somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্কুল স্টোরিঃ এলার্জি

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জয় বাবা পাগলা দাশু


এলার্জি

ক্লসে পিয়াসকে সবাই এলার্জি নামে ডাকে। বেচারার স্কিন খুব সেনসিটিভ। সামান্য কারণেই ফুলে গিয়ে ভীষণ অবস্থা হয়ে যায়। এবং একারণে তাকে প্রায়ই স্কুল কামাই করতে হয়। পিয়াস ক্লাসে ফার্স্ট বা সেকেন্ড হয়। কাজেই স্কুল কামাই করে যে সে খুব আহ্লাদ পায় এমন নয়। বরং কামাই এর দিনগুলোতে দোতলার ঘরে শুয়ে থাকতে থাকতে কপালে দুশ্চিন্তার রেখা ফুটে ওঠে- পিন্টুটা বুঝি পরের বার ফার্স্ট হয়ে যায়। কিন্তু নাহ। সব বাধা পার হয়ে পিয়াস সেবছরও টানা দ্বিতীয়বারের মত ক্লাসে ফার্স্ট হয়ে গেল। আর যায় কোথায়। তার ভক্তকুলের দাপটে ক্লাসে টেকা দায়।

গতবার পিয়াসের প্রথম হওয়া নিয়ে যখন খুব হৈচৈ হচ্ছিল পিন্টুর দলবল সেটাকে তেমন একটা আমল দিল না। ওরা বলে বেড়াতে লাগল যে খোঁজ পাওয়া গেছে পিয়াসের ছোট মামার শ্বশুরের গ্রামের বাড়ি আর হেড স্যারের ভাই এর শ্যালকের গ্রামের বাড়ি একই গ্রামে। এ কারণে হেড স্যার পিয়াসের প্রতি পারশিয়ালিটি করে ফার্স্ট করে দিয়েছেন। নইলে কোথায় পিন্টু আর কোথায় এলার্জি। পরের বার পিন্টু ফার্স্ট হয়ে দেখিয়ে দেবে সবার সাথে পারশিয়ালিটি করে পার যাওয়া যায় না। সে বছর পিয়াস ঘন ঘন স্কিন সমস্যায় পড়তে লাগল আর পিন্টুর দল ক্রমেই আশার আলো দেখতে লাগল। রেজাল্ট দেওয়ার দিন ক্লাসে সাজ সাজ। পিন্টুকুল প্রায় নিশ্চিত যে এবার তারাই জিতে যাচ্ছে। রেজাল্ট দেওয়ার পর কীভাবে এলার্জিকুলকে হেনস্তা করা হবে সেই পরিকল্পনা চলতে লাগল। কিন্তু হেড স্যার যখন ক্লাসে ঢুকে রেজাল্ট শিট পড়ে শোনালেন, পিয়াস গং হুংকার দিয়ে উঠল। পিন্টু শিবিরে হাহাকার পড়ে গেল।

পরের দিন ক্লাসে পিন্টুকে দেখা গেল না। রকি বলল ওর জ্বর হয়েছে। আবির বলে জ্বর তো হবেই। যা ধকল গেল। দেখ ঠেস দিয়ে কথা বলবি না। ঠেসের দেখেছিস টা কী। কী বললি। কেন শুনতে পাস নি। তোর আবার কানে কী হল। তোরা সবাই তো আস্তে আস্তে অসুস্থ হয়ে পড়ছিস রে। ভাল হবে না বলে দিচ্ছি। কী করবি। তবে রে... পরিস্থিতিটা তত্ত্বীয় থেকে ব্যবহারিকে গড়াবার আগেই ইংলিশের স্যার এসে পড়লেন। অ্যাই, নো এনার্কি। কিপ কোয়াইট।

