somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পদলুপ্ত মিথ্যা বিবর্তনবাদ, পঞ্চপদী আহাম্মকবাদ

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুদিন আগে শুনছিলাম কে এফ সি তে নাকি আর মুরগী খাওয়ায় না। সেখানে নাকি বিশেষ প্রজাতির একটি প্রাণি ল্যাবরেটরীতে তৈরি করা হয় যা মূলত: টেস্টটিউব মুরগীর মত, চার পা বিশিষ্ট। চার পা কারণ, পা ভাজা বিক্রিতে কে এফ সি সবচাইতে বেশী লাভ করে। সেই জন্যই নাকি কে এফ সি আর নিজেদের কেন্টাকি ফ্রাইড চিকেন বলে না কারণ যেহেতু তাদের ওখানে সত্যিকারের মুরগী খাওয়ানো হয়না তাই তারা তা আইনতঃ বলতে পারে না। শুধুই কে এফ সি, এই নামেই তারা এখন পরিচিত।

কাজেই দু-পা ওয়ালা মুরগীকেও চাইলে চার পা বানিয়ে দেদার বানিজ্য করছে বদমাইশগুলো। কিন্তু বিবর্তনের মাধ্যমে তা হয়নি কারণ আমাদের বিবর্তন বিশেষজ্ঞের মতে দু-পা মুরগী বিবর্তনের মাধ্যমে এক-পা ওয়ালাও হতে পারতো। এখানেই বিবর্তনবাদ পদলুপ্ত হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আর আহাম্মকবাদ সাপের পাঁচ-পা গজিয়ে সড়সড়িয়ে চলে।

ঠিক সেভাবেই, বিবর্তনবাদের মত জটিল বিষয় নিয়ে জানতে হলে যারা জীববিদ্যা নিয়ে জীবনেও পড়াশোনা করেনি, বা বিজ্ঞান কী বা কাহাকে বলে সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা রাখে না তাদের কাছেই এ সম্পর্কে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জ্ঞান আপনি পাবেন। তাই এই ব্লগে প্রায় দু-চারদিন পরপরই যে মহাজ্ঞানী বিবর্তনবাদকে তুলোধোনা করেন তিনিই বাংলাদেশে বিবর্তনবাদ আর নাস্তিকদের শেষ করে দিয়েছেন।

মিগেল সার্ভেন্তেসের নায়ক দন কিহোতে মানুষ মন্দ ছিলেন না কিন্তু ছিটেল হওয়ার কারণে সবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো। তাতে অবশ্য তিনি ছিলেন লাপরোয়া। মানসিক কিছু দুর্বলতার কারণে নিজের কল্পিত শক্তি আর সাহসের অলীক জগতে মগ্ন এই দুবলা মানুষটি এক খর্বকায় নাপিতকে গাধার পিঠে সঙ্গী করে বিশ্বজয় করতে বেরিয়েছিলেন আর পথে নানা ঘটনায় নাস্তানাবুদ আর নাজেহাল হয়ে শেষে স্পেনের সমুদ্রকূলের সারি সারি হাওয়াকলকে আক্রমনোদ্যত দৈত্য মনে করে নিজের হাড় জিরজিরে ঘোড়া নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে ভূমিশায়ী হয়ে ভেবেছিলেন ঈশ্বরের জন্য এই জেহাদ তার বৃথা যেতে পারেনা।

আমাদের এই মজার হাটে মাঝে মাঝেই তাই দেখি এক দন কিহোতেকে যিনি বিবর্তনবাদকে তার ভাষায় "কল্পকাহিনীর চাইতেও হাস্যকর" বলে একা একাই হাসছেন আর তার নাপিত সঙ্গীরা গাধার পিঠে বসে তার পেছনে পেছনে ছুটছেন।

তা বটে, বিবর্তনবাদ কল্পকাহিনীর চাইতেও হাস্যকর বই কি? যদিও "বিবর্তন কী ও কেমন করে" এর ওপরে শত শত গবেষণা হয়েছে এবং তা অবশ্যই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কিন্তু তাতে কী? আমাদের দন কিহোতেকে বাস্তব জগতের কোন কিছুই যে চোখে আঙুল দিয়েও দেখানো যাবে না কারণ তার বাস তার নিজেরই কথিত "কল্পলোকে।" যদিও বিবর্তনবাদের বিরুদ্ধে তার সব বক্তব্যই অতি দক্ষিণপন্থী খৃষ্টান ধর্মান্ধদের বক্তব্য অথবা অধুনা মুর্খপন্ডিত হারুন ইয়াহিয়ার আহাম্মকি যুক্তির সাথে হুবহ মিলে যায়, তবুও একখানে তাকে বলতে দেখেছিলাম যে উনি ওসব সূত্রের থোড়াই কেয়ার করেন। বরং তার বক্তব্য সবই তার নিজের চিন্তাভাবনাপ্রসূত! আমার জানতে ইচ্ছে হয়েছিল যে বংশগতি আর বিবর্তনের মত জটিল বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসার জন্য যে শিক্ষা আর গবেষণার পশ্চাৎপট একজন মানুষের থাকা প্রয়োজন তা তার কতটুকু আছে। তবে এমন প্রশ্ন করা যায় তাকে যার পা দুটো মাটির ওপর শক্ত করে দাঁড়ানো।

এই ভদ্রলোক নিজে বিবর্তনবাদের ওপর কতটুকু পড়াশোনা করেছেন বা আন্তর্জাতিক জার্নালে তার কটি প্রকাশনা আছে এ বিষয়ে তার কোন খোঁজ না থাকলেও তার সাথে কথা বলতে হলে কিন্তু এই যোগ্যতা নিয়েই আসতে হবে নাহলে তিনি কথা বলবেন না, এমনটাই তার সদম্ভ উক্তি।

