somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃদ্ধাশ্রমের যাওয়ার রুপক গল্প

২০ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্যার,আপনের চা
-তোমাকে না কতবার বলছি,,আমাকে স্যার না
ডাকতে,অন্য সবার মত ভাই ডাকবে।
-কিন্তু আপনি তো স্যার ই
-এখন আর স্যার শুনতে ভাল লাগে না,ভাই বলেই
ডাক,
-আইচ্ছা
বৃদ্ধাশ্রমের বারান্দায় বসা জিয়া সাহেবের সাথে কথা
হচ্ছিল রশিদের।বৃদ্ধাশ্রমেই কাজ করে।প্রায় জিয়া
সাহেবের সমবয়সী।
-আচ্ছা ভাই,পেপার পড়া রাখেন।গিয়া দেখেন,সবাই
ক্যারাম খেলে আর আড্ডা দেয়।যান,পরে
পইড়েন পেপার।
-ও,আচ্ছা একটু যাই তাহলে।
বাগানে অনেকেই আসর জমিয়েছে।আড্ডা
চলছে,সাথে ক্যারাম।
-রহমান ভাই,রেড টাকে বামের ওই সাদা দিয়ে চাপ
দিন,হয়ে যাবে।
চমকে পেছনে তাকান রহমান সাহেব,জিয়া
সাহেবকে দেখে মৃদু হাসেন।
-আরে আপনি, কখন এলেন?
-মাত্র আসলাম।
-তা দাঁড়িয়ে কেন,বসেন।খেলেন এক হাত।
-নাহ,আজ না,আরেকদিন।
বলতে বলতে রেড চলে যায় তার
গন্তব্যপথে।
-দারুণ মার দেখায় দিছেন তো,খুব ভাল খেলেন
নাকি?
-হা হা,আরেকদিন হবে সেসব কথা।
ঘরের দিকে যেতে যেতে বলেন জিয়া
সাহেব।
.
খাটের নিচ থেকে নিজের ট্রাঙ্ক বের করে
সেই প্যাকেট টা বের করেন তিনি।একটা
ট্রফি,আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্যারাম প্রতিযোগিতায়
প্রথম হওয়ার।ট্রফির দিকে তাকিয়ে স্মৃতিগুলো
ওল্টাতে থাকেন......
.
প্রায় ৩৫ বছর আগের স্মৃতি,তবে আজো
অমলিন।ট্রফি জিতে তিনি তখন ক্যাম্পাসের পরিচিত
মুখ।গণিতের ছাত্রটিকে তখন সবাই চেনে।এক
বিকেলে পরিচয় হয় শাহানার সাথে।চমৎকার
ব্যবহারে বন্ধুত্ব।ধীরে ধীরে প্রণয়।
আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি তখন।দুই টাকার চিনেবাদাম
অথবা এক প্লেট ফুচকার নিস্পাপ ভালবাসা।তারপর
পারিবারিক মতেই বিয়ে।ততদিন জিয়া সাহেব পাস
করে কলেজের প্রফেসর।
"সমাকলন সাইন এক্স ইজ ইকুয়েল টু মাইনাস কজ
এক্স।আর ব্যবকলনে উল্টাটা হবে।ডি ডি এক্স অব
কজ এক্স ইজ ইকুয়েলটু মাইনাস সাইন এক্স।বোঝা
গেছে?"প্রায়ই এমন সুত্র ধরতেন
ছাত্রদের,আর বুঝিয়ে দিতেন।
.
দু বছর পর ঈশান জন্ম নেয়।একমাত্র ছেলেকে
নিয়ে মা-বাবার আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন।কালের
পরিক্রমায় স্কুল,কলেজ,ভার্সিটি শেষে চাকরিতে
ঢোকে ঈশান।কিন্তু নিজের পছন্দে বিয়ে করার
পর থেকেই বদলে যেতে থাকে।মাঝে
মাঝেই বাবা-মার সাথে খারাপ ব্যবহার করে।জিয়া
সাহেব বুঝতেপারেন,তাদের কদর কমতে শুরু
করেছে।তাও সহ্য করে যান সব।
.
তিন বছর পর নিতুর জন্ম।একমাত্র নাতনিকে পেয়ে
সব ভুলে যান তারা।অবসরপ্রাপ্ত জিয়া সাহেবের
সময় কাটে নাতনির সাথে খুনসুটিতে।
-দাদু,তোমার দাড়ি আছে,বাবার নাই কেন?
-বুড়ো হলেই তো দাড়ি হয় দাদু,তাই তোমার বাবার
নাই।
দাদুর দাড়িতে হাত বুলায় নিতু,মাঝে মাঝে ছোট
হাতে হালকা টান দেয়।হেসে ওঠেন দাদু,তাদের
খুনসুটিতে দাদিও হাসেন।
...
তবে দিনে দিনে তাদের আদর যত্ন আরো
কমতে থাকে।তারা বুঝতে পারেন,এখন তারা শুধুই
বোঝা।
এক রাতে ছেলে আর ছেলের বৌ এর কথা
শুনে জিয়া সাহেব বুঝতে পারেন,তাদের
বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসার প্রম্তুতি নেয়া হচ্ছে।
ঘৃণায় শুধু দু ফোটা অশ্রুজল ফেলেন।হঠাৎ হাতে
কারোর স্পর্শ।না দেখেও চিনতে অসুবিধা হয়না...
-আমাদের আদরের দিন ফুরিয়েছে।কি হবে আর
এখানে থেকে?
-কিন্তু কোথায় যাব শাহানা?
-এখানে আর নয়।চল।
ভরসাপূর্ণ হাত ধরেই বেরিয়ে পড়েন।অজানা
গন্তব্যে..........
.
.
"কি ব্যাপার,কাঁদছ যে?",সেই ৩৫ বছরের
পুরোনো,সেই চেনা স্পর্শ।
-পুরোনো স্মৃতির আবেগগুলো মুক্তি পাচ্ছে
আরকি।
-কি হবে আর ট্রফি দেখে ওইসব মনে করে?
চল বাইরে চল।
.
চাঁদনি রাতে একাকি হাঁটছেন।মনে পড়ছে নাতনির
আধো আধো বুলি,তার দুষ্টামি গুলো।
ভাবছেন,জীবনের ব্যবকলন টা ঠিক কি?আর
সমাকলন জীবন ইজ ইকুয়েল টু কি হবে?
ব্যবকলন করে সমাকলন করলে কি ঠিক উল্টা ফল
আসবে?জীবনের সমাকলনটা বোধোহয়
শূন্য।আর ব্যবকলন?
.
-একা একা আসলে কেন?আমাকেও ডাকতে।
-ঘুমাচ্ছিলে,তাই ভাবলাম...
-সেই আগের চাঁদনি রাতগুলোর কথা খুব মনে
পড়ছে।চল,একটু হাঁটি।
...
নির্ভাবনার সেই হাত ধরে হাঁটছেন তিনি।অনেক দিন
পর।
নাহ,জীবনের ব্যবকলন যাই হোক,সমাকলনটা
মোটেই শুন্য নয়।ভরসাপূর্ণ নির্ভাবনাময় দুখানা হাত
তো আছেই.....
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×