পরের দিন যখন পিন্টু ধীরে ধীরে ক্লাসে এসে উপস্থিত হল সবাই তার উপর হামলে পড়ল। কীরে তোর নাকি জ্বর হয়েছিল ? দেখি দেখি। ওমা তোর চোখ তো লাল হয়নি। গা-ও তো গরম না। জ্বর একদিনেই সেরে গেল ? জ্বর হলে তো সাথে সর্দি কাশিও হয়। হাঁচি টাচি তো দিচ্ছিস না। দেখি হাতের তালু। আহ, সরে যা সব। পিন্টু দেখল ক্লাসের পরিস্থিতিটা এক দিনেই একেবারে বেগতিক। সেনাপতি উজির নাজির সৈন্য সামন্ত কাউকেই তো দেখা যাচ্ছে না। গেল কই সব। এই মুহূর্তে বৈর করে টেকা যাবে না। কৌশলে এগোতে হবে। কিছুক্ষণ ফন্দি ফিকির করে হাসি হাসি মুখ করে পিয়াসের দিকে এগিয়ে গেল। পিয়াস তাকে দেখে জিওগ্রাফি বইয়ে গভীর মনযোগ দিল। পিয়াস। নীরবতা। এই পিয়াস। নীরবতা। কিরে ডাকছি যে শুনছিস না। ওহ, বল। মানে, কাল তো ক্লাসে আসতে পারিনি, অংকের স্যার কী কী পড়ালেন একটু দেখিয়ে দে না। নীরবতা। এই পিয়াস। হুম। অংকটা... তুই বরং টিফিনের সময় আমার সাথে দেখা কর। কথার কি কাটিং। গা টা জ্বলে যায়। পিন্টু অনেক কষ্ট করে অনেক ক্ষণ ধৈর্য ধরে ছিল। এবারে মেজাজটা গেল খারাপ হয়ে। হুহ, তুই ফার্স্ট হয়ে একেবারে আকাশের চাঁদ হয়ে গেছিস না ? শোন, তোর সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করার মত সময় আমার নেই। কী বললি। যা বলার বলে দিয়েছি। এই বাগবিতণ্ডা চলাকালে পিন্টুর মনে আশা জাগল। আস্তে আস্তে তার দু'এক জন পাইক পেয়াদাকে দেখা যাচ্ছে। অপর শিবিরেরর সৈন্য সমাগম ভয়াবহ। কিন্তু বাগবিতণ্ডা যখন শুরু হয়েছে থামা তো আর যায় না। কাজেই গতকালের পোস্টপোন্ড ব্যবহারিকটা আজকে সম্পন্ন হল। বলা বাহুল্য পিন্টু এবং তার দলের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ল।

এই ঘটনার পর পিন্টুর জনবলে ঘাটতি দেখা দিতে লাগল। এই তো সেদিন রনি খবর দিল আরিফ নাকি দল বদল করেছে। বলতে বলতে রনি উত্তেজিত হয়ে পড়ছিল। পিন্টু সোজা হয়ে বসে বলল আজ আমি বুঝতে পারছি কেন পলাশীর প্রান্তরে সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয় ঘটেছিল। রনি মনে মনে ভিউগলের আওয়াজ শুনতে পেল যেন। তারপর রনির কাঁধে হাত রেখে বলল ওই মীর জাফরটাকে পরে দেখে নেব। আগে একটা ব্যবস্থা করা দরকার। ক্লাসের অবস্থা খুব খারাপ। একেবারে কোনঠাসা হয়ে যাবার যোগাড়। এভাবে চলতে থাকলে তো আর কিছুদিন পর উঠতে বসতে এলার্জির হুকুম তামিল করতে হবে।

পিন্টু যখন তার হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের ফিকির করছে এমন এক দিনে দুই শিবিরের উত্তেজনা চাপা দিয়ে জামি এক লোমহর্ষক খবর নিয়ে উপস্থিত হল। ডিসকভারি চ্যানেল থেকে নাকি একটা টিম আসছে। স্কুলের ওপর ডকুমেন্টারি বানাতে। বলিস কি ! হ্যাঁ, পাকা খবর। ওরা এক সপ্তাহ থাকবে। শুটিং করবে। ডকুমেন্টারিটা টিভিতে দেখাবে। আবার এটা নিয়ে ডিসকভারি ম্যাগাজিনে একটা স্টোরিও ছাপবে। তাহলে তো সত্যিই দারুণ ব্যাপার ! সত্যি বলছিস ! জামির কথা সত্যি হল। হেড স্যার নিজে হাসি হাসি মুখ করে এই কথা ঘোষণা করে গেলেন। উৎসব উৎসব রব পড়ে গেল। দুই শিবিরে ফুরফুর ফুরফুর বাতাস বইতে লাগল। বাতাসে সন্ধি সন্ধি গন্ধ। সবারই এখন অপেক্ষার পালা। দিন যেন কাটতেই চাচ্ছে না।

অবশেষে সেই দিন এল। তিনটা গাড়িতে করে মোট এগার জনের একটা দল এসেছে। দলটা উঠেছে এখানকার ডাক বাংলোয়। তাদের সাথে একজন দোভাষীও আছেন। সেদিন স্কুল ছুটির পর সবাই ছুটে গেল ডাক বাংলোয়। দোভাষী সবাইকে বুঝিয়ে বললেন যে তারা সবাই খুব ক্লান্ত। এখন যেন তাদেরকে ডিসটার্ব না করা হয়। কাল সকালেই টিমটা স্কুলে যাবে। কিন্তু ছেলেপেলের দল বুঝতে চায় না। অবশেষে ভেতর থেকে একজন বেরিয়ে এলেন। ইনিই মনে হয় দলনেতা। সবার সঙ্গে পরিচিত হলেন। দোভাষী জিজ্ঞেস করলেন তোমার নাম ? সালেক আবেদিন। স্যার হি ইজ সালেক আবেদিন। ওহ নাইস। তোমার ? অমিত চট্টোপাধ্যায়। স্যার হি ইস অমিত চ্যাটার্জি। পিয়াস পণ্ডিতি করে নিজেই ইংরেজিতে কথা বলতে গেল। মাঝ পথে আটকে গিয়ে একটা বেরাছেরা অবস্থা আর কি। অন্য সময় হলে পিন্টু শিবির এই অবস্থায় চুপ করে থাকত না। কিন্তু সবাই ডিসকভারির যাদুতে মুগ্ধ হয়ে থাকায় এটা কারো কাছেই আর গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় বলে মনে হল না। এভাবে পরিচিতি পর্বের মধ্য দিয়ে সেদিনের ডাক বাংলো অভিযান সমাপ্ত হল।

পরের দিন স্কুলে গিয়ে দেখা গেল স্কুল শুরুর আগেই দলটা এসে উপস্থিত। ওরা কীসব যেন মাপছে, দেখছে, এখানে ওখানে রিফ্লেক্টর সেট করছে আর প্ল্যান করছে। সমাবেশে-জাতীয় সঙ্গীত-শপথের পর হেড স্যার দোভাষীকে মঞ্চে নিয়ে এলেন। স্যার বললেন ইনি আরমান আজিজ। এই দলের সঙ্গে দোভাষীর কাজ করবেন। ইনিই তোমাদেরকে ব্রিফ করবেন এবং কোথায় কী করতে হবে বুঝিয়ে দেবেন। তারপর আজিজ সাহেবকে ফ্লোর দিলেন। আজিজ সাহেব হেড স্যারকে দলের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থার হালচাল বিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্যই এই উদ্যোগ। আশা করি শিক্ষার্থীরা এই কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। তারপর তিনি সবার হাতে একটা করে স্ক্রিপ্টের কপি দিলেন। সেখানে প্রোগ্রামের খুঁটিনাটি সব বিস্তারিত দেওয়া আছে। স্ক্রিপ্ট হাতে করে সবাই ক্লাসে চলে গেল।

এমন দৃশ্য এই স্কুলে কেউ কোনদিন দেখেনি। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, দারোয়ান দপ্তরি সবাই একমনে অধ্যয়নরত ! পুরো স্কুলে পিন ড্রপ সাইলেন্স ! প্রথম ক্লাসে ক্লাস টিচার গোপাল স্যার হাজিরা খাতা নিয়ে যেতে ভুলে গেলেন। স্ক্রিপ্ট পড়া শেষ হলে বিশাল এক হাঁক দিলেন- কিরে, কেউ হাজিরা খাতাটা নিয়ে এলিনা যে এখনো ? পেয়েছিস টা কী ? শুধু স্ক্রিপ্ট পড়ে পরীক্ষা পাশ হবে ? স্ক্রিপ্টের ধাক্কা কাটিয়ে স্কুলটা কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার সচল হয়ে উঠে গতানুগতিক চেহারা ফিরে পেল।

হাজিরা খাতা এসে গেছে। স্যার নাম ডাকা শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পরপরই তার নজর চলে যাচ্ছে বাইরে। ছেলেপেলেও এদিক ওদিকে উঁকি ঝুঁকি মারছে দেখার জন্য বাইরে কী হচ্ছে। কারণ স্ক্রিপ্টের কল্যাণে ওরা জানে এই মুহূর্তে সবগুলো ক্লাস বাইরে থেকে টেক করা হচ্ছে। গোপাল স্যার নাম ডাকা শেষ করে বোর্ডে গেলেন। আজ সরল কোণ বোঝানোর কথা। ততক্ষণে ক্লাসে একটা শোরগোল পড়ে গেছে। শোরগোলের কারণ অনুসন্ধানে স্যার ঘুরে দাঁড়াতে গিয়ে এন্টি ক্লকওয়াইজ ৯০ ডিগ্রী কৌণিক ভ্রমণ করে থেমে গেলেন। তার সামনে ডিসকভারির ক্যামেরা ! আজিজ সাহেব ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন সবাই যেন স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যায়। ইশারা পেয়ে স্যার সরল কোণ পূর্ণ করলেন। কিন্তু ক্লাস নেওয়া আজ যেন জটিল হয়ে উঠল।

প্রথম দিনের ধকলের পর দ্বিতীয় দিন মোটামুটি ভালয় ভালয় সব হয়ে গেল। তৃতীয় দিন কিছু গ্রুপ ওয়ার্ক ছিল। ছেলেপেলেকে দিয়ে বেশ কয়েক প্রস্থ খেলিয়ে নেওয়া হল; ফুটবল, দাড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, বউচি। মোটামুটি সারাদিনই ধুলা আর রোদে থেকে পিয়াসের অবস্থা কাহিল। স্কিন ফুলে উঠেছে। তবু তার উৎসাহের কমতি নেই।

চতুর্থ দিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকারের পর্ব। শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুধু ক্লাসের প্রথম স্থান অধিকারীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। ডিসকভারি যাদু কিছুটা সয়ে যাওয়াতেই মনে হয় পিয়াস শিবির এই খবরে আবার চাঙ্গা হয়ে উঠল। পিন্টুর দল গুঞ্জন তুলল এটাও হেড স্যারের পারশিয়ালিটি। পিয়াসের দিকে ক্যামেরা তাক করে আছে। তাকে স্ক্রিপ্ট দিয়ে দেওয়া হল। বলতে গিয়ে বারবার ভুল হয়ে যাচ্ছ। এর প্রধান কারণ হল তার এলার্জি আবার দাপটের সাথে দৌরাত্ম দেখাচ্ছে। মা বাবা বারণ করেছিল আজ স্কুলে যেতে। কিন্তু ডিসকভারির যাদুর কাঁচের সামনে সেই বারণ নিছক এক সেকেন্ডের একটা বাতিল শট। পিয়াস লাস্ট শটটা কোনভাবেই শেষ করতে পারল না। অবস্থা এমন হল যে তাকে ধরাধরি করে বাড়ি নিয়ে যেতে হল। এই শেষ দৃশ্যটা পিন্টুকুলের সেদিনের একমাত্র সান্ত্বনা।

পঞ্চম দিন দলটা স্কুলে এল না। খবর পাওয়া গেল সেদিন দলটা স্কুল সম্বন্ধে স্থানীয়দের মতামত শুট করছে। শেষ দিন জাতীয় সঙ্গীত-সমাবেশ, কিছু গান-আবৃত্তি-কৌতুক-অভিনয় এসব শুট করা হল। টিফিনের একটু আগে ইউনিটটা প্যাক আপ হয়ে গেল। গাড়িতে উঠতে গিয়ে আজিজ সাহেব কি মনে করে ফিরে এলেন। পিন্টু টিফিনের বাক্সটা খোলার তোড়জোড় করছিল। তিনি হেঁটে হেঁটে ঠিক তার সামনে এসে দাঁড়ালেন। পিন্টু কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। আজিজ সাহেব তাকে একটু আড়ালে ডেকে নিয়ে বললেন- তোমাদের যে ফার্স্ট বয়, আমার আর খেয়াল ছিল না তার নামটা জিজ্ঞেস করার। কী নাম যেন ওর। পিন্টু বলল ওর নাম পিয়াস এলোপাধ্যায়। ওকে, থ্যাংক ইউ।

সাপ্তাহিক ছুটি কাটিয়ে আবার স্কুল বসল। প্রথম কয়েক দিনের আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়াল শুটিং এর সময় বিরোধী শিবিরের অপ্রস্তুত অবস্থাগুলোর রসনাবিলাসী বর্ণনা। পিন্টু শিবিরের প্রধান অস্ত্র হল পিয়াসের সাক্ষাৎকার পর্ব। সবাইকে অবাক করে দিয়ে পিন্টু নিজে এই আলোচনায় কোন উৎসাহ দেখাল না। তাকে দেখে মনে হচ্ছে অনাগত কী একটা আরো মনোলোভা বিষয়ের জন্য যেন অপেক্ষা করছে।

দেখতে দেখতে গ্রীষ্মের ছুটি চলে এল। এখনো ডকুমেন্টারির কোন খবর পাওয়া গেল না। সবাই হতোদ্যম হয়ে পড়লেও পিন্টুর কোন ভাবান্তর নেই। ওদের গ্রামে ডিসকভারি চ্যানেল দেখা যায় না। সবাই যখন অস্থির হয়ে আলোচনা করতে থাকে কবে ম্যাগাজিনটা আসবে, আদৌ আসবে কিনা, পিন্টু নিরাসক্ত হয়ে বলে আসবে আসবে। যখন আসবে তখন দেখতে পাবি। আগে স্কুলটা খুলুক তো।

ছুটি শেষ হল। স্কুল খুলল। পিয়াসকে দেখা গেল না। মন্টু বলল আবার স্কিন ফুলে উঠেছে। প্রথম ক্লাসে নাম ডাকা শেষ হতেই হেড স্যার এসে উপস্থিত। আহা হা। স্যারের হাতে বিদেশি ম্যাগাজিন! সবাই অস্থির হয়ে উঠেছে। স্যার বললেন স্টোরিটা ছাপা হয়েছে। প্রতি ক্লাসের জন্য একটা করে কপি পাঠানো হয়েছে। কপিটা ক্লাস টিচার সংরক্ষণ করবেন। তবে একদিনের জন্য ছেলেপেলেদেরকে দেখতে দেওয়া হবে। পিয়াস নেই দেখে পিন্টুকে দায়িত্ব দেওয়া হল সবাইকে নিয়ে সুন্দরভাবে দেখার জন্য। কোনভাবেই যেন পাতা টাতা না ছেঁড়ে।

পিয়াস আর পিন্টু ছাড়া ছেলেপেলে ইংরেজিতে তেমন একটা পটু না। তাই সবাই পিন্টুর আশেপাশেই ভীড় করল। পিন্টু নিজে স্টোরিটার মর্ম তেমন একটা উদ্ধার করতে না পারলেও সেটা প্রকাশ করল না। ক্ষেত্রবিশেষে তার সৃজনশীলতার প্রয়োগও করল। সবাইকে বের করে দেখাল যে ওখানে পিয়াসের নাম ছাপা হয়েছে পিয়াস এলার্জি। এই খবরের সাথে সাথে পিন্টুগং সোল্লাসে হুটোপুটি শুরু করে দিল। এতদিনে একটা উচিত শিক্ষা হয়েছে এলার্জির। দুইবার প্রথম হয়ে খুব বেড়ে গিয়েছিল। পিয়াসকুল অবাক। এটা কী করে হল ! পিন্টু বলল আমি কী জানি ? পিয়াস শিবির খুব ক্ষেপে গেল। তারা বলতে লাগল এটা নিশ্চয়ই পিন্টুর কাজ। হ্যাঁ হ্যাঁ, আজিজ সাহেব গাড়িতে ওঠার সময় পিন্টুর সাথে কী যেন বলছিল। হ্যাঁ হ্যাঁ তাই তো। পিন্টু সবাইকে বলল, আমি ওর নাম এলার্জি বললেই উনি বিশ্বাস করতেন ? তা ও তো কথা। ওরা আর বেশিদূর তর্ক এগোতে পারল না। কারণ এই ঘটনার পর পিন্টুর দলবল সাঙ্ঘাতিক দাপিয়ে বেড়াতে লাগল।

ক্লাস শেষে পিন্টুগং ম্যাগাজিন নিয়ে হৈহৈ করে পিয়াসদের বাড়ি গেল। পিয়াসের ঘরে ব্যায়ামের জিনিসপত্র দেখা যাচ্ছে। নতুন আনা হয়েছে। বেশ বেশ। পিয়াস খুবই অবাক। খুশি আর ধরে না। আনন্দের উদারতায় বাড়ির কাজের লোককে ডেকে সবাইকে নাস্তা করাল। তারপর যখন সবাই চলে গেল মনযোগ দিয়ে পড়তে পড়তে একটা জায়গায় এসে থমকে দাঁড়াল। তারপর নিস্ফল রাগে আস্ফালন করতে লাগল। নিচের ঘরে বাবা বসে ভাবলেন যাক, শরীর চর্চা ভাল হচ্ছ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×