somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পলাশী ট্রাজেডির ২৫২ বছর

২৪ শে জুন, ২০০৯ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বামে- ভারতের মুর্শিদাবাদে পলাশী যুদ্ধক্ষেত্রে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সমাধি, ডানে- মীর জাফরের ভগ্ন প্রাসাদ।


১৭৫৭ সালের ২৩ জুন মুর্শিদাবাদের পলাশীর আম বাগানে ইংরেজদের সাথে তিন বিশ্বাসঘাতক সেনাপতির কারণে এক বেদনাবহ ও কলঙ্কময় যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ঘটে। সে সাথে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। শুধু বাংলায় নয়, সারা ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের সূচনা হয়।

বিভিন্ন ইতিহাসবিদের লেখা থেকে জানা যায়, বণিক বেশে আসা ইংরেজরা দেশীয় রাজাদের নানাভাবে রাজ্য লাভে প্রলুব্ধ করতে থাকে। দূরদর্শী নবাব আলিবর্দী খাঁ ইংরেজ বণিকদের দুরভিসন্ধি বুঝতে পারেন। তিনি মৃত্যুর আগে বাংলার ভাবি নবাব তাঁর দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলাকে ইংরেজদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে এবং তাদের দমনের উপদেশ দিয়ে যান। সিংহাসন লাভের আসায় সিরাজের খালাম্মা ঘসেটি বেগম ইংরেজদের সাথে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে ঘসেটি বেগমের দেওয়ান রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণবল্লভ কলকাতায় ইংরেজদের কুঠিতে আশ্রয় নেয়। তরুণ নবাব কলকাতা কুঠির প্রধান ড্রেককে অনুরোধ করেন কৃষ্ণবল্লভকে ফেরত দিতে। কিন্তু ড্রেক নবাবের অনুরোধ অগ্রাহ্য করে। এতে নবাব ক্ষুব্ধ হন। তিনি কলকাতা ও কাশিমবাজার কুঠি আক্রমণ করে দখল করে নেন।

ইংরেজদের পরাজয়ের কাহিনী মাদ্রাজ পৌঁছলে কর্নেল ক্লাইভ ও এডমিরাল ওয়াটসন বাংলায় এসে ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পাততে থাকেন। তারা সেনাপতি মীর জাফর আলি খান, ধনকুবের জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ প্রমুখের সাথে হাত মিলায়। অপর সেনাপতি ইয়ার লতিফও নবাবি পাওয়ার আশায় ইংরেজদের সাথে গোপনে আঁতাত করতে থাকে। ১৯৫৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ইংরেজরা নবাবের সাথে এক সন্ধিতে অঙ্গীকার করে তারা গোলযোগ ও শান্তিভঙ্গ করবে না। বণিকের মত আচরণ করবে। নবাব তাদের প্রতি কোন বৈরি মনোভাব দেখাবেন না। কিন্তু ইংরেজরা চুক্তি ভঙ্গ করে চন্দননগরে ফরাসিদের কুঠি আক্রমণ করে দখল করে নেয়। নবাব সিরাজউদ্দৌলা
ইংরেজদের দুরভিসন্ধি বুঝতে পারেন। তিনি পলাশীতে সৈন্য সমাবেশের জন্য রাজা দুর্লভ রামকে নির্দেশ দেন।
ঊভয় পক্ষ পলাশীর দিকে এগুতে থাকে। ক্লাইভ ১৭ জুন কাটোয়া দখল করে ২২ জুন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। ঐ দিন রাতেই তিনি পলাশীর আম বাগানে পৌঁছে শিবির স্থাপন করেন। নবাবও ঐদিন ইংরেজদের পৌঁছানোর ১২ ঘন্টা আগে পলাশীতে শিবির স্থাপন করেন। নবাবের পক্ষে ৩৫ হাজার পদাতিক ও ১৫ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য মোতায়েন করা হয়। বুরুজে বুরুজে ৫৩টি কামান বসানো হয়। ইংরেজদের পক্ষে ৯শ’ ইউরোপীয় সৈন্য, একশ’ তোপাসি ও ২১শ’ সিপাহি ছিল মাত্র। কিন্তু দুঃখের বিষয়, নবাবের ৪৫ হাজার সৈন্যের মধ্যে ৩৫ হাজার ছিল তিন বিশ্বাসঘাতক সেনাপতির অধীন। সকল সৈন্য পরিখার মধ্যে শিবিরে শিবিরে অবস্থান
নেয়। নবাব সিরাজউদ্দৌলা স্বয়ং যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান করেন। ২৩ জুন ভোরে নবাবের সেনাবাহিনী পলাশীর প্রান্তর প্রায় বেস্টন করে অবস্থান নেয়। ফরাসি সেনাপতি সিঁফ্রে বা হান্টের নেতৃত্বে কিছু সৈন্য আম বাগানের কাছেই বড় পুকুর পাড়ে অবস্থান নেয়। এদের পিছনে মীর মদন এবং তার পিছনে মোহনলাল তার সেনাসহ অবস্থান নেন। আর বিশ্বাসঘাতক সেনাপতি মীর জাফর, দুর্লভরাম ও ইয়ার লতিফের অধীনস্থ সৈন্যরা সুসজ্জিত অবস্থায় দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে শুরু করে পলাশীর আম বাগান পর্যন্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে ছিল।

