
আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে ক্ষমতা আর নৈতিকতার মধ্যে দূরত্ব ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতার বড় অংশ এখন সেইসব মানুষের হাতে, যারা সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে হত্যাযজ্ঞ, শোষণ ও ধ্বংসের সাথে যুক্ত। প্রশ্ন জাগে—খুনিরাই কি সত্যি গোটা বিশ্ব শাসন করছেন?
যুদ্ধের ব্যবসা, মৃত্যুর বাজার
গত কয়েক দশকে দেখা গেছে, বড় শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো সরাসরি যুদ্ধ শুরু করেছে বা অন্যদের যুদ্ধকে উস্কে দিয়েছে—নিজেদের অস্ত্রশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এবং প্রভাব বিস্তার করতে। একটি দেশের যুদ্ধ অন্য দেশের অর্থনীতির চাকাকে ঘুরিয়ে দেয়, আর মানুষের মৃত্যু পরিণত হয় কেবল সংখ্যা ও পরিসংখ্যানে। “Collateral damage”—এই সুন্দর শব্দটি দিয়ে তারা লাশের স্তূপ ঢেকে দেয়, যেন মানুষের মৃত্যু স্বাভাবিক, গ্রহণযোগ্য।
অর্থনীতির রক্তচোষা খেলা
বৈশ্বিক অর্থনীতি আজ অনেকটাই বড় কর্পোরেট আর আর্থিক কারসাজিকারীদের হাতে বন্দি। তারা এক হাতে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেয়, আর অন্য হাতে গোপনে এমন নীতি চাপিয়ে দেয়, যা গরিব দেশগুলোকে চিরকাল ঋণ ও দারিদ্র্যের ফাঁদে আটকে রাখে। কৃষক হারায় জমি, শ্রমিক হারায় ন্যায্য মজুরি, অথচ ধনী দেশ ও কোম্পানিগুলো আরও ধনী হয়।
রাজনীতি: ক্ষমতার আড়ালে অপরাধ
ক্ষমতাসীন অনেক শাসক বা প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজেদের সিংহাসন রক্ষার জন্য বিরোধীদের হত্যা, দমন বা গুম করতে দ্বিধা করেন না। জনগণের কণ্ঠরোধ, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, এবং ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে তুলে তারা নিজেদের অপরাধকে আইনসম্মত করে তোলে।
বিশ্বব্যবস্থা: ন্যায় নাকি প্রহসন?
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় অসহায় বা পক্ষপাতদুষ্ট মনে হয়। বড় শক্তিধর রাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা বা প্রভাব থাকলে অন্যায়ের বিচার থেমে যায়। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরা শাস্তি পায় না, বরং আন্তর্জাতিক মঞ্চে সম্মানিত অতিথি হিসেবে স্বাগত হয়।
মানুষের করণীয়
সব মানুষ খুনি নয়, সব নেতা শোষক নয়—এ কথা সত্য। কিন্তু যতদিন সাধারণ মানুষ অন্যায় ও হত্যার বিরুদ্ধে একসাথে দাঁড়াবে না, ততদিন খুনিদের রাজত্ব চলবে। পরিবর্তন আসে মানুষের সচেতনতা, ঐক্য ও সাহসিকতা থেকে। প্রশ্ন হলো—আমরা কি সেই পথে হাঁটতে প্রস্তুত? নাকি নিঃশব্দ দর্শক হয়ে যাব, যতক্ষণ না অন্যায়ের আগুন আমাদের দরজায় এসে পৌঁছায়?
উপসংহার: ইতিহাস সাক্ষী—যেখানে ন্যায়হীনতা চুপচাপ মেনে নেওয়া হয়, সেখানে খুনিরা শুধু টিকে থাকে না, তারা সম্রাট হয়। পৃথিবীকে বদলাতে চাইলে প্রথমে বদলাতে হবে আমাদের নীরবতা।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


