somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খালেদার মুখে রূপকথা!!

২৩ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিল অধিবেশনে বেগম খালেদা জিয়া যে উদ্বোধনী ভাষণ দিয়েছেন তা পাঠ করে বহুকাল পর খুব মজা অনুভব করেছি। ভাষণটি যিনিই লিখে দিয়ে থাকুন, তিনি স্বশিক্ষিত দেশনেত্রীর মুখে গ্রিক উপকথার ফিনিক্স পাখির তুলনাটি জুড়ে দিয়েছেন। আমার সন্দেহ হয় এর পেছনে ঘোস্ট রাইটার হিসেবে আমার বন্ধু শফিক রেহমানের কোন হাত আছে কিনা। তিনি কারণে-অকারণে ইংরেজি ও বিদেশী কথা ব্যবহার করে পা-িত্য ফলাতে ভালবাসেন। সুতরাং যে গ্রিক উপকথা দেশনেত্রীর জানা থাকা এবং ফিনিক্স পাখির নামের বানানটির সঙ্গেও পরিচিত থাকা সহজ নয় বলে জানি, তার মুখে ফিনিক্স পাখির উপমা তুলে দিয়ে ঘোস্ট রাইটার নিশ্চয়ই মজা পেয়েছেন এবং অন্যকেও মজা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

বিএনপির বর্তমানে যে অবস্থা তাতে কি তাকে গ্রিক উপকথার ফিনিক্স পাখির সঙ্গে তুলনা করা যায়? ফিনিক্স পাখি তো ভস্মস্তূপ থেকে বারম্বার বেঁচে উঠতে পেরেছিল নিজের সাহস ও শক্তির জোরে। বিএনপির সেই সাহস ও শক্তি কই? কিছুকাল ক্যান্টনমেন্ট, কিছুকাল জামায়াতের কাঁধে ভর করে চলতে গিয়ে আজ বিএনপির এই অবস্থা। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এখন পেশাদার সেনাবাহিনী এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। কোন সেনাপতির বা তার দলের ক্ষমতার লালসা পূর্ণ করার জন্য তারা আর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে মদদ জোগাতে রাজি নয়। অন্যদিকে জামায়াতের অবস্থা এখন নিজে বাঁচলে বাপের নাম। বিএনপির বরকন্দাজ হয়ে ক্ষমতার ভাগ লোটার সুবর্ণ সুযোগ তাদের সামনে আর নেই। বিএনপির সঙ্গে কণ্ঠি বদল করে তাদের সখ্য, সেই কণ্ঠি পরিস্থিতির চাপে এখন ছিঁড়ে গেছে।

ফিনিক্স পাখির তো ভস্মস্তূপ থেকে জেগে ওঠার শক্তি ও ইচ্ছা ছিল। বিএনপির বর্তমান অবস্থা থেকে বেঁচে ওঠার শক্তি ও ইচ্ছা আছে কি? দলের কাউন্সিল অধিবেশনে দলনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য জেনে তো মনে হচ্ছে না সেই শক্তি ও ইচ্ছা দলটির আছে। বরং মনে হয় দলটিকে ‘ভিকটিম সিনড্রোমে’ পেয়ে বসেছে। যে দলটি জন্ম থেকে গণতন্ত্রের মুখোশ ধারণ করে দেশের মানুষের ওপর স্বৈরাচারী কায়দায় অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে, হত্যা ও গ্রেনেড হামলার রাজনীতি চালিয়ে দেশ থেকে বিরোধী দলের নামনিশানা মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে, স্বাধীনতার সব মূল্যবোধ ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে, তার ইতিহাস-বিকৃত করার চেষ্টা করেছে; সেই দলের নেত্রী এখন নিজেকে এবং দল ও পরিবারকে ‘নির্যাতনের শিকার’ সাজিয়ে রোজ কাঁদুনি গাইছেন। কাউন্সিল অধিবেশনেও সেই একই কাঁদুনি তিনি গেয়েছেন।

প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ‘বক্তৃতার এক পর্যায়ে নিজের দুই ছেলের কথা উল্লেখ করে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আমি পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন, আমার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো বিদেশে বিভুঁইয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করেছে। দীর্ঘ সাত বছর পর সে আমার কাছে লাশ হয়ে ফিরেছে। আমার বড় ছেলে তারেক রহমানকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল। চরম নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে এখনও দূর দেশে সে চিকিৎসাধীন। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক এসব দুঃখ-বেদনাকে বুকে চেপে আমি দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাদের কল্যাণে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি!’

এর চাইতে বড় ধরনের ভিকটিম সিনড্রোম আর কোন নেতা-নেত্রীর মধ্যে দেখা দিতে পারে না। ক্ষমতায় থাকাকালে যে দলের নেতা-নেত্রীরা হুঙ্কার ছাড়া কথা বলতেন না, এখন তারা নির্যাতনের শিকার সেজে এককালে যে জনগণের ওপর চরম নির্যাতন চালিয়েছেন, সেই নির্যাতিতদের সমর্থন ও সহানুভূতি কুড়োবার চেষ্টায় মেতেছেন। এ ব্যাপারে দলনেত্রীর ওপর আর কেউ টেক্কা দিতে পারবেন না। দলনেত্রী অবলীলাক্রমে বলেছেন, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো বিদেশে বিভুঁইয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করেছে।

কোকোর অকাল মৃত্যু অবশ্যই দুঃখের কারণ এবং মাতৃহৃদয়ের জন্য বড় শোকের কারণ। কিন্তু বিদেশে বিভুঁইয়ে কোকোর এই অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে তাকে জেলে ভরেনি, বিদেশেও পাঠায়নি; এটা করেছে সেনানিয়ন্ত্রিত এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার। যে সরকারের মাথার ওপর ছিলেন বিএনপিরই মনোনীত রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দীন এবং লোকমুখে যার নাম ছড়িয়েছিল ইয়েসউদ্দীন। হাওয়া ভবনের ইঙ্গিত ছাড়া তিনি নড়তেও চাইতেন না।

কোকোর বিরুদ্ধে (আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন) দুর্নীতি, বিদেশে বিপুল অর্থ পাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং মাদকাসক্তিসহ নানা গুরুতর অভিযোগ ছিল। এক-এগারোর সরকার তার বিরুদ্ধে মামলা দেয় এবং তাকে গ্রেফতার করে। বেগম জিয়াই তখনকার সেনাপ্রধানদের সঙ্গে নানা তদ্বির করে চিকিৎসার নামে সপরিবারে তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেন। বিদেশে থাকাকালেই কোকো কোন কোন মামলায় দ-িত হন এবং বিদেশের ব্যাংক থেকে তার অবৈধভাবে পাচারকৃত বিপুল অর্থের অনেকটা উদ্ধার করা হয়। দেশে ফিরলে তাকে বিভিন্ন অপরাধের দায়ে বিচারে দ-িত হয়ে জেলে যেতে হবে এই ভয়ে আর দেশে ফেরেননি। আওয়ামী লীগ সরকার বরং অনুকম্পাবশত তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে জেলে ঢোকানোর ব্যবস্থা করেননি।

এই কোকো দেশে থাকতেই তার নানা অভ্যাসের দরুন রোগাক্রান্ত হন এবং বিদেশে বসে সেই অভ্যাস ত্যাগ না করায় তার রোগ জটিল হতে থাকে। কী কারণে তার এ রোগ হয়েছিল এবং কী রোগের জটিলতায় তার অকালমৃত্যু ঘটে সে সম্পর্কে চিকিৎসা সংক্রান্ত ডাক্তারের রিপোর্ট কি বিএনপি নেত্রী প্রকাশ করতে চাইবেন? একজন মৃতের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য আমি তা চাই না। কোকোর চাইতে তারেক রহমানের রেকর্ড আরও প্রশ্নবিদ্ধ।

তারেকের হাওয়া ভবনের দুর্নীতি, সন্ত্রাস, হত্যার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার দীর্ঘ ইতিহাসের পুনরুল্লেখ এখানে করতে চাই না। বেগম জিয়ার উচিত ছিল, তারেককে তার রাজনৈতিক নেতৃত্বের উত্তরাধিকারী করতে চাইলে সময়মতো তার লাগাম টেনে ধরা। বেগম জিয়া তা করেননি। বরং পুত্রস্নেহে অন্ধ হয়ে তাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন এবং এখনও দিচ্ছেন। বাজারে গুজব, সেনা এস্টাবলিশমেন্টের কোন কোন কর্মকর্তার সঙ্গে সামরিক সাজসরঞ্জাম কেনার লোভনীয় বাণিজ্যে ভাগ-বখরার বিবাদ থেকেই এক-এগারোর সময় তাকে দুর্নীতির দায়ে জেলে যেতে হয় এবং একশ্রেণীর সেনা কর্মকর্তার হাতে জেলে মার খেতে হয়।