২৩ জুন সকাল ৮টায় যুদ্ধ শুরু হলে ফরাসি সৈন্যরা প্রথম কামানের গোলা বর্ষণ করে। তিন ঘন্টা যুদ্ধ চলে। এসময় ইংরেজরা সুবিধা করতে পারে না। তারা আম বাগানের ভিতর আশ্রয় নেয়। ক্লাইভ রাতে আক্রমণের ফন্দি আঁটে। প্রবল বৃষ্টিতে নবাব পক্ষের গোলাবারুদ ভিজে যায়। এটি ছিল নবাবের ভাগ্য বিপর্যয়ের অন্যতম কারণও। সেনাপতি মীর মদন একদল অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে ইংরেজ সেনাদের উপর তীব্রবেগে আক্রমণ চালান। শত্রুর গোলার আঘাতে মীর মদন গুরুতর আহত হন। এ সংবাদে নবাব বিচলিত হয়ে পড়েন। নবাব প্রধান সেনাপতি মীর জাফরকে ডেকে পাঠান। নবাব এ ষড়যন্ত্রকারীর কথা বিশ্বাস করে মোহন লালকে যুদ্ধ থামাতে
বলেন। নবাবের সেনা বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এ সুযোগে ক্লাইভ নবাব শিবিরের উপর আক্রমণ চালান। বিকাল ৫ টায় নবাব শিবির দখলে নেন।

নবাব ঐদিনই রাজধানী মুর্শিদাবাদ ফিরে আসেন। ২৪ জুন স্ত্রী লুৎফুন্নেছা ও শিশু কন্যাসহ নৌকাযোগে রাজমহলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ঐদিন মীর জাফর বিশ্বাসঘাতক দলবলসহ মুশিদাবাদে উপস্থিত হন। ২৯ জুন ক্লাইভ বিশ্বাসঘাতকতার পুরস্কারস্বরূপ মীরজাফরকে নবাবের মসনদে বসান। এরপর হিরাঝিলের নবাব প্রাসাদে ঢুকে সবাই মিলে ধনাগারে লুটপাট শুরু করে। তারা নবাবের ধনাগার থেকে ৩২ লাখ স্বর্ণ মুদ্রা, এক কোটি ৭৬ লাখ রৌপ্য মুদ্রা, দুই সিন্দুক ভরা স্বর্ণপিন্ড, চার বাক্স হিরা-জহরত ও দুই বাক্স মণিমুক্তা লুট করে। আর নবাবের গোপন ধনাগার থেকে ৮ কোটি টাকা লুট করে দেশীয় বিশ্বাসঘাতকের দল। এ টাকার খোঁজ ইংরেজরা
জানত না।

রাজমহল যাওয়ার পথে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত নবাব দানা শাহ নামে এক ফকিরের আশ্রয় নেন। কিন্তু এ লোভি ফকিরও নবাবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ধরিয়ে দেয়। ২৭ জুন বন্দি নবাবকে মুর্শিদাবাদে আনা হয়। মীরজাফরের পুত্র মিরনের নির্দেশে মোহাম্মদী বেগ ৩ জুলাই নবাবকে হত্যা করে। এরপর নবাবের মৃত দেহ হাতির পিঠে উঠিয়ে সারা মুর্শিদাবাদ শহর ঘুরিয়ে অমর্যাদাকর অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। রাতের আঁধারে নবাবদের বিশ্বাসী খাদেম হোসেন খাঁ খোশবাগে তাঁকে সমাহিত করেন। সেখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। পাশে শায়িত আছেন কন্যা
ও স্ত্রী।



তথ্যসূত্র : ইত্তেফাক
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০০৯ দুপুর ১:৪৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×