ছলে বলে কৌশলে, কতো কথাই না আমরা বলি। কখনো গা বাঁচাতে, কখনো পিঠ বাঁচাতে। যার বলা উচিত নয় সেও বলি, যার বলা উচিত সে একটু বেশি করে, রঙে ঢঙে মসলা মিশিয়ে বলি। তবে বলার সময় একবারও ভাবি না যা বলছি তা আসলে আমার বলা উচিত কিনা কিংবা আমার বলা কথাটা শ্রোতার কাছে কি প্রভাব ফেলতে পারে। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে এখন শুধু দেয়ালের না বাতাসেরও কান আছে। আর আমাদের বলা কথাগুলো বাতাসে ভেসে লোক-লোকান্তর পার হয়ে সবার কানেই পৌছায়।
যদি আমার দায়িত্ব হয় শুধুই বলা, কোনো কিছু ভেবে না ভেবে, জেনে না জেনে তাহলে বলেই যাই সমস্যা কি তাতে।
এই বলা বলির কথাগুলো আমরা শ্রোতারা কখনো মনে রাখি আবার কখনো ভুলেও যায়।
যা হোক এবার ভনিতা বাদ দিয়ে বলা শুরু করি। কবে থেকে করবো, কাদের নিয়ে করবো, কি নিয়ে করবো। বলতে যখন চাই তখন আমাদের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন সময়কার কথাগুলোকে একটু মনে করার চেষ্টা করি বা বলি।
তবে ব্লগার ভাইয়েরা অনেক পুরাতন কথা হয়তো ভুলে গেছি যদি কারো মনে থাকে একটু মনে করিয়ে দিবেন নিজ দায়িত্বে।
আমাদের দেশে রাজনৈতিক ময়দানে একে অন্যের গায়ে কাদা ছুড়াছুড়ি করতে অনেক কথাই বলি। এমন কিছু কথা নিয়েই বলবো।
প্রথম কথা যেটা মনে পড়ে, এরশাদ সাহেবের শাসনামলে বাংলাদেশের কোনো একজন রাজনীতিবিদ বলেছিলেন যারা এরশাদের সঙ্গে নির্বাচন করবে তারা জাতীয় বেঈমান হবে। যাহোক পরে এই কথা যিনি বলেছিলেন তিনিই নাকি এরশাদের সঙ্গে নির্বাচনে গেলেন। এমন কথা কেনো বলতে হবে বুঝি না!!!!
দ্বিতীয় কথা যেটা মনে পড়ে, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ৯১ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত তখন তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে টানা অনাস্থা প্রকাশ করলেন। হরতাল-অবরোধও হলো। কিন্তু তিনি শুধু বলেই চললেন দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন মেনে নেয়া হবে না। মানলেনও না। কিন্তু তখন তিনি কেনো ভাবেননি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার অগণতান্ত্রিক বা এর মাধ্যমে অপশক্তি ক্ষমতায় আসতে পারে!!?? তবে কেনো তিনি সেসময় এমন কথা বলেছেন, এখন কেনো উল্টা বলছেন? তাহলে কি তখন বুঝে না বুঝে, জেনে না জেনে বলেছেন? হতেও পারে।
আর অন্য দিকে বেগম জিয়া বললেন, পৃথিবীতে শিশু ও পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ হয় না। তাহলে এখন কেনো তিনি সেই শিশু ও পাগলের দাবি করছেন। তখনও কি তিনি জানতেন না আসলে এই শিশু ও পাগলের প্রয়োজন তারও হতে পারে??
এরপর যা হোক ৯৬ থেকে ২০০১ সাল ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এসময় কতো কথায় না শুনলাম বা বললাম আমরা। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে দাম্ভীকতার সঙ্গে বললেন, আমি কথা দিচ্ছি, আবারো কথা দিচ্ছি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে গেলেও কখনো হরতাল করবে না। আবার বললেন, ২০০১ সাল হতে ২০০৬ সাল পর্যন্তই নাকি তিনি রাজনীতি করবেন। এরপর তিনি অবসরে যাবেন। তার প্রথম কথাটা তিনি রক্ষা করতে পারেনি ২০০১ থেকে ০৬ পর্যন্ত। হরতাল তিনি দিয়েছেন। হয়তো হরতালই তাকে বাধ্য করেছে দেয়ার জন্য। হতেও তো পারে। আর অবসরের ব্যাপারটা বাদই দিলাম। এখন আসেন ঐসময় বিএনপি নেতাদের কথায়।১০ ট্রাক অস্ত্র আটক হলো। শীর্ষ স্থানীয় মন্ত্রীরা বললেন নাশকতা করতে আওয়ামী লীগই এই অস্ত্র এনেছে। কিন্তু পরে পাওয়া গেল অন্য তথ্য। আবার বাবর সাহেব সংসদে বললেন ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময় শেখ হাসিনা নাকি ভেনেটি ব্যাগে করে গ্রেনেড এনেছিলেন। কি গজবমুলক আজব কথা। একজন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী যদি এমন কথা বলেন স্বাভাবিক ভাবে সে কথাগুলো গুরুত্ব রাখে। কিন্তু কথাগুলো বলার সময়কি গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেছিলেন। এরপর জজ মিয়া, ব্যারিস্টার মিয়া বহুত কিছুরই জন্ম হলো।
