আধুনিক সিরিয়া, লেবানন এবং ইসরাইলের তীরভূমি প্রাচীনকালে ফিনিসিয়া(Phoenicia) নামে পরিচিত ছিল। আগে লেবানন পর্বতমালা এবং পশ্চিমে ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী স্থান এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীকালের কেনান নামে পরিচিত ভূমিই ফিনিসিয়া। এ নামটি গ্রিকদের দেয়া। তবে কেনান অঞ্চলের বলে তারা কখনো কখনো কেনানি নামেও পরিচিত। এমনকি তাদের প্রধান নগর সিডোন থেকে এরা সিডোনীয় নামেও অভিহিত হয়। তাদের ভাষা সেমিটিক ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
ফিনিসীয়রা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন নগররাষ্ট্রে বাস করতো। নগরগুলো ঐক্যবদ্ধ করে তারা কোনো একক বড় রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারেনি। সমুদ্রতীরের বাসিন্দা হিসেবে তারা দক্ষ নাবিক এবং নৌচালনায় বিশেষ পারদর্শী ছিল। তারা ব্যবসা-বাণিজ্যেও ছিল পারঙ্গম। বাণিজ্যের স্বার্থে প্রাচীন মিসরের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। ফলে তারা পারস্পরিকভাবে একে অপরকে সাংস্কৃতিক দিকেও প্রভাবিত করেছিল। ব্যাবিলনের সঙ্গেও তাদের বাণিজ্যিক লেনদেন ছিল। ব্যাবিলনীয় সভ্যতা ফিনিসীয়দের খুবই প্রভাবিত করে। তারা ব্যাবিলনীয়দের কিউনিফর্ম লিখন পদ্ধতি গ্রহণ করে এবং পুরাকাহিনীগুলো সারা দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় বাণিজ্য করতে গিয়ে ছড়িয়ে দেয়, যেমন মহাপ্লাবনের কাহিনী।
খ্রিস্টপূর্ব এগারো শতক থেকে ফিনিসীয়রা স্বাধীনভাবে প্রায় আড়াইশ’ বছর অপ্রতিহত ক্ষমতা ভোগ করে। সারা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল তাদের প্রভাবাধীনে চলে আসে। জিব্রাল্টার প্রণালির উভয় পার্শ্ব পর্যন্ত এ প্রভাব বিস্তৃত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ছয় শতকে তারা সম্ভবত আফ্রিকা পরিভ্রমণ করে। আফ্রিকার উত্তরে অবস্থিত কার্থেজ ছিল তাদের প্রধান উপনিবেশ এবং বিশাল বাণিজ্যকেন্দ্র। ফিনিসীয়দের উপনিবেশগুলোও মূল মাতৃনগরগুলোর মতো করেই তৈরি হতো। বহু কারিগর-শিল্পশ্রমিক, ব্যবসায়ী ও নাবিক সেখানে বসবাস করতো। ফিনিসিয়ায় অবস্থিত সিডোন, টায়ার ইত্যাদি নগর বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে তৎকালে জগদ্বিখ্যাত হয়ে ওঠে। মদ, তেল, সিডার কাঠ, বস্ত্র, কাচ এবং ময়ূরী রঙ তাদের প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ছিল।
খ্রিস্টপূর্ব নয় শতকের মাঝামাঝি অ্যাসেরীয়রা ফিনিসিয়ার নগরগুলো দখল করে নেয়। পরে এগুলো অধিকৃত হয় ব্যাবিলনীয়দের দ্বারা। এর পরে পারসিকেরা তাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে। তবে পারসিকদের সময় তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং নৌ-দক্ষতার কাজকর্ম পুরোদমে চলে। অতঃপর ফিনিসীয়রা গ্রিকদের অধীনে চলে যায় এবং গ্রিক ভাষা ও সংস্কৃতি তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। ৬৪ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা ফিনিসীয়দের আবাসস্থলকে প্রদেশে পরিণত করে এবং বৈরুত নামক স্থানে একটি আইন বিদ্যালয় স্থাপন করে। খ্রিস্টীয় ছয় শতকের দিকে আরবরা ফিনিসিয়া অঞ্চল দখল করে। বিভিন্ন দেশের দ্বারা এভাবে বিজিত হতে হতে ফিনিসীয়রা তাদের আদি বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে।
কিন্তু বিশ্বে তাদের বিশেষ দুটি অবদান অনস্বীকার্য :
এক, সভ্যতার ধারক হিসেবে নানা স্থানে তা বিস্তৃত করা এবং দুই তাদের অক্ষর থেকে গ্রিক অক্ষরের উদ্ভব, যা থেকে পরবর্তী রোমান এবং ইউরোপীয় বর্ণমালার উৎপত্তি।
আলোচিত ব্লগ
আমার কিছু ভুল!
১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...
অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা
আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************
যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কুড়ি শব্দের গল্প
জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!
সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন