somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এনসিপি কি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে?

২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাহাবুদ্দিন শুভ : একসময় অনেকেই বিশ্বাস করতেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) একদিন ক্ষমতায় যাবে—অন্তত ক্ষমতার বড় অংশীদার হবে। তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে গঠিত দলটি তখন রাজনীতিতে এক নতুন সম্ভাবনার প্রতীক ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেই স্বপ্নে ছায়া পড়েছে। প্রশ্ন উঠেছে—বিষয়টা কি আদৌ বাস্তবসম্মত ছিল, নাকি এনসিপি ধীরে ধীরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে?

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এনসিপির অংশ না নেওয়া এবং স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানানো রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শুরুতে যেসব সমমনা দল জানিয়েছিল, তারা সনদে সই করবে না—শেষ পর্যন্ত তারাও স্বাক্ষর করেছে। ফলে এনসিপি কার্যত একা হয়ে গেছে, যা দলের রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা ও কৌশলগত দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়।

রাজনৈতিক দল গঠনের আগে আন্দোলনের সময় জামায়াতে ইসলামী ও শিবির ঘরানার কিছু ব্যক্তির সম্পৃক্ততা ছিল বলে আলোচনা রয়েছে। দল গঠনের পরও নেতৃত্বে এমন অনেকের আধিক্য দেখা যায়, যা এনসিপিকে ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক মহলে কেউ একে বলেন “জামাতের বি-টিম”, কেউ বা ঠাট্টা করে “কিংস পার্টি”—কারণ, নিবন্ধিত দল না হয়েও তারা রাষ্ট্রীয় প্রটোকল, সরকারি সুবিধা, বিদেশ সফর ও নিরাপত্তা ভোগ করেছে বলে অভিযোগ আছে। এসব কারণেই এক সময় অনেকে তাদের নিয়ে বড় প্রত্যাশা পোষণ করেছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে—এনসিপি কি তাদের সমর্থকদের মনের ভাষা বুঝতে পারছে, নাকি নিজেদের একরোখা নীতিতেই অটল থাকবে?

প্রথমে শোনা যায়, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ সনদে সই করবে না, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারাও স্বাক্ষর করেছে। এর ফলে এনসিপি একমাত্র আলোচিত অনুপস্থিত দল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে একে বাংলাদেশের রাজনীতির এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে অভিহিত করে দলমত, ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে ঐক্যের আহ্বান জানান। তবু শুক্রবারের আয়োজনে সব দল অংশ নেয়নি। এদিন “জুলাই যোদ্ধা” পরিচয়ে কিছু লোকের বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে, যা অনুষ্ঠানের মর্যাদাকে কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ করে।

সরকার যেসব তিনটি দলকে শুরু থেকেই বিশেষ মর্যাদা দিয়ে আসছিল, তাদের অন্যতম এনসিপির অনুপস্থিতি ছিল সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা এনসিপিই ছিল ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’-এর মতো একটি সনদের প্রথম দাবিদাতা। অথচ তারাই এবার আইনি ভিত্তির অজুহাতে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরবর্তী সময়েও এ সনদে স্বাক্ষরের সুযোগ উন্মুক্ত রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপি যদি দেরিতে হলেও সেই সুযোগ গ্রহণ করে, তবে তা তাদের রাজনৈতিক পরিপক্বতার পরিচায়ক হবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নেওয়া ৩০টি দল ও জোটের মধ্যে ২৪টি দল শেষ পর্যন্ত সনদে সই করেছে। যারা সই করেনি—তাদের মধ্যে রয়েছে এনসিপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশ জাসদ ও গণফোরাম। এই ছয় দলের মধ্যে এনসিপিই তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে বেশি জনসমর্থনধারী বলে মনে করা হয়। তাই তাদের অনুপস্থিতি রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে—যে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা, সেই নির্বাচন কি সময়মতো এবং সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে? সনদে সই না করা এক বা একাধিক দল যদি নির্বাচন থেকেও সরে দাঁড়ায়, তাহলে রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হতে পারে।
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সনদে স্বাক্ষর শেষে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আমরা যে ঐক্যের সুর বাজালাম, সেই সুর নিয়েই নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাব।” কিন্তু সরকারের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকি—তবু প্রস্তুতির চিত্র এখনো স্পষ্ট নয়।
এনসিপি সম্প্রতি তাদের প্রতীক ‘শাপলা’ দাবি করেছিল, কিন্তু নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক তালিকায় সেটি অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এই ইস্যু নিয়েই দলটি আপত্তি জানিয়ে আসছে। তবে অনেকে মনে করেন, কেবল প্রতীক-সংক্রান্ত বিষয় ধরে বসে থাকা রাজনৈতিকভাবে খুব শক্ত অবস্থান নয়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে একসময় জাসদ ছিল এক শক্তিশালী ফ্যাক্টর। কিন্তু সময়ের পরিবর্তন, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব এবং কৌশলগত ভুলের কারণে তারা এখন প্রান্তিক দলে পরিণত হয়েছে। এনসিপিও কি তাহলে সেই একই পথে হাঁটছে? তারা কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধীরে ধীরে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে?—এই প্রশ্নই এখন সর্বত্র।
প্রথম আলো’য় প্রকাশিত লেখার লিংক : বাংলাদেশের রাজনীতিতে এনসিপি কি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে?

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:১৬
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×