somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোটিপতি পকেটমার

২৫ শে জুলাই, ২০১০ দুপুর ২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পকেট হাতিয়ে কি কোটিপতি হওয়া যায়? পকেটমারের সরদার আসলাম তা-ই হয়েছে। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর নিজের সহায়-সম্পত্তির যে হিসাব দিয়েছে এর মূল্যমান কোটি ছাড়িয়ে গেছে। নাম তার আসলাম। বয়স পঞ্চাশ। ৪২ বছর ধরে হাজার হাজার মানুষের পকেট কেটেছে। ধরাও পড়েছে অসংখ্য বার। শতাধিক বার গণপিটুনি খেয়েছে। আর জেল খেটেছে দু’শ’ বার। তবে ৩-৪ দিন পরই জামিনে বের হয়েছে।
এ জন্য পাঁচ জন আইনজীবী রয়েছে তার। রাজধানীর মিরপুর-গাবতলী, গুলিস্তান ও যাত্রাবাড়ী রোডে চলছে তার চারটি মিনিবাস। নিজবাড়ি ময়মনসিংহে। রাজধানী উত্তরখান এলাকায় প্রায় কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে তার। তার অধীনে চুরি-চামারিতে ব্যস্ত শতাধিক পকেটমার। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর ফার্মগেইট থেকে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সে। এরপরই বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য। গোয়েন্দাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসলাম জানায়, ৪২ বছর আগে তার বয়স ছিল ৭। সে সময় তার বাবা-মা তাকে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায়। দিন কাটে অনাহারে-অর্ধাহারে। পরনে ছিল না কোন পোশাক। ভবঘুরে দলের সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে রাজধানীর কাওলার কুখ্যাত পকেটমার জহিরের সঙ্গে পরিচয় হয়। জহির তাকে বাসায় নিয়ে নানা বিষয়ে পরামর্শ দেয়। শেখায় চুরির নানা কৌশল। তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেই সে এ পথে নামে। পরে অবশ্য গুরু জহির এ পেশা ছেড়ে কসাইগিরি শুরু করে। এছাড়া ডিসকো ফারুকের কাছ থেকেও সে চুরির নানা কৌশল রপ্ত করে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পকেটমার হিসেবে প্রথম অভিযান বিমানবন্দর এলাকায়। এক বিদেশীর পকেট কেটে ২৪ হাজার ডলার ও একটি পাসপোর্ট নিয়ে যায়। সেখানে তার শতভাগ সাফল্যে পকেটমারদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যায়। রাতারাতি সে ৩০-৩৫ জনের সরদার বনে যায়। পকেটমারদের ৪/৫ জনের গ্রুপ তৈরি করে বিভিন্ন এলাকায় পাঠায়। অপারেশনের শুরুতেই তারা যাত্রীবাহী বাসে ওঠে। অনেক সময় ভিড় ঠেলে বাসে যাত্রী উঠার আগেই পকেট মেরে কেটে পড়ে। গোলাপ শাহ মাজার থেকে ফার্মগেট, মগবাজার, মৌচাক পর্যন্ত কাজ করে একটি গ্রুপ। এ গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় সে নিজেই। যাত্রাবাড়ি, উত্তরা ও মিরপুরে রয়েছে আরও তিনটি গ্রুপ। তারা একই রোডের বিভিন্ন নম্বরের বাস টার্গেট করে বিভিন্ন গ্রুপ পকেটমারের কাজ করে। গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গোলাম কিবরিয়া জানান, গুলশান থেকে ফার্মগেটগামী চলাচলকারী ৬ নম্বরের একটি বাস থেকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয় রাজধানীর এ পকেটমার চক্রকে। দলনেতা আসলামসহ তার দলের সদস্য নুরুল ইসলাম (৩৫), সাইফুল ইসলাম (৪২), সাজু (২৮), সাইফ (২২)কে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে চোরাইকৃত ৮টি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করা হয়। পকেটমার সাইফুল সাংবাদিকদের কাছে জানায়, টার্গেট করা যাত্রীর পকেটে কৌশলে হাত দিয়ে স্পর্শ করি। পরে পকেটের টাকা পয়সা ও মালামাল সম্পর্কে নিশ্চিত হই। সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করে চক্রের অন্য সদস্যকে জানিয়ে দেই। টাকা থাকলে ‘খাজা’ ও মোবাইল থাকলে ‘বাঁশি’ শব্দ ব্যবহার করি। পকেটমার দল নেতা আসলাম সাংবাদিকদের কাছে অকপটে স্বীকার করেছে, রাজধানীর কাওলা এলাকার পকেটমার জহির ও ডিসকো ফারুকের কাছে পকেট মারার কৌশল রপ্ত করে। ফারুক এখন সৌদি আরবে। এর আগে ছিনতাই করা একটি পাসপোর্ট জাল করে সৌদি আরবও যাওয়ার চেষ্টা করেছিল সে। তবে এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর পর ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে জাল পাসপোর্টসহ গ্রেপ্তার করে। ওই গ্রেপ্তারই ছিল তার প্রথম গ্রেপ্তার। পরে আইনজীবীর মাধ্যমে কারাগার থেকে ছাড়া