somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রং ধরেছে পঞ্চগড়ের কমলায়

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
- See

গাছে গাছে কাঁচা আর আধাপাকা থোকা থোকা কমলা ঝুলে আছে। বাগানের বেশ কিছু গাছ কমলার ভারে হেলে পড়েছে। হেলে পড়া কিছু গাছকে বাঁশের ঠেকা দিযে আটকে রাখা হয়েছে। শাখা-প্রশাখা ভরে গেছে আধাপাকা কমলায়। সদর উপজেলার সাতমেড়া ইউনিয়নের ভেলকুপড়া গ্রামে করতোয়া নদীর তীর ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে ১২ বিঘার কমলা বাগান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, রংপুর বিভাগের সবচেয়ে বড় কমলা বাগান এটি। বাগানের মালিক আবুল কাশেম প্রধান আধাপাকা কমলা ছিড়তে ছিড়তে জানান যে এখনো বাজারে কমলা বিক্রি শুরু করেননি তিনি। এবারই তার বাগানে প্রথম ফল এসেছে । তাই প্রথম তোলা ফলগুলো পরিবার আর আত্মীয়স্বজনকে দিবেন। এরপর শীত গাঢ় হলে বিক্রি শুরু করবেন। কারণ শীত বাড়লে কমলার মিষ্টিও বাড়ে।
কমলাচাষী আবুল কাশেম প্রধান আরো বলেন,‘ কমলা পাকা শুরু হয়নি এখনো। রং ধরা শুরু হয়েছে। তবে নভেম্বরেই বাজারে কমলা উঠতে শুরু করবে। তার এই জমিতে কিছু হবে বলে ধারণাই ছিল না। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের লোকজন জমি দেখে কমলা লাগানোর পরামর্শ দেয়। তাদের সহযোগিতায় ২০১০ সালে শুরু করি কমলা চাষ। নদীর তীরে এই জমিতে আগে কোনো কিছু উৎপাদন হতো না। গত বছর অল্প কিছু গাছে ফল ধরেছিল। কিন্তু এবার বাগানের ১০৬৫টি গছের মধ্যে প্রায় ৯শ’ গাছে কমলা ধরেছে।’
অথচ খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। এক যুগ আগেও পঞ্চগড়ে কমলা একটি দুমূর্ল্যের ফল হিসেবেই ধরা হতো। কেউ অসুস্থ হলেই কমলা আনা হতো বাড়িতে। এমন দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। অধিকাংশ বাড়িতেই একটি দুটি কমলা গাছ আছে। তবে শুরুতে গৃহস্থরা শখের বসেই একটি দুটি গাছ লাগাতেন। বর্তমানে পঞ্চগড়ের কমলা ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। এই জেলার শতাধিক কমলা বাগান আর বাড়ির আঙ্গিনায় লাগানো শখের কমলা গাছে এখন হাজারো কমলা। বাড়ির ছোট শিশুটি নিজের হাতে গাছ থেকে কমলা পেরে খাচ্ছে এমন দৃশ্য প্রায়ই দেখা যাবে পঞ্চগড়ে।
গত কয়েক বছরে জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসলের স্থান করে নিয়েছে কমলা। সদর উপজেলার বামনপাড়া গ্রামের হাবিব প্রধানের বাগানে এবার কমবেশি ৫শ’ গাছে কমলা ধরেছে। একেকটি গাছে দুইশ’ থেকে এক হাজার পর্যন্ত কমলা ধরেছে। আরেক কমলাচাষী হাবিব প্রধানের সহধর্মিনী শেফালী প্রধান বলেন,‘ দুজনে মিলে (স্বামী স্ত্রী) বাগানটি করেছি। সারাদিন বাগানের পরিচর্যায় কেটে যায়। এবার কমলার সাইজ অনেক বড় হয়েছে। বাজারে ভালো দাম পাওয়া যাবে।’ তিনি জানান, চলতি নভেম্বর থেকে বজারে কমলা বিক্রি শুরু করবেন। ২০১১ সাল থেকে তিনি কমলার চাষ করছেন। গত বছর তিনি লক্ষাধিক টাকার কমলা বিক্রি করেছিলেন। আশা করছেন, এবার কমপক্ষে দুই লাখ টাকার কমলা বিক্রি করবেন।
সদর উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী বড়বাড়ি গ্রামের কলেজ শিক্ষক মো. সালাউদ্দিন প্রধান দুই একর জমিতে কমলার বাগান গড়ে তুলেছেন। চার বছর ধরেই তিনি কমলা চাষ করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড়ে শুধু খাসিয়া জাতের কমলার চাষ হয়। শীত বেশি হওয়ায় পঞ্চগড়ের মাটি ও পরিবেশ কমলা চাষের জন্য অনন্য। অনেকে বলছেন পঞ্চগড়ের কমলা সিলেটের কমলার চেয়ে ভালো। কমলার ফলন ৫ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত ধীরে ধীরে বাড়ে। ১৫ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকে এবং ২৫-৫০ বছর পর্যন্ত ফলন আস্তে আস্তে কমে আসে। ২০০৬-১১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পের অধীনে ২২৩টি বাগানে ৩৪ হাজার ৮৮৮টি কমলার চারা রোপণ করে। এছাড়া বসতবাড়ির আশেপাশে রোপণ করা হয় এক লাখ ৫৬ হাজার চারা। ১৫ হাজার কমলাচাষীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২০১১ সালের শেষের দিকে হঠাৎ করেই প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কমলাচাষীরা বিপদের মুখে পড়ে। ২০১৪ -১৫ সালে আবার সিপিপি (সাটরাস ডেভলভমেন্ট প্রকল্প) নামে এ প্রকল্প আবার শুরু হয়। প্রকল্পের আওতায় চলতি মৌসুমে ১৩৫ জন চাষীকে একশটি করে চারা দেয়া হয়েছে। সার কিটনাশক ছাড়াও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে তাদের। ৯৩৫টি বসতবাড়িতে ১২টি করে চারা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ছিটমহলেও কমলা চাষ শুরু করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ২শ’ মেট্রিক টন এবং আগামী মৌসুমে ৫০০ মেট্রিকটন কমলার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পঞ্চগড়ে কমলা নতুন ধরনের ফসল। এজন্য সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং কৃষকদের কারিগরি সহায়তা অব্যাহত রাখা দরকার।
পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক স.ম. আশরাফ আলী বলেন, 'কমলা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গড়ে ওঠা বাগানগুলোতে কয়েক বছর ধরেই কমলা ধরছে। প্রতি বছর কমলার উৎপাদন বাড়ছে। পঞ্চগড়ের কমলা অন্যান্য এলাকায় উৎপাদিত কমলা থেকে আকার, রং ও স্বাদে-গন্ধে আলাদা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৩১
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×