কেন আমি বন্দিশালায়? -- মেজর (অব.) এমএ জলিল, মুক্তিযুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
প্রিয় সহকর্মী ও সাথীরা,
আমি যা অনুভব করি, আপনারা কি তাই অনুভব করেন? আমি যা বুঝি, আপনারা কি তাই বুঝতে পারেন? আমি যা শুনতে পাই, আপনারা কি তাই শুনতে পান?
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। আমি অনেক কিছুই অনুভব করি। কুিসত বেদনাদায়ক অনেক কিছুই জানি। স্বল্প আলোকিত, দরজা-জানালা বন্ধ আমার ছোট কক্ষটির বাইরে আমি শুনতে পাচ্ছি জনতার প্রচণ্ড উল্লাস ধ্বনি, হৈচৈ ও অতুলনীয় প্রাণবন্যা। যখন সবকিছুই তালাবদ্ধ, তখন আমার ছোট্ট অসহায় মনটি কেন উড়ে যাচ্ছে বাইরের ওই অতুলনীয় উচ্ছ্বাস ও অনাবিল আনন্দের মহাসমারোহে? ওগুলো কী? শেখ! শেখ! শেখ মুজিব! পাগলের মতো লোকগুলো উল্লাসে ফেটে পড়ছে কেন? তারা কি জানে না যে, শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি?
আমার পেছন থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে ভেসে আসলো : ‘না, আর বন্দি নয় স্যার? শেখ মুক্ত! শেখ মুজিব দেশে ফিরে আসছেন।’
আমার সমস্ত শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল। গুলিবিদ্ধের মতো মাথাটা আমার ঝিম ঝিম করতে লাগল। নিজের মনে চিত্কার দিয়ে উঠলাম : ‘কি বলছো? কোন শেখ মুজিব ফিরে আসছেন।’
ত্বরিতগতিতে উত্তর এলো : ‘বাংলাদেশের সেই মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান।’
কতকটা উত্তেজিত হয়ে উত্তর দিলাম : ‘তোমরা কি স্বপ্ন দেখছো? না, সবাই মরীচিকার পেছনে ছুটছো? পাক-সামরিক চক্র তাকে গ্রেফতার করেছে। কি করে শেখ মুজিব ফিরে আসতে পারেন?’
পোশাক পরা একজন সৈনিক উত্তর দিল : তিনি সত্যিই ফিরে আসছেন স্যার। আমাদের মহান নেতা শেখ মুজিব এখন মুক্ত।
‘আহ। সে কেমন করে সম্ভব?’ তাহলে তুমি কি বলতে চাও হঠাত্ বাধা পেয়ে ক্ষণিকের জন্য আমি থেমে গেলাম। ‘হ্যাঁ স্যার, আমি বলতে চাচ্ছি আমাদের দেশ মুক্ত হয়েছে। শেখ মুজিব ইতোমধ্যেই ঢাকা বিমান বন্দরে পৌঁছে গেছেন। আজকে এক জনসভায় ভাষণ দেবেন।’
এই কথাগুলোর অদ্ভুত প্রতিধ্বনির ঘূর্ণিঝড় হঠাত্ আমার মাথার ভেতর পাক খেয়ে উঠল। আমাদের দেশ মুক্ত। শেখ মুজিব ইতোমধ্যেই ঢাকা বিমান বন্দরে। তিনি আজ জনসভায় ভাষণ দিতে যাচ্ছেন! এই কথাগুলো আমার কাছে শুধু হেঁয়ালিই মনে হলো না, মনে হলো সম্পূর্ণ অপরিচিত, কৃত্রিম ও অকল্পনীয়। অনিশ্চিতের কশাঘাতে আমার ঠোঁট দুটো প্রাণহীন, নিস্তেজ হয়ে গেল। বারবার এ কথাগুলোর পুনরুক্তি করার জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ করতে লাগল। একই সঙ্গে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাতের মতো একটা বিরাট অন্তর্দ্বন্দ্ব উদ্গীরণের সম্ভাবনায় আমার ভেতর পুঞ্জীভূত হয়ে উঠল। বাইরের কোলাহলে হারিয়ে গেলাম। বিস্ময়ে আমি হতবাক। নিঃসহায় দৃষ্টি মেলে দিলাম সৈন্যদের মাথার উপরে ওই দূর নীলিমায় . . . যেন বহু শতাব্দী কোনো এক ঊর্বশী বা কুিসত বালিকার প্রেতাত্মা দেখতে পেলাম স্থির দৃষ্টি, স্বপ্নাবিষ্টের মতো হতবাক। কিসের আঘাতে ভেতরটা আমার কেঁপে উঠে বরফের মতো গলতে লাগল। কি যেন আমার গণ্ডদ্বয় ভিজিয়ে দিয়ে নিচে নেমে আসছে।
যা কেউ চায় না, অথচ অর্থহীন নয়। যে জলবিন্দুগুলো আমার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল, তাকে আমি ‘আঁসু বলব না, কেননা আমি দুঃখিত নই। একে উল্লাসের স্বতঃস্ফূর্ততাও বলব না। কারণ কোনোক্রমেই আমি সুখী ছিলাম না। যেহেতু আমি আগেই বলেছি যে, যে জলবিন্দুগুলো আমার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়েছে তা অর্থহীন নয়। তাই আমার সাথীদের কাছে এর ব্যথা তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। যদিও আমার কক্ষের একজন পোশাকধারী সৈন্যের কারণ জিজ্ঞাসা করাতে আমি ঘৃণাভরে তাত্পর্য বিশ্লেষণ করতে বিরত হলাম।
প্রিয় সাথীরা আমার,
ওই চোখের পানি এদেশের মুক্তি। কতকটা ক্রোধান্বিত হয়ে চিত্কার দিয়ে উঠলাম। সিপাইকে জিজ্ঞাসা করলাম : ‘বলো, তুমি বলো কোথায় আমি? কেন আমার কক্ষের চারদিকে লোকজনের এত উল্লাস-এত শোরগোল?
নির্লিপ্তভাবে উত্তর বেরিয়ে এলো সিপাহীর মুখ থেকে : ‘এটা ঢাকার ঘোড়দৌড়ের মাঠ। এখন থেকে আধ ঘণ্টার ভেতরেই শেখ সাহেব ভাষণ দেবার জন্য এখানে আসছেন।’
‘না, না, তুমি একটা ডাহা মিথ্যাবাদী। যাও—আমার কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাও। শেখ সাহেব আসতে পারেন না। আমাদের দেশ মুক্ত হয়নি। যদি সত্যিই দেশ মুক্ত হয়ে থাকে, তাহলে আমি এখানে কেন? আমাকে বাইরে যেতে দাও। শেখ মুজিবের কথা শুনতে দাও। আমাকে একটিবার তাকে দেখতে দাও। আমাকে একটিবার ছেড়ে দাও। আমি সেই নেতাকে জীবনে কখনো দেখিনি। ক্ষ্যাপা মানুষের মতো দ্রুত দরজাটাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে জনতার বিশাল সমুদ্রে মিশে গিয়ে শেখ মুজিবের ভাষণ শোনার জন্য দরজার দিকে ছুটে গেলাম।
৪টা ১০ মিনিটে শেখ মুজিব মঞ্চে এসে গেছেন। দরজার সামনে সশস্ত্র সান্ত্রিরা আমার গতিরোধ করল। আমাকে বলা হলো :
‘অত্যন্ত দুঃখিত স্যার, আপনি বাইরে যেতে পারবেন না।’
সঙ্গে সঙ্গে আমার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, ‘কেন?’
সহসা উত্তর এলো, ‘কারণ-আপনি বন্দি।’
‘কি, আমি একজন বন্দি’? তা কি করে সম্ভব! তুমি না এইমাত্র আমাকে বলেছো, আমাদের দেশ মুক্ত।
‘হ্যাঁ, সত্যি স্যার, আমাদের দেশ আজ মুক্ত।’ বিনীতভাবে উত্তর দিয়ে সিপাইটি নিরুদ্দেশ হলো।
‘সত্যিই কি দেশ মুক্ত!’ অচেতনভাবে আমি চেয়ে রইলাম আমার কক্ষের বাইরে মার্চরত সৈন্যদের গতিছন্দের দিকে। আবার পিঞ্জরাবদ্ধ হলাম। অনেকক্ষণ পর্যন্ত আমার আড়ষ্ট জিহ্বা উচ্চারণ করতে লাগলো : এটা কি সত্যি! এটা কি সত্যি!! বারবার এই কথাগুলো আমার কানে ঘুরে-ফিরে বাজতে লাগল। বেদনাহত মনটা আমার কিছুতেই অনুধাবন করতে পারল না : কি সত্যি, দেশের মুক্তি—না, আমার অন্তরীণ? অন্তরীণ! আপাতদৃষ্টিতে সত্যি, কিন্তু দেশের মুক্তি সম্বন্ধে আমার সন্দেহ ক্রমান্বয়ে বদ্ধমূল হতে লাগল।
১৯৭০ সালের জুলাই মাস থেকে বাস্তবিকপক্ষে কোনো কিছুই আমাকে মুগ্ধ করতে পারেনি। চারদিকে সুখ ও বিলাসিতা আমার শান্তি ও আনন্দের মূল্যবোধকে বিপর্যস্ত করতে লাগল। বিরাম ও নির্জনতা গোপন পথে আমার কাছে এসে চুপি চুপি আলাপ শুরু করল। স্বপ্ন, ইচ্ছা, দুশ্চিন্তা ও উদাসীনতা আমার কাছে বিপ্লবের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে এলো। এটা সেই আলোড়ন, এটা সেই বিপ্লব যার বহিঃপ্রকাশ অত্যাসন্ন। খাদ্য, ধর্ম ও নিপীড়িত মানবতা, রীতিমতো আমার মনের খোরাক হয়ে দাঁড়াল। মাসের পর মাস ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। যা হোক, আমার অস্থিরতা প্রশমনের কোনো লক্ষণ দেখলাম না। এই জ্বলন্ত প্রশ্নগুলো আমার কল্পনাশক্তি ও কর্মক্ষমতাকে পঙ্গু করে দিল।
কেন আমি এত অস্থির? আগামী দিনে কী আসছে? হ্যাঁ কিছু একটা এসেছিল। আমার ছুটি। সুতরাং ১৯৭১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ছুটিতে এলাম বরিশাল জেলার উজিরপুর গ্রামের আমার বাড়িতে। ওই বছরের ছুটির দিনগুলো আমার কাছে বোঝার মতো লাগল। কারণ পূর্ব পাকিস্তানের চরম অস্থিরতায় আমি ক্লান্তি বোধ করলাম।
১৯৭১ সালের মার্চ মাস। শহর ও গ্রামের আনাচে-কানাচে চরম উত্তেজনা। ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, অফিসার, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামরিক মহলে সর্বত্রই চরম অস্থিরতা। আওয়ামী লীগের ৬ দফার বিরাট সাফল্যে সারাদেশে প্রাণের বন্যা বয়ে গেল। স্বায়ত্তশাসন পাবার বিরাট উদ্দীপনায় সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির অন্তর উদ্ভাসিত।
হঠাত্ একটি বিরাট ঘূর্ণিঝড়ে শেখ মুজিব ভেসে গেলেন। ভূলুণ্ঠিত হলো লাখ লাখ নিরীহ বাঙালি। এটা অতি সত্যি। কারণ, আমার মনে পড়ছে আমিও হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছি, মুক্তিসেনাদের সংঘবদ্ধ করেছি, সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়েছি, মুক্তিসংগ্রামে অংশ নিয়েছি। হ্যাঁ, বিজয় উল্লাসে আমিও শরিক হয়েছিলাম। বিজয়ীর বেশে খুলনায়ও প্রবেশ করেছিলাম।
পাক হানাদাররা বাংলার দুর্জয় মুক্তিসেনাদের কাছে মাথা নুইয়ে আত্মসমর্পণও করেছিল।
আমাদের সঙ্গে ভারতীয় মিত্রবাহিনীও ছিল। এটা আমাদের বিজয়, আমাদের মুক্তি! এ বিজয় অর্জন করেছে বাংলার দামাল মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, ইপিআর।
ভারতীয় সৈন্যরাও আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করেছে, কেউ কেউ জীবনও বিসর্জন দিয়েছে। কিন্তু...
হ্যাঁ, ওদের সাহায্যের ভেতরে একটা বিরাট ‘কিন্তু’ বয়ে গেছে। সুপরিকল্পিত উপায়ে তারা বাংলাদেশে লুট করেছে। দেশ মুক্ত হবার পর বিশেষ করে খুলনা ও যশোরে তাদের আমি লুট করতে দেখেছি। তারা জঘন্যভাবে লুট করেছে। চামড়া ছিলে দেশের আত্মাটাকে উপড়ে নিয়েছে। ভারত সরকার যদি মানবতার খাতিরে বাংলাদেশকে সাহায্য করে থাকে তাহলে, ভাবতেও আশ্চর্য লাগে যে, আমাদের মতো একটি দরিদ্র যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে লুট করে কত বড় হীনম্মন্যতার পরিচয় দিয়েছে। আদৌ এরূপ পরিকল্পনা যদি তাদের ছিল, তাহলে অন্তত তারা কয়েক বছর অপেক্ষা করতে পারত। তারপর আরম্ভ করত রক্ত চুষতে। কিন্তু আমাদের শিশু রাষ্ট্রের জন্মলগ্নেই কি লজ্জাহীনের মতো এসব জঘন্য কাণ্ডকারখানা করল। দেশ মুক্ত হবার পর ১৯৭১ সালের ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর রাত্রে ভারতীয় সৈন্যরা এইসব কু-কর্মে লিপ্ত হয়েছিল। মিত্রবাহিনী রাত্রে কারফিউ দিয়ে ওরই ছত্রছায়ায় পরিকল্পিত উপায়ে দোকান-পাট, ফ্যাক্টরি, পোর্ট, রেডিও স্টেশন ও নিউজ-প্রিন্ট মিলে লুট করেছে। এমনকি ছোট ছোট বাড়িঘরও বাদ দেয়নি। সারারাত ধরেই এই লুণ্ঠন চলে। সব জায়গা থেকে আমার কাছে ন্যক্কারজনক লুণ্ঠনের সংবাদ আসতে লাগল। শুধু তা-ই নয়, ট্রাকভর্তি করে পাক-হানাদারদের পরিত্যক্ত অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, রেশন, কাপড়চোপড়, গাড়ি, সামরিক সরঞ্জাম ইত্যাদি বাংলাদেশ থেকে ভারতে নিয়ে গেল। যেন তারা এদেশটা জয় করেছে।
সাথীরা আমার,
মনে রাখবেন, ভারত সরকার আমাদের সাহায্য করেছে, মুক্তি এনে দেয়নি। ক্ষমতা দখল করার জন্য মিঃ তাজউদ্দিনের পুতুল সরকার ও সাক্ষীগোপাল মন্ত্রীরা যে কোনো দলিল বা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে থাকুন না কেন, কিন্তু আমি একজন মুক্তি সংগ্রামী হিসেবে জোর দিয়ে বলতে চাই, প্রভু ভারতকে খুশি করার জন্য এই দেশকে বিক্রি করার লাইসেন্স কেউ তাদের দেয়নি। আমার মনে পড়ে, ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর এই দুর্ব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার বিবরণ লিখে ওদের অধিনায়কের কাছে পাঠিয়েছিলাম। মিঃ তাজউদ্দিনের কাছেও এক কপি দিয়েছিলাম। বাধা দিয়েছিলাম, প্রতিবাদ করেছিলাম। এলাইড কমান্ডার মেজর জেনারেল দালবীর সিংহকে বলেছিলাম, ‘লুটপাট বন্ধ করো, তা না হলে বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা তোমাদের বিরুদ্ধেও অস্ত্র ধরবে এবং ১৭/১৮ ডিসেম্বর রাতে সহ্য করতে না পেরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলি হয়েছিল বেশ কিছুক্ষণ ধরে।
প্রিয় সাথীরা আমার,
এই প্রতিবাদলিপি পাঠাবার পর সব যেন কুজ্ঝটিকাময়, কর্দমাক্ত হয়ে উঠল। বিজয়োল্লাসে এলো নাটকীয় পরিবর্তন। মনে হলো দাসত্বের শৃঙ্খল আমাদের এই শিশু রাষ্ট্রকে মুক্ত বাংলাদেশকে দ্রুত ধাওয়া করছে। দেশপ্রেমিক সকল মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মূল করার জন্য ষড়যন্ত্র পাকিয়ে উঠল। আর এই ষড়যন্ত্রের প্রথম শিকার আমি। আমি ভালো করে স্মরণ করতে পারি—আমি মেজর জলিল। ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর যশোরের কাছাকাছি ওত পেতে আমাকে বিনা কারণে বন্দি করা হয়েছিল। তারা আমাকে মেরে ফেলত, যদি আমার সঙ্গে অন্য ১৫ জন সাথী না থাকত। অন্য সকলের থেকে বিচ্ছিন্ন করে যশোর ক্যান্টনমেন্টের একটি নির্জন কক্ষে আমাকে নিক্ষিপ্ত করা হয়েছিল। আমি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘আমার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ’?
তিনি উত্তর দিলেন : ‘তুমি বিদ্রোহী’।
আমি উত্তর দিলাম : ‘কি করে এমন মন্তব্য করতে পারেন? শুধু আপনাদের লুট করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছি বলে?’
আমার কথা শুনে তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন।
সাথীরা, দেশের সম্পদকে বিদেশি লুণ্ঠনকারীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিবাদ করলে যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমি অপরাধী। বিদেশী শক্তির আগ্রাসী ছোবল থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য বাধা দেয়াটা যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমি বিদ্রোহী। যে মাটিতে মূল্যহীন, ভিত্তিহীন এবং দেশপ্রেমিক ভূমিকা নিলে অপরাধী বলে গণ্য হতে হয়, সে দেশকে কোন কারণে আমি স্বাধীন বলে মেনে নেব? যে বাংলার মাটিকে আমি এত ভালোবেসেছি—সেই মুক্ত মাটিতে আমি বন্দিশালায় কেন?
তোমার চাইতেও
আমি আমার দেশকে ভালোবাসি
আমি তোমার—
তুমি আমার ভালোবাসা
সমস্ত পৃথিবীর ভালোবাসা
এবং—
আমার জীবনের চাইতেও
তোমাকে আমি বেশি ভালোবাসি
হে আমার রূপসী বাংলা।
সাথীরা আমার,
বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এটা সত্যিই এই রূপসী বাংলাকে আমি প্রাণের চাইতেও ভালোবাসি। তাই আজ আমার প্রশ্ন : কেন আমি আজ বন্দিশালায়? কেন ভারত সরকার এ হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো? আমি জানি, পৃথিবীতে সমস্ত কেনর উত্তর এত তাড়াতাড়ি পাওয়া যায় না। কিন্তু নিশ্চিত যে, আমাদের পুতুল সরকার জবাব না দিলেও মহাকালের কষ্টিপাথরে এর বিচার একদিন হবেই।
সবকিছু এক্ষেত্রে গুলিয়ে ফেলার আগে আমার স্মৃতিচারণ লিখতে দিন। আমার মনে হয়, এই স্মৃতিমন্থন একটা পূর্ণাঙ্গ গল্পের রূপ নিতে পারে। স্মরণ রাখবেন, এটা আমার ক্ষীণ স্মৃতিমন্থনের ফলশ্রুতি। একজন গরিব সৈনিক ছুটিতে এসেছিল। ছুটি থেকে মুক্তি সংগ্রামে। তারপর? তারপর তার গন্তব্যস্থান বন্দিশালা অথচ এই বাংলাদেশ স্বাধীন, সার্বভৌম...।*
* মেজর জলিল রচনাবলী থেকে পুনর্মুদ্রিত। সংক্ষেপিত
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।
১ম ধাপঃ
দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি
গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন
জানা আপুর আপডেট
জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।
বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন
বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।
এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন
অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!
দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন