নিখোঁজ ইলিয়াসের ভালবাসায় মরণপণ করেছিল যুবদলকর্মী মনোয়ার ও সেলিম। ‘হয় মরবো না হয় ইলিয়াসকে ফিরিয়ে আনবো’ -এ পণ করে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল তারা। পিতা-মাতাকে বলে গিয়েছিল, ‘ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছি। দোয়া করো।’ কিন্তু তারা ফিরলো না। পিছুও হটলো না। বুক পেতে দিয়ে গুলি খেয়ে সবার চোখের সামনেই চিরকালের জন্য হারিয়ে গেল। ইলিয়াসের জন্য কাঁদছে বিশ্বনাথ। গতকাল থেকে সে কান্নায় যোগ হয়েছে মনোয়ার ও সেলিমের জন্য কান্না। বিশ্বনাথ শহরঘেঁষা গ্রাম রাজনগর কাঁদছে মনোয়ারের জন্য আর টেংরা গ্রাম কাঁদছে সেলিমের জন্য। কাঁদছে পুরো বিশ্বনাথ। ক্ষোভ বাড়ছে আরও। এখনও টান টান উত্তেজনা শহরে। নিহত মনোয়ারের বাড়ি বিশ্বনাথের রাজনগর গ্রামে। তিনি বিশ্বনাথের বাসিয়া ব্রিজের ওপর পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন মনোয়ার। লাঠি হাতে পুলিশকে ধাওয়া করতে করতে এসে থানার সামনে দাঁড়ান। এ সময় ভেতর থেকে পুলিশ গুলি শুরু করে। তখনই গুলিতেই ব্রিজের ওপর লুটিয়ে পড়ে প্রাণ হারান মনোয়ার। আর সেলিম মারা গেছেন রামধানা রোডের মাদাসার ফটকের সামনের রাস্তায়। সোমবার বিকাল থেকে মাতম চলছে রাজনগর ও টেংরা গ্রামে। মনোয়ারের মুত্যুতে পুরো পরিবারে অন্ধকার নেমে এসেছে। বড় ভাই আনহার হোসেন মারা যাওয়ার শোক কাটতে না কাটতেই ১৮ দিনের মাথায় চলে গেলেন মনোয়ারও। এক ছেলের শোকে বিপর্যস্ত মনোয়ারে বৃদ্ধা মায়ের চোখের জল শুকানোর আগেই ছোট ছেলেকে হারালেন তিনি। শোকে বাকরুদ্ধ মা বেণু বেগম। ছেলের শোকে তিনি বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। কখন জ্ঞান হারাচ্ছেন, আবার জ্ঞান ফিরে এলে বলেছেন, আমার ছেলে কোথায়? বলছেন আর কাঁদছেন হাউমাউ করে। বলেন, ‘আমি নিষেধ করেছিলাম আমার ছেলেকে ঘর থেকে বাইরে যেতে। কিন্তু আমার কথা না শুনে সে বলে, মা আমি গিয়ে দেখেই চলে আসবো, তুমি কোন চিন্তা করো না। বললো- ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছি। দোয়া করো।
মনোয়ার ঘরে ফিরলেন ঠিকই, কিন্তু লাশ হয়ে। মা রেণু বেগম সাংবাদিকদের দেখে বলেন, ‘আর কত মায়ের বুক খালি হলে ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেয়া হবে?’ মনোয়ারের বড় ভাই দিলোয়ার হোসেন ছোট ভাইয়ের মৃত্যুতে মানসিকভাবে একবারেই ভেঙে পড়েছেন। বড় ও ছোটভাই চলে যাওয়ার পর তিনিই এখন এই পরিবারের একমাত্র পুরুষ। তার সঙ্গে কথা বলাই যাচ্ছে না। মনোয়ার দীর্ঘদিন মধ্যপ্রাচ্যে ছিলেন। কিছুদিন দেশে থাকার পর তার কাতারে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলে গেলেন না ফেরার দেশে। প্রায় ১৮ দিন আগে মনোয়ারের বড় ভাই ৪ সন্তানের জনক আনহার হোসেন গ্রামের আবদুর রহিম নামের এক ব্যক্তির কবর খুঁড়ে বাড়ি ফেরার পথে মৃত্যুবরণ করেন। যুবদল কর্মী মনোয়ার হোসেন ৩ ভাই ১ বোনের মধ্যে সবার ছোট। ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত। তিনি বিশ্বনাথ উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি ছিলেন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। এদিকে হরতালের গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন উপজেলার অলংকারী ইউনিয়ন যুবদলের ৬নং ওয়ার্ড শাখার সভাপতি সেলিম আহমদ। সংঘর্ষের পর পুলিশ পালিয়ে গেলে উপজেলা পরিষদের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে দৌড়ে পার্শ্ববর্তী মোহাম্মদিয়া মাদরাসা গেটের সম্মুখে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ওখানে পড়ে যখন তিনি ছটফট করছিলেন তখন এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ চলতে থাকে আশপাশে। এক পর্যায়ে বাঁচার জন্য অনেক কাকুতি মিনতি করলেও ভয়ে কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে যাননি। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে প্রায় এক ঘণ্টা পর সেলিম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরে র্যাব-পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ঘটনার পর থেকে তার পরিচয় না পাওয়ায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে বিভিন্ন পত্রিকায় ছবি প্রকাশ হলে পরদিন মঙ্গলবার ১২টার সময় তার পরিবারের লোকজন এসে তাকে শনাক্ত করেন। তার মৃত্যুর খবর এলাকায় এসে পৌঁছলে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারে চলে শোকের মাতম। সেলিমে মাতা হাসিনা বেগম ছেলের মৃত্যু সংবাদ শুনে শোকে স্তব্ধ। পরিবারের অন্য সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ৩ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সেলিম দ্বিতীয়। সোমবার সকাল ১০টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে মিছিলের সঙ্গে উপজেলা সদরে এসেছিলেন। গতকাল বাড়ি না ফেরায় তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নেন। কোথাও তার সন্ধান না পেয়ে ভেবেছিলেন হয়তো পুলিশের তাড়া খেয়ে আত্মগোপন করে কিংবা পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। কিন্তু কে জানতো তাদের প্রিয় ছেলেটি সবাইকে না জানিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। সেলিমের চাচাতো ভাই ইউসুফ আলী বলেন, আমরা পত্রিকায় সেলিমের ছবি দেখে ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে লাশ শনাক্ত করি। সে ইলিয়াস আলীর খুব ভক্ত ছিল। ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর থেকে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল
মানবজমিন থেকে েশয়ার করা।
লিনক.।
Click This Link
ইলিয়াসের ভালবাসায় জীবন দিলো মনোয়ার ও সেলিম
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আমরা কেন এমন হলাম না!
জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
অভিমানের দেয়াল
অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি
২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১
তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes
শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন