মনিরুল ইসলাম বলেন, রিমান্ডে সাংবাদিক শফিক রেহমান বৈঠক করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ২০১২ সালে আমেরিকায় যড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন শফিক রেহমান। সেখানে জাসাস নেতা মহম্মদ উল্লাহ মামুন তার ছেলে সিজারের সঙ্গে বৈঠক করেন এই সাংবাদিক। জয় সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আমেরিকা থেকে ফেডেক্স কুরিয়ারের মাধ্যমে মাহমুদুর রহমানকে পাঠানো হয়। এমন তথ্যও পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। তিনি জানান, তার বাসা থেকে কিছু নথিপত্রও জব্দ করা হয়েছে। হত্যার পরিকল্পনাকারীরা অর্থের বিনিময়ে রবার্ট লাস্টিক নামে এক সাংবাদিকের কাছ থেকে জয়ের বাসার ঠিকানা, গাড়ি, গাড়ির মডেল ও নম্বর সংগ্রহ করেন। এই যড়যন্ত্রে ইতোমধ্যে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার খরচ হয়েছে। এই টাকা সাংবাদিক শফিক রেহমান দিয়েছেন বলে যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতে টাকার উৎস খোঁজা হচ্ছে বলে জানান মনিরুল ইসলাম।
জয় অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার পরিকল্পনার মামলায় আরেক সাংবাদিক কারাবন্দী মাহমুদুর রহমানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এ জন্য তাকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেছে পুলিশ। আগামী ২৬ এপ্রিল রিমান্ড আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছে আদালত।
শফিক রেহমানের বাসায় তল্লাশি ॥ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে সঙ্গে নিয়ে তার বাসায় তল্লাশি চালিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় বাসা থেকে এফবিআই এজেন্টের সরবরাহ করা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র-দলিল জব্দ করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটনে শফিক রেহমানের বাসায় তল্লাশি চালানো হয়। তার বাসায় তল্লাশির বিয়ষটি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ।
তিনি বলেন, রিমান্ডে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন শফিক রেহমান। তাই তাকে নিয়েই তার বাসায় তল্লাশি চালানো হয়।
শফিক রেহমানের ষড়যন্ত্র করার দলিল আছে ॥ পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, শফিক রেহমান যে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত তার দালিলিক প্রমাণ আছে। তিনি তা দেখাতেও প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকারের ফেসবুক পোস্টে দেয়া এক সাক্ষাতকারের প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেছেন তিনি।
ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ নেই। মার্কিন জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের কাছেও নেই, বাংলাদেশ পুলিশের কাছেও নেই।’ যদি কোনও প্রমাণ থাকে তবে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মনিরুল ইসলাম এর প্রতিক্রিয়ায় ওই সাক্ষাতকারের ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য করতে গিয়ে গণমাধ্যমে বলেন, সাক্ষাতকার দানকারী ব্যক্তি কি কোনওভাবে তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত? তিনি কি করে জানলেনÑ কে জড়িত আর কে জড়িত নয়, কার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ আছে, আর কার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই ? তিনি বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা ষড়যন্ত্র মামলাটি যুক্তরাষ্ট্রে চলে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে। তখন শফিক রেহমানের নাম আসেনি বলেছেন ইমরান এইচ সরকার। তার এমন কথার জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, মামলা চলার তারিখ তো দূরের কথা, উল্লেখিত বছর সংক্রান্ত তথ্যটিও সঠিক নয়। তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, সকল বিষয়েই আমরা বিশেষজ্ঞ মতামত দিতে পছন্দ করি! তবে সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই তাকে(শফিক রেহমান) গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান মনিরুল ইসলাম।
বৈঠকের কথা স্বীকার করেছেন শফিক রেহমান ॥ ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে সজীব ওয়াজেদ জয় হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার শফিক রেহমান একাধিক বৈঠক করার কথা স্বীকার করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এই কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, রিমান্ডে শফিক রেহমান জয় হত্যা চেষ্টার পরিকল্পনার বিষয়ে একাধিক বৈঠকে যোগ দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। বৈঠকে যারা ওই পরিকল্পনায় অংশ নেবে তারাও উপস্থিত ছিলেন। রিমান্ডে বৈঠকসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো কর্মকর্তারা তদন্ত করে দেখছেন। এছাড়া তদন্তের স্বার্থে তা এখন বলা যাচ্ছে না।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় হত্যা চেষ্টায় টাকাপয়সা দেয়া-নেয়ার বিষয়েও তথ্য পেয়েছি। সে টাকার পরিমাণ কত এবং কিভাবে তা লেনদেনের কথা হয়েছে তাও আমরা তদন্ত করছি।
তবে রিজভী আহমেদ সিজারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে এ বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য জানা যাবে বলে জানান তিনি।
অপর প্রশ্নের জবাবের উত্তরে মনিরুল ইসলাম বলেন, বিএনপির আরও এক নেতার নাম উঠে এসেছে। ওই নেতা শফিক রেহমানকে বৈঠকের জায়গাটি ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাকেও তদন্তের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, ২০১৫ সালের আগস্টে মামলা হলেও তদন্ত এগোতে পারেনি। কারণ, বেশ কিছু দলিল -দস্তাবেজ আমাদের হাতে ছিল না। সেগুলো আমাদের হাতে এলে তদন্তের পর পুরো ঘটনা বেরিয়ে আসবে। এ ছাড়াও এই পরিকল্পনায় লন্ডনেরও কোন যোগাযোগ আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ এপ্রিল রাতে রাজধানীর ইস্কাটনের বাসা থেকে সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আদালতে নেয়া হলে তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। রিমান্ডে নেয়ার পর শফিক রেহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি)।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:১৩