পায়। পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশ্নের জবাবে আসলাম আরও জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পকেট মেরে প্রায় এক কোটি টাকার মতো আয় করেছে। ওই টাকা দিয়ে উত্তরখান ও ময়মনসিংহ জেলায় বেশকিছু জমি কিনেছে। এখন তার অধীনে শতাধিক পকেটমার আছে। বর্তমানে নেশার বশেই সে পকেট মারে। ধরাও পড়েছে অসংখ্য বার। অনেক সময় দরদী যাত্রীর হাতে পায়ে ধরে রক্ষাও পায়। তবে বেশিরভাগ সময়ই ধরা পড়লে গণপিটুনি অবধারিত। সেখান থেকে পুলিশের হাত ঘুরে প্রায় দুইশ’ বার জেল খেটেছে। সে জানায়, পাবলিকের কাছে ধরা পড়লেই মনে মনে পুলিশ ডাকি। তখন একমাত্র পুলিশকেই বন্ধু মনে হয়। পুলিশের হাতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনজীবীরা তার জামিনের জন্য রেডি হয়ে থাকে। আদালতে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জামিনের ব্যবস্থা হয়ে যায়। আসলাম জানায়, পকেট মারার আগে সে নেশা সেবন করে নেয়। তাতে ধরা পড়ে গণপিটুনি খেলেও কষ্ট কম অনুভব হয়। বর্তমানে সে হিরোইন আসক্ত। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার কোতোয়ালি থানার মাসকান্দা গ্রামে। দক্ষিণখান থানাধীন চালাবন এলাকায় বাস করে। সেখানে নিজের নামে ১০/১২ শতক জমিও কিনেছে। তার স্ত্রীসহ তিন ছেলেমেয়ে আছে। বড় ছেলের নাম রাজীব (২৫), মেজ ছেলে সজীব (২২) ও ছোট মেয়ে প্রিয়া ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী। তার স্ত্রী ও ছেলে মেয়ের নামে এলাকায় কয়েক বিঘা জমি রয়েছে। ডিবির সাব ইন্সপেক্টর গোলাম মোস্তফা জানান, আসলাম মিয়া খুবই উঁচু মানের পকেটমার। তার ব্যাংক ব্যালেন্স থেকে শুরু করে সবকিছু রয়েছে। দুইশ’ বার জেল খাটার পরও সে ভালো পথে ফিরে আসতে পারেনি। গ্রেপ্তার হওয়া তাদের সহযোগীদের কাছ থেকেও নানা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসলাম জানায়, গ্রুপের সদস্যদের আলাদাভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণের জন্য একজন মহিলা ও একজন পুরুষ প্রশিক্ষক কাজ করছে। তাদের প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা করে বেতন দেয়া হয়। জামিনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত পাঁচ আইনজীবী প্রতিমাসে অন্তত ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়। তাদের পাশাপাশি পুলিশ কর্মকর্তাদেরও নিয়মিত টাকা দেয়া হয়। মাঝে মধ্যে গ্র্রুপের সদস্যরা হাতেনাতে ধরা পড়লেও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ। বাসের ভেতর যাত্রীদের পকেট কেটে টাকা-পয়সা ও মোবাইল ফোন সেট হাতিয়ে নেয় সদস্যরা। মহিলাদের ভ্যানিটি ব্যাগ কাটার জন্য আলাদা একটি টিম কাজ করে। ওই টিমের সদস্যরা সবাই মহিলা। ৬ নম্বর, মিরপুর গাবতলী, সায়েদাবাদসহ বিভিন্ন রুটের সব ধরনের যাত্রীবাহী বাসে গ্রুপের সদস্যরা কাজ করে থাকে। সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ডে কাজ করছে তাদের একটি শক্তিশালী চক্র। প্রতিদিনের আয় করা টাকা ও মোবাইল সেট নিয়ে ফার্মগেট এলাকার একটি বাসায় হাজির হয় গ্রুপের সদস্যরা। একজন সদস্য এক হাজার টাকা আয় করলে তাকে দেয়া হয় সাতশ’ টাকা। তিনটি মোবাইল ফোন সেট আনতে পারলে তাকে দেয়া হয় একটি সেট। বাকি দু’টি আসলাম রেখে দেয়। মিরপুর-গাবতলী ও গুলিস্তান রোডে তার চারটি মিনিবাস চলাচল করছে। দুইশ’ বার গ্রেপ্তার হওয়ার ব্যাপারে আসলাম মিয়া জানায়, কারাগারের ভেতর হেরোইন সেবন করতে মাঝে মধ্যে স্বেচ্ছায় পুলিশের হাতে ধরা দেই। দুই-তিন দিন কারাগার থেকে থেকে বের হয়ে আমার পেশায় নেমে পড়ি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৫-২০টি মামলা আছে। গ্রেপ্তারের বেশির ভাগ ৫৬ ধারায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিমের (উত্তর) সহকারী কমিশনার সাদিরা খাতুন জানান, তার সম্পর্কে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। তার অনেক সম্পদের কথাও জানতে পেরেছি। এখন পুরো চক্রকে ধরার জন্য আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। এজন্য আদালতের কাছে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হয়েছে।
মানব জমিন
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১০ দুপুর ২:৫০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×