somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাসূল (সাঃ) প্রেরণের উদ্দেশ্য

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আল্লাহপাকের পছন্দনীয় ও মনোনীত জীবন বিধানকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার পথ নির্দেশনা ও শিক্ষাদানের জন্য যুগে যুগে বহু নবী এবং রাসূল পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন। এ ব্যাপারে কুরআনের ভাষ্য -
এক. ২: আল-বাক্বারাহ : আয়াত : ১২৯,
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِكَ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَ وَ یُزَكِّیْهِمْؕ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِیْزُ الْحَكِیْمُ۠
হে আমাদের রব! এদের মধ্যে স্বয়ং এদের জাতি পরিসর থেকে এমন একজন রসূল পাঠাও যিনি এদেরকে তোমার আয়াত পাঠ করে শুনাবেন, এদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবেন এবং এদের জীবন পরিশুদ্ধ করে সুসজ্জিত করবেন। অবশ্যি তুমি বড়ই প্রতিপত্তিশালী ও জ্ঞানবান।

দুই. ২: আল-বাক্বারাহ : আয়াত : ১৫১,
كَمَاۤ اَرْسَلْنَا فِیْكُمْ رَسُوْلًا مِّنْكُمْ یَتْلُوْا عَلَیْكُمْ اٰیٰتِنَا وَ یُزَكِّیْكُمْ وَ یُعَلِّمُكُمُ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَ وَ یُعَلِّمُكُمْ مَّا لَمْ تَكُوْنُوْا تَعْلَمُوْنَؕۛ
যেমনিভাবে (তোমরা এই জিনিসটি থেকেও সাফল্য লাভের সৌভাগ্য অর্জন করেছো যে,) আমি তোমাদের মধ্যে স্বয়ং তোমাদের থেকেই একজন রসূল পাঠিয়েছি, যে তোমাদেরকে আমার আয়াত পড়ে শুনায়, তোমাদের জীবন পরিশুদ্ধ করে সুসজ্জিত করে, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় এবং এমন সব কথা তোমাদের শেখায়, যা তোমরা জানতে না।

তিন. ৩: আলে-ইমরান : আয়াত : ১৬৪,
لَقَدْ مَنَّ اللّٰهُ عَلَى الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ بَعَثَ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَۚ وَ اِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ
আসলে ঈমানদারদের মধ্যে তাদেরই মধ্য থেকে একজন নবী পাঠিয়ে আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। সে তাঁর আয়াত তাদেরকে শোনায়, তাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ ও সুবিন্যস্ত করে এবং তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞান শিক্ষা দেয়। অথচ এর আগে এই লোকেরাই সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল।

চার. ৬২: আল-জুমুয়াহ : আয়াত : ২,
هُوَ الَّذِیْ بَعَثَ فِی الْاُمِّیّٖنَ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَۗ وَ اِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍۙ
তিনিই মহান সত্তা যিনি উম্মীদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন যে তাদেরকে তাঁর আয়াত শুনায়, তাদের জীবনকে সজ্জিত ও সুন্দর করে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। অথচ ইতিপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল।
পাঁচ. ৯ : তাওবা : আয়াত : ৩৩,
هُوَالَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
আল্লাহই তার রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দীন সহকারে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি একে সকল প্রকার দীনের ওপর বিজয়ী করেন, মুশরিকরা একে যতই অপছন্দ করুক না কেন ৷
সূরা বাকরার ১২৯ ও ১৫১, সূরা আলে ইমরানের ১৬৪, সূরা জুম’আর ২ এবং সূরা তাওবার ৯ নম্বর আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সম্পর্কে একই বিষয়বস্তু অভিন্ন ভাষায় বর্ণিত হয়েছ। এসব আয়াতে রাসূল (সাঃ) এর পৃথিবীতে পদার্পণ ও তার রেসালাতের তিনটি লক্ষ্য বর্ণিত হয়েছে।
প্রথমত : কুরআন তেলাওয়াত,
দ্বিতীয়ত : আসমানি গ্রন্থ ও হিকমতের শিক্ষাদান,
তৃতীয়ত : মানুষের জীবন পরিশুদ্ধ ও সুবিন্যস্ত করা ।
এই তিনটি বিষয়ই উম্মতের জন্য যেমন। আল্লাহ তা’আলার নেয়ামত, তেমনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রেরণ করার উদ্দেশ্যেরও অন্তর্ভুক্ত।

■ রাসূল প্রেরণের প্রথম উদ্দেশ্য:
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রেরণ করার প্রথম উদ্দেশ্য এই যে, তিনি মানুষকে কুরআনের আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনাবেন। অর্থাৎ কুরআন পাঠ করেন। এখানে এর আসল অর্থ অনুসরণ করা। কারণ, যে লোক এসব কালাম পাঠ করে, এর অনুসরণ করাও তার অবশ্য কর্তব্য। আসমানি গ্রন্থ ঠিক যেভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়, হুবহু তেমনিভাবে পাঠ করা জরুরী।

■ রাসূল প্রেরণের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য:
রাসূল প্রেরণের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হলো তিনি তেলাওয়াতের ও আয়াতের শিক্ষার মাধ্যমে মানুষদের অন্তরাত্মা বা কৃলব পরিশুদ্ধ করবেন। প্রত্যেক মানুষের বাম স্তনের নিচে গোসশের একটি টুকরা রয়েছ যাকে হাদীসের পরিভাষায় কৃলব বলা হয়। মানবজীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম হাদীসে এসেছে- জেনে রাখ শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ সে গোশতের টুকরাটি হলো কৃলব (অন্তর)। (সহীহ বুখারী : ৫২)।

■ রাসূল প্রেরণের তৃতীয় উদ্দেশ্য:
কুরআন ও হিকমত শিক্ষা দেন। এখানে কিতাব বলে আল্লাহর কিতাব বুঝানো হয়েছ। হিকমত শব্দটি আরবি অভিধানে একাধিক অর্থে হওয়া, ন্যায় ও সুবিচার, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ইত্যাদি। নিঃসন্দেহে এ উক্তির সারমর্ম হলো রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নাহ।

সাহাবায়ে কেরাম উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রাঃ)-কে রাসূল (সাঃ)-এর চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করলে, আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘তোমরা কী কুরআন পাঠ করো না? জেনে রাখো! পুরো কুরআনই হলো রাসূল (সাঃ)-এর চরিত্র।’ অর্থাৎ তিনি ছিলেন আল-কুরআনের বাস্তব নমুনা। (মুসনাদ আহমদ, ইমাম বুখারী, আল আদাব আল মুফরাদ)

মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন জীবন্ত কুরআন। কুরআনুল কারীমকে ভালোভাবে বুঝতে হলে অবশ্যই রাসূলের হাদীস এবং সিরাত অধ্যায়ন করতে হবে। কুরআন ও সুন্নাহর ওপর যথার্থ জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেই সিরাতুল মুস্তাকিম খুঁজে পাওয়া সম্ভব। আমাদের উচিৎ কুরআনুল কারীম ও হাদীস বেশি বেশি করে পড়া পাশাপাশি আল্লাহর রাসূলের সিরাত বা জীবনী অধ্যয়ন করা। সুতরাং এই মহামানব রাসূলের (সাঃ) আদর্শ অনুযায়ী আমাদের গোটা জীবনই পরিচালিত করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সিরাত ও আদর্শের আলোয় আলোকিত হোক আমাদের জীবন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×