শুনো.....যদি জানতাম তোমার কঙ্কালও এই রাতে বাড়ির উঠানে এসেছে। তবুও আমি যেতাম। তোমার কঙ্কালকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদতাম। তোমার কঙ্কালের সাথে গল্প করে এইসব অভিশপ্ত রাতের কথা ভুলে যেতাম।
স্ত্রী-কন্যা ছেড়ে স্বামী এসেছেন স্বপ্ন চাষ করতে ঢাকা শহরে। দিন যায়, রাত যায় স্বপ্নরা বড্ড উপহাস শুরু করে। চোখে দেখে ভালো চাকরি সম্মান; মনের চোখ বিদ্রোহ করে। সারাক্ষণ দেখে আদরের কন্যাকে। স্ত্রীর প্রেমাভায় ভরপুর মুখের লাজুকতাকে।
বিদ্রোহ! বাইরের চোখের সাথে মনের চোখের। অর্থের সাথে আদর-প্রেম-ভালোবাসার। চড়ুই পাখির মত চঞ্চলা, আধো আধো বল ফোটা কন্যা বলতে পারে না- বাবা তুমি বাড়ি এসো। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। তবে প্রায়শই মোবাইলে শোনে মেয়ে বলছে, বাবা! বাবা! বাবা!।
আর স্ত্রী! প্রতিনিয়ত তার আদরমাখা কণ্ঠে বলে, এ মাসে বাড়ি আসবে তো? আর স্বামী এক বুক হতাশা আর অজস্র প্রেমের গীত নিয়ে অনিশ্চিয়তার মাঝে বলে, আসব। অবশ্যই আসব। কিন্তু সেটি আর হয়ে আসে না।
স্ত্রী বলে জানো, পূর্ণিমার রাত উপহাস করে। বাতাসের নির্মলতা আমাকে উপহাস করে। প্রকৃতির সজীবতা আমার চোখে অশ্রু আনে। চারিদিকে এত উচ্ছ্বলতা আর আমার বুকের মাঝে শুধু রুক্ষতা!
স্বামীর মাথার ভেতর সারা পৃথিবী দোল খায়। ধরা ধরা গলায় বলে কেন?
জীবনের সমস্ত চাওয়াকে পদতলে পিষ্ট করে স্ত্রী বলে- জানো আমার এই রুক্ষ জীবনে কিছু চায় না। আমি শুধু তোমার পাশে বসে একটু গল্প করতে চায়। তোমার সাথে একটি মূহুর্ত থেকে আমি এই জগতে স্বর্গ খুজতে চায়।
স্বামীর কোনো উপায় নেই। বাড়ি ফিরে যাওয়ার কোনো পথ নেই। যদি ছুটি পায় তবে। কিন্তু সেই দিনটি কবে আসবে সেটি স্বামীর জানা নেই। তাই স্ত্রীর কথাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে মিথ্যা হাসির ফোয়ারা দিয়ে বলে, আচ্ছা বাদ দাও। বলোতো এখন রাত, নাকি দিন?
স্ত্রী বলে, রাত.....গভীর রাত।
স্বা- একটু বাইরে এসো।
স্ত্রী- কেনো?
স্বা- আসবে তো আগে।
স্ত্রী- আগে বলো কেনো!
স্বা- বাইরে উঠানে এসে দেখো আমার কঙ্কাল, তোমার সাথে গল্প করতে গেছে?
স্ত্রী- আমাকে ভয় দিচ্ছো?
স্বা- আরে না যাবে তো, দেখো আমার কঙ্কাল।
স্ত্রী- শুনো.....যদি জানতাম তোমার কঙ্কালও এই রাতে বাড়ির উঠানে এসেছে। তবুও আমি যেতাম। তোমার কঙ্কালকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদতাম। তোমার কঙ্কালের সাথে গল্প করে এইসব অভিশপ্ত রাতের কথা ভুলে যেতাম। আমার একটুও ভয় করতো না। অন্তত তোমার অস্তিত্ব যে আমাকে স্পর্শ করছে এই আনন্দে বিধাতার কাছে প্রার্থনা করতাম জানো............করতাম এই পৃথিবীকে রাতের পৃথিবী করে দেওয়া হোক।
স্বা- কেনো?.....কেনো তুমি এমন প্রার্থনা করতে?
স্ত্রী- যে দিনের আলো তোমাকে দুরে রাখে সে দিনের আলো আমি চায় না। যে রাত অন্তত তোমার স্পর্শ এনে দিতে পারে সেই রাতেই এই পৃথিবীর নতুন জন্ম হোক।
স্বা- বউ?
স্ত্রী- বলো!
স্বা- আমাকে ছাড়া তোমার খুব কষ্ট হয় তাই না?
স্ত্রী- (হালকা একটু হেসে) না.. কষ্ট হয় না কিন্তু এভাবে বেচে থাকার মানে খুঁজি!
এভাবেই রাতের পর রাত গল্পে গল্পে চলে যায় কাল অতলে। আর স্বপ্নদের নিয়ে বেচে থাকে প্রেম-বিরহকাতর স্বামী-স্ত্রী। আর বাস্তবতার নিরিখে খুঁজে ফেরে আসলে বেচে থাকার অর্থটা কি??
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:১২