ইয়াহু চ্যাট রুম টু হাই ফাইভ টু মাইস্পেস টু ফেসবুক টু সামু... কিছু স্মৃতি...
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ইন্টারনেটে আপলোড করা আমার প্রথম ছবি (হাই ফাইভে ২০০৪ সালে)
ইয়াহু চ্যাট রুম টু হাই ফাইভ টু মাইস্পেস টু ফেসবুক টু সামু........
.............আদিম পুরুষ.............
ব্লগে অ্যাকাউন্ট করা এবং প্রথম পোস্ট দেয়ার পর একটা বিষয় উপলব্ধি করেছিলাম। যারা সামুতে নিয়মিত ব্লগ লেখে তারা তাদের ফেসবুকেও দেখি ব্লগিয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে। প্রায় সবার ই ফেসবুক প্রফাইল উন্মুক্ত। ফ্রেন্ড নাহলেও কমেন্ট করা যায়। কি আজব ব্যাপার। পেইজের মত এক একেক জনের ফেসবুক প্রফাইল। প্রায় সবাই সবার মিউচুয়াল ফ্রেন্ড। কারো প্রফাইলে ঢুকলেই প্রিয় ব্লগারদের দেখা যায় বিভিন্ন স্ট্যাটাসে কমেন্ট করতে। তখন মনে হল ব্লগাররা কি তাদের প্রত্যহিক জীবনের চিন্তা ভাবনা সব কিছুতেই ব্লগীয় চিন্তা ভাবনা দ্বারা প্রভাবিত। ফেসবুক মানে নিজের চেনা রক্ত মাংসের বন্ধু বান্ধব, আত্নীয় স্বজনদের নেটওয়ার্ক। কিন্তু সামু ব্লগে অ্যাক্টিভ হওয়ার পর থেকে ফেসবুক সম্পর্কে আমার আগের ধ্যান ধারনা দেখি এখানে কিছুই মেলে না। এখানকার ব্যাপারগুলো কেমন অন্যরকম। ব্লগারদের ফেসবুক স্ট্যাটাস গুলোও কেমন ব্লগীয় ধরণের। আর ওখানে যারা কমেন্ট করে তাদের বেশিরভাগই ব্লগার।
ফেসবুকে আপলোড করা আমার প্রথম স্কেচ (লেলিনের - ২০০৫ এ)
সামাজিক নেটওয়ার্ক চালুর প্রথম দিকে মাই স্পেস এবং হাই ফাইভ জনপ্রিয় ছিল। বাংলাদেশে ফেসবুক পূর্ব যুগে হাই ফাইভের মাধ্যমেই পোলাপাইন ফ্রন্ডস নেটওয়ার্ক তৈরি করত। আর ইয়াহু মেসেঞ্জারের চ্যাট রুমতো ছিলই। সাইবার ক্যাফেতে স্কুল পালিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কানে হেডফোন লাগিয়ে ইয়াহু চ্যাট রুমে ভয়েস আড্ডা দিতাম। কোথায় হারিয়ে গেল সেই সব দিন। তখনই মে বি ২০০৫ এর দিকে সামুকে প্রথম জানি। এক বন্ধুর মাধ্যমে। সে নাকি সামুতে প্রেমের গল্প পড়ত। আমার ব্লগ ব্যাপারটা কেমন গুরুগম্ভীর ব্যাপার মনে হত। মাঝে মাঝে পড়তাম। সে যাই হোক সেখানে ইয়াহু ভিডিও চ্যাট, চ্যাটরুমের আড্ডা, হাই ফাইভের মজা পেতাম না।
একদিন পত্রিকায় জানলাম নতুন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক চালু হচ্ছে। নাম '' মাই স্পেস'' । একাউন্ট করলাম। ওটা অনেকটা ব্লগ টাইপের ছিল। লেখাকে বিভিন্ন রং করে পোস্ট দেয়া যেত। কিছু দিন ওখানে নিয়মিত ছিলাম। পাশাপাশি হাই ফাইভতো ছিলই। হাই ফাইভে সবচেয়ে বেশি অ্যক্টিভ ফ্রন্ড পাওয়া যেত ব্রাজিল আর কিউবার। অনেক মেয়ে সান বাথের ছবি আপলোড করত। এ কারণে দেখা যেত সাউথ অ্যামেরিকান মেয়েগুলো প্রায় সবার ফ্রেন্ড লিস্টে থাকত। কিন্তু হাই ফাইভে এত ম্যাসেজ অপশন, প্রাইভেসী, চ্যাট এসব কিছুই ছিল না। শুধু ইচ্ছে মত প্রফাইলের লে আউটের কালার চেঞ্জ করা যেত।
এই ছবিটি একেছিলাম দ্য ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সি বইটি পড়ার পর ক্লাস সেভেনে। ২০০৫ এ ওটা ফেসবুকে আপলোড দেই.।
এরই মাঝে সালে শুনলাম আমেরিকায় নতুন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে। একটি কম্পিউটার বিষয়ক পত্রিকায় খবরটি পড়েছিলাম। সে ২০০৫ এর শুরুর কথা । একাউন্ট করালাম। দেখলাম নতুন চালু হওয়া ফেসবুকে অনেক সুবিধা। ইনবক্স, চ্যাট,গ্রুপ.. ই.টি.সি। অ্যাকাউন্ট করে ফেললাম। তখন গুগলের পরিবর্তে ইয়াহু সার্চ বেশি দিতাম। সার্চে বাংলাদেশি ফেসবুক ইউজার দেখলাম একটা লিস্টে। সেখানে প্রথম ১০০ জনের ভিতর আমার আই.ডি দেখে একটু বিস্মিত হয়েছিলাম। বুঝলাম বাংলাদেশে সাইটা অত বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি তখনো। আমি এর পর আমার অনেক স্কুল ফ্রন্ড কে অ্যাকাউন্ট করাই। শুরু হল আমার ফেসবুক যাত্রা। তখন বাংলায় স্ট্যাটাস দেয়া যেত না। বাংলিশে স্ট্যাটাস দিতাম। তাও প্রথম দিকে ২০০ অক্ষরের বেশি স্ট্যাটাস আপডেট দেয়া যেত না। কিন্তু স্ট্যাটাস আপডেটের কমেন্ট যত ইচ্ছা বড় করে দেয়া যেত। ছবির জন্য আলাদা অ্যালবাম ব্যবস্থা, নোটিফিকেশন, ইত্যাদি প্রথম দিকে ছিল না। সব কিছুই প্রফাইলেই জড়ো থাকত। আস্তে আস্তে নতুন নতুন ফিচার যোগ হয়। প্রথম চালু হয় গ্রুপ। তখন গ্রুপ গুলো খুব জনপ্রিয় ছিল। এর পরে আসে পেইজ। প্রথম দিকে ফেইক আইডি খুব কম ই ছিল। আমার জাস্ট
একটা আইডিই ছিল।
এমপি সিক্স প্লেয়ারে ছবি তোলার অপশন ছিল। ক্যামেরা মোবাইল অনেক দামি ছিল তখন। এই ক্যামেরায় ছবি তুললে তা কোন এডিটিং ছাড়াই পেইন্টিংয়ে রূপ নিত। এটাও আমার ফেবুর প্রথম দিকের এলবামের একটি ছবি
অনেক জনপ্রিয় এফ এম আরজে কে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক গ্রুপ ছিল তখন। খুব মজা হত। চরম ভাবে পঁচানো হত। যার একটি ছিল '' আর.জে নিরব হেইট ক্লাব'' । ওখানে নিরব কে এমন পচানি পচাইছি সেটার প্রভাব নিরবের ব্যক্তিগত জীবনেও লাগে। একটি লাইভ অনুষ্ঠানে সে অপমানিত হয়। ওর সহকর্মীরা ওকে সন্দেহের চোখে দেখে। আমাদের ও ই হেইট ক্লাব ফেবু গ্রুপের স্লোগান ছিল .। '' ওনলি ওয়ে টু হ্যাভ দ্যা ফিলিং অব ম্যান -হিজু ব্যানানা ড্রিংক্স -- ড্রিংক ইট ফিল ইট..'' বাংলা স্লোগান ছিল '' কলা খাইলে হয় না'' নানান হুমকিও পাই এজন্য। এসব হাবিজাবি করেই দিন কাটত ফেসবুকে। মনে আছে জাস্ট আনকমন ছবি আপলোড করার জন্য রিস্ক নিয়ে এমন সব জায়গায় গেছি যা স্বাভাবিক মানসিকতার কেউ চিন্তাও করতে পারবে না। একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে ছিলাম। ফ্রেন্ডরা কেউ আমার চেয়ে বেশি অ্যালবাম আপলোড করেছে কিনা, ছবিতে বেশি কমেন্ট পাচ্ছে কিনা এসব চিন্তা সারাক্ষণ মাথায় ঘুর ঘুর করত।
এটাই সেই বিখ্যাত গ্রুপের লগো ফটো। খুব মিস করি দিন গুলো।
প্রথম দিকে ছবিতে লাইক দেয়ার ব্যাপারটি ছিল না। সেটি অনেক পরে যোগ হয়। প্রথম প্রথম ব্যাপারটি বুঝতাম না। মনে করতাম লাইক বোধহয় যারা অ্যালবামের ছবি পছন্দ করছে না , সেই অপছন্দ প্রকাশের নতুন অপশন। কয়েকদিন পর পর নতুন ছবি আপলোড করা , পুরান অ্যালবাম ঘেটে পিচ্চিকালের ছবি স্ক্যান করে আপলোড করতাম। তখন ক্যামেরা মোবাইলও এত অ্যাভেইলেবল ছিল না। আমি আব্বুর নকিয়া এন ৭০ টা পেলেই চান্সে ছবি তুলে রাখতাম। এমন করে করে ২০০৮/ ২০০৯ পর্যন্ত আমার ফেসবুকে ছবির অ্যালবামের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৮ টি। প্রতিটি অ্যালবামে মিনিমাম ৫০ টা ছবি। আমার ঘণিষ্ট বন্ধুরা বলত তোর এত অ্যালবামের জায়গা দেয়ার জন্য ফেসবুকে নতুন সার্ভার বসাতে হবে।
ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট, কমেন্ট , অ্যালবাম, গ্রুপেই বিচরণ করতাম। সেই ধারা এই সামু ব্লগে লেখার আগ পর্যন্তও ছিল। এখানে এসে দেখলাম ব্লগারদের ফেসবুকটাও ব্লগের মত। মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগাররা কি সব সময় অনলাইনে ব্লগীয় বিষয় নিয়েই মেতে থাকে। ব্যাপার গুলো কেমন অস্বাভাবিক লাগে। সবাই কেমন সিরিয়াস ধরণের.. মানে টেন্সড......। আমার মূল আইডিতে ফ্রন্ড সংখ্যা ৪৫৫ জন। আমার প্রফাইল ক্লোজড। সব ফেসবুক ফ্রন্ডের সাথেই নিয়মিত ফেবুতে যোগাযোগ হয়। কিন্তু ও ই ৪৫৫ জনের মধ্যে ব্লগার আছে সর্বোচ্চ ৮ জন। যাদের ফ্রন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম ব্লগে আমার লেখা প্রথম পাবলিশড হওয়ার পর। আফসোস হয় ও ই ৪৫৫ জনের মধ্যে অন্তত ২০ জনও যদি ব্লগার থাকত তাহলে আমি পোস্ট দিলে সবার মতামত খুব দ্রুত পেতাম। সামুতে আগামি দিন গুলোতে সবার সহযোগিতা পাব..এই আশাই করি.......।
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানা আপু
শুভ জন্মদিন আপু! আপনার জন্মদিনে সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন কর্মব্যস্ত সুখী জীবন কামনা করছি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আপনি এবং দুলাভাই অনেক প্রজ্ঞাবান মানুষ। দেশের স্বার্থে জাতির স্বার্থে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আসুন তারেক রহমানের দুর্নীতির নিয়ে আরো কিছু জেনে নেই
‘তারেক রহমানের উপর আস্থা রাখবো কিভাবে? দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার, হাওয়া ভবন দিয়ে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার কী না করেছেন তিনি’, আলাপচারিতায় কথাগুলো বলতেছিলো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক বিপ্লবী ছোটভাই।... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিপদের সময় কোনো কিছুই কাজে আসে না
কয়েক মাস আগে একটা খবরে নড়েচড়ে বসলাম। একটা আরব দেশ থেকে বাংলাদেশি দুটো পরিবারকে প্রায় দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কীসের ক্ষতিপূরণ সেটা খুঁজতে গিয়ে যা পেলাম, তা হলো:... ...বাকিটুকু পড়ুন
পদ ত্যাগ না করলেও ছেড়ে যাওয়া পদ কি শেখ হাসিনা আবার গ্রহণ করতে পারবেন?
তিনি ছাত্র-জনতার ধাওয়া খেয়ে পদ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে বেঁচে গেছেন। পদের লোভে তিনি আবার ফিরে এসে ছাত্র-জনতার হাতে ধরাখেলে তিনি প্রাণটাই হারাতে পারেন। ছাত্র-জনতার হাত থেকে রক্ষা পেলেও তাঁর... ...বাকিটুকু পড়ুন
মাদ্রাসার ছাত্ররা কেন মন্দির পাহারা দেবে?
ছবি দেখে বুঝলেন তো, কেন মাদ্রাসার ছাত্ররা মন্দির পাহারা দিতে হয়, এবং কেন একদল হি,ন্দু মন্দির পাহারার বিরুদ্ধে ভাষন দেয়? আফটার অল ভাঙার দায় তো... ...বাকিটুকু পড়ুন