somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিশ্রুতির বাজারে একগাদা বিলাপ

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১২০০ মানুষের লাশের উপর দাঁড়িয়ে মেয়র নির্বাচন নিয়ে চলছে অবিরাম লাফালাফি। প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভেসে যাচ্ছে নগরী। জড়পদার্থ আর পশুপাখি মার্কা নিয়ে কাড়াকাড়ি শেষে একেকটা নামের পাশে জুটেছে দেয়াল ঘড়ি, টিফিন বক্স, হাতি ইত্যাদি আজব চিহ্ন। হাসিমুখে ডান হাত, বাম হাত তুলে সুযোগ্য প্রার্থীরা তাদের অবস্থান বুঝিয়ে দিচ্ছেন, আত্ম-জয়গানে ভরিয়ে তুলছেন রাজপথ। রাজপথের আনাচে-কানাচে বাজছে নানা গানের ভোট-প্যারোডি। বিভিন্ন ইন্টারেক্টিভ মার্কেটিং পলিসি নিয়ে মাঠে নামা মানুষগুলো জনগণের ভবিষ্যৎ চিন্তায় ভয়ানক মগ্ন, মিটিংয়ে-মিছিলে ভাসছে ভবিষ্যৎ গড়ার প্রতিজ্ঞা। হে মানুষ, ভবিষ্যৎ গড়তে গেলে অতীত জানতে হয়। দূর অতীতে যেতে বলছিনা, অত কষ্ট করার দরকার নেই, নিকট অতীতটাতেই ঘুরে দেখুন না একবার।

২৪ এপ্রিল, ২০১৩
বাসায় বসে ছিলাম, সংবাদ মাধ্যম মুখরিত হল ইতিহাসের কাল ছোপে, ধ্বসে পড়ল রানা প্লাজা। আমি আর কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম যাওয়া লাগবে ওখানে যেভাবেই হোক। ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে কিছুই যায় আসে না মৃতপ্রায় মানুষগুলোর। সহায়-সম্বল যা যোগাড় করতে পেরেছিলাম নিয়ে চলে গেলাম সাভার। সাভার ঢুকার আগেই থমকে দাঁড়াতে হল। পচা মাংসের উৎকট গন্ধ ভাসছে বাতাসে। এক বন্ধু বুদ্ধি করে আগে থেকেই মাস্ক নিয়ে এসেছিল, পড়ে নিলাম। সরাসরি চলে গেলাম এনাম মেডিক্যাল কলেজের দোরগোড়ায়। পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারছিলাম না। এ কেমন বাতাস, মানুষের হুড়াহুড়িতে সাক্ষাৎ নরক দেখলাম চোখের সামনে। এক বড় ভাইয়ের স্ত্রী এনাম মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত ডাক্তার। কটকটে লাল চোখ নিয়ে নরকের দ্বারপ্রান্তে স্বাগত জানালেন তিনি। আমরা হতবিহবল, “কি করব?”
তারপর যা হল আর বিস্তারিত লিখতে চাইনা, রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপের সামনে দাঁড়িয়ে মহাকালের বহুমাত্রিক শূলে বিদ্ধ হতে লাগলাম একের পর এক। নাকে আর গন্ধ লাগছিল না; আক্ষেপ, দুঃখের এক মহাজাগতিক সমীকরণ বুকে নিয়ে ঘরে ফিরে এলাম অবশেষে। নাকে ঐ গন্ধ লেগেই থাকল- মরা লাশের গন্ধ। এখনো মাঝে মাঝে লাগে ওই তীব্র গন্ধ। সবকিছু ভুলতে নেই। আমি ভুলতেও চাইনা। সেদিনের ঐ মাস্ক এখনও রেখে দিয়েছি। মাঝে মাঝে বের করে দেখি। পৈশাচিক সত্যের গাঢ় সাক্ষী হয়ে ওটা জাতীয় সত্যের অবিরত জানান দেয়, প্রশ্নবিদ্ধ করে আমাকে- "মানুষ?"

জানতাম, সবাই ভুলে যাবে। তবুও আমরা একটা তহবিল গঠনের চেষ্টা করি। যারা পরলোকগত হয়েছেন, তাদেরকে নিয়ে ভেবে কোন সমাধা হবেনা, তবে যারা এখনো আছেন , ঐ ১২০০ লাশের পরিবারকে দু’মুঠো অন্ন জুগানোর কথা ভেবেছিলাম। দুই একদিন সাড়াও পেয়েছিলাম বেশ। তারপর ধীরে ধীরে ঢিমাতালে হারিয়ে গেল ঐ অতল গহবরে যেখানে হারিয়ে যায় এ জাতির সব বিপর্যয়, যেখানে হারিয়ে যায় হলমার্ক কেলেঙ্কারী, যেখানে হারিয়ে যায় শেয়ার বাজারের নিষ্ঠুর পতন, যেখানে হারিয়ে যায় তাজরীন ফ্যাশনের গগনবিদারী আর্তনাদ।
আমরাও আর উদগ্রীব হলাম না। কী হবে এগুলা করে? গুলশান এলাকা দিয়ে চলুন যাতায়াত করি একদিন। রাজকীয় গাড়িবহরে কিছু সত্য খুঁজে বেড়াই। রাজকীয় একেকটা গাড়ির দামে ঐ ১২০০ পরিবারের ১ মাসের থাকা খাওয়া দিব্যি চলে যায়। তবে উনারা ঐ ১২০০ মানুষকে নিয়ে চিন্তিত নন। নিজের জন্য, সন্তানের জন্য, বৌ-এর জন্য চাই আলাদা আলাদা গাড়ি। ভোগ্যতার ইতিহাসের নগ্নসাক্ষী এদেশের একেকজন বুর্জোয়া শুয়োর-সন্তান সেদিন কিছুই করেননি। সব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রদের জমানো টাকায় এসেছিল ঔষুধ, নিজের শরীরের রক্তে থলী ভরেছিল সাধারন মানুষ।
যাই হোক, মরা ঘটনাকে গলা টিপে আরো গন্ধ বানাতে চাই না। প্রতিশ্রুতির বাজারে মিথ্যা হলেও আশা করেছিলাম রানা প্লাজায় মৃত শ্রমিক ভাইদের কথা আসবে, আসবে তাদের পরিবার-পরিজনদের কথা। আসেনি, কষ্ট লাগল। তাই আজাইরা বিলাপ করলাম। এতক্ষণ অবধি কষ্ট করে যারা পরেছেন, ধন্যবাদ।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×