ঘরে বাইরে শুরু হয়েছে ফুটবল ম্যানিয়া। অফিস আদালত পাড়া মহল্লায় কিশোর ও যুবকদের মধ্যে এখনি শুরু হয়েছে সমর্থক গোষ্ঠী তৈরির কাজ।
প্রিয় দলের পতাকা তৈরি এবং আকাশে উড়িয়ে দেওয়ার ধুমও লেগেছে সবখানে। প্রিয় তারাকাদের পোস্টার ফেস্টুন আর স্টিকার লাগানো হচ্ছে যত্রতত্র। এমনকি তাদের হেয়ার স্টাইলেও নিজেদের সাজাচ্ছেন অনেকে।
ফুটবলের অর্থনৈতিক বাজারও গরম হয়ে উঠতে শুরু করেছে চলতি সপ্তাহ থেকে। বাজারে এসেছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, পুর্তগালসহ অনেক দেশের পতাকা খচিত জার্সি, ক্যাপ, হেড ব্যান্ড।
রাজধানীর পথে-ঘাটে ফেরি করে বিক্রি হচ্ছে পতাকা। প্রতি চার বছর অন্তর এমনই ক্ষুদ্র বাণিজ্যের সূচনা হয়। ব্যতিক্রম থাকছে না এবারও।
ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে বসছে এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। সাত সমুদ্র তের নদী ছাপিয়ে সেই খেলার উচ্ছ্বাসের ঢেউ এসে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশেও। উম্মাতাল করা এই খেলাটি যেন জরা প্রাণেও চাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনে। আনন্দ হুল্লোরে মেতে ওঠে শিশু কিশোর যুব যুবরা।
বাড়ী, ঘর, অফিস, আদালত এমনকি চায়ের দোকানের ওপরেও পতপত করে উড়তে শুরু করেছে অনেক দেশের পতাকা। ১২ জুন সাও পাউলোতে শুরু হচ্ছে ফুটবল যুদ্ধ। এই যুদ্ধে বাংলাদেশের আপমর জনতা মূলত ভাগ হয়ে যাবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা শিবিরে। ঘরে ঘরে চলবে এই সমর্থন যুদ্ধ।
এলাকা মহল্লায় কার আগে কে কত বড় পতাকা উত্তোলন করতে পারে, কাদের সমর্থক বেশি তা নিয়ে চায়ের টেবিলে ঝড় উঠেছে। বসে নেই ক্ষুদ্র আর্থিক মানের জুয়াড়িরাও। প্রিয় দলের জন্য এক লিটার কোক থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত উঠে যাবে তাদের বাজির দর।
স্কুল ,কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একটি বড় অংশ ইতিমধ্যে বাক যুদ্ধ শুরু করেছে ফেসবুকে। প্রিয় দলের সমর্থন আদায়ে প্রিয় তারকার দুর্দান্ত খেলার মুহুর্তের ছবি ট্যাগ এবং স্ট্যাটাস পোষ্ট করে কমেন্ট ও শেয়ার আদায় করার কৌশল নিয়েছে তারা।
প্রিয় দলের জন্য জীবন বাজিও রেখেছেন অনেকে। রোববার আদাবরে সোহাগ নামে এক আর্জেন্টিনা সমর্থক প্রিয় দলের পতাকা টানাতে গিয়ে বিদ্যুতিক শকে মারা গেছেন। আনন্দ বেদনার দুর্বার মহাকর্ষণে মাতোয়ারা সবাই।
শুধু সমর্থক গোষ্ঠিই নয়, রীতিমতো বাজার দখলে নেমেছে ইলেক্ট্রিক কোম্পানিগুলো। কে কত ছাড় দিয়ে ক্রেতা টানতে পারে তাদের টিভি আর ডিশ এন্টিনা বিক্রিতে। তারই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে বিশ্বব্যাপী। সেই প্রতিযোগিতা আছে বাংলাদেশেও। তাও দারুণ দারুণ সব অফার নিয়ে।
তবে সব থেকে এগিয়ে আছে প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রিক মিডিয়া। যাদের কল্যাণে বিশ্বকাপের সব খবর প্রতিমূহুর্তে পাবে প্রিয় দলের সমর্থকরা। বিশেষ ক্রোড়পত্র, বিশেষ ফিচার, বিশেষ খবর, রিপ্লে এমনকি এসএমএসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, খবরের কাগজ, টেলিভিশন চ্যানেল এবং অনলাইন পত্রিকাগুলোতে।
এতো আয়োজন এতো মহোৎসব যে ফুটবলকে ঘিরে এই বাংলাদেশে , সেই বাংলাদেশের ফুটবল চিত্রটা কিন্তু পুরো উল্টো।
হেমায়েতপুর টু ব্রাজিল ...... ! ! !
রাজধানী ঢাকার পাশেই হেমায়েতপুর। সেখান থেকে সিঙ্গাইর রোড ধরে এগোলেই এজেআই গ্রুপ। বিশাল কারখানা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ প্রতিষ্ঠান। এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুপালি পর্দার আলোচিত নায়ক এম এ জলিল অনন্ত। তাঁর বিশাল কারখানায় তৈরি পোশাকের অন্যতম ক্রেতা মার্কিন প্রতিষ্ঠান ইউএস পোলো অ্যাসোসিয়েশন। এ বছরের শুরুর দিকে ওই প্রতিষ্ঠান এজেআই গ্রুপকে পাঁচ লাখের বেশি পোশাকের অর্ডার দেয়। সবই বিশ্বকাপের জার্সি। এর মধ্যে মেয়েদের জার্সির অর্ডার দিয়েছে প্রায় দেড় লাখ পিস, ছেলেদের সাড়ে তিন লাখের বেশি। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা তো আছেই; মেক্সিকো, ইংল্যান্ড, ইতালি ও চীনের জার্সিও তৈরি করা হয়েছে এখানে। এরই মধ্যে সেই জার্সি চলে গেছে ইউএস পোলো অ্যাসোসিয়েশনের কাছে। সেখান থেকে যাচ্ছে সোজা ফুটবল-ভক্তদের হাতে। বলাবাহুল্য, এবারের বিশ্ব ফুটবল আসরের প্রাণকেন্দ্র ব্রাজিলেই গেছে বেশির ভাগ অংশ। তবে এজেআই গ্রুপের কারখানা ঘুরে দেখা গেল আরও কিছু জার্সির কাজ এখনো বাকি। কর্মীরা দ্রুত সেগুলোর কাজ করছেন। দু-এক দিনের মধ্যেই এই জার্সিগুলো জাহাজে চাপবে। পাড়ি দেবে তেরো নদী সাত সমুদ্র।
2014 FIFA World Cup Brazil
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৪ সকাল ৯:২০