somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাল নীল সম্পর্ক-২

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব
Click This Link

পরের দিন চোখ লাল করে স্কুল গেলাম। পড়াশুনায় মনোযোগ দিলাম। আশেপাশে কোথাও চোখ না দিয়ে বাসা ফিরলাম। লাইব্রেরি থেকে কয়েকটা বই আনা হয়েছে।
The humane Guinea- Pig
Dr. Running Flame
বইটা নাকি মাস্টার-পিসি। তেমন ভাল লাগে নি। কিসব আজগুবি রোগ-মেথড এর নাম। হাতে নিলাম Cry Wolf বইটা। জয়ী গিফ করেছিল। জয়ী বই খুব ভালবাসে। এখানে তেমন ভালো লাইব্রেরি নেই। সব পুরনো বই। সবচেয়ে কষ্ট লাগে, যখন সে আমার দেয়া বই গুলোফেরত দিতে চেয়েছিল।
এতোটা নিষ্ঠুর না হলেই কি নয়!
তৃষা একটা মেসেজ দিলো, যারশেষ কথা- তুমি আমার গোয়ালঘরের অস্ট্রেলিয়ান গরু, শেষে সুন্দর করে দাঁড়ি, কমা দিয়ে গরু আঁকা।
তৃষা আমার ক্লাস-মেট+বোন।
আমি তো গাধা, গাধা কে গরু বানাতে গেল কেন? চিন্তার বিষয়।
"you are my fire,
The one the desire"-ফোন বেজে উঠলো।
তৃষা হড়বড় করে কি সব বলেযেতে লাগল।
কিছু বুঝলাম, কিছু বুঝলাম না।
যা বুঝলাম- রিমা হাসপাতালে, দরজা লাগায় হাত কাটছে, তৃষা প্রশ্ন করল, আমি দেখতে যাব কি না?
আমি সরাসরি বললাম , না।
যাওয়ার প্রশ্নই আসে না, রিমার মা আমাকে দেখতে পারে না। মনে করে , আমিই এইসবকিছুর জন্য দায়ী। কি করে বলি, আন্টি, আপনার মেয়ের বিয়ে দেন, পাত্রের নাম আমি জানি। পাত্র ভাল, বুয়েটে পড়ে, নাম অরিত্র আল সোহান।

বাড়ির সামনে রাস্তাটা বেশ। ছিমছাম। শুধু ডাস্টবিনটা ছাড়া। ছোট্ট শহর। আধা গ্রাম, আধা শহর। কেউ যদি উত্তর দিকে তাকায়, দেখবে পুরোটাই গ্রাম। পিছনে ফিরলে বলবে, ইয়া আল্লাহ, এতো আস্ত শহর।

সোহানের সাথে রিমার পরিচয় ফেসবুকে। সেখান থেকে প্রেম। সোহান এখানে এসেছিল। দেখাও নাকি করেছে। শীতের সকাল। বন্ধুরা স্কুল শুরুর আগে হোটেলে নাস্তা করতে গেছে।এক যুবক এসে জিজ্ঞেস করল, তোমরা রিমার বন্ধু?
হ্যাঁ।
তোমারা যা খাবে খাও, বিল আমি দেব।
সব বন্ধুদের কাছে ওই যুবকের গুণকীর্তন কানে আসতে লাগল।যুবকের নাম, অরিত্র আল সোহান।
ভেতরে জ্বলন হচ্ছে। এই লোকটার কারনে কদিনের মধ্যে আমাদের বন্ধুত্বের দি এন্ড(the end) হবে। মানসিক প্রস্তুতি নিতে লাগলাম।

রিমা দিশেহারা হয়ে পড়ছিল। একদিকে রাতুল, অন্যদিকে সোহান। সে সোহানকে খুব ভালবাসে। যেকোনো মুল্যেই তাকে চায়। তাকে হারানোর কথা সে ভাবতেই পারে না। আমি রিমার কাজটা সহজ করে দিলাম। রিমা অনেক কেদেছিল। ভালবাসা কাদায়,কখনো সম্পর্ক জোড়া লাগায়, কখনো ভেঙ্গে দেয়।