আবার সন্ত্রাসীদের গুলিতে শিশুর মৃত্যুতে আলতাফ সাহেব বললেন আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে। হা হা হা। কি আজব সান্ত্বনা ও সমাধান।
এরপর যা হোক নির্বাচন ঘনিয়ে এলো। তখন কে কার সঙ্গে জোট বেঁধে নামতে পারে সেই প্রতিযোগিতায় শুরু হলো। খবর আসলো এরশাদ সাহেব নাকি বিএনপির সঙ্গে জোট করতে তারেকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তখন আওয়ামী নেত্রী বললেন চোরে চোরে এক হচ্ছে। ফলাফল দেখা গেল ২০০৮ এর নির্বাচনে। চোর কিভাবে সাধু হলো। যা হোক। এরপর শুরু হলো কথার ফুলঝুড়ি। দেশের প্রথম ধাক্কাটা আসলো বিডিআর বিদ্রোহে। দেশকে পঙ্গু করা হলো। কিন্তু কথায় পঙ্গু হয়নি আমরা। বিদ্রোহের ঘটনায় তদন্ত কমিটির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিযুক্ত হলেন ফারুক খান। তিনি নির্বিঘ্নে বলে গেলেন এই বিদ্রোহের সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, তদন্তের খাতিরে এখন বিস্তারিত বলা যাবে না। আবার সংসদে দাড়িঁয়ে কেউ একজন বললেন, খালেদা জিয়ার দুই ছেলে ও বিএনপির একজন দাড়িওয়ালা এমপি মিলে দুবাইয়ে বসে এই বিদ্রোহের পরিকল্পনা করেছেন। এব্যাপারে নাকি তথ্যও আছে। সময় হলে বলা হবে। এই কথার আর সময় কথনোই হলো না। তদন্ত হলো, ফলাফলও হলো। বিদ্রোহে দায়ী হলো সামান্য ডাল ভাত। জঙ্গীও নেই দুবাইও নেই।
এরপর আসেন পরের কথাগুলোতে। শেয়ার বাজারে বিশৃঙ্খলা নাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার রুখতেই করা হয়েছে বললেন একজন প্রতিমন্ত্রী, আবার দ্রব্যমূল্যর উর্ধ্ব গতি, সুতার দাম বৃদ্ধিতেও নাকি সেসময়কার বানিজ্য মন্ত্রী জঙ্গীবাদের গন্ধ পেয়েছিলেন।
এবার আসেন চৌধুরী আলম গুম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, বিএনপি লুকিয়ে রেখেছে তাকে। মনে করলাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথাই সত্য। তাহলে এই সত্যতার প্রমাণ তাকেই দিতে হবে। কারণ তিনি একটি দায়িত্বের ছিলেন। কোনো কথা বলার আগে তাকে ভাবতে হবে দায়িত্বে থেকে বলছি নাকি ঘুম থেকে জেগে যা স্বপ্নে দেখলাম তাই বলছি। ইলিয়াসের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা, কেউ বলছেন, নিজে নিজে গুম হয়েছেন, কেউ বলছেন ইলিয়াসের বিধবা স্ত্রী। তাদের এসব কথার পেছনে যুক্তি কি, তথ্য বা প্রমাণ কি? আমাদের মতো শ্রোতারা তো আর গোপাল ভাড়ের গল্প শুনছে না। তাদের চাই সঠিক তখ্য ও প্রমাণ। এবার আসুন সর্বশেষ কথাটা নিয়ে একটু আলোচনা করি।
সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। সরকার দাবি করছে এই বিচারে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। আবার বিরোধীরা অভিযোগ করছে সরকার সরাসরি এসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। তবে বিচারে হস্তক্ষেপ হচ্ছে কি হচ্ছে না তা সবার কথা ও কাজে প্রমাণ হবে। একজন বলছেন ডিসেম্বর নাগাদ ৩ থেকে ৪ জনের বিচার শেষ করা হবে। কেনো? আপনি কি বিচারেরর সঙ্গে সম্পৃক্ত কেউ? আপনি বলার কে কবে বিচার শেষ করবেন। বিচারপতি কি আপনার কথায় বিচার করবে? বাদ সেসব কথা।
দুই এক দিন আগে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হলো, বেশি ঝামেলা করলে সরাসরি শরীয়া আইনে বিচার, কিসাস কায়েম করা হবে। এতো সহজে আপনি এমন কথা কিভাবে বললেন। তিনি কি মনে করেন না, তার মুখের এক একটা কথা এক একটা প্রতিশ্রুতি, ওয়াদা বা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। তিনি যে আইনের কথা বললেন সে আইন কি আমাদের সংবিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। কিংবা তিনি কি মনে করেন, তিনি চাইলে এই বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ পরিবর্তন হতে পারে। তাই যদি হয়, তাহলে বিরোধীদের কথা তো সত্য হয়ে যাবে। এমন বক্তব্যের একজন ব্যাখ্যাও দিলেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই ব্যক্তিটি নাকি কথা ছলে শরীয়া আইনের কথা বলেছেন। হায়রে ছল করে বলা রে।