তিনি নিজে যা সত্য বলে মনে করেন তাকে আজকাল ক্রিয়েশনিজম বলে। অর্থাৎ, আল্লাহ্ মাটি বা ধূলি দিয়ে তার নিজের মত করে প্রথম মানষকে তৈরি করে তার নাকে ফূঁ দিয়ে প্রাণসঞ্চার করেন। তারপর তার বাম পাঁজরের একটি হাড় নিয়ে তার জন্য এক সঙ্গিনী তৈরি করে বেহেশতে ছেড়ে দিলেন। তবে আল্লাহ আবার চরম রসিক। সিরিয়াল নাটক করতে ভালবাসেন। তিনি জানেন যে দুদিন পরই এদের মাটির পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়া হবে তাই তার অজুহাত হিসেবে একটি গাছের ফল খেতে নিষেধ করে দিলেন, ইত্যাদি। পরে মরুভূমিতে এক মেষপালককে আল্লাহ্ দেখা দিয়েছিলেন এবং তাকে নানা উপদেশ দিয়ে ছেড়ে দেন দেখার জন্য তার কতটুকু মেনে চলতে পারে যদিও ভবিষ্যতে কী হতে যাচ্ছে তার সবই আল্লাহর জানা আছে। ইত্যাদি নানা কাহিনী। মেকস পারফেক্ট সেন্স! এর চাইতে যুক্তিসঙ্গত আর কী হতে পারে তাই না? যদিও এসবের কোনরকম প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি, সেই প্রাচীন ব্রোনজ যুগের ছাগলচড়ানো গোত্রের এক মানুষের লেখা কাহিনী ছাড়া, তবুও এটিই সত্য। এই হচ্ছে এইসব বিবর্তনবাদের যমদের যুক্তির দৈড়!

তিনি অবশ্য একটি ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন। না বিজ্ঞান না বিবর্তনবাদ, না সৃষ্টিতত্ত্ব, কোনটাতেই তার কোন পরিষ্কার ধারণা আছে এমনটা মনে হয় না।

তিনি মনে করেন যে, বিবর্তনবাদ আর সৃষ্টিতত্ত্ব, দুটো দ্বান্দ্বিক হাইপোথিসিস। যদিও প্রকৃত সত্য হচ্ছে যে দুটো সম্পূর্ণ আলাদা দুটো ধারণা। একটির সাথে আরেকটির কোনদিন তুলনা হতে পারেনা।

তিনি যদি মনে করেন বিজ্ঞান দিয়ে সৃষ্টিতত্ত্বকে ব্যাখ্যা করা যাবে তাহলে তা হবে চরম ভুল।

প্রথমে তাকে বুঝতে হবে বিজ্ঞান কী। দরকার হলে তিনি কোন একটি অভিধান খুলে দেখে নিতে পারেন। সাধারনভাবে বিজ্ঞানকে প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করার একটি পদ্ধতি হিসেবে বর্ননা করা যেতে পারে।

অন্যপক্ষে, আল্লাহ-খোদা বিষয়ক যেকোন প্রস্তাব পড়ে অতিপ্রাকৃত বা সুপারন্যাচারাল জগতে। যা কিছু প্রকৃতির বাইরে তাই অতিপ্রাকৃত বা সুপারন্যাচারাল। কাজেই বিজ্ঞান দিয়ে অতিপ্রাকৃতকে আমরা কোনদিনই বিশ্লেষণ করতে যাবোনা। আমরা ঐশ্বরিক কোনকিছুকে পরিমাপ করতে পারিনা। ঐশ্বরিক কোন বিষয়কে আমরা পরীক্ষা করতে পারিনা। আমরা ঐশ্বরিক সৃষ্টিতত্ত্বকে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারবো না। আমরা কখনোই জীববিদ্যার ক্লাসরুমে বসে ইতিহাসের ওপর আলোচনা করবো না। আর একইভাবে আমরা সৃষ্টিতত্ত্বের ওপরেও কোনরকম আলোচনায় যাবো না, কারণ--সৃষ্টিতত্ত্ব বিজ্ঞান নয়।

বিজ্ঞান কখনোই আপনি কী বিশ্বাস করেন তা নিয়ে চিন্তিত না। বিজ্ঞানের বিষয় হচ্ছে আপনি কী জানেন। প্রাকৃতিক জগতে প্রাপ্য সমস্ত প্রমাণাদি হাতে নিয়ে বিজ্ঞান একটি ব্যাখ্যা, একটি মডেল দাঁড় করায়। বিজ্ঞান আধিদৈবিক বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় না। আপনাদের কারো কারো কাছে এটিকে বিজ্ঞানের একটি দুর্বলতা মনে হতে পারে। কিন্তু তাতে বিজ্ঞানের কিছু আসে যায় না। বিজ্ঞান একটি হাতিয়ার মাত্র এবং যে কোন হাতিয়ারের সীমাবদ্ধতা আছে। যা আমাদের দরকার তা হলো সে হাতিয়ারের ব্যবহার জানা আর এর দুর্বলতাগুলো সম্পর্কে সজাগ থাকা।

আর শেষ কথা, বিবর্তনবাদের নিন্দা, ভুল ধরা, এর সীমাবদ্ধতা নিয়ে যেকোন কথা শোনা যেতে পারে তবে তা আসতে হবে একজন বিজ্ঞানীর কাছ থেকে, কোন আহাম্মকের কাছে থেকে নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:২৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×