আচ্ছা , যদি এমন হতো, সোহানরিমাকে বলতো, তোমার আর রাতুলের বন্ধুত্বে আমার কোনো সমস্যা নেই। তোমারা যতখুশি গুটুর গুটুর কর, আপত্তি নেই, শুধু আমার জায়গায় আমাকে মনে রেখ।

-হ্যালো, শিশির। তুই কোথায়?
-আমি রিমার এখানে।
শিশির ছেলেটা বদের হাড্ডি, কিন্তু জান্নাত পাইতে কোনো সমস্যা হবে না। শিশির আমাদের কাছে প্রবাদ তুল্য মানুষ। কারওবিপদ হয়েছে, সে থাকে নি, এমন শোনা যায় না।
-আমি আসছি। আংকেল ওখানে আছে?
-হ্যাঁ , বাবা দেখাশোনা করছে। চিন্তা করিস না।

আমার আবার চিন্তা, মুখে বললাম না। হাসপাতালে কখনোচুপচাপ থাকতে নেই। মুখে চিন্তা নিয়ে সবসময় কিছুনা কিছুর জন্য ছুটোছুটি করতে হয়। লক্ষ করেছি, যে মানুষ টা কিছুক্ষন আগেও চাঙ্গা, স্ফূর্তি, ডাক্তারের সামনে গেলে বিমর্ষ, ক্লান্ত, রোগা রোগা মনে হয়।
চিন্তিত মুখ নিয়ে কেবিনেঢুকলাম। জয়ী সহ আরও কয়েকজন ওর বান্ধবি ছিল।
সবাই থাকল, কেবল জয়ী মুখ নিচু করে বেরিয়ে গেল।
রক্তশূন্য , ফ্যাকাসে মুখে, রিমা আমার দিকে চেয়ে থাকল। তার ক্ষতস্থানে হাত দিলাম।

কিছু সময় থাকে, নিজেকে কষ্ট দিতে ইচ্ছে করে।
-আমাকে মাফ করে দে।
-ভুল কি করলি যে, মাফ করব।গলা আদ্র হয়ে আসছে, তাকে এই অবস্থায় দেখে।
-মাফ তাহলে করবি না। একে একে ওর সব বান্ধবি প্রস্থান করতে লাগল।
রিমা ধমক দিয়ে বলল, এই তোরা যা না। দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি করছিস। আর দেখিস, ভেতরে যেন কেউ না আসে।
বললাম, চকলেট খাবি?
-যদি সমস্যা হয়, দে খাই।
-চকলেট তো মুখে।
রিমা কটমট করে তাকাল।
-তো না ব্লাড শর্টেজ, তবু মুখ লাল হচ্ছে কেন!
প্রশ্নের জবাব দিল না। ধীরে ধীরে বলতে শুরু করল- কালকে রাতে তোর জন্য হাত কাটছি।
-জানি।
-সোহান একটা বজ্জাত, ধুরন্ধুর ছেলে।
-জানি।...

সময়ের গতি শ্লথ হয়ে যায়। সে কি বলছে, কিছুই শুনছি না। রিমার সাথে দেখা হলেই, ওর ঠোট ছুয়ে দিতাম। ও মেকি রাগ করত। বলত- এসব কি করছিস, হা? আমি কি তোর গার্ল-ফ্রেন্ড।
সে অনেক দিন আগের কথা, আজকে হঠাৎ মনে হল, তার ফাক্যাসে রক্ত রঙিন ঠোট গুলো ছুয়ে দিতে। ইচ্ছা দমন করলাম। ফোন বেজে উঠল, মা ফোন করেছে, রিমার সাথে কথা বলতে চায়। রিমাকে ফোন দিয়ে বেরিয়ে এলাম।

দেখলাম জয়ী আমার সাথে কথা বলার জন্য এগিয়ে আসছে।
গত ৩ বছর কতবার জয়ীর সামনে পড়েছি। আমার দিকে ফিরেও চায় নি। আজ আমার দিকে এগিয়ে এল। নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলল, রিমা আবারও হাত কাটবে। শুধু তোমার জন্য।
কে যেন বলেছিলেন, ঈশ্বর পাশা খেলেন না। (GOD DOESN'T PLAY DICE)
ভালবাসা নিয়ে খেলেন অবশ্যই।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৫২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×