আওয়ামী লীগ সরকার তাকে জেলে দেয়নি, বিচারে সোপর্দও করেনি। জেলে তার ওপর হামলাও চালায়নি। এ সবই ঘটেছিল এক-এগারোর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। খালেদা জিয়াই অনেক তদ্বির, তদারক, দরকষাকষি করে ছেলের অসুস্থতার জন্য চিকিৎসার নামে প্যারোলে তার কারামুক্তি ঘটিয়ে সপরিবারে বিদেশে পাঠিয়ে দেন। বিদেশে আট বছর যাবত তারেক রাজকীয় জীবনযাপন করছেন। তার হাতে যেন আলাদীনের চেরাগ আছে। চাইলেই টাকা পান। আর টাকার জোরে বিদেশে বসে খোলাখুলি দেশের স্বার্থবিরোধী ও সরকারবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছেন। এ ক্ষেত্রেও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ধৈর্য ও উদারতা অতুলনীয়। দেশে তারেকের বিরুদ্ধে গুরুতর সব অপরাধের বিচার চলছে। একজন বিচারাধীন আসামির আট বছর যাবত বিদেশে জামিনে মুক্ত থাকার দ্বিতীয় নজির বিশ্বে নেই।

বিদেশে বসে তারেক রহমান দেশের স্বার্থবিরোধী নানা চক্রান্তে প্রকাশ্যে লিপ্ত। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এসব অপরাধ থেকে নিবৃত্ত করার পরিবর্তে বেগম জিয়া তাকে এনে দলের দ্বিতীয় শীর্ষ পদে বসিয়েছেন। গত শতকের গোড়ার দিকে ব্রিটিশদের চক্রান্তে বাদশাহ আমানুল্লাহ সিংহাসন হারালে বাচ্চা-ই-সাক্কা নামে এক দুর্বৃত্ত এসে কাবুলের সিংহাসন কিছুদিনের জন্য দখল করেছিল। আমি শঙ্কিত হয়ে ভাবি, এই শতকে বাংলাদেশে কি এই ধরনের কোন ঘটনার পুনাবৃত্তি ঘটতে পারে?

বেগম জিয়া তো তার এই পুত্রকে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী করার সব আয়োজন সম্পন্ন করে রেখে যেতে চান।

তারেক রহমান সম্পর্কে জনমনে সহানুভূতি ও সমর্থন তৈরির জন্য তাকেও দলের ‘নির্যাতিত নেতা’ হিসেবে তিনি কাউন্সিল অধিবেশনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন এবং একটি নতুন তথ্য দেশবাসীকে শুনিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমার বড় ছেলে তারেক রহমানকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। চরম নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে এখনও দূর দেশে সে চিকিৎসাধীন।’ দেশনেত্রী কি দলের কাউন্সিল সভায় দাঁড়িয়ে সত্য কথা বলেছেন? তারেক রহমানকে জেলে জিজ্ঞাসাবাদের সময় একদল সেনা কর্মকর্তা মারধর করেছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু তাকে হত্যা করার চেষ্টা হয়েছিল এটা প্রথম জানা গেল। মায়ের তদ্বিরে এবং রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে তারেক প্যারোলে মুক্তি পেয়ে সপরিবারে লন্ডনে চলে যান। তারপর থেকে আট বছর তিনি বিদেশে।

এই আট বছরে কেউ বলেনি, এমনকি তারেকও দাবি করেননি, জেলে তাকে হত্যা করার চেষ্টা হয়েছিল। চেষ্টা হয়ে থাকলে বিদেশে বসে তিনি সেই হত্যা প্রচেষ্টার নায়কদের বিচার দাবি করতে পারতেন এবং ষড়যন্ত্রের হোতাদের চিহ্নিত করতে পারতেন। তারেক তা করেননি। বেগম জিয়াও তা করেননি। এত দীর্ঘকাল পর তারেককে হত্যা করার চেষ্টার কথা বললেন। কিন্তু কারা, কখন এই চেষ্টা করেছে, তার উল্লেখ করেননি। জেলে তারেক রহমানকে মারধর করা হয়েছিল সম্ভবত এটা প্রমাণ করার জন্য বিদেশে চলে আসার পর তিনি কিছুটা খুঁড়িয়ে চলতেন। সেটা অনেকেই দেখেছে।

এই খুঁড়িয়ে চলার চিকিৎসা বিলাতের মতো দেশে আট বছর ধরে চলতে পারে একথা কি একটি বিশ্বাসযোগ্য কথা? তার ঘনিষ্ঠ মহল থেকে কেউ কেউ বলেন, তিনি জনসমক্ষে এলে খুঁড়িয়ে হাঁটেন; কিন্তু ঘরের ভেতর তার চলাফেরা স্বাভাবিক। এই খবর যদি সত্য হয়, তাহলে ‘চরম নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে এখনও তার চিকিৎসাধীন’ থাকার দাবিটা কি বিশ্বাসযোগ্য করা যাবে? সত্য কথা হলো, বিভিন্ন গুরুতর অপরাধের মামলায় দ-িত হয়ে জেলে যাওয়ার ভয়ে তারেক রহমান দেশে ফিরছেন না। প্রচার করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকার তাকে দেশে ফিরতে দিচ্ছে না।

তারেক ভবিষ্যত বাংলার তরুণ নায়ক হতে চাইলে এবং নেতা হওয়ার সাহস ও যোগ্যতা থাকলে বহু আগে জেলে যাওয়ার ভয় অগ্রাহ্য করে দেশে ফিরতেন; তার বিরুদ্ধে আনীত মামলা মোকদ্দমাগুলো সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতেন। তারপরও জেলে যেতে হলে যেতেন। কিন্তু দেশের মানুষের কাছে সাহসী ও বীর বলে আখ্যা পেতেন। তাদের সমর্থনে নেতা হতেন। মায়ের আঁচলে বসে নেতা হতে চাইতেন না, বিদেশে পালিয়ে থাকতেন না।

দেশের মানুষ যে আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে মেনে নিয়েছে, তার নেতৃত্বের কোন বিকল্প নেই বলে একবাক্যে স্বীকার করছে। তার কারণ, শেখ হাসিনার অতুলনীয় সাহস ও রাজনৈতিক ধৈর্য। তার বিরুদ্ধেও এক-এগারোর আমলে অসংখ্য মামলা দেয়া হয়েছিল। তাকে বিদেশে আটকে রাখার চেষ্টা হয়েছিল। তাকে দেশে ফিরতে না দেয়ার জন্য ব্রিটিশ এয়ারওয়েজকে টিকেট দিতে না করে দেয়া হয়েছিল। তাকে পলাতক আসামি হিসেবে দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করা হয়েছিল।

তারপরও শেখ হাসিনা শত হুমকির মুখে দেশে ফিরে এসেছেন। তাকে বিদেশে আটকে রাখা যায়নি। তিনি সাহস করে বিদ্রোহী হয়েছিলেন বলেই বেগম খালেদা জিয়াও সাবজেল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। নইলে তাকে পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফের মতো সৌদি আরবে পাঠিয়ে দেয়া হতো। শেখ হাসিনা চরম নির্যাতন, চরম বিপদকে মোকাবিলা করার সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই আজ বাংলাদেশের সর্বজন স্বীকৃত জননেত্রী। আর এখন তারেক রহমান কয়েকটা মামলা মোকদ্দমার ভয়ে বিদেশে দীর্ঘ আট বছর পালিয়ে আছেন। মায়ের মনোনয়নে, মায়ের আঁচলের নিরাপত্তায় বসে দেশের ভাবী নেতা হতে চান। এটা তো কুঁজোর চিৎ হয়ে শুয়ে চাঁদ দেখার বাসনা। গ্রিক উপকথার ফিনিক্স পাখি হওয়া কি এতই সহজ?

বিএনপির কাউন্সিল অধিবেশনে বেগম জিয়া অনেক ভাল ভাল কথা বলেছেন। দেশকে ‘ভিশন ২০৩০’ এর স্বপ্ন দেখিয়েছেন। কিন্তু এর লক্ষ্যগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়, এগুলো আওয়ামী লীগের ‘রূপকল্প ২০২১’ এর চর্বিত চর্বণ। খালেদা জিয়া দেশকে দুর্নীতি, সুশাসন ও সুসরকার উপহার দেয়ার লক্ষ্যে বিএনপির ‘নতুন এক সামাজিক সমঝোতা ও চুক্তিতে’ উপনীত হওয়ার উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছেন, কিন্তু কাদের সঙ্গে এই সমঝোতা ও চুক্তি হবে সেই আসল কথাটাই বলেননি। বিএনপি সামাজিক সমঝোতা করবে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির সঙ্গে স্বাধীনতা ও তার মূল্যবোধগুলো রক্ষার স্বার্থে, না অতীতের মতো স্বাধীনতার শত্রু ও ঘাতকশক্তির সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করার লক্ষ্যে স্বাধীনতার মৌল আদর্শগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে, সে কথা আভাসে ইঙ্গিতেও তিনি বলেননি। সমঝোতা করবেন তিনি কাদের সঙ্গে?

নিজেদের বর্তমান অবস্থান পরিষ্কার করে তুলে ধরার আগে জাতীয় রাজনীতিতে বিএনপি কিছুতেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। আর এই অবস্থান পরিষ্কার করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বিরোধিতা, স্বাধীনতার শত্রু ও মৌলবাদীদের সঙ্গে আঁতাত স্থাপন, ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের চেষ্টা, আন্দোলনের নামে দেশময় মানুষ পুড়িয়ে মারার সন্ত্রাস চালানোর জন্য বিএনপিকে দেশের মানুষের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফিরে আসতে হবে; নইলে গ্রিক উপকথার ফিনিক্স পাখির মতো তাদের জেগে ওঠার স্বপ্ন মানুষকে হাসাবে, দলটিকে বাঁচাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:২৫
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×