somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন প্রত্যাশা

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমান সাংগঠনিকভাবে দেশের বৃহত্তর বিরোধীদলের ‘দ্বিতীয় ক্ষমতাশীল’ ব্যক্তি। তিনি প্রায় ১৫ মাস দেশের বাইরে। আমার বয়সের অর্ধেক সময় কেটেছে প্রবাসে। সেই অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, দেশের ভেতরে বাস করে দেশকে যেভাবে দেখা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি নৈর্ব্যক্তিকভাবে দেখা সম্ভব দেশের বাইরে থেকে। দীর্ঘ ১৫ মাসে তারেক নিশ্চয়ই টেমস নদীর পাড়ে বসে বঙ্গোপসাগর পাড়ের ভূখণ্ডের স্বপ্নমুখী জনগোষ্ঠীর স্বপ্নভঙ্গের ট্রাজিক লোকগাঁথা পাঠ করেছেন। প্রবাসীরা দেশ থেকে দূরত্বে থাকলেও কখনোই দূরে থাকে না। সারাজীবন দেশের ভেতরে বাস করে যেভাবে জনতার প্রত্যাশা ও প্রত্যাশা ভঙ্গ তারেকের চোখে ধরা পড়েছিল, মাত্র কয়েক মাসের প্রবাস জীবনে নিশ্চয় তা অন্যভাবে ধরা পড়ছে। আশা করছি, দেশে ফেরার পর তিনি অসহায় জাতির প্রত্যাশা পূরণের সংগ্রামে তাদের পাশে থাকবেন। ক্ষমতাশীল নয় দায়িত্বশীল হয়ে উঠবেন।

আমি এবং তারেক বয়সে সমসাময়িক। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ নিয়েছি। দূর থেকে ক্যাম্পাসে তাকে দেখেছি। কখনো কাছে যাইনি। যেতে চাইনি। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাটিতে দাঁড়িয়ে তাকে দেখে ভেবেছি, যে দেশের মন্ত্রী, আমলা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে একজন পুলিশ অফিসারের ছেলে-মেয়ে পর্যন্ত বিদেশে পড়াশোনা করে, সেখানে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি আর প্রধানমন্ত্রী বাবা-মায়ের সন্তান হয়ে তিনি কেন আমাদের কাতারে? আজ প্রবাসে বসে তারেক রহমান কি কখনো হিসাব মিলিয়ে দেখেছেন, যে বাবা-মায়ের সন্তান তিনি তাদের দেশপ্রেম আর আদর্শ কতটুকু ধারণ করতে পেরেছেন?

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠপুত্রের বিরুদ্ধে ১৫টিরও অধিক মামলা চলমান। প্রবাসে বসে নয়, দেশে ফিরেই তাকে প্রমাণ করতে হবে অভিযোগগুলো সত্য না মিথ্যা। সময় বড় বলবান। প্রবাসের দিনগুলো যত দীর্ঘ হবে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো ততই পল্লবিত হতে থাকবে। প্রতিষ্ঠিত হতে থাকবে। তারেকের এখন দেশে ফেরা প্রয়োজন। আর সে ফেরা যেন হয় গৌরবের। অহংকারী। তিনি পোড় খাওয়া জীবন থেকে যদি কোনো উজ্জ্বলিত পাঠ গ্রহণ করে থাকেন তা যেন তার জীবনকে মহিমান্বিত করে তোলে। কোনো দুর্নীতিবাজ, গণবিরোধী আর দুর্বৃত্ত নয়, এই সম্ভানাময় তরুণের বন্ধু হোক দেশের আলোকিতজন। শুদ্ধজন। শুভবুদ্ধির মানুষ।

একটি কথা নিশ্চয় নির্বাসিত এই রাজনীতিকের অজানা নেই যে, দেশে রাজনীতিতে সক্রিয় খালেদা জিয়া ক্ষমতাসীনদের কাছে যতটা না ‘ভীতিকর’ তারচে প্রবাসে নির্বাসিত, রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় তারেক রহমান তাদের কাছে অনেক বেশি ‘রাজনৈতিক হুমকি’। এজন্যই বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের পর অজস্র ‘দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত আসামি’ খালেদা জিয়া দলের চেয়ারপারসন হলে ক্ষমতাসীনরা নিশ্চুপ থেকেছে অথচ তারেক দলের কো-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীসহ সাংসদ-মন্ত্রীরা পর্যন্ত মাঠ গরম করে তুলেছেন। মিডিয়া কাঁপিয়েছেন। কোনো মাামলায় অভিযুক্ত হওয়া কখনোই প্রমাণ করে না সে অপরাধী। যতক্ষণ না তা প্রমাণিত হয়। মামলায় অভিযুক্ত হয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, মন্ত্রী এবং সাংসদ হওয়া গেলে একটি দলের কো-চেয়ারম্যান হওয়া যাবে না কেন? রাজনীতি করা যাবে না কেন?

প্রধান বিরোধীদল বিএনপির নেতাকর্মীরা স্বীকার করুন আর না করুন, প্রবাস চোখে দেশকে দেখার কারণে তারেক নিশ্চয়ই অস্বীকার করবেন না যে, বিরোধীদল হিসেবে বিএনপির যেটুকু দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল তা করতে পারছে না। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র ২৯টি আসন নিয়ে বিরোধীদল হিসেবে বিএনপি সংসদে এবং সংসদের বাইরে কোথাও প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না। এছাড়াও দলের অভ্যন্তরীণ নানা সংকটেও দলটির রাজনৈতিক অস্তিত্ব চ্যালেঞ্জমুখী। সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিরোধীদলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই ভূমিকা বিএনপি কতটুকু পালন করছে তা এখন আলোচনায় উঠে আসছে। যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশেই বিরোধীদল যদি সংসদে ও সংসদের বাইরে শক্তিশালী ভূমিকা পালন না করে তাহলে সরকার ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে স্বেচ্ছাচারী। অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কানাডাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধীদল ‘ছায়া সরকার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। বিরোধীদল সরকারের সকল কার্যক্রমের ওপর চাপ তৈরি করে রাখে। সরকারকে স্বেচ্ছাচারী হতে দেয় না। বাংলাদেশে বিরোধীদলের সকল কার্যক্রম এখন সংবাদ সম্মেলন আর মিডিয়ায় দেয়া বিবৃতির ভেতরে সীমাবদ্ধ। এর থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ সম্ভবত রাজনৈতিক মাঠে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন।

লেখক-- আকিদুল ইসলাম, সিডনি থেকে:
Click This Link
২০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×