গরিব দেশের মানুষ আমরা ... উৎসবের উপলক্ষ আমাদের মত সাধারন মানুষের জীবনে খুব একটা আসে না ... এই ক্রিকেট ই আমাদের কে দিয়েছে প্রান ভরে মন উজার করে চিৎকার করার ... বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে আকাশ বাতাস কাপিয়ে তোলার ... চারিদিকে যখন বাংলাদেশ বাংলাদেশ শুনি মন খুশিতে ভরে যায় ... চোখ ভিজে যায় বৃষ্টিতে ... মনে হয় ঈদ বা পহেলা বৈশাখের মত জাতীয় উৎসবের চেয়েও সারা দেশের সব শ্রেনীর মানুষের এই জাগরন ... বাধভাঙ্গা উল্লাস কম নয় বরং বেশি ... যারা আমাদের এতো আনন্দের উৎস ... বিপদের দিনে আমরা তাদের পাশে দাড়াতে পারিনা ... ??? আমরা কি পারিনা ওদের মনে একটু সাহস জোগাতে ... বলতে পারি না ... এগিয়ে যাও আমরা ১৬ কোটি আছি তোমাদের সাথে ... !!!
আসুন আমরা শপথ করি --- বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পাশে আছি ... বিজয়ে ছিলাম ... আছি পরাজয়েও ... আস্থা রাখি ওদের ঊপর ওরা নিশ্চয় আবার ভালো খেলবে.....
আগামি কালের ম্যাচের জন্য আমাদের দলের জন্য রইল ... ১৬ কোটি প্রানের অন্তস্থল হতে শুভকামনা ...
আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ ... যার লেখা পরতে আমি খুব পছন্দ করি ... তার কিছু অব্যক্ত কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম ... ... ...
লেখক ও সাহিত্যিকঃ আনিসুল হক এর কলামটি পড়ুন ...
এই শিরোনামটা আমি ধার করেছি আমার কবি নির্মলেন্দু গুণের কাছ থেকে। গত বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালের পর কবি প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায় লিখেছিলেন, ‘হল্যান্ড, তোমার চোখের জল আমার চোখে দাও’।
গত মঙ্গলবার ‘অরণ্যে রোদন’ কলামে আমার লেখার শিরোনাম ছিল, ‘কিছু না পাওয়ার চেয়ে ভালোবেসে কষ্ট পাওয়া ভালো’। ওই লেখাটা আমি লিখেছিলাম সাশ্রু নয়নে; কারণ, ৫৮ সুনামির আঘাত বড় নিষ্ঠুরভাবে আমরা ফিরিয়ে দিচ্ছিলাম আমাদের ক্রিকেটারদের, সাকিব আল হাসানদের। আমি লিখেছিলাম, ‘আমাদের খেলোয়াড়েরা দেশের জন্য উৎ সর্গ করতে পারেন না এমন কিছু নেই। ওঁরা যখন জেতেন, তখনই কেবল আমরা ওঁদের পাশে থাকব? ওঁরা যখন হারেন, তখন ওঁরা কেউ নন? আমাদের ক্রিকেট দলকে বলি, তোমরা আমাদের অনেক দিয়েছ। অনেক দিতে পারবেও। তার বদলে আমার চোখের জলটুকু তোমরা নাও। এই জল ভালোবাসার জল। আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। তোমরা জিতলেও থাকব। হারলেও থাকব। থাকব আর বলব, হবে। এই দেশটাকে দিয়েই হবে। ’
কবি নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গে এই সব নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন, বাংলাদেশের সমর্থকেরা শুধু জয় চায়। এ কারণেই তারা বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করে, যাতে জয়ের সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু দেশের দলকে সমর্থন করার বেলায় তো আরও বেশি সমর্থন আমাদের দিতে হবে তখন, যখন দল হারবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ৫৮ করে দল বিপর্যস্ত। সাফল্যের গৌরবের ভাগ সবাই নিতে চায়, পরাজিতের পাশে কে থাকবে? কত অসমীচীন সমালোচনা যে সহ্য করতে হলো দলকে আর তার অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে। এই দুঃসময়েই তো দলের পাশে থাকতে হবে আমাদের। আমি বললাম, ‘চলো চট্টগ্রাম।’ সপরিবার সাইফুল আজিম, কামরুজ্জামান, এ কে এম জাকারিয়া আর আমার তিনজনের পরিবার, বহু কষ্টে দুই ট্রেনের টিকিট জোগাড় করে আমরা রওনা হলাম চট্টগ্রামের উদ্দেশে।
আমরা গ্যালারিতে ঢোকার আগেই টস হয়ে গেছে। প্রথম চাওয়া পূর্ণ হলো—বাংলাদেশ বল আগে নিয়েছে। দ্বিতীয় চাওয়া পূর্ণ হলো—ইংল্যান্ড শুরুতেই তিন উইকেট হারিয়ে রক্ষণাত্মক ব্যাটিংয়ে চলে গেল। কিন্তু তারপর? মরগান তো যায় না। ওরা কত করবে? ২৫০-২৬০ হয়তো। একটাই উপায়। অলআউট করতে হবে। আমরা চিৎ কার করছি। গ্যালারিতে আছড়ে পড়ছে বঙ্গোপসাগরের কল্লোল; মেক্সিকান ওয়েভ কি কাঁপিয়ে দিচ্ছে ইংলিশদের হূৎ পিণ্ড? বোলিং-ফিল্ডিং হলো অপূর্ব। ২২৫-এ অলআউট ইংল্যান্ড।
আমাদের ব্যাটিং শুরু হবে। তামিম আর ইমরুল নামছেন। আমার বুকে দুন্দুভি বাজছে। ভয়কে উড়িয়ে দিতে লাগলেন তামিম। একটা সময় মনে হচ্ছিল, আমরা সাত উইকেটেই না জিতে যাই। তারপর? চৈত্রের ঝরাপাতার মতো পড়ে যেতে লাগল উইকেট। মাঠে তখন মাহমুদউল্লাহ আর শফিউল। দর্শক মাঠ ছাড়তে লাগলেন। আমি চিৎ কার করে বলছি, ‘হবে, হবে। শফিউলের টেস্টে ৫০ আছে, মাহমুদউল্লাহ তো ব্যাটসম্যানই, দুই উইকেটে জিতব, থাকেন।’
যার যা দোয়া-দরুদ-মন্ত্র জানা ছিল, পড়ছে। মাত্র কয়েক শ গজ দূরে বঙ্গোপসাগর; জলকণা ভেসে ভেসে আসছে সমুদ্র থেকে, ফ্লাডলাইটে তা দেখা যাচ্ছে। সোয়ানের হাত থেকে বল ফসকে যাচ্ছে। আকাশে আধখানা চাঁদ একবার দেখা যায়, একবার ঢেকে যায়। শফিউল ছেলেটা কী খেলল এটা! মাহমুদউল্লাহ! চোখে-মুখে কী ঋজু ভঙ্গি! এরা নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটার, যারা ঔপনিবেশিকদের চোখে চোখ রেখে জবাব দিতে জানে।
হ্যাঁ। আমাদের ছেলেরা এটা আবার ঘটাল। ক্রিকেটের উদ্ভাবক দেশটাকে এবার হারাল বাংলাদেশের মাটিতে।
সারা দেশ আনন্দে ভাসছে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আসছে মিছিলের পরে মিছিল। ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ চিৎ কারের কাছে হার মানছে সাগরের গর্জন।
এই আনন্দের মুহূর্তে একজন মানুষের চোখে জল। সাকিব আল হাসান। এই বরফমানুষটি কাঁদছেন কেন? গত সাতটা দিন তাঁর ওপর দিয়ে সমালোচনার স্টিমরোলার চালিয়েছি আমরা। খেলার আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলেছিলেন, ‘সব যেহেতু আমার ওপরেই আসছে, দলের ওপর চাপ কম।’ নিজে সব আঘাত হাসিমুখে সহ্য করে সাকিব তার জবাব দিয়েছেন ফল দিয়ে। পুরোটা খেলায় সাকিবকে কী যে গম্ভীর, কী যে নিরুত্তেজ দেখাচ্ছিল! বোঝাই যাচ্ছিল, তিনি কেবল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলছেন না, কিছু স্বদেশির স্লেজিংয়ের বিরুদ্ধেও তাঁকে খেলতে হচ্ছে।
৮ মার্চের লেখায় সাকিব আল হাসানের বাহিনীকে ভালোবাসার অশ্রু-অর্ঘ্য নিবেদন করেছিলাম, আজ সেই ভালোবাসাই সাকিব আল হাসান আমাদের ফিরিয়ে দিলেন। বীরের চোখে জল দেখে কতজন যে কেঁদেছেন গ্যালারিতে, ঘরে ঘরে টেলিভিশনের সামনে! মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ফোন এল, ‘সাকিব কাঁদবে কেন? বীর কেন কাঁদবে?’ আমি টের পাই ফারুকীর কণ্ঠ কান্নাভেজা।
সাকিব আল হাসান, তোমাদের আনন্দের অশ্রু, তোমাদের বেদনার অশ্রু—দুটোই গ্রহণ করার জন্য আমরা, বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষ, প্রস্তুত আছি। তোমাদের চোখের জল আমাদের চোখে দাও। এই তো আমার চারপাশে গ্যালারিতে কতজন হাউমাউ করে কাঁদছেন।
দেশের জন্য কান্নাতেও যে সুখ।
আসুন সবাই মিলে চিৎকার করি ---
বাংলাদেশ বাংলাদেশ ...
বাংলাদেশ... বাংলাদেশ ...
বাংলাদেশ... বাংলাদেশ ...
বাংলাদেশ বাংলাদেশ ...
বাংলাদেশ... বাংলাদেশ ...
বাংলাদেশ... বাংলাদেশ ...
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১২:৫৬