরেশতারা ‘আমিন’ বলে”। (মুসলিম)
এছাড়াও জামাতের সুরা ফাতিহা পড়ার পর আমিন বলার সময়, মসজিদুল হারামের ভেতর কাবার সামনে, পিতামাতার জন্য সন্তানের দোয়া, হজ্জ্বের সময় কংকর নিক্ষেপের সময় দোয়া কবুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে সহীহ হাদীসে এসেছে।
তবে উল্লেখিত সময় সহ সকল সময়েই আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করার জন্য সর্বদা জাগ্রত আছেন। আমরা যদি এরপরও তার কাছে ক্ষমা না নিয়ে পৌঁছাতে না পারি তাহলে তা হবে আমাদের জন্য পরম দুর্ভাগ্য। আল্লাহ আমাদের পৃথিবীর জীবন ও পরবর্তি জীবনের দোয়াগুলো কবুল করুন, আমাদের চাহিদাগুলো মিটিয়ে দিন এবং যাদের নাম আল্লাহ নাজাতপ্রাপ্তদের খাতায় লিখে রেখেছেন, তাদের ভেতর আমাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
“আপনি কি জীবনের প্রতি হতাশ? জীবনের নানা কাজে বাধাগ্রস্থ?” টিভিতে বা পথ চলতে এমন বিজ্ঞাপন নিশ্চয়ই আপনার চোখে পড়েছে। কিংবা চিন্তা করুন আপনার বিপদের সময়কার কথা। আপনি তখন খুঁজে বেড়িয়েছেন সাহায্য কিংবা নির্ভরতা। অথবা ভাবুন এমন সময় যখন আপনার নিজ বা প্রিয়জনের জন্য দোয়া চাইতে গিয়েছেন কোন হুজুরের কাছে, নাহয় কোন পীরের কাছে নাহয় লোক ডেকে এনে পড়িয়েছেন মিলাদ-মাহফিল। সরাসরি আল্লাহর কাছে চাইতে গিয়ে আপনি ভেবেছেন, আমি আলিম নই, আমার আমলও ঠিক নেই, আল্লাহ কি শুনবেন আমার কথা?
অথচ কতো কাছেই না ছিলেন আল্লাহ। কতো সহজ ছিলো তাঁর কাছে কিছু চাওয়া তা না জেনেই হয়তো অনেক মানুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলো। আসুন আমরা দেখে নেই আল্লাহ এবং তাঁর মনোনীত রাসুল কি বলেছেন।
"(হে নবী), আমার কোন বান্দা যখন তোমাকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে (তাকে তুমি বলে দিয়ো), আমি তার একান্ত কাছেই আছি। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে ডাকে, তাই তাদেরও উচিৎ আমার আহবানে সাড়া দেয়া এবং (সম্পূর্ণভাবে) আমার ওপরই ঈমান আনা। আশা করা যায় এতে করে তারা সঠিক পথের সন্ধান পাবে"। -সুরা বাকারাঃ ১৮৬
সুবহানাল্লাহ, এর চেয়ে সহজ ভাষা আর কি হতে পারে? এর চেয়ে বড় সুযোগ আর কি হতে পারে?
রাসুল সাঃ বলেছেন, "যদি তোমার কোনকিছু চাইতে হয় তুমি আল্লাহর কাছে চাও"। (সহিহ মুসলিম)।
সাহাবী জাবির বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, "ইসলাম গ্রহণের পর আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে কিছু চাইনি। সকল কিছুই আমরা আল্লাহর কাছেই চাইতাম। এমনকি আমাদের কারো জুতার ফিতাটিও যদি খুঁজে না পেতাম তাও আমরা আল্লাহকে বলতাম" (সহিহ বুখারি)।
কোন কোন সাহাবা এমনও ছিলেন যে তাঁরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে চাওয়া তো দূরে থাক, পার্থিব জীবনের ছোট-খাটো কোন বিষয়েও মানুষকে সাহায্যের জন্য বলতেন না।
সাওবান রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন-"যে ব্যক্তি আমার সাথে এই অঙ্গীকার করবে যে, সে কারো কাছ থেকে কোন কিছুই চাইবে না, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হবো।" আমি বললাম, আমি অঙ্গীকার করছি। (হাদিসটি বর্ণনাকারী রাবী বলেন) এরপর থেকে তিনি (সাওবান রাঃ) কারো কাছ থেকে কিছু চাননি। এমনকি তিনি ঘোড়ার পিঠে চড়া অবস্থায় তাঁর হাত থেকে চাবুক পড়ে গেলেও নিচে থাকা লোকটিকে তা উঠিয়ে দিতে বলতেন না, নিজেই নেমে তা উঠিয়ে নিতেন। (আবু দাউদ)।
আল্লাহু আকবার। আমাদের সামনে কি উদাহরণ তাঁরা রেখে গেছেন। অথচ আজ আমরা জ্ঞানের অভাবের জন্য কিছু লোক আল্লাহর নামকে বিক্রি করে মানুষকে ধোকা দিচ্ছে।
আমরা আমাদের চাহিদাগুলো আল্লাহর কাছে বলবো, আমরা আমাদের ভুলগুলোর জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবো, তিনি ওয়াদা করেছেন তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দেবেন, আমাদের ক্ষমা করবেন। সত্যিই এ এক বড় সুযোগ।
প্রথমেই লক্ষ্য রাখতে হবে, আল্লাহর কাছে চাওয়ার জন্য সকল সময় আমাদের জন্য উন্মুক্ত। আমরা চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে, কাজে-কর্মে সকল সময় মনে মনে আল্লাহর কাছে চাইব এবং রাসুল সাঃ তাই করেছেন এবং করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন "দোয়া হচ্ছে আত্মরক্ষার বর্ম"। আর তাই আমরা যেন শুধুমাত্র কবুল হবার সময়গুলোতেই একে সীমাবদ্ধ না করে ফেলি।
দোয়া কবুলের সময়ঃ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা দোয়া করার জন্য এমন অসংখ্য সময় ও সুযোগ আমাদের জন্য দিয়ে রেখেছেন, তা সত্যিই অবাক করার মতো বিষয়। আসুন সহীহ হাদীস থেকে আমরা দেখে নেই দোয়া কবুল হবার সময়গুলো সম্পর্কে।
১। রাতের শেষ তৃতীয়াংশঃ
এই সময় দোয়া কবুল হবার ব্যাপারে সহীহ হাদীসে অত্যন্ত জোরালো রেফেরেন্স আছে। এটা প্রতিটি রাতের জন্যই প্রযোজ্য, শুধুমাত্র শবে বরাত, শবে মিরাজ বা কদর রাতে নয়।
আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “প্রত্যেকদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব (আল্লাহ) সবচেয়ে নীচের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আমাকে ডাকছো, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো। কে আমার কাছে চাইছো, আমি তাকে তা দেবো। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো?” (সহীহ বুখারী)
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “আল্লাহর কাছে তাঁর একজন উপাস্য সবচেয়ে নিকটতম যে সময়টাতে আসতে পারে তা হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। সুতরাং তোমরা যদি পারো তাহলে তোমরা তাদের একজন হও যারা সে সময় আল্লাহর স্মরণ করে”। (তিরমিজি, নাসায়ী, আল হাকিম-সহীহ)
২। শেষ রাতের যে কোন একটি সময়ঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “রাতে এমন একটি সময় আছে যে সময়টাতে কোন মুসলিমের এমনটা হয়না যে সে এই পৃথিবী কিংবা পরকালের জোবনের জন্য আল্লাহর কাছে কিছু চাইলো আর তাকে তা দেয়া হলো না। আর এটা প্রতিটি রাতেই ঘটে”। (মুসলিম-৭৫৭)
৩। আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তি সময়ঃ
মক্কা কিংবা মদীনায় আযান ও নামাজের জামায়াত শুরু হবার মাঝখানে অনেক মুসলিমকে দেখা যায় নামাজে সিজদায় গিয়ে কিংবা হাত তুলে দোয়া করতে। কারণ এ সময়টা দোয়া কবুল হবার গুরুত্বপূর্ণ সময়।
আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তি সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয়না”। (আবু দাউদ-৫২১, তিরমিজি-২১২)
৪। জুম্মার দিন যে কোন একটি সময়েঃ
জুম্মার দিনে এমন অসাধারণ একটি নিয়ামাতের সময় আছে যে সময়টাতে দোয়া কবুল হবার বিশুদ্ধ বর্ণনা রাসুল সাঃ থেকে এসেছে।
আবু হুরাইরাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাঃ আমাদের একদিন শুক্রবার নিয়ে আলোচনা করলেন এবং বললেন, ‘জুম্মার দিনে একটি সময় আছে যে সময়টা কোন মুসলিম সালাত আদায়রত অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা মেটাবেন’, এবং তিনি (রাসুল সাঃ) তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়টা সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন”। (সহীহ বুখারী)।
কোন কোন স্কলার সে সময়টার ব্যপারে বলেছেন, তা হলো-ইমাম যখন মসজিদে প্রবেশ করেন সে সময় থেকে সালাত শেষ হবার সময় পর্যন্ত, কেউ বলেছেন দুই খুতবার মাঝখানে, কেউ আবার জোর দিয়ে বলেছেন তা হলো আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টা। তবে অধিকাংশ স্কলারের মতে সে সময়টা হলো আসরের পরবর্তি শেষ সময়টা।
৫। জমজমের পানি পান করার সময়ঃ
জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “জমজম পানি হলো তার জন্য, যার জন্য এটি পান করা হয়”। (ইবন মাজাহ ৩০৬২, আহমাদ ৩/৩৫৭)।
অর্থাৎ, জমজমের পানি খাবার সময় আল্লাহর কাছে যা চাওয়া হয়, তা পাবার সম্ভাবনা আছে।
৬। সিজদাহর সময়েঃ
আবু হুরাইরাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যে সমটাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটতম অবস্থায় থাকে তা হলো সিজদাহর সময়। সুতরাং তোমরা সে সময় আল্লাহর কাছে বেশী বেশী চাও”। (মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ)
৭। রাতের বেলা ঘুম থেকে জেগে উঠলেঃ
উবাদা ইবনুস সামিত রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যে কেউ রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগে আর বলে-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হা’মদু ওয়াহুয়া আ’লা কিল্লি শায়্যিন কা’দির, আলহামদুলিল্লাহি ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ এবং এরপর বলে ‘আল্লাহুম মাগফিরলি (আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন) এবং আল্লাহর কাছে চায়, তাহলে তার ডাকে সাড়া দেয়া হবে এবং সে যদি অজু করে সালাত আদায় করা, তাহলে তার সালাত কবুল করা হবে”। (সহীহ বুখারী)
৮। ফরজ সালাতের পরের সময়টাতেঃ
আবু উমামাহ রাঃ বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ কে জুজ্ঞেস করা হলো, “ইয়া রাসুলুল্লাহ, কো সময়ের ডাক শোনা হয়?” তিনি বললেন, “রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ সালাতের পরে”। (তিরমিজি)।
অনেক স্কলারগন বলেছেন, এ সময়টা হলো সালাম ফেরানোর আগের সময় (আত্তাহিয়াতুর পর)।
৯। কদরের রাতেঃ
নিঃসন্দেহে লাইলাতুল কদর হলো একটি বছরে কোন মানব সন্তানের পাওয়া শ্রেষ্ঠ রাত। আল্লাহ বলেছেন,
“আমরা এটিকে (আল-কুরআন) কদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি।
তুমি কি জানো কদরের রাত্রি কি?
কদরের রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম”।
বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত একাধিক বিশুদ্ধ হাদীসে এ রাতের সকল ইবাদত ও আল্লাহর কাছে চাহিদা পূরণের কথা বলা হয়েছে।
১০। বৃষ্টি হবার সময়ঃ
সাহল ইবন সা’দ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয়না। আযানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি পড়ার সময়কার দোয়া”। (আবু দাউদ ২৫৪০)
১১। আযানের সময়ঃ
পূর্ববর্তি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী আযানের সময় দোয়া কবুল হবার ভালো সময়।
১২। মজলুম ও নির্যাতিত ব্যক্তিঃ
মজলুমের দোয়া এবং বদ দোয়া দুটোই আল্লাহর কাছে কবুল হবার সম্ভাবনা শতভাগ। রাসুলুল্লাহ সাঃ মুয়াজকে বলেছেন, “মজলুমের দোয়া থেকে সবসময় সতর্ক থেকো, কেননা মজলুমের দোয়া ও আল্লাহর মধ্যে কোন পর্দা বা আশ্রয় থাকে না”। (সহীহ বুখারী)
১৩। মুসাফিরের দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “তিনটি দোয়া (আল্লাহর দ্বারা) ফিরিয়ে দেয়া হয়না। সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া, রোজাদার ব্যক্তির দোয়া, মুসাফিরের দোয়া”। (বায়হাকি, তিরমিজি)
১৪। সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়াঃ
পূর্ববর্র্তি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী।
১৫। পিতামাতার জন্য নেককার সন্তানের দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “আদম সন্তানের মৃত্যুর পর তার জন্য সকল ভালো কাজের দরজা বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি ছাড়া। সদাকা, নেককার সন্তান যখন তার জন্য দোয়া করে ও উপকারী ঈলম” (মুসলিম)।
১৬। রোজাদার ব্যক্তির দোয়াঃ
পূর্ববর্র্তি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী।
এছাড়া সমস্ত রমজান মাসই হলো আল্লাহর কাছে চাইবার শ্রেষ্ঠ সময়। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “রমজান মাসে করুণার দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়”। (সহীহ বুখারী ১৮৯৯)
১৭। অনুপস্থিত মুসলিম ভাই বা বোনের জন্য অন্তর থেকে উৎসরিত দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “এমন কোন বিশ্বাসী বান্দা নেই, যে তার অনুপস্থিত কোন ভাইয়ের জন্য দোয়া করে আর ফেরেশতারা বলে না ‘তোমার জন্যও তা হোক’”। (মুসলিম)
১৮। আরাফাতের দিনের দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দোয়ার ভেতর শ্রেষ্ঠ হলো আরাফাতের দিনের দোয়া”। (তিরমিজি, মুয়াত্তা মালিক)
১৯। জিহাদের মাঠে শত্রুর মুখোমুখি হলেঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দুটি দোয়া কক্ষনো ফিরিয়ে দেয়া হয়না অথবা খুবই কম ফিরিয়ে দেয়া হয়। আযানের সমকার দোয়া আর সেই ভয়ংকর সময়কার দোয়া যখন দু’টি বাহিনী পরস্পর মুখোমুখি হয়”। (আবু দাউদ ২৫৪০, ইবন মাজাহ)
২০। জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন ছাড়া আর এমন কোন দিন নেই, যে সময়ের সৎকাজ আল্লাহর কাছে তার চেয়ে বেশী প্রিয়”। (সহীহ বুখারী ৯৬৯)
২১। রোজদার ব্যক্তির ইফতারের সময়কার দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া কখনও আল্লাহর দ্বারা ফিরিয়ে দেয়া হয়না। যখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করে (অন্য বর্ণনায় এসেছে, রোজাদার ব্যক্তি যতক্ষণ ইফতার না করে), ন্যায়পরায়ণ শাসক, নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া”। (আহমাদ, তিরমিজি)
২২। অসুস্থ্য ব্যক্তিকে দেখতে যাবার পর সেই ব্যক্তির দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যখন তোমরা কোন অসুস্থ্য ব্যক্তিকে দেখতে যাও, তখন ভালো কথা বলো (ভালো কিছু চাও), কেননা তোমরা তখন যাই বলো, তার সাথে সাথে ফেরেশতারা ‘আমিন’ বলে”। (মুসলিম)
এছাড়াও জামাতের সুরা ফাতিহা পড়ার পর আমিন বলার সময়, মসজিদুল হারামের ভেতর কাবার সামনে, পিতামাতার জন্য সন্তানের দোয়া, হজ্জ্বের সময় কংকর নিক্ষেপের সময় দোয়া কবুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে সহীহ হাদীসে এসেছে।
তবে উল্লেখিত সময় সহ সকল সময়েই আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করার জন্য সর্বদা জাগ্রত আছেন। আমরা যদি এরপরও তার কাছে ক্ষমা না নিয়ে পৌঁছাতে না পারি তাহলে তা হবে আমাদের জন্য পরম দুর্ভাগ্য। আল্লাহ আমাদের পৃথিবীর জীবন ও পরবর্তি জীবনের দোয়াগুলো কবুল করুন, আমাদের চাহিদাগুলো মিটিয়ে দিন এবং যাদের নাম আল্লাহ নাজাতপ্রাপ্তদের খাতায় লিখে রেখেছেন, তাদের ভেতর আমাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





