somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মীর কাশেম আলীকে রক্ষা করতে ব্যয় হচ্ছে হাজার কোটি টাকা

১৬ ই মে, ২০১৬ সকাল ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই মুহূর্তে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের অর্থের যোগানদাতা জামায়াত নেতা ধনকুবের মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদ-াদেশ থেকে রক্ষা করার উদেশ্যেই তৎপরতার চালাচ্ছে জামায়েতের ঘনিষ্ঠ পাকিস্তান ও তুরস্ক। এজন্য বিদেশে হাজার কোটি টাকা ডিল করেছে জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী। মীর কাশেম আলীর স্থাবর-অস্থাবর সকল অর্থ-সম্পদের বিনিময়ে হলেও মৃত্যুদ-াদেশ থেকে বাঁচানোর শেষ প্রয়াস হিসেবেই পাকিস্তান ও তুরস্কের বর্তমান তৎপরতা। এ খবর দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, পাকিস্তান ও তুরস্কের যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে একং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়, শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছে এ দুটি দেশ। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করার পর পাকিস্তান ও তুরস্কের এমনই আঁতে ঘা লেগেছে যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালাচ্ছে যা আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার শামিল। পাকিস্তান ও তুরস্ক যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই অবস্থান নিলেও নিজামীর ফাঁসির পর এবং মীর কাশেম আলীর ফাঁসির দ-াদেশ থেকে রক্ষা করার তৎপরতার পেছনে হাজার কোটি টাকার ডিল নিয়ে বিদেশে তৎপরতা চালাচ্ছে তাদের নিয়োগকৃত লবিস্ট। যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি তুরস্ক আর পাকিস্তানের বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার শামিল তৎপরতার কারণ হচ্ছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তাইয়্যেপ এরদোগান তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনালগ্নে জামায়াতে ইসলামীর চেয়েও কট্টর ইসলামপন্থী দলের সদস্য ছিলেন। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর কুখ্যাত স্বৈরশাসক নাৎসী বাহিনীর প্রধান হিটলারের শাসন ব্যবস্থার প্রশংসা করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, বর্তমান বিশ্বের সবেচেয়ে দুর্ধর্ষ আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের সরবরাহ করা তেলের বড় ক্রেতা দেশ ও আইএসের সহযোগিতাকারী দেশ তুরস্ক ও তুরস্কের এই প্রেসিডেন্ট এরদোগান। যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদ- কার্যকরের প্রতিক্রিয়ায় নিজ দেশের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেন তুরস্কের এই প্রেসিডেন্ট। তুরস্ক আর পাকিস্তানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় কর্মরত এরদোগানের সরকার ও এ সরকারের প্রেসিডেন্ট এরদোগান গণহত্যার বিচারের প্রশ্নেও বরাবরই একজন বিতর্কিত ব্যক্তি।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পাকিস্তান ও তুরস্ক হাজার কোটি টাকার ডিল ছাড়াও অন্য কারণ রয়েছে, যা তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল জাস্টিস এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একে পার্টি) এবং বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী একই মতাদর্শে বিশ্বাসী। এ কারণেই এককালের ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্ক জামায়াতের ঘনিষ্ঠ মিত্রতে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে বারবার দ-িতদের পক্ষ নিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। সর্বশেষ মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদ- কার্যকরের প্রতিবাদে বাংলাদেশ থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয় তুরস্ক। মতিউর রহমান নিজামী বিগত বিএনপি জোট সরকারের মন্ত্রী থাকাকালে দু’দফায় তুরস্ক সফর করেন। দলটির প্রায় সব কেন্দ্রীয় নেতাই গত এক দশকে তুরস্ক সফর করেছেন। এরদোগানও যখন বাংলাদেশে এসেছিলে তখন জামায়াত নেতাদের দীর্ঘ সাক্ষাত দেন। এখন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের উচ্চশিক্ষার গন্তব্যে পরিণত হয়েছে তুরস্ক। জামায়াত পরিচালিত বিভিন্ন দাতব্য কার্যক্রমের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এ দেশটি। যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতেও জামায়াতের প্রধান সমর্থক তুরস্ক। যুদ্ধাপরাধের বিচার পর্যবেক্ষণে দুই দফায় প্রতিনিধি দল পাঠায় দেশটি। জামায়াতের সুরে তুরস্ক একাধিকবার বলেছে, বিচার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়নি। গোলাম আযমকে ফাঁসি না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ২০১৩ সালে তৎকালীন তুর্কি প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল বাংলাদেশকে চিঠি দেন। নিজামীর ফাঁসি না দিতেও বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছিল তুরস্ক। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুর রাজ্জাকের ২০১৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ‘ইসলামী আন্দোলন : দেশে দেশে আরব বসন্ত’ শিরোনামে একটি লেখায়ও যুদ্ধাপরাধের পক্ষে তুরস্কের বিরোধী ভূমিকার কথা উঠে আসে।

গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধের বিচার পর্যবেক্ষকের ছদ্মাবরণে টুরিস্ট ভিসায় তুরস্কের ১৪ সদস্যবিশিষ্ট আইনজীবীর একটি প্রতিনিধি দল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসেছে। তাঁরা নিজেদের পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকারকর্মী বললেও আসলে তাঁরা তুরস্কের আইনজীবী। ১৪ জনের মধ্যে একজন রয়েছেন বেলজিয়ামের। রেজিস্ট্রার অফিস থেকে বলা হয়েছে, তারা সরাসরি ট্রাইব্যুনালে এসে পাস চেয়েছেন। যেহেতু এটি পাবলিক ট্রায়াল সে কারণেই তাদের শর্তসাপেক্ষে পাস দেয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে কঠোর নিরাপত্তা থাকলেও কিভাবে প্রধান গেট দিয়ে তাঁরা প্রবেশ করেছেন এ বিষয়ে খোদ ট্রাইব্যুনাল অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রের একজন আইন কর্মকর্তা তখন বলেছিলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর অংশ হিসেবেই তুরস্কের মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্যরা ট্রাইব্যুনালে এসেছেন। ব্রাদারহুডের সদস্যদের ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শন সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করা হয়। তুরস্কের ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল ট্রাইব্যুনালে আসার পর আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বেশ উৎফুল্ল দেখাচ্ছিল। এর আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের কাছে চিঠি দিয়ে বলেছিলেন, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অবিচার বন্ধ করতে হবে। প্রসিকিউশন থেকে তখন বলা হয়, আসামিপক্ষ যেভাবে অর্থ ব্যয় করছে তার আরেকটি উদাহরণ এই তুরস্কের প্রতিনিধি দল, যারা পর্যবক্ষক নামে এসেছে। আসলে আসামিপক্ষের আইনী সহায়তাদানই তাদের প্রধান কাজ। বিশাল অঙ্কের অর্থ ছড়াচ্ছে যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী ও জামায়াত।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে জামায়াত দেশে-বিদেশে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে। তারা বিদেশে থেকেও নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। ২০১১ সালের ১৫ নবেম্বর চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ এমন একটি বিষয় ট্রাইব্যুনালের নজরে এনেছিলেন। যাঁরা বিদেশে জামায়াতের আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দেন তারই অংশ হিসেবে ওই তিন বিদেশী আইনজীবী স্টিভেন কে, টোবি ক্যাডম্যান ও জন ক্যামেগ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের অপসারণ চেয়ে তাঁর কাছেই ই-মেইল করেন। এ বিষয়টি চীফ প্রসিকিউটর গোলম আরিফ টিপু ট্রাইব্যুনালের নজরে আনেন। ট্রাইব্যুনাল এর বিরুদ্ধে আদেশ দিয়েছে।

গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে প্রভাবিত করতে অর্গানাইজেশন ফর পিস এ্যান্ড জাস্টিস ইনকর্পোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্ট ফার্ম কেসেডি এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটস ইনকর্পোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করে। এর আগে জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী ও তার ভাই মীর মাসুম আলী ২০১১ সালে তিন লাখ ১০ হাজার ডলারের বিনিময়ে প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য কেসেডি এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটসকে নিয়োগ করেছিলেন। এখন যুদ্ধাপরাধীর শীর্ষ পাঁচজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করার পর সর্বশেষ শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর ফাঁসির দ-াদেশ কার্যকরের অপেক্ষায়। জামায়াতের অর্থের যোগানদাতা, ধনকুবের শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীকে ফাঁসির দড়ির হাত থেকে রক্ষা করার জন্যই পাকিস্তান ও তুরস্ক একযোগে বিদেশে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার শামিল তৎপরতা চালাচ্ছে, যার সময়োপযোগী সমুচিত জবাব দেয়া হবে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ সকাল ৯